১৮ বছর হলেই যোগ দিতে হয় সেনায়? ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর যে সব তথ্য চমকে দেবে

Israel Army : ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে অন্তত ৩৫টি দেশ ইজরায়েল থেকে মোট ৩.২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র আমদানি করেছে।

একমাস হতে চলল, যুদ্ধ চলছে গাজায়। গত ৬ অক্টোবর ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস প্রাণঘাতী হামলা চালায় ইজরায়েলে। হাজারে হাজারে মিসাইল হামলায় ১৪০০ মানুষ প্রাণ হারায় ইজরায়েলে। সেই হামলার বদলা নিতে গাজা উপত্যকায় ইজরায়েল যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইজরায়েল এই যুদ্ধ না জেতা অবধি বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাবে তা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে। গাজায় প্রায় প্রায় ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, অধিকাংশই শিশু ও মহিলা। যুদ্ধবিরতির প্রশ্নেও রাজি নয় ইজরায়েল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইজরায়েলকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছে। এই যুদ্ধে সবরকম সামরিক মদতই জোগাচ্ছে আমেরিকা। মধ্যপ্রাচ্যের এই ঘনিষ্ঠতম বন্ধুরাষ্ট্রকে গাইডেড-মিসাইল ক্যারিয়ার এবং F-35 ফাইটার পাশাপাশি অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে আমেরিকা।

ইজরায়েলের আঞ্চলিক সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতির অন্যতম মূল বিষয়। মার্কিন অনুদানেই ভরে উঠেছে ইজরায়েলের সামরিক অস্ত্রাগার। ইজরায়েলের সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা বিপুল। বিশ্বের বহু দেশ অস্ত্রের জন্য ইজরায়েলের উপর নির্ভরশীল। কীভাবে ইজরায়েলের সেনাবাহিনী টাকা পায়? এত অস্ত্রই বা আসে কীভাবে?

ইজরায়েলের সামরিক শক্তি বিপুল। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (IISS) মিলিটারি ব্যালেন্স ২০২৩ অনুসারে, ইজরায়েলের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীতে ১৬৯,৫০০ জন সক্রিয় সামরিক কর্মী রয়েছে। আরও ৪৬৫,০০০ জন রয়েছেন রিজার্ভ ফোর্সে, ৮,০০০ জন রয়েছে আধাসামরিক বাহিনীতে। এই মুহূর্তে প্রায় ৩০০,০০০ ইজরায়েলি সৈন্য গাজা উপত্যকার কাছাকাছি অবস্থান করছে।

আরও পড়ুন- ভাঙা হুইলচেয়ার, কানে আসে না বোমার শব্দ! কেমন আছেন গাজার ৯৩,০০০ বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ?

১৮ বছরের বেশি বয়স হয়ে গেলেই ইজরায়েলের সমস্ত নাগরিকদের জন্য সামরিক পরিষেবা বাধ্যতামূলক। পুরুষদের ৩২ মাস এবং মহিলাদের ২৪ মাস অন্তত সেনাবাহিনীতে কাজ করতেই হবে। উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা এবং অস্ত্র সহ মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী রয়েছে ইজরায়েলেরই। এর বিস্তৃত সামরিক অস্ত্রাগারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

ইজরায়েলের সেনাকর্মী
১৬৯,৫০০ সক্রিয় সামরিক কর্মী
৪৬৫,০০০ রিজার্ভ ফোর্স

স্থলশক্তি
২,২০০-রও বেশি ট্যাঙ্ক
৫৩০ আর্টিলারি (SP, Towed, MRL, MOR)

বায়ুশক্তি
৩০৯ টি ফাইটার গ্রাউন্ড অ্যাটাক জেট সহ ৩৩৯ টি যুদ্ধ বিমান
১৯৬ টি F-16 জেট
৮৩ টি F-15 জেট
৩০ টি F-35 জেট
১৪২ টি হেলিকপ্টার
৪৩ অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টার

