পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সবটা জানেন? যে অভিযোগ তুলছেন পাক ক্রিকেটার দানিশ কানেরিয়া

Pak Cricketer Danish Kaneria: পাক প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তাঁর প্রশ্ন, "কেন আপনার সেনাবাহিনী হঠাৎ হাই অ্যালার্টে আছে?"

গত মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ের কাছে বৈসরনে সন্ত্রাসবাদীদের হামলায় ২৫ জন ভারতীয় নাগরিক এবং একজন নেপালি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। সাম্প্রতিককালে এই অঞ্চলে নিরস্ত্র নাগরিকদের উপর এমন মর্মান্তিক হামলা আর ঘটেনি। স্বাভাবিকভাবেই, এই ঘটনায় ধর্মপরিচয় জেনে খুন করার অভিযোগ ওঠা ইস্তক দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে ভারতবর্ষ। রাজনৈতিক, কূটনৈতিক মহলে জটিলতা যেমন বেড়েছে, খুব একান্ত ব্যক্তিগত পরিসরেও বিদ্বেষ ও বিভাজন সুস্পষ্ট হচ্ছে। ভারত পাকিস্তানকে জবাব দিতে কিছু পদক্ষেপ করেছে, পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ করেছে খানিক একইরকমের। তবে, এই আবহে প্রাক্তন পাকিস্তানি ক্রিকেটার দানিশ কানেরিয়া এই হামলার পর পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নীরবতার জন্য প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। X-এ একটি পোস্টে, দানিশ কানেরিয়া এমন কিছু প্রশ্ন তুলেছেন, যা পাকিস্তান ও সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে আবারও কিছু তিক্ত অথচ বাস্তব ঘটনার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে আমাদের।

ক্রিকেটার দানিশ খুব সহজ সাধারণ একটি মূল প্রশ্ন করেছেন। দানিশ বলছেন, "যদি সত্যিই পহেলগাঁও সন্ত্রাসবাদী হামলায় পাকিস্তানের কোনও ভূমিকা না থাকে, তাহলে কেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এখনও এর নিন্দা করেননি?” এর পরেই দানিশ আরেকটি মোক্ষম সওয়াল তুলেছেন, পাক প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তাঁর প্রশ্ন, "কেন আপনার সেনাবাহিনী হঠাৎ হাই অ্যালার্টে আছে? কারণ আসলে তো আপনি সত্যটা জানেন - আপনি সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দিচ্ছেন।"

উল্লেখ্য, পহেলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। নিষিদ্ধ পাক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার একটি ছায়া সংগঠন এটি। ভারতীয় গোয়েন্দাদের অনুমান, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই টিআরএফকে বিশেষভাবে সমর্থন করে। লস্করের প্রতিষ্ঠাতা এবং ২৬/১১-র মাস্টারমাইন্ড হাফিজ সাইদের নির্দেশেই চালিত। মঙ্গলবার হামলার পরে টিআরএফ বলেছিল, কাশ্মীরের ওই অঞ্চলে 'জনসংখ্যাগত পরিবর্তন' এই হামলার কারণ।

 

দানিশ কানেরিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও লিখেছেন, “কেন এমন হয় যে ওরা কখনই স্থানীয় কাশ্মীরিদের আক্রমণ না করে ধারাবাহিকভাবে হিন্দুদেরই আক্রমণ করে— সে কাশ্মীরি পণ্ডিতই হোক বা ভারতের কোনও প্রান্তের হিন্দু। কারণ সন্ত্রাস যতই ছদ্মবেশে আসুক না কেন, তা একটাই দর্শন অনুসরণ করে। তার জন্য গোটা বিশ্বকে মূল্য দিতে হচ্ছে।” অনিল দলপতের পরে পাকিস্তানের দ্বিতীয় হিন্দু ক্রিকেটার হচ্ছেন দানিশ। বর্তমানে আমেরিকায় থাকেন দানিশ কানেরিয়া। এর আগেও, দানিশ অভিযোগ করেছেন যে তিনি পাকিস্তানে ব্যাপক বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছেন এবং তাঁর কেরিয়ার শেষ করে দেওয়া হয়েছে। দানিশ অভিযোগ করেছেন, তিনি পাকিস্তানে সমান মূল্যবোধ ও সম্মান পাননি। শাহিদ আফ্রিদির বিরুদ্ধে বিপুল্ল অভিযোগ ছিল তাঁর। সেই সময় শুধু ইনজামাম উল হককে পাশে পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।”

দানিশ অভিযোগ করেছিলেন, শাহিদ আফ্রিদি তাঁকে ধর্ম পরিবর্তন করতে বলেছিলেন। ‘‘কেরিয়ারে ভালোই খেলছিলাম। কাউন্টি ক্রিকেটও খেলছিলাম। অধিনায়ক হিসাবে ইনজামাম আমাকে খুব সাহায্য করেছে। সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছে। শোয়েব আখতারও আমার পাশে ছিল কিন্তু আফ্রিদি আমাকে বলেছিল ধর্ম পরিবর্তন করতে। বহু বার বলেছিল। ইনজামাম কখনও এসব বলত না।’’

তবে দানিশ স্পষ্ট জানিয়েছেন, পাকিস্তানের মানুষের প্রতি তাঁর কোনও ক্ষোভ নেই। কারণ পাকিস্তান বরাবর সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের এমন নেতা দরকার, যিনি শান্তির দূত হতে পারেন। জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়া নীরব কোনও নেতা তিনি চান না। এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ঘটনার পর বলেছেন, "ভারত প্রতিটি সন্ত্রাসী এবং তাদের মদদদাতাদের চিহ্নিত করবে, শনাক্ত করবে এবং শাস্তি দেবে। আমরা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাদের তাড়া করব। ভারতের সংকল্প পিছিয়ে যাবে না। সন্ত্রাসবাদকে শাস্তি দেওয়া হবেই।"

More Articles