মহাকুম্ভ থেকে পুরী বারবার যেভাবে পদপিষ্ট মানুষ
Stampede: যাঁদের মৃত্যু হয়েছিল তাঁদের অধিকাংশই প্রায় মহিলা এবং শিশু। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভিড়ের ঠেলায় যাঁরা পড়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের মাড়িয়েই বাকিরা ট্রেন ধরতে এগিয়ে যান।
বছরের শুরুতেই ২৯ জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যায় মহাকুম্ভ মেলায় পুণ্যার্থীদের অতিরিক্ত ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ৩০ জনের (সরকারি হিসেবে)। আহত হন বহু পুণ্যার্থী। এরপর একে একে নিউ দিল্লি রেল স্টেশন থেকে আরসিবি-র পদপিষ্টর ঘটনা, পুরীর রথযাত্রায় পদপিষ্টের ঘটনা। কেন বারবার পদপিষ্টের ঘটনা ঘটছে?
মহাকুম্ভে পদপিষ্ট
২৯ জানুয়ারি ২০২৫, মৌনি অমাবস্যার দিন অত্যাধিক ভক্তদের ভিড়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় মহাকুম্ভে। পদপিষ্ট হয়ে নিহত ও আহত হন বহু ভক্ত। এক দিন পেরিয়ে গেলেও এই বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি ইউপি পুলিশ। এরপর পুলিশি তরফে ৩০ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল। এই সংখ্যা আর আপডেট করা হয়নি। মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা পুলিশ না জানালেও নিহতদের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছিল। বিবিসি-র রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, আরও ২৬টি পরিবারকে ৫ লাখ টাকা নগদ দেওয়া হয়েছে, তবে তাঁদের মৃততালিকায় জায়গা হয়নি। ১১ রাজ্যের ৫০টিরও বেশি জেলা ঘুরে ১০০টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে অন্তত ৮২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে ওই তদন্তে।
কেন্দ্র সরকার এবং উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার দাবি করেছিল, ৪৫ দিনের মহাকুম্ভে মোট ৬৬ কোটি মানুষ এসেছিলেন। এই জনসমাগমকে তাঁরা বিশাল সাফল্য বলে উল্লেখ করেছিলেন। ২০২৫ সালের মহাকুম্ভে ৭,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে সরকার। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কেন মহাকুম্ভে পদপিষ্টের মতো ঘটনা ঘটল? কেন কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা গেল না? প্রশ্ন এও উঠছে, কুম্ভ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা লুকোনো হচ্ছে কেন? কেন আসল ঘটনা চেপে যাওয়া হচ্ছে?
দিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে পদপিষ্ট
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছিল, পদপিষ্টের ঘটনা ঘটার আগে নয়াদিল্লি স্টেশনে ট্রেন সম্পর্কিত ভুল ঘোষণা করা হয়েছিল। ফলে যাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। সে দিন দুপুর থেকেই প্রয়াগরাজের ট্রেনের জন্য নয়াদিল্লি স্টেশনে প্রচুর ভিড় ছিল। ১৪ এবং ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে ওভারব্রিজে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। প্রায় সবাই প্রয়াগরাজমুখী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আচমকাই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ওভারব্রিজ দিয়ে নামতে শুরু করে যাত্রীদের ভিড়। সকলে ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। যাঁদের মৃত্যু হয়েছিল তাঁদের অধিকাংশই প্রায় মহিলা এবং শিশু। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভিড়ের ঠেলায় যাঁরা পড়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের মাড়িয়েই বাকিরা ট্রেন ধরতে এগিয়ে যান। প্রশ্ন উঠছে, কেন যাত্রীদের বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলা হলো? কেন আগেই নিশ্চিত করা গেল না কোন প্লাটফর্মে ট্রেন আসবে?
