আর তিন মাসের অপেক্ষা! কী কী নতুন ইউরোপীয় মডেলে তৈরি বন্দে ভারত স্লিপারে?

Vande Bharat Sleeper: ইউরোপীয় মডেলে সাজানো ট্রেনটিতে ১৬টি কোচ থাকতে চলেছে, যার মধ্যে ১১টি এসি থ্রি-টায়ার, চারটি এসি টু-টায়ার এবং একটি এসি ফার্স্টক্লাস।

এতদিন ছিল কেবল বসে যাত্রার সুবিধা। দীর্ঘদিন ধরেই রেলযাত্রীদের মধ্যে চর্চার বিষয় ছিল বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। হবে না-ই বা কেন? কার্যত দুরন্ত বা রাজধানীকে রীতিমতো টেক্কা দিয়েছিল বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের গতি আর কেতাদুরস্থ কামরা। আগেই কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল, চেয়ারকারের পর এবার আসতে চলেছে বন্দে ভারতের স্লিপার সংস্করণ। সেই অপেক্ষা আর আর বেশিদিনের নয়। মাস তিনেকের মধ্যেই যাত্রীদের নিয়ে চলাচল শুরু করবে বন্দে ভারত স্লিপার। তেমনটাই জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।

গত বছরের অক্টোবরে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের স্লিপার সংস্করণের কিছু ছবি প্রথম প্রকাশ্যে আনেন। সেই সময়ই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের স্লিপার সংস্করণ আগামী অগস্টের মধ্যেই চলে আসবে। অগস্টে অবশ্য হয়নি। তবে খুব বেশি আর অপেক্ষা করতে হবে না স্লিপার ক্লাস বন্দে ভারতের জন্য। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে বন্দে ভারত স্লিপার কামরার কাজ পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন রেল প্রতিমন্ত্রী ভি সোমান্নাও। ইতিমধ্যেই স্লিপার কামরাযুক্ত বন্দে ভারতের একটি নমুনা বা প্রতিরূপ তৈরি হয়েছে। সেগুলিতে কী কী সুবিধা রাখা হয়েছে, কেমন হয়েছে তার নকশা, সেসব সেদিন খতিয়ে দেখেন তিনি। তারপর অশ্বিনী জানিয়েছেন, আগামী দশ দিন সব রকম ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে এটিকে। তার পর এটি রেল লাইনে নামিয়ে আরও পরখ করা হবে। সব ঠিক থাকলে তিন মাসের মধ্যেই যাত্রী পরিষেবার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে এই বন্দে ভারত স্লিপার।

আরও পড়ুন: ‘পাঁচতারা’-র স্বাচ্ছন্দ্য! গরম জলে স্নানের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে যা যা থাকছে বন্দে ভারত স্লিপারে

রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, ১৬ কামরার বন্দে ভারত স্লিপার ট্রেন এক রাতে ৮০০-১২০০ কিলোমিটার যাত্রাপথ অতিক্রম করতে পারবে। করোনাপর্ব থেকে শিক্ষা নিয়ে ট্রেনের মধ্যে অক্সিজেনের মাত্রা ও ভাইরাস থেকে সুরক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বন্দে ভারত স্লিপারে যাত্রার খরচ কেমন পড়বে, তা নিয়েও মন্তব্য করেছেন অশ্বিনী। তিনি বলেন, “এই ট্রেন মধ্যবিত্তের জন্যই তৈরি। ভাড়া হবে রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো।” রাতে ট্রেনে চাপলে সকালে গন্তব্যে নামিয়ে দেবে এই ট্রেন। যতদূর জানা যাচ্ছে, ১৬০ কিমির গতিবেগে ৮০০ কিলোমিটার থেকে ১,২০০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে চালানো হবে বন্দে ভারতের স্লিপার সংস্করণটি।

Vande Bharat Sleeper Version Unveiled: A glance at the spectacular trainset

বন্দে ভারতের এই ট্রেনে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি যে বিশেষ করে খেয়াল রাখা হয়েছে, তা তো ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। রেলমন্ত্রী জানিয়েছে, অন্দরসজ্জা, যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য এবং ট্রেন চালানোর প্রযুক্তির দিকে যেমন নজর দেওয়া হয়েছে, তেমনই কোচের ভিতরের সুরক্ষা নিয়েও চিন্তাভাবনা করে বার্থগুলিকে হালকা অথচ মজবুত করা হয়েছে। কী কী থাকছে এই বিশ্বমানের ট্রেনে? থাকছে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় দরজা, রিডিং লাইট, একাধিক ইউএসবি চার্জিং পয়েন্ট, আরও উন্নত বাতানুকূল ব্যবস্থা এবং অবশ্যই উন্নত শৌচাগার-সহ একাধিক সুবিধা।

