রাতের পর রাত ঘুম নেই! কেমন জীবন বাঁচেন রেলচালকেরা?

Indian Rail: ৬ জুলাই নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে রাহুল গান্ধিকে সামনে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন রেলের চালক ও লোকো পাইলটরা। তাঁদের অভিযোগ, ট্রেন নিয়ে বহু দূর যাওয়ার পর যে ন্যূনতম বিশ্রামের প্রয়োজন হয়, তা তাঁরা পান না।

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর মালগাড়ির চালকের বিশ্রাম সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। সম্প্রতি সেই প্রসঙ্গই আরও একবার উস্কে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি। চালকদের বিশ্রাম প্রসঙ্গে আরও একবার অস্বস্তিতে পড়েছে রেল মন্ত্রক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন দু'দিনের সফরে রাশিয়ায়, সেসময় সে সময় হিংসাদীর্ণ মণিপুর পরিদর্শনে যান রাহুল। সংসদ অধিবেশন শেষ হতেই জনসংযোগে নেমেছেন রাহুল। সমাজের শ্রমজীবী মানুষদের কাছে গিয়েছেন, তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনেছেন মনোযোগ দিয়ে। মণিপুর থেকে ফিরেই রাহুল চলে যা নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে।

৬ জুলাই নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে রাহুল গান্ধিকে সামনে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন রেলের চালক ও লোকো পাইলটরা। সে দিন নয়াদিল্লি রেলস্টেশনে উপস্থিত ছিলেন রেলের প্রায় ৫০ জন চালক। তাঁদের অভিযোগ, ট্রেন নিয়ে বহু দূর যাওয়ার পর যে ন্যূনতম বিশ্রামের প্রয়োজন হয়, তা তাঁরা পান না। স্বাভাবিক ভাবেই শরীরের ধকল নিয়ে কাজ করতে নেমে তাঁদের একাগ্রতা নষ্ট হয়। চালকেরা এ-ও জানিয়েছেন, একটানা দু'রাত জেগে কাজের পর বিশ্রামের প্রয়োজন হয় যে কারওরই। ট্রেনের মধ্যেও তাঁদের জন্য উপযুক্ত সুযোগসুবিধার প্রয়োজন বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। চালকমহলের অভিযোগ, মোদি সরকার রেলের বেসরকারিকরণ করবে বলেই এ সব করে গুটি সাজাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, মোদি সরকারের আমলে রেল লোকো চালক ও সহকারী লোকো চালকরা কি সত্যিই পর্যাপ্ত বিশ্রাম পান না? ভারতীয় রেল কি তবে লোকো চালক ও সহকারী লোকো চালকের অভাবে ভুগছে? আর এই সব কিছুরই মাসুল দিতে হচ্ছে জনগণকে?

২০২০ সাল থেকে একটানা চার বছর রেলের চালক ও লোকো পাইলট নিয়োগ করেনি ইন্ডিয়ান রেলওয়ে। আন্দাজ করা যায়, চালকের অভাবে চাপ পড়ছে কর্মরতদের উপর। বিশাখাপত্তনাম রেল দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্টেও দেখা যায়, চালক ও লোকো পাইলটদের বিশ্রামের অভাব রয়েছে। এ ছাড়াও আরও কিছু ট্রেন দুর্ঘটনায় এমনই তথ্য সামনে এসেছিল বলে দাবি করেছেন চালকেরা। রেলের আইনে লোকো পাইলটদের বিশ্রামের জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করা রয়েছে। সেখানে সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা বিশ্রামের কথা উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ, শুক্রবার বিকেল থেকে ছুটি নিলে তা চলবে রবিবার সকাল পর্যন্ত। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ নিজেই সেই আইন লঙ্ঘন করে চলেছে। এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে লেগে পড়েছে পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব রেল। ক্রু লবি এবং রানিং রুমে তারা চালকদের কী কী উন্নতমানের পরিষেবা দেয়, তার প্রচার শুরু করেছে।