আরও পড়ুন-জগন্নাথের রথের সামনেই পদপিষ্ট ভক্তরা! পুরীতে বড় বিপর্যয়
আরসিবি পদপিষ্ট
এই প্রথম আরসিবি (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু)-র ঝুলিতে আইপিএল টুর্নামেন্টের ট্রফি এসেছিল ১৮ বছর পর। বিজয় উদযাপনে (৪ জুন, বুধবার) পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১১ জনের। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৩ জন। ম্যাচের পরদিনই সকাল সাতটায় আরসিবি তাদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেল থেকে জানায়, বেঙ্গালুরু বিধানসভা থেকে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম পর্যন্ত বিজয় মিছিল হবে। সেখানে এও জানানো হয়েছিল যে, এর জন্য বিনামূল্যে পাস ডাউনলোড করা যাবে। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার দর্শকের আসন রয়েছে। কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি ভিড় হয়। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া জানিয়েছিলেন, সেদিন ওখানে ২ লক্ষ মানুষ এসেছিলেন। কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গোটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল কেএসসিএ (কর্নাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন) ও আরসিবি। সরকার শুধু অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে। এই ঘটনার পর প্রশাসন ও তার সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছিল।
কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার আরসিবি-কে স্বাগত জানাতে এইচএএল বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন কেন? অন্যদিকে, সকাল ৭ টার মধ্যেই আরাসিবি কার কাছ থেকে অনুমতি পেল, এই প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন উঠছে, বুধবার দুপুরে যখন কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বরের সভাপতিত্বে বৈঠক হয়েছিল, তখন পুলিশ তরফে কেন জানানো হয়নি এত কম সময়ে বিজয় মিছিলের জন্য সবকিছু ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়?
মহিষাদলে রথ টানতে গিয়ে পদপিষ্ট
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলে রথ টানতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়েছেন ১১ জন। ২জনের অবস্থা গুরুতর। স্থানীয়রা অভিযোগ তুলছে, অন্যান্য বছর কড়া নিরাপত্তা থাকলেও এ বছর তেমনটা হয়নি। বেশিরভাগ এনসিবি-র ছাত্র-ছাত্রীদের দেখাশোনার দায়িত্বে রাখা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসনের বড় টিম দিঘায় মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় রয়েছে।
পুরীতে পদপিষ্ট
২৯ জুন পুরীর জগন্নাথ দেবের রথ নন্দীঘোষের চাকার সামনে অত্যাধিক ভিড়ের মধ্যে পদপিষ্ট হয়ে অন্তত তিন পুণ্যার্থীর মৃত্যু হলো। আহত আরও ৫০ জন। আহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। রথযাত্রায় ভক্তদের অত্যাধিক ভিড়ের মধ্যে গুণ্ডিচা মন্দিরে পৌঁছতে দেরি হয়। এ দিন ভোরে মাসির বাড়ি পৌঁছয় রথ। পুরীর মন্দিরের কাছে জগন্নাথ দেবের রথ পৌঁছতেই ভক্তদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। রথযযাত্রায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। ভিড়ের চাপে শনিবার রথ থেকে জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রাকে নামানো যায়নি। রাতভর রথ ঘিরে বহু পূর্ণার্থী ভিড় করেছিলেন। তারা রথের কাছে পৌঁছোনোর চেষ্টা করছিলেন। এতে ব্যারিকেড ভেঙে যায়। ভিড়ের চাপে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় বেশ কয়েকজন পড়ে যান। আর তাতেই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। নিহতদের পরিবারের সদস্য থেকে উপস্থিত ভক্তরা পুলিশ এবং প্রশাসনের ভূমিকার প্রশ্ন তুলছেন। নিহত এক মহিলার স্বামী দাবি করেছেন, বার বার পুলিশ, দমকলকর্মীদের ডেকেছিলেন কিন্তু কেউ সাহায্য করেননি।
উল্লেখিত ঘটনাগুলোয় দেখা গেছে বারবার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন বারবার নিরাপত্তায় খামতি থাকছে? কেন নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যাচ্ছে না? এই সকল ঘটনার দায় কার?