যতদূর জানা গিয়েছে, ইউরোপীয় মডেলে সাজানো ট্রেনটিতে ১৬টি কোচ থাকতে চলেছে, যার মধ্যে ১১টি এসি থ্রি-টায়ার, চারটি এসি টু-টায়ার এবং একটি এসি ফার্স্টক্লাস। ১১টি এসি থ্রি-টায়ার কোচে মোট বার্থের সংখ্যা হবে ৬১১টি। ৪টি এসি টু-টায়ার কোচ মিলিয়ে ১৮৮টি এবং এসি প্রথম শ্রেণির কোচে ২৪টি বার্থ থাকবে। জনসাধারণের জন্য ঘোষণার ব্যবস্থা ছাড়াও ভিজ়্যুয়াল ইনফরমেশন সিস্টেম, ডিসপ্লে প্যানেল এবং সিকিউরিটি ক্যামেরা থাকবে ট্রেনটির নয়া সংস্করণে।

এখানেই শেষ নয়। বন্দে ভারতের স্লিপারের প্রথম শ্রেণির কোচে যাত্রীদের আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য গরম জলও মিলবে। বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য থাকবে আলাদা উন্নতমানের শৌচাগার। নতুন ট্রেনে বার্থে ওঠার ক্ষেত্রে বয়স্ক যাত্রীদের যাতে অসুবিধা না হয়, সে দিকেও বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কামরার ভিতরে বিভিন্ন উপকরণ থেকে যাত্রীদের যাতে আঘাত না লাগে, সে দিকেও বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। থাকছে নতুন ভাইরাস সুরক্ষা সিস্টেমও।

Vande Bharat Sleeper Version Unveiled: A glance at the spectacular trainset

কিছুদিন আগেই একটি স্লিপার ট্রেনের মিডল বার্থের শিকল ভেঙে পড়ে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন এক যাত্রী। এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে বন্দে ভারতে যাতে না ঘটে, তার জন্য বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। বার্থের সুরক্ষা মজবুত করতে শিকলের বদলে স্টিলের মোটা পাত ব্যবহার করা হয়েছে। বার্থে থাকছে অতিরিক্ত কুশন। উপরের বার্থে ওঠার জন্য ল্যাডারের নকশা অনেকটাই বদলে ফেলা হয়েছে। লাগেজের জন্য থাকছে বিশেষ জায়গা। ট্রেনের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়েছে ক্রাশ বাফার। বলা হয়েছে, এই কোচে সফর হবে আরও মসৃণ, ঝাঁকুনি বিহীন। পাশাপাশি দুর্ঘটনা এড়াতে এই ট্রেনে ‘কবচ সিস্টেম’ ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী। পাশাপাশি উন্নতমানের অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থাও থাকছে এই ট্রেনে। প্রতিটি কামরায় থাকবে অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র।

আরও পড়ুন: Budget 2024: বন্দে ভারতেই মন! সাধারণ ভারতীয়রা ব্রাত্যই নির্মলার রেল বাজেটে

প্রাথমিক ভাবে মাঝারি দূরত্বে যাতায়াতের জন্যই রেলমন্ত্রক চালু করেছিল বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন। এখন গোটা দেশ জুড়ে চলছে ৪১টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। এবার এক্সপ্রেস ট্রেনের পরে বন্দে ভারতের স্লিপার সংস্করণের দিকেই মন দিয়েছে মন্ত্রক। সূত্রের খবর, সব ঠিকঠাক থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বন্দে ভারতের ৮০০টি স্লিপার এক্সপ্রেস তৈরি করতে চায় রেল।

এদিকে অতীতে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। বন্দে ভারতের খাবারের মান খারাপ, এমন অভিযোগও উঠেছে বিভিন্ন সময়ে। নতুন স্লিপার সংস্করণে সে ব্যাপারে কি কোনও পদক্ষেপ করছে রেল? যদিও এ বিষয়ে প্রশ্নে রেলমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ভারতীয় রেল দিনে ১৩ লাখ প্লেট খাবার পরিবেশন করে। সেখানে অভিযোগ ০.০১ শতাংশেরও কম। তবে যে অভিযোগগুলি আসে, সেগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয় বলেই দাবি অশ্বিনীর।

More Articles