রেগে থাকি তাই হাত কাঁপে না : ফাঁসুড়ে মহাদেব মল্লিক
Mahadev Mallick: সঞ্জয়কে ফাঁসি দিতে মহাদেবের হাত কাঁপবে না বলেই ফোনের ওপার থেকে ইনস্ক্রিপ্টকে জানান মহাদেব মল্লিক।
১৮ জানুয়ারি, ঘটনার ১৬২ দিনের মাথায় আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিল শিয়ালদহ আদালত। সোমবার সঞ্জয় রায়ের শাস্তি ঘোষণা করতে চলেছেন বিচারক অনির্বাণ দাস। সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছিল ১০ অগাস্ট। তরুণীর দেহ উদ্ধারের ঠিক পরের দিনই। সিবিআই তদন্ত করে একক দোষী হিসেবে সঞ্জয়ের নামেই চার্জশিট দেয়। আদালতও সঞ্জয়কেই দোষী সাব্যস্ত করেছে। এই অপরাধে সঞ্জয়ের হয় কারাদণ্ড হতে পারে যাবজ্জীবনের, অথবা হতে পারে ফাঁসি। আর সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির সাজা হলে তা কার্যকর করতে ডাক পড়বে মহাদেব মল্লিকের। কে এই মহাদেব মল্লিক? হেতাল পারেখ ধর্ষণের ঘটনায় ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে যে ফাঁসুড়ে নাটাদেব মল্লিক ফাঁসি দিয়েছিলেন, তাঁর ছেলে মহাদেব। কলকাতা পুরসভার কর্মচারী তিনি। এখনও অবধি তিনটি ফাঁসি দিয়েছেন মহাদেব।
একজন মানুষকে ফাঁসি দেওয়া তাঁর পেশা! কীভাবে এই পেশায় এলেন মহাদেব? বাবা নাটাদেব মল্লিকের সহকারী হিসাবে এই কাজের শুরু তাঁর। ২০০৪ সালে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে ফাঁসি দেওয়ার সময় প্রেসিডেন্সি জেলে বাবার সহকারী ছিলেন মহাদেব। তবে সঞ্জয়কে ফাঁসি দিতে হবে তাঁকেই যদি সরকার নির্দেশ দেয়। কারণ এখন আর এই কাজে দক্ষ পুরনো লোক নেই বলেই জানিয়েছেন মহাদেব। একজন পুরনো লোক আছেন, তিনি ফোন করে মহাদেবকে বলেছেন, চিন্তা না করতে। তিনি আছেন। তাঁর নাম অজিত, বয়স ৭০ বছর। মহাদেব মল্লিকের বয়সও ৬০ হতে চলল।
আরও পড়ুন- ধনঞ্জয়কে ফাঁসি দিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন নাটা মল্লিক! কেমন হয় জল্লাদের জীবন?
সঞ্জয় রায়কে ফাঁসি দিলে নাটা মল্লিকের উত্তরসূরি হিসেবে এই কাজ সামলাতে হবে মহাদেবকে। ফাঁসির শাস্তি কার্যকর করতে কতখানি সময় লাগে? মহাদেব জানিয়েছেন, "আসামিকে হাতা পরানোর পর খুব বেশি সময় লাগে না।" এক ঘণ্টারও কম সময় লাগে, আধঘণ্টায় পুরো কাজটা হয়ে যায় বলে জানান ফাঁসুড়ে মহাদেব মল্লিক। ফাঁসুড়েদের কি কখনও আক্ষেপ হয় এই ধরনের কাজের পরে? জানা যায়, ধনঞ্জয়কে ফাঁসি দেওয়ার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন নাটা মল্লিক। সেটিই ছিল তাঁর কর্মজীবনের শেষ ফাঁসি।
তবে সঞ্জয়কে ফাঁসি দিতে মহাদেবের হাত কাঁপবে না বলেই ফোনের ওপার থেকে ইনস্ক্রিপ্টকে জানান মহাদেব মল্লিক। “ভগবানতুল্য চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণ যে করেছে তার প্রতি মায়া কীসের? ওঁ বেঁচে থাকলে কত মানুষকে বাঁচাতে পারত,” বলছেন মহদেব। তাছাড়া ফাঁসি দেওয়ার সময় যাতে দোষীর প্রতি কোনও মায়া না আসে, তার জন্য অপরাধীর অপরাধের ঘটনা মনে করে নিজের মধ্যে রাগ জাগ্রত করেন বলে জানান মহাদেব।
আরও পড়ুন- ধনঞ্জয়-সঞ্জয় একই মুদ্রার দুই পিঠ? ৩৪ বছর আগের ঘটনা কেন এত প্রাসঙ্গিক?
পৃথিবীর বহু দেশেই ফাঁসি তুলে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে আমাদের দেশেও ফাঁসির শাস্তি তুলে দেওয়ার দাবি উঠেছে। কোনও ভয়ানক নৃশংস অপরাধের ঘটনা ঘটলে জনসাধারণ সাধারণত চূড়ান্ত শান্তি হিসেবে ফাঁসিই চান, ফাঁসির দাবিই তোলেন। বিশেষ করে ধর্ষণের ক্ষেত্রে তাই 'হ্যাং দ্য রেপিস্ট' কথাটি বহু প্ল্যাকার্ডে জ্বলজ্বল করে। 'ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের' দাবি উঠলেও একজন মানুষকে প্রাণে না শেষ করে যাবজ্জীবনের সাজা দিয়ে জীবন শোধরানোর সুযোগের কথা বলেন অন্য আরেকদল। তবে মহাদেব মল্লিক মনে করেন, ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধে ফাঁসিই সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। "আমার বাড়িতেও বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে আছে। এগুলো কি ভালো? কাল আমার ঘরের মেয়ের সঙ্গেও তো হতে পারে!" ফাঁসির পক্ষে এই যুক্তিই দিয়েছেন মহাদেব।
উল্লেখ্য, ধনঞ্জয়ের ফাঁসির আগে ১৯৯১ সালে নিজের কাকার গোটা পরিবারকে খুনে অভিযুক্ত কার্তিক শীল আর সুকুমার বর্মনের জোড়া ফাঁসির সাজা কার্যকর করেছিলেন মহাদেব, তবে তা নাটা মল্লিকের সহকারি হিসেবেই। ১৯৮৭ সালে ফাঁসি দেওয়ার কাজে তাঁর হাতেখড়ির সুযোগ আসে। তবে ওই ফাঁসি শেষ পর্যন্ত হয়নি। গড়িয়াহাটের বণিক পরিবারের গৃহবধূ খুনের মামলার আসামি চন্দ্রনাথের ফাঁসির আদেশ হয়ে গিয়েও পরে রদ হয়। চন্দ্রনাথ বণিকের ফাঁসি রদ হয়ে যাবার পর মহাদেব পরের কাজ পান ছ’বছর পর, ১৯৯৩-তে। জোড়া ফাঁসির কাজ। মহাদেব মল্লিকরা তিন পুরুষ ধরে ফাঁসুড়ে। তবে আগামী প্রজন্ম আর এই পেশায় আসবে না, আগ্রহও নেই।