নৌশক্তি
৫ টি সাবমেরিন
৪৯ প্যাট্রল এবং কোস্টাল জাহাজ

ইজরায়েলের আয়রন ডোম সিস্টেম হচ্ছে একটি মোবাইল এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। রাডার প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প-পরিসরের রকেটকে আটকাতে এবং ধ্বংস করে দিতে পারে এই ব্যবস্থা। ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের পরে এই ব্যবস্থা তৈরি হয়। ওই যুদ্ধে ইজরায়েলে হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছিল হিজবুল্লাহ। ২০১১ সালে এই আয়রন ডোমটি চালু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সাহায্যেই তা তৈরি করা হয়েছিল।

আইআইএসএস-এর মতে, ইজরায়েলের আয়রন ডোম সিস্টেম ২০২১ সালে হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী থেকে ছোড়া ৯০ শতাংশেরও বেশি রকেট আটকে দিয়েছে। আইআইএসএস জানাচ্ছে, ইজরায়েলের কাছে পারমাণবিক শক্তিও রয়েছে। কারণ এই দেশটির কাছে জেরিকো ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করার জন্য তৈরি বিশেষ বিমান রয়েছে।

ইজরায়েল সামরিক খাতে কত খরচ করে?

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI) অনুসারে, ২০২২ সালে ইজরায়েল সামরিক খাতে ২৩.৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। ২০১৮-২০২২ সালে মাথাপিছু ২,৫৩৫ ডলার খরচা করা হয়েছে প্রতিরক্ষায়। কাতারের পরে ইজরায়েলই সামরিক খাতে ব্যয় করা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। ২০২২ সালে ইজরায়েল তার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪.৫ শতাংশ সামরিক বাহিনীতেই ঢেলেছে।

আরও পড়ুন- গাজার যুদ্ধে ‘হ্যানিবাল’ নীতি নিচ্ছে ইজরায়েল? কী এই বিতর্কিত হ্যানিবাল প্রোটোকল?

কোন দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ইজরায়েলি অস্ত্র কেনে?

ইজরায়েলের অস্ত্র আমদানি কিন্তু রপ্তানির চেয়ে অনেক বেশি। তবে গত এক দশকে, রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে আমদানিকে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করেছে, জানাচ্ছে SIPRI-এর তথ্য।

২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে অন্তত ৩৫টি দেশ ইজরায়েল থেকে মোট ৩.২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র আমদানি করেছে। ইজরায়েলের সামরিক অস্ত্র রপ্তানির প্রায় এক তৃতীয়াংশই (১.২ বিলিয়ন ডলার) আসে ভারতে। ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইজরায়েল ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক খুবই ভালো! ইজরায়েলি অস্ত্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা আজারবাইজান (২৯৫ মিলিয়ন ডলার), তারপরে আছে ফিলিপাইন (২৭৫ মিলিয়ন ডলার), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (২১৭ মিলিয়ন ডলার) এবং ভিয়েতনাম (১৮০ মিলিয়ন ডলার)।

২০১৮-২০২২ সালের মধ্যে ইজরায়েল মাত্র দু'টি দেশ থেকেই মোট ২.৭ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র আমদানি করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী যৌথ মহড়া, প্রযুক্তি উন্নয়ন কর্মসূচি এবং প্রতিরক্ষা প্রকল্পে নানা সহযোগিতা করে একে অন্যকে।

ইজরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কত টাকার সামরিক সাহায্য পেয়েছে?

ইজরায়েল সবচেয়ে বেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য পেয়েছে। ১৯৪৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রায় ২৬৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে ইজরায়েল, আমেরিকার কাছ থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মার্কিনি সাহয্য পাওয়া দেশ হচ্ছে মিশর, গত ৭৭ বছরে ১৫১.৯ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে মিশর।

১৯৪৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ও প্রতিরক্ষা সাহায্য হিসেবে মোট ১২৪ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ইজরায়েলকে সমর্থন করেছে। এ বছর ইজরায়েলকে দেওয়া ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সাহায্যের মধ্যে অর্ধেকই ইজরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার জন্য।
হামাস ইজরায়েল হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই ইজরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আয়রন ডোম ইন্টারসেপ্টর দেওয়ার অনুরোধ করে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছিলেন, ওয়াশিংটন ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে দ্রুত অতিরিক্ত সরঞ্জাম এবং অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করবে। করেওছে।

More Articles