৪৬টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে! শহর কলকাতায় কেন কাজ করল না মমতা-ম্যাজিক?
Lok Sabha Election 2024: এবার দেখা যাচ্ছে, অন্তত পাঁচ বোরো চেয়ারপার্সনের ওয়ার্ডেও স্বস্তিতে নেই শাসক দল। দেবলীনা বিশ্বাস, সাধনা বসু, জুঁই বিশ্বাস, সুদীপ পোল্লে, সুস্মিতা ভট্টাচার্যের ওয়ার্ডে এগিয়ে বিজেপি।
লোকসভা ভোটে প্রায় নিরঙ্কুশ জয় ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। বহু ক্ষেত্রেই প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফল করেছে ঘাসফুল শিবির। তবু সেই ফলাফলও যেন খুশি করতে পারছে না তৃণমূল সুপ্রিমো তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়কে। আসলে লোকসভা ভোটে জেলা জেলায় যতটা ভালো ফল করেছে বিজেপি, ততটা ভালো ফল হয়নি মহানগরে। কলকাতার মাত্র দুটি আসনে এই লোকসভা ভোটে জয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছে তৃণমূল। কিন্তু কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ছেচল্লিশটিতেই আসলে কেল্লাফতে করেছে বিজেপি। এমনকী সন্দীপন সাহা, সন্দীপ বক্সি, দেবাশিষ কুমারের মতো মেয়র পারিষদদের ওয়ার্ডেও মেলেনি জয়। যা সামান্য হলেও ভাবাচ্ছে তৃণমূলকে।
ভোট মিটলে প্রায় সমস্ত দলই আত্মসমালোচনায় মেতে ওঠে। ঠিক কোন কোন জায়গায় ভুল, কোথায় নজর দিলে পরবর্তীকালে আরও ফল ভালো হতে পারে, সেই পর্যালোচনা আসলে আরম্ভ হয়ে যায় ভোটের পর দিন থেকেই। আর এবার দেখা যাচ্ছে, অন্তত পাঁচ বোরো চেয়ারপার্সনের ওয়ার্ডেও স্বস্তিতে নেই শাসক দল। দেবলীনা বিশ্বাস, সাধনা বসু, জুঁই বিশ্বাস, সুদীপ পোল্লে, সুস্মিতা ভট্টাচার্যের ওয়ার্ডে এগিয়ে বিজেপি। যাদবপুরে তৃণমূল জিতলেও রানিকুঠি, নেতাজি নগর, গান্ধী কলোনির মতো জায়গায় তুলনামূলক বেশি ভোট পেয়েছে বাম। অথচ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে পুরনির্বাচনে কলকাতার ১৩২টি ওয়ার্ডই জিতে নিয়েছিল তৃণমূল। মাত্র আড়াই বছরের ব্যবধানে কেন শহর কলকাতাতেই ধাক্কা খেতে হচ্ছে তৃণমূলকে, তা স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তায় রেখেছে দলীয় নেতৃত্বকে।
আরও পড়ুন: সাংসদ হতেই ধাক্কা! বন্ধ হয়ে যেতে চলেছে রচনার দিদি নম্বর ১?
যতদূর জানা যাচ্ছে, এই ফলাফল বিশ্লেষণের জন্য আগেই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আর সেই নির্দেশ পাওয়ার পরেই কাজে লেগে পড়েছেন উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল নেতাকর্মীরা। যা দেখা যাচ্ছে, তাতে কলকাতা পুরসভার শেষ ভোটে তৃণমূল জিতেছিল মোট ১৩২টি ওয়ার্ডে। তিনটি ওয়ার্ডে বিজেপি, দু'টি ওয়ার্ডে বামেরা, দুটি ওয়ার্ডে কংগ্রেস ও তিনটি ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। ভোট মিটতে নির্দলেরা যোগ দেন তৃণমূলে। কিন্তু এবার যেন সেই অঙ্ক মেলেনি। কলকাতায় এমন অনেক ওয়ার্ড রয়েছে যেখানে তৃণমূলের ‘লিড’ একশোরও কম। যেমন, ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়ে মাত্র ১৪ ভোটে। ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়ে ৩৩ ভোটে। ১৩২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের লিড ৭৩। আক্ষরিক অর্থে এগিয়ে থাকা বলতে, মেটিয়াবুরুজ! গার্ডেনরিচের ১৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে ২৩ হাজার ৯১৩ ভোট এবং ১৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ২০, ১৩৮ ভোটের ‘লিড’-এর পাহাড় তৃণমূলের।
এবার কলকাতার পুর এলাকার ফলাফলের প্রবণতাটাই সম্পূর্ণ অন্য। কিন্তু কেন? দলের একটি অংশ মনে করছে, স্থানীয় ভোট ও দেশের ভোটের মধ্যে ভোটারদের মানসিকতাগত তফাৎ থাকে। এ ক্ষেত্রেও সেই পার্থক্যটাই কি ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে। দলের কেউ কেউ মনে করেছেন, এটা কোনও নতুন ব্যাপার নয়। শহরাঞ্চলে এমনটা বরাবরই হয়ে থাকে। দেশের শহরাঞ্চলের একটা বড় অংশই নরেন্দ্র মোদিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবার দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুরভোটের সময় যে এই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হবে এমনটা নয়। তা সত্ত্বেও দলের উচিত এর সঠিক কারণ অনুধাবন করা।
কলকাতা পুরসভার নিরিখে এই ফলাফল সম্পর্কে প্রশ্ন করায় কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তথা কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘ফলাফল নিয়ে এখনই প্রকাশ্যে কিছু বলার মতো সময় আসেনি। তবে সার্বিক ভাবে কলকাতার ফলাফল আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি। কোন ওয়ার্ডে কী ফল হয়েছে, তার প্রত্যেকটির ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। দলের অভ্যন্তরে সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরেই প্রকাশ্যে কিছু বলা সম্ভব।’’ দক্ষিণ কলকাতার প্রাক্তন কাউন্সিলর অবশ্য মনে করছেন, সব ওয়ার্ডে হারের কারণ এক হতে পারে না। কোনও ক্ষেত্রে একটি ওয়ার্ডে ভোটারেরা হয়তো লোকসভা ভোটে দিল্লির দিকে তাকিয়ে ভোট দিয়েছেন। কোথাও আবার স্থানীয় পুর পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভের কারণে মানুষ বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:‘বিজেপিতে খারাপ হলেই দায় আমার?’ হঠাৎ কেন অভিমানী বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু?
গ্রামাঞ্চলে তৃণমূলের জয়ের নেপথ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো জনমোহিনী প্রকল্প কি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে কি শহরে সেই ম্যাজিক ঠিক মতো কাজ করেনি মমতার? কীভাবে সেই ব্যবধান দূর করবে তৃণমূল? এর জন্য কি নতুন স্ট্র্যাটেজি ভাবছে তৃণমূল? সেক্ষেত্রে কী হতে চলেছে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ? আত্মবিশ্লেষণ ও পরিস্থিতি পর্যালোচনার মাধ্যমে আপাতত সেই সিদ্ধান্তেই আসতে চাইছে মা-মাটি-মানুষের দল।\