‘ডানা ’-র বিপদ এড়াতে ট্রেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত, দূরপাল্লার পাশাপাশি বাতিল লোকালও

Cyclone Dana: হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাত বা শুক্রবার সকালে ‘ডানা’ পুরী ও সাগরদ্বীপের মাঝে আছড়ে পড়তে পারে। সেই আশঙ্কায় পুরীগামী সব ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।

আশঙ্কা ছিলই। সেই আশঙ্কাকে সত্যি করে ধেয়ে আসছে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় 'ডানা'। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, বঙ্গোপসাগরে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি। যার দাপটে তছনছের আশঙ্কা রয়েছে বাংলা ও ওড়িশায়। আগামিকাল তথা বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোরের মধ্যে পুরী ও সাগরদ্বীপের মধ্যে আছড়ে পড়বে 'ডানা'। ইতিমধ্যেই কলকাতা-সহ একাধিক এলাকায় শুরু হয়ে গিয়েছে দুর্যোগ। দুর্যোগের আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই কোমর বেঁধেছে প্রশাসন। দুই রাজ্যেই বাতিল করা হয়েছে দুই শতাধিক ট্রেন। শুধু দূরপাল্লা নয়, বৃহস্পতিবার সন্ধে থেকে শিয়ালদহ স্টেশনেও বাতিল করা হয়েছে একগুচ্ছ লোকাল ট্রেন।

রেলের তরফে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত আটটার পর পূর্ব রেলের শিয়ালদহ স্টেশন থেকে আর কোনও লোকাল ট্রেন ছাড়বে না। একইভাবে হাসনাবাদ, নামখানা স্টেশন থেকেও শিয়ালদহের উদ্দেশে কোনও ট্রেন রওনা দেবে না। বৃহস্পতিবার রাত আটটা থেকে শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এই নির্দেশিকা কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ ডানার কারণে বাতিল হতে চলেছে একাধিক ট্রেন। তার মধ্যে রয়েছে লক্ষ্মীকান্তপুর-নামখানা, শিয়ালদহ- লক্ষ্মীকান্তপুর, শিয়ালদহ-বজবজ, শিয়ালদহ-ক্যানিং, শিয়ালদহ-ডায়মন্ড হারবার লোকাল। সেই সঙ্গে বাতিল থাকছে শিয়ালদহ-সোনারপুর, শিয়ালদহ-বারুইপুর, শিয়ালদহ/বারাসত-হাসনাবাদ লোকাল। হাওড়া-ব্যান্ডেল লোকাল, ব্যান্ডেল-হাওড়া লোকালের মতো একাধিক হাওড়া বিভাগের ট্রেন বাতিল করা হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে।

আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ মোকাবিলায় কতটা তৈরি নবান্ন? যে যে প্রস্তুতির কথা শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী

রেলের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, আগামী ২৪ তারিখ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শিয়ালদহ ডিভিশনে কোনও লোকাল ট্রেন ছাড়বে না। ২৫ তারিখ সকাল দশটা পর্যন্ত ট্রেন বন্ধ থাকবে। রাত আটটার পর থেকে উপকূলবর্তী জেলার স্টেশন নামখানা, হাসনাবাদ এই সমস্ত স্টেশন থেকে কোনও লোকাল ছাড়বে না। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, ঝড়ের দাপট চলাকালীন ট্র্যাকে যাতে কোনও ট্রেন না থাকে, তার জন্য এই ব্যবস্থা। সাধারণ মানুষের সুরক্ষাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। সূত্রের খবর, শুক্রবারও পরিস্থিতি দেখে ওই লাইনে একাধিক ট্রেন বাতিল হতে পারে। পাশাপাশি, একাধিক হাওড়া-সিঙ্গুর-হাওড়া লোকাল বাতিল করা হতে পারে। ট্রেন বাতিলের বিষয়টি ঘোষণা করা হবে স্টেশনে। সময় বদল হলে সেটিও স্টেশনে স্টেশনে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডিআরএম শিয়ালদহ দীপক নিগম জানিয়েছেন, ডানার প্রভাব পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় ১৬০টি লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার অর্থাৎ আগামিকাল সন্ধে থেকে কয়েকটি শাখায় বন্ধ থাকবে ট্রেন চলাচল। হাওড়া ও খড়্গপুর ডিভিশনও একই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চলেছে।

হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাত বা শুক্রবার সকালে ‘ডানা’ পুরী ও সাগরদ্বীপের মাঝে আছড়ে পড়তে পারে। সেই আশঙ্কায় পুরীগামী সব ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি বুধবার বাতিল করা হয় দূরপাল্লার একাধিক ট্রেনও। পূর্ব রেল জানিয়েছে, ইস্ট-কোস্ট রেল (পূর্ব উপকূলীয় রেল)-এর অনুরোধে পূর্ব রেলের আওতায় থাকা বেশ কিছু ট্রেন বুধ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে পুরীগামী বেশ কিছু ট্রেনও। দক্ষিণ ভারতে যাতায়াতকারী প্রায় সব ট্রেনেই প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা।। রেল সূত্রে খবর, হাওড়া, শালিমার, সাঁতরাগাছি থেকে ৮৫টি দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করেছে রেল। ডাউনেও যে ট্রেনগুলি আসবে তার মধ্যেও বাতিল ৯৩টি ট্রেন। সেখানেও একাধিক সুপারফাস্ট ট্রেন রয়েছে। রেলের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, বুধবার শিয়ালদহ-পুরী দুরন্ত এক্সপ্রেস, সেকেন্দ্রাবাদ-হাওড়া ফলকনুমা এক্সপ্রেস, পুরী-জয়নগর এক্সপ্রেস সহ একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাতিল করা হয়েছে কলকাতা-পুরী স্পেশাল এক্সপ্রেস, হাওড়া-সেকেন্দ্রাবাদ ফলকনুমা এক্সপ্রেস, বেঙ্গালুরু-হাওড়া দুরন্ত এক্সপ্রেস সহ বেশ কিছু দূরপাল্লার ট্রেন। শুক্রবার বাতিল করা হয়েছে দীঘা-বিশাখাপত্তনম এক্সপ্রেস।

বাংলার পাশাপাশি একই ছবি ওড়িশা জুড়েও। পড়শি রাজ্যেও জারি হয়েছে কড়া সতর্কতা। বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ। পুরীতে হাই অ্য়ালার্ট জারি করা হয়েছে। আজ বিকেল ৫টার সমুদ্র তীরবর্তী সমস্ত হোটেল, লজ খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ওড়িশা প্রশাসন। একের পর এক ট্রেন বাতিল হওয়ায় বাড়ি ফিরতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন পর্যটকরা। এই পরিস্থিতিতে যেমন খুশি ভাড়া হাঁকছেন গাড়িচালকরা। বাসের ভাড়াও লাগামছাড়া। সব মিলিয়ে ডানা-র জেরে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন পর্যটকেরা।

আরও পড়ুন: আয়লার মতোই দাপট দেখাবে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’? কারা দিল এমন নাম?

আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল সাড়ে ৫ টায় নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’য় পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে ওড়িশার ভিতরকনিকা থেকে ধামরার মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে ‘ডানা’। ল্যান্ডফলের সময় ঝড়ের গতিবেগ থাকতে পারে ঘন্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার, সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ৫৬০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৬৩০ কিলোমিটার এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে ৬২০ কিমি দূরে রয়েছে। দুই রাজ্যে ঠিক কতখানি প্রভাব ফেলতে চলেছে এই ডানা, তার পরিমাপ এখনও করে ওঠা যাচ্ছে না। তবে বিপদ এড়াতে সমস্ত রকম সতর্কতা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন থেকে রেল, সব মহল।

More Articles