বোয়িং দুর্ঘটনায় একমাত্র জীবিত! কী ভাবে বাঁচলেন বিশ্বাসকুমার রমেশ?

Vishwash Kumar Ramesh : ভারতে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন বিশ্বকুমার, তাঁর ভাই অজয় কুমার রমেশের (৪৫) সঙ্গে এই ফ্লাইটে ফিরছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী ফ্লাইট এআই-১৭১ বিমান দুর্ঘটনায় ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু-সহ প্রায় সকলেই প্রাণ হারিয়েছেন। তবে, এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অলৌকিক ভাবেই বেঁচে গিয়েছেন ৪০ বছর বয়সি ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাসকুমার রমেশ। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রমেশ জানিয়েছেন, ঠিক কী হয়েছিল, কী ভাবে বেঁচে গেলেন তিনি।

১১এ আসন বরাদ্দ হয়েছিল রমেশের জন্যে। একজিট গেটের (প্রস্থান দরজা) পাশেই এই দরজা।
বিশ্বাসকুমার রমেশ হিন্দুস্তান টাইমস-কে জানিয়েছেন, "টেক-অফের মাত্র ৩০ সেকেন্ড পর কানফাটা শব্দ হয়, কিছু বোঝার আগেই বিমানটি ভেঙে পড়ে। সবকিছু এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেল ঠাওরই করতে পারিনি।" তিনি আরও বলেন, "যখন আমি উঠে দাঁড়ালাম, চারপাশে মৃতদেহ আর বিমানের টুকরো ছড়িয়ে ছিল। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি দাঁড়িয়ে দৌড়তে থাকি। মনে আছে কেউ আমাকে ধরে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়।"

আহমেদাবাদ পুলিশ কমিশনার জি.এস. মালিক সংবাদসংস্থা এএনআই-কে বলেন, "আমরা ১১এ আসনে একজন জীবিত যাত্রীকে খুঁজে পেয়েছি। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।" তবে, দুর্ঘটনাস্থলটি আবাসিক এলাকায় হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২০৪টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।

আমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বোয়িং বিমানটি দুপুর ১:৩৮ মিনিটে টেক-অফ করে। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই এটি মেঘানিনগরের কাছে বিজে মেডিকেল কলেজের হোস্টেল ভবনে আছড়ে পড়ে। দুর্ঘটনায় প্রাক্তন গুজরাট মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানিও প্রাণ হারিয়েছেন।

ভারতে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন বিশ্বাসকুমার, তাঁর ভাই অজয় কুমার রমেশের (৪৫) সঙ্গে এই ফ্লাইটে ফিরছিলেন তিনি। অজয় কি জীবিত? এখনও কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বিশ্বাসকুমার হাসপাতালের শয্যা থেকে বলেন, "আমার ভাইকে আর খুঁজে পাইনি।" তাঁর বুকে, চোখে এবং পায়ে আঘাতের চিহ্ন হয়েছে, তবে চিকিৎসকদের মতে, তিনি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিমানটি দ্রুত নিচে নেমে আসছে এবং মাটিতে আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে। বিমানটি মাত্র ৬২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছিল বলে ফ্লাইটরাডার২৪ জানিয়েছে।
পাইলট পরিস্থিতি ঘোরালো বুঝতে পেরেই মে-ডে কল দিয়েছিলেন। মে-ডে কল জরুরি অবস্থার ইঙ্গিত দেয়, কিন্তু এরপর এটিসির সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ঘটনাকে হৃদয়বিদারক বলে অভিহিত করেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল জানিয়েছেন, আহতদের জন্য গ্রিন করিডোর তৈরি করা হয়েছে এবং এনডিআরএফ দল কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে।

এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ওই বিমানে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং ১ জন কানাডিয়ান নাগরিক ছিলেন। এয়ারলাইনটি একটি জরুরি হেল্পলাইন নম্বর (১৮০০ ৫৬৯১ ৪৪৪) চালু করেছে।

এই দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে, এবং এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) আইসিএও প্রোটোকল অনুসারে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, একাধিক পাখির ধাক্কা বা ইঞ্জিনের ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

More Articles