সিপিএমে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে সুজন চক্রবর্তী বনাম শমীক লাহিড়ী? যা ঘটছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়...
CPIM South 24 Pargana: রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সুজন শিবিরের লোকজন নাম প্রত্যাহার করে নেওয়াতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা শমীক লাহিড়ীর দখলে থাকল।
তৃণমূলে গৃহযুদ্ধ, বিজেপিতে গৃহযুদ্ধ- নতুন ঘটনা নয়। একটি রাজনৈতিক দলে, একাধিক নেতার অনুগামীদের ভিন্ন ভিন্ন শিবির তৈরি হয়েই যায়। কোথাও কোথাও সেই শিবির দলভাঙনের প্লাবনও আনে। সম্মুখে বড় উদাহরণ মহারাষ্ট্রের শিবসেনা। তবে সিপিএমের মতো 'রেজিমেন্টেড' দলে গৃহযুদ্ধ বা অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন প্রকাশ্যে আসা মানে কোথাও দলের বাঁধন নড়বড়ে হয়ে যাওয়া নয় কি? দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্মেলনে এমন এক ঘটনা ঘটেছে যা থেকে সিপিএমে দলাদলি আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। ওই সম্মেলনে জেলা কমিটির প্যানেল থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রাজ্য কমিটির সদস্য-সহ আরও অনেকে। অভিযোগ, লড়াই মূলত শমীক লাহিড়ী এবং সুজন চক্রবর্তীর শিবিরের।
সূত্রের খবর, গত শুক্রবার থেকে বিষ্ণুপুরের আমতলায় শুরু হয়েছিল সিপিএমের জেলা সম্মেলন। এই সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিদের মধ্যে কানাঘুঁষো ছিল যে শমীক-সুজন শিবিরের দলাদলি ভোটাভুটি পর্যন্ত গড়াতে পারে। কিন্তু ভোট হয়নি। শনিবার বিদায়ী কমিটির সম্পাদক রতন বাগচী নতুন কমিটির প্রস্তাব দিতেই উত্তেজনা শুরু হয়।
আরও পড়ুন- আমাদের বড় হওয়ার সময়টাকে বুদ্ধদেব ভট্টচার্য তাঁর মূল্যবোধ দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন
সিপিএম সূত্রে খবর, বিদায়ী সম্পাদক রতন বাগচী ৬৫ জনের নাম প্রস্তাব করেন। তাঁদের মধ্যে থেকে ১৮ জন নাম প্রত্যাহার করে নেন। এই ১৮ জনের তালিকায় রয়েছেন নেত্রী চন্দনা ঘোষ দস্তিদার, রাজ্য কমিটির সদস্য রাহুল ঘোষ, পদ্ম দাশগুপ্তরা। এই চন্দনা ঘোষ দস্তিদার ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ। আর রাহুল ঘোষ ছিলেন সুজন চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ। জেলা কমিটি থেকে বাদ গেছেন একদা দোর্দণ্ড প্রতাপ খোকন ঘোষ দস্তিদারও। এছাড়াও অপূর্ব প্রামাণিক, রশিদ গাজী, অনির্বাণ ভট্টাচার্যের মতো নেতাদের নাম প্যানেলে না-থাকায় ক্ষোভ ছড়ায়। প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলি চক্রবর্তীও। শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটির জন্য পাল্টা নাম না এলেও সম্মেলনে উপস্থিত ৮৭ জন প্রতিনিধি বিদায়ী কমিটির প্যানেলের বিরোধিতা করেছেন বলেই জানা গিয়েছে।
ফলে আবারও সম্পাদক হয়েছেন রতন বাগচী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সুজন শিবিরের লোকজন নাম প্রত্যাহার করে নেওয়াতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা শমীক লাহিড়ীর দখলে থাকল। অভিযোগ উঠেছে, সম্মেলন চলাকালীন দলেরই দুই শিবিরের প্রতিনিধিদের হাতাহাতিও শুরু হয়ে গিয়েছিল যা সামলাতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় রাজ্য নেতৃত্বের তরফে কল্লোল মজুমদার, শ্রীদীপ ভট্টাচার্যদের। সিপিএমের ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। উল্লেখ্য, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে রয়েছেন সুজন চক্রবর্তী এবং শমীক লাহিড়ীই। এই দু’জন আবার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীরও সদস্য। সিপিএমের দৈনিক প্রভাতী মুখপত্রের সম্পাদক হওয়ায় কয়েক মাস আগে শমীক লাহিড়ী জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব ছাড়েন। ফলে এই অন্তর্বর্তী সময়ে জেলা সম্পাদক হন রতন বাগচী। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকে রাজ্য কমিটিতে ছিলেন রাহুল ঘোষ, তুষার ঘোষ, প্রতিক-উর রহমানেরা। এই শিবিরভিত্তিক কোলাহলের মধ্যে পড়ে কি জেলাস্তরে ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে দল? জেলা কমিটির বর্তমান সদস্য প্রতীক-উর রহমান অবশ্য এই প্রশ্নে চলেছেন দলের 'নীতি'-কে সামনে রেখেই। দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি তিনি।