আরও পড়ুন: দুর্ঘটনার আতুরঘর ট্রেন! শিউরে উঠবেন গত দু’বছরের রেল দুর্ঘটনার খতিয়ান জানলে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেষ তিনটি হাই প্রোফাইল ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছে সিগন্যালিংয় সমস্যার জন্যই। ২৮ জুন পিপল'স কমিশন থেকে বলা হয়েছে, তার মধ্যে দু'টি রেল দুর্ঘটনায় চালকদের সিগন্যাল নিয়ে পরিষ্কার ভাবে কোনও তথ্যই দেওয়া হয়নি। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পর কমিশন তরফে জানানো হয়েছিল, লোকো পাইলটেরা সংখ্যায় কম থাকায়, সপ্তাহে একজন লোকো পাইলটকে ১২৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়েছিল। যেখানে তাঁদের কাজ করার কথা ১০৪ ঘণ্টা। কমিশন এ-ও জানিয়েছিল, মহিলা লোকো পাইলটদের ঋতুকালীন ছুটি দেওয়া হত না।
সে সময় কমিশন জানিয়েছিল, যেমন একটানা ৩০ ঘণ্টা কাজ করার পর বিশ্রামের প্রয়োজন হয়, তেমনি ১৬ ঘণ্টা কাজের পরেও বিশ্রামের প্রয়োজন। তাই রেলকর্মীরা চাইলে মাসে চার বার এই ছুটির জন্য আবেদন জানাতে পারেন। কমিশন সরকারের কাছে আবেদন করেছিল লোকো পাইলটদের কাজের সময়সীমা সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা এবং দিনে ৮ ঘণ্টা করার জন্য।

কোনও রকম নোটিফিকেশন ছাড়াই গত কয়েক বছরে রেলে কর্মী নিয়োগ কমেছে। ২০১৪ সালে সংবাদমাধ্যম 'ফ্রন্টলাইন' রির্পোট করেছিল, সরকার তরফে রেলমন্ত্রককে নির্দেশ দেওয়া হয়, এক বছর যেন কোনও পদ খালি না থাকে। প্রতিবেদক কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের ভাষ্য কোট করে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করেছেন। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের তরফে জানানো হয়, 'তারা নতুন কর্মী তো নেয়ই না বরঞ্চ পদ বাতিল করে দিয়ে বলে সকল পদ পূর্ণ রয়েছে।' উল্লেখ্য, সেফটি কমিশনের তরফে জানানো হয়েছিল, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর এবং রেলকর্মীদের আন্দোলনের পর ১.৫২ লক্ষ শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ১৮,৭৯৯ জন সহকারী লোকোপাইলট নিয়োগ করার কথা বলা হয়। আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার পর এ-ও জানা যায় যে, নিউ জলপাইগুড়ি (এনজিপি) এলাকায় রেলকর্মীদের জন্য ওয়াকিটকিরও ঘাটতি ছিল। দুর্ঘটনার পর তড়িঘড়ি করে ডিভিশন বেঞ্চ থেকে ওয়াকিটকি আনানো হয়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলেছিলেন, ওয়াকিটকির ব্যবস্থাপনা একটি লাগাতার প্রক্রিয়া। ব্যাটারি খারাপ হলে বা সেট খারাপ হলে তা পুনরায় আনতে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যদি সত্যি তাই হয় তাহলে, গুরুত্বপূর্ণ ডিপার্টমেন্টে বাড়তি ওয়াকিটকি রাখা হয় না কেন? পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ছাড়া ট্রেন চালানোর ঝুঁকি কেন নেওয়া হচ্ছে?

রেলমন্ত্রকের এত এত খামতি থাকার পরও, প্রায় প্রতিটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই রেল কর্তৃপক্ষ সহজেই কর্মীদের উপরে দোষ চাপিয়ে দেয়। ২০২৪-এর শুরুতে অন্ধ্রপ্রদেশের রেল দুর্ঘটনার সময় তৎকালীন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছিলেন, ট্রেনের দুই চালকই ক্রিকেট খেলা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু 'দ্য হিন্দু' সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক রেলকর্মী জানান, এই তথ্যের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পর মালগড়ির চালকের বয়ান ছাড়াই যে ভাবে তাঁকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল তা অমানবিক বললেও হয়তো কম হবে। যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে চালকদের আনা অভিযোগগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

এনসিআরবি-র রিপোর্ট বলছে, ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অন্তত ১ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে রেল দুর্ঘটনায়। এক দশকের হিসেবে সেই সংখ্যাটা প্রায় ২.৬ লক্ষ। ২০২০ সালে ঔরঙ্গাবাদ এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৬ জনের। ২০২২ সালে বিকানের-গৌহাটি এক্সপ্রেসে মৃত্যু হয় ৯ জনের। ২০২৩ সালে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৩০০ জনের। আর চলতি বছর কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ৯ জনের।

