আরজি কর ধর্ষণ কাণ্ডে চূড়ান্ত রায়ে একমাত্র দোষী সঞ্জয় রায়! কী সাজা?
RG Kar Case Verdict: আবারও প্রশ্ন উঠছে এই ধর্ষণ ও হত্যায় কি কেবল সঞ্জয়ই একমাত্র দোষী?
১৬২ দিনের অপেক্ষা। অবশেষে আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে রায় ঘোষণা করল শিয়ালদা আদালত। এই প্রায় ছয় মাসের অধিকাংশ সময়কালই অভয়ার বিচার চেয়ে উত্তাল থেকেছে বাংলা। পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র বিক্ষোভে নেমেছিলেন সাধারণ মানুষ। জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন, অনশন, রাতদখল, অধ্যক্ষের দুর্নীতি সব পেরিয়ে অবশেষে আদালত জানাল, অভয়ার ধর্ষক ও হত্যাকারী একমাত্র সঞ্জয় রায়ই! শনিবার, ১৮ জানুয়ারি শিয়ালদা অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের আদালত এই রায়ের শুনানিতে সিভিক ভলান্টিয়ারকে দোষীসাব্যস্ত করে। শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস জানান, প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ) ধারা, ৬৬ ধারা (ধর্ষণের এমন আঘাত করা, যে কারণে মৃত্যু হতে পারে) এবং ১০৩ (১) ধারায় (খুন) দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সোমবার সাজা ঘোষণা হবে, সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি বা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
২০২৪ সালের ৯ অগাস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। এর পরদিনই সিসিটিভির প্রমাণ দেখে সিভিক ভলান্টিয়াার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। সেই সময় তুমুল উত্তাল বাংলা। বিশেষ করে আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি, মৃতদেহ নিয়ে ব্যবসা এবং এই ধর্ষণকে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠে প্রমাণ লোপাটের, অপরাধের স্থলে প্রমাণ ঘেঁটে দেওয়ার। তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ১৩ অগাস্ট পুলিশের হাত থেকে আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। গত ৭ অক্টোবর শিয়ালদা আদালতে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। সেই চার্জশিটেই সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়কে মূল অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এখনও পর্যন্ত সিবিআই ওই একটিই চার্জশিট দাখিল করেছে।
আরও পড়ুন- পশুর মতো প্রবৃত্তি! ধৃত সঞ্জয় রায়ের মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা যা বলছে
৪ নভেম্বর শিয়ালদা আদালতে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। সঞ্জয়ের আইনজীবী বারবার দাবি করেছেন, আসলে বড় মাথাদের বাঁচাতে সিভিক ভলান্টিয়ারকে ফাঁসানো হচ্ছে। পুলিশের একাংশ আগেই জানিয়েছিল, ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া তথ্যপ্রমাণের ক্ষেত্রে খামতি রয়েছে। আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। আর্থিক দুর্নীতির মামলায় ২ সেপ্টেম্বরই সন্দীপকে গ্রেফতার করা হয়। তথ্যপ্রমাণ লোপাট এবং বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১৪ সেপ্টেম্বরে তাঁকে ধর্ষণ ও খুনের মামলাতেও অভিযুক্ত ও গ্রেফতার করা হয়। একই অভিযোগে সেদিন গ্রেফতার করা হয় টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে। কিন্তু ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সন্দীপ এবং অভিজিতের বিরুদ্ধে ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে ব্যর্থ হয় সিবিআই। ১৩ ডিসেম্বর দু'জনেই জামিন পেয়ে যান। এই জামিনের পর নতুন করে আন্দোলন দানা বাঁধে।
তারপর, নতুন বছরের শুরুতেই রায় জানিয়ে দিল আদালত। যদিও, আবারও প্রশ্ন উঠছে এই ধর্ষণ ও হত্যায় কি কেবল সঞ্জয়ই একমাত্র দোষী? ঘটনার দিন আরও অনেকের থাকার কথা উঠে এসেও তা ধামাচাপা পড়ে যায়। সিবিআই কোনও প্রমাণই জোগাড় করতে পারে না। যে মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার সিবিআই-ইডিকে কেন্দ্রের অস্ত্র বলে অভিযোগ করেছেন, তিনি ঘটনার কয়েকদিনের মাথায় তদন্তের দায়িত্বভার কেনই বা সিবিআইকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দিতে চাইলেন, তাও ধোঁয়াশারই। সত্যিই কি 'বলির পাঁঠা' হলেন সঞ্জয়? ২০০৪ সালে হেতাল পারেখের ধর্ষণ ও হত্যায় ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হয়। সেবারও বিতর্ক শুরু হয়, ‘অনার কিলিং' ঢাকতে ধনঞ্জয়কে ঢাল করা হয়েছে। একা সঞ্জয়কেও কি তবে বৃহৎ কোনও প্রভাবশালীকে আড়াল করতেই দোষী প্রমাণ করা হলো?