যে মুখ বাঙালি ভুলতে পারবে না কোনওদিন...
Uma Dashgupta: এক ভয়ঙ্কর ঝড়বাদলের রাতে সর্বজয়ার বুক ফাঁকা করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল দুর্গা। এই হেমন্তে নিশ্চিন্দিপুরে পাড়ি দিলেন উমা।
এক ঝড়ের রাতে জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে মৃত্যু কোলে ঢলে পড়েছিল পর্দার দুর্গা। সেই দৃশ্য, সেই শূন্যতা চোখে জল আনেনি এমন বাঙালি বোধহয় বিরল। পর্দার দুর্গাকে সবটুকু দিয়ে একেবারে জ্যান্ত করে তুলেছিলেন যিনি, তাঁর এবার বিদায়ের পালা। শরীরে দানা বেঁধেছিল কর্কট রোগ। দীর্ঘ রোগভোগের পর চলে গেলেন অভিনেত্রী উমা দাশগুপ্ত। সোমবার সকালে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হলেন তিনি।
ওই একবারই পর্দায় মুখ দেখিয়েছিলেন উমা। তার পর আর অভিনয়ের দিকে ফিরে তাকানোর কথা মনে হয়নি তাঁর। ব্যক্তিগত জীবনে বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষকতার পেশা। কিন্তু ওই একটি মাত্র অভিনয়, তাঁকে বাঙালির মণিকোঠায় এক স্থায়ী আসন গড়ে দিয়েছিল। সিনেমা জুড়ে অসংখ্যা মায়াদৃশ্য তিনি তৈরি করেছিলেন, অপুর সঙ্গে খুনসুটি, মায়ের কাছে বকা-মার খাওয়া দামাল মেয়েটি, এই গাছে ওঠে তো, ওই লোকের বাড়ির ফল পাড়ে। প্রিয় পিসি ইন্দির ঠাকুরণের সাধের ভাইঝি দুর্গাকে ভুলতে পারা যে কোনও সিনেমাপ্রেমীর পক্ষেই শক্ত খুব।
আরও পড়ুন: কেমন আছেন ‘পথের পাঁচালী’-র অপু ও দুর্গার অভিনেতারা?
ব্যক্তিগত জীবনে উমা ছোট থেকেই যুক্ত ছিলেন থিয়েটারের সঙ্গে। যে স্কুলে পড়তেন উমা, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ভালো পরিচয় ছিল সত্যজিৎ রায়ের। সেই সূত্র ধরেই পথের পাঁচালির দুর্গাকে আবিষ্কার করেন মাণিকবাবু। কিন্তু উমার বাবা আদপেও চাননি মেয়ে এই সিনেমার দুনিয়ায় পা রাখেন। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে উমার পরিবারকে রাজি করান সত্যজিৎ। তার পর বাকিটা ইতিহাস। ১৯৫৫ সালে পথের পাঁচালি তৈরি করল ইতিহা। বাঙালিকে শুধুই অস্কার চেনাল, তা নয়, বাঙলা সিনেমাকে দাঁড় করিয়ে দিল এক অন্য উচ্চতায়।
তবে ওই একবারই। আর তেমনভাবে দর্শক পাননি উমাকে। এক ভয়ঙ্কর ঝড়বাদলের রাতে সর্বজয়ার বুক ফাঁকা করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল দুর্গা। এই হেমন্তে নিশ্চিন্দিপুরে পাড়ি দিলেন উমা। বছর কয়েক আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হন তিনি। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসায় সাড়াও দেন। তবে ওই কয়েক দিন। তার পর ফের শরীরে ফিরে আসে মারণ কর্কট। সম্প্রতি অসুস্থতা বাড়ায় শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সোমবার সকাল আটটা নাগাদ সেখানেই প্রয়াত হন উমা।
ঘটনাচক্রে উমা যে আবাসনে থাকতেন, সেখানেই বসবাস করেন অভিনেতা-সাংসদ চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। তিনিই এই খবরে সিলমোহর দিয়েছেন। তাঁর থেকেই জানা গিয়েছে, উমার মেয়ে শ্রীময়ীই চিরঞ্জিৎকে এ খবর জানান। চিরঞ্জিৎবাবু জানান, “সকালে ওঁর মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তখনই জানালেন, উমাদি চলে গিয়েছেন। কয়েক বছর আগে ক্যানসার হয়েছিল তাঁর।”
আরও পড়ুন: মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ‘পথের পাঁচালি’-র সুর সৃষ্টি করেছিলেন রবিশঙ্কর!
এর আগেও একাধিক বার উমা দাশগুপ্তের মৃত্যুকে ঘিরে নানা ভুয়ো খবর রটেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ায় নানা আলোচনাও। তবে পরে জানা যায়, সুস্থ আছেন উমা। তবে এবার তেমন আশাজনক কিছু ঘটল না। পর্দার দুর্গার ভাসান হয়ে গেল এক হেমন্ত বেলায়। তাঁর প্রয়ানে শোকের ছায়া বাঙলা চলচ্চিত্রজগতে। ১৯৫৫ সালের 'পথের পাঁচালি' ছবি বাঙালিকে উপহার দিয়েছিল এক প্রাণের দুর্গাকে। সেই দুর্গার ছবিটি আজীবন রয়ে গেল প্রতিটি বাঙালির স্মৃতির সিন্দুকে।