কবচ ব্যবস্থা থাকলে, একটি লাইনে দুটি ট্রেন চলে এলেও বিপদের সম্ভবনা বুঝতে পেরে সংঘর্ষের অনেক আগেই ট্রেন দু'টিকে থামিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়। ট্রেন লাইনে কোনও বাধা (পাথর জাতীয়) কিছু থাকলেও একইভাবে রক্ষা পাওয়া যায়। ২০২২ সালে অটোম্যাটিক ট্রেন প্রোটেকশন (এটিপি) সিস্টেম বা 'কবচ' ব্যবস্থার চালু করেছিল রেল মন্ত্রক। দাবি করা হয়েছিল, দুর্ঘটনা এড়াতে এটি নাকি 'নিখুঁত'। কিন্তু এখনও বহু ট্রেনে বসানো হয়নি 'অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস'(কবচ)। এখনও সেই পুরোনো সিগন্যালিং ব্যবস্থা, ভাঙাচোরা কামরা। এর ফলেই করমণ্ডল এক্সপ্রেস, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের মতো দুর্ঘটনাগুলি ঘটেছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই কবচ ব্যবস্থা থাকলে বহু ক্ষেত্রেই হয়তো ওই দুর্ঘটনা অনেকটাই এড়ানো যেত। প্রশ্ন ওঠে, সব জানা সত্ত্বেও কেন সমস্ত ট্রেনে কবচ বসানোর ব্যবস্থা করছে না রেল মন্ত্রক?

রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, কবচ ব্যবস্থা বাস্তবায়িত করতে প্রতি কিলোমিটারে ৫০ লক্ষ টাকা করে খরচ হবে। যার জন্যই গাফিলতি। অথচ প্রতি সপ্তাহে একটি বন্দে ভারত ট্রেনের পেছনে খরচ হয় প্রায় ১১৫ কোটি টাকা। প্রশ্ন উঠছে, এই অর্থ যাত্রী নিরাপত্তায় কেন খরচ করা হয় না? রেলের তরফে মেনে নেওয়া হয়, করোনা পরিস্থিতি থেকে প্রবীণ যাত্রীদের টিকিটের ছাড় বন্ধ করে রেলের বিপুল আয় হয়েছে। প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম দ্বিগুণ করে, প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে 'সুপারফাস্ট' নাম দিয়ে ভাড়া বাড়িয়েও আয় বেড়েছে রেলের। তাহলে এই লাভের অংশ যাত্রী নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হচ্ছে না কেন? প্রশ্ন উঠছে, সাধারণ মানুষের সুরক্ষার সঙ্গে অবহেলা করে অপ্রয়োজনীয় খাতে এবং বিলাসবহুল সুবিধাভোগে টাকা অপচয় করা কি সরকারের গাফিলতি নয়? 'দ্য হিন্দু' সংবাদমাধ্যম বিশ্লেষণ করে বলেছে, ৬৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে কবচ ব্যবস্থা আনতে ৩২ হাজার কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। যা রেল বাজেটের সামান্য অংশ। কিন্তু যে গতিবেগে ওই প্রকল্প রূপায়ণ চলছে, দেশ জুড়ে কবচ ব্যবস্থা আনতে অন্তত আরও ৪৬ বছর সময় লাগবে।

অন্য দিকে, প্রায়শই শোনা যায়, বিমান চালকদের জীবন নাকি রূপকথার উড়ান। কিন্তু সে কথা কি আদৌ সত্যি? ফ্লাইটের পাইলটদের ক্ষেত্রেও বিশ্রাম না পাওয়া, কাজের অনিয়মিত সময় নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালে, ইন্ডিগো- র ৪০ বছর বয়সী পাইলট ক্যাপ্টেন সুব্রাহ্মণ্যম নাগপুর বিমানবন্দরে বোর্ডিং গেটের সামনেই হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। সেদিন তিনি নাগপুর ভায়া পুনে উড়ানের দায়িত্বে ছিলেন। তার আগে ভোর ৩টে থেকে সকাল ৭টার মধ্যে, তিরুঅনন্তপুরম থেকে পুনে ভায়া নাগপুর দু'টি সেক্টর পরিচালনার দায়িত্ব সামলাতে হয়েছিল ক্যাপ্টেন সুব্রাহ্মণ্যমকে। তারপর ২৭ ঘণ্টার বিশ্রামের পর ৪টি সেক্টরে কাজের জন্য তাঁর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। তালিকার প্রথম শিফটেই এই ঘটনা ঘটে। কিছু দিনের মধ্যেই কাতার এয়ারওয়েজের বিমানের এক কর্মীর হঠাৎ মাঝ আকাশে তীব্র বুকে ব্যাথা অনুভূত হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়।

তিন মাসের মধ্যে পর পর এমন দুটি ঘটনায় প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল বিমানচালকদের পরিস্থিতি নিয়েও। বিমানের সুরক্ষা বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এর জন্য পাইলটদের পরিশ্রমকেই দায়ী করেছেন। রয়টার্স-এর তথ্য অনুযায়ী, ক্যাপ্টেন সুব্রাহ্মণ্যমের মৃত্যুর পর বিমান চালক ও কেবিন ক্রুউ-দের কেউ কেউ উপযুক্ত বিশ্রাম না পাওয়া এবং অনিয়মিত কাজের সময় নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তার পরেই বিমানের ক্রুউ-দের কাজের সূচি (রোস্টার)-র নিয়ে নতুন চুক্তি আনা হয়। সেই চুক্তি ১ জুন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২৩- র মার্চ মাসে ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস (এফআইএ), সেই চুক্তিটি পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। FIA-র মধ্যে ইন্ডিগো, এয়ারইন্ডিয়া, স্পাইসজেটের মতো বিমানসংস্থাগুলি রয়েছে।

আরও পড়ুন: লাইনচ্যুত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, মৃত ৫! কীভাবে ঘটল ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা?

২০২৪- র মার্চ মাসে ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) বিবৃতি দিয়ে জানায়, এয়ার ইন্ডিয়াকে ৮০ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা ক্রুদেরকে যথেষ্ট বিশ্রাম দেওয়ার যে নিয়ম রয়েছে, তা মানা হয়নি। সাপ্তাহিক ছুটি তো দূরের, এমনকী দীর্ঘক্ষণের কাজের আগে পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হত না। ডিজিসিএ-এর একটি অডিটে দেখা গিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে বিমান চালক এবং সহকারী চালক দু'জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে। ১৯৩৭ সালের বিমান আইন ২৮- এ ধারা মতে যা বেআইনি। প্রশ্ন উঠেই যায়, এর পরেও কর্মীদের যথেষ্ট বিশ্রাম এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে সুরক্ষা নিয়ে কঠোর বিধিনিষেধ আনা হচ্ছে না কেন? চালক থেকে জনগণ, ব্যবসায়িক ফায়দার জন্য কেন বারবার ঝুঁকি নেওয়া হবে জীবনের?

স্বাভাবিকভাবেই, দীর্ঘ বিমানযাত্রার পর পাইলটেরা ক্লান্ত হয়ে যান। বিমানের নতুন চুক্তি নিয়েও পাইলটদের মধ্যে জিজ্ঞাসা ও উদ্বেগ রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিমান চালকদের সুবিধা বুঝেই কাজের সূচি (রোস্টার) তৈরি করা প্রয়োজন। চালকদের উপরেই নির্ভর করে হাজার হাজার যাত্রীর প্রাণ। ফলে উপযুক্ত পরিষেবা দেওয়ার জন্য তাঁদের সুস্থতা কাম্য। প্রথমত, চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম না দিয়ে একটানা কাজের চাপের সমাধান হওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, চালকদের নিরাপত্তার জন্য যাবতীয় সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। অন্য দিকে, এখন অন্তত বন্দে ভারতের রিল প্রচার বন্ধ করে, রেলের চালক থেকে সকল রেলকর্মীদের যা অভিযোগ তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। যদি কবচ ব্যবস্থা রূপায়িত করতে সত্যি সরকারের অর্থের অভাব হয়, তাহলে বন্দে ভারতে জোর না দিয়ে 'কবচ' - এর জন্যই আর্থিক ব্যয় করা উচিত নয় কি? নয়তো রাষ্ট্র আরও রক্তক্ষয়, মৃত্যু দেখবে। আর ততদিন ভারতীয়দের ভাগ্যের উপর ভরসা করেই রেলযাত্রা, বিমানযাত্রা ভবিতব্য।

More Articles