কত ভোট পড়ল জানাতে এত দেরি! কারচুপি লুকোতে চাইছে নির্বাচন কমিশন?

Election Commission Voting Data: প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রের ভোটারদের সংখ্যা এবং সেই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত বিধানসভা কেন্দ্রগুলিও কমিশনের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে না কেন?

ভারতের নির্বাচন কমিশন লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দুই দফায় ভোটারদের চূড়ান্ত সংখ্যা প্রকাশ করেছে। নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ভোটের দুই পর্যায়েই ৬৬ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। তথ্য অনুযায়ী, লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ৬৬.১৪ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন এবং দ্বিতীয় দফায় ৬৬.৭১ শতাংশ৷ প্রথম দফার ভোট হয় ১৯ এপ্রিল, তারপরে ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার ভোট হয়। তবে প্রতিটি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা প্রকাশ করেনি কমিশন। ভোটের এই শতাংশ নিয়ে বিরোধী নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন। কী অভিযোগ তাঁদের?

নির্বাচন কমিশন উল্লেখ করেছে, প্রথম দফায়, পুরুষ ভোটার ৬৬.২২ শতাংশ, মহিলা ৬৬.০৭ শতাংশ এবং তৃতীয় লিঙ্গ ৩১.৩২ শতাংশ৷ দ্বিতীয় দফায় পুরুষ ভোটার ছিলেন ৬৬.৯৯ শতাংশ, মহিলা ভোটার ৬৬.৪২ শতাংশ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২৩.৮৬ শতাংশ৷

আরও পড়ুন- ভোটে-যুদ্ধে সব ‘জায়েজ’! কংগ্রেসকে পথে বসিয়ে কেন বিজেপিতে যেতে বাধ্য হলেন প্রার্থী?

কমিশনের এই তথ্য প্রকাশ করার পরে, অনেক বিরোধী নেতাই X-হ্যান্ডেলে লিখছেন, এই সংখ্যা জানাতে এত দেরি কেন? কেন প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রের ভোটারদের সংখ্যা প্রকাশ করা হলো না? কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ লিখেছেন, “এই প্রথমবার, প্রথম দফার ভোটের ১১ দিন পরে এবং দ্বিতীয় দফার চার দিন পরেও, ECI চূড়ান্ত ভোটার সংখ্যা প্রকাশ করেনি। অতীতে, ভোট দেওয়ার পরপরই বা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার সংখ্যা প্রকাশ করত কমিশন। এখন কমিশনের ওয়েবসাইটে শুধুমাত্র ভোটগ্রহণের আনুমানিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে। এই দেরি হওয়ার কারণ কী?"

জয়রামের প্রশ্ন, প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রের ভোটারদের সংখ্যা এবং সেই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত বিধানসভা কেন্দ্রগুলিও কমিশনের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে না কেন? শুধুমাত্র একটি রাজ্যের মোট ভোটার এবং প্রতিটি বুথে ভোটারের সংখ্যাকেই দেখাচ্ছে কেন কমিশন?

 

তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন বলছেন, দ্বিতীয় দফা শেষ হওয়ার চার দিন পরে, নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ভোটের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে৷ ৪ দিন আগে কমিশন যা প্রকাশ করেছে তার থেকে ভোটে ৫.৭৫% বৃদ্ধি! বিষয়টা আদৌ স্বাভাবিক কিনা প্রশ্ন তুলেছেন ডেরেক।

সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও প্রশ্ন তুলেছেন। লিখেছেন, “অবশেষে ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রথম দুই দফার ভোটারদের ভোটদানের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে যা উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রাথমিক পরিসংখ্যানের চেয়ে বেশি। কিন্তু কেন প্রতিটি সংসদীয় আসনে ভোটারদের সংখ্যা প্রকাশ করা হচ্ছে না? এই পরিসংখ্যান জানা না থাকলে শতাংশ জানা অর্থহীন।"

ইয়েচুরির বক্তব্য, ফলাফল হেরফের হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে কারণ গণনার সময় মোট ভোটার সংখ্যা পরিবর্তন করা যেতে পারে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটার সংখ্যা কমিশনের ওয়েবসাইটে ছিল! এখন নেই! বিষয়টাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রাজনৈতিক কর্মী যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন বিষয়টি 'অস্বাভাবিক এবং উদ্বেগজনক'। ভোটারদের ভোটদানের তথ্য প্রকাশে ১১ দিন লেগে গেল এবং তাও প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা এবং এর বিধানসভা বিভাগে ভোটারদের প্রকৃত সংখ্যা এবং ভোট সংখ্যার উল্লেখ যে নেই, বিষয়টি চিন্তার।

 

আরও পড়ুন- দেশছাড়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নাতি, কোন যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে এই সাংসদ?

"আমি গত ৩৫ বছর ধরে ভারতীয় নির্বাচন দেখেছি এবং তা নিয়ে চর্চা করছি,। ভোটের দিন সন্ধ্যায় এবং চূড়ান্ত ভোটদানের পরিসংখ্যানের মধ্যে ৩% থেকে ৫% পার্থক্য অস্বাভাবিক ছিল না কিন্তু আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চূড়ান্ত তথ্য পেতাম," বলছেন যোগেন্দ্র। যোগেন্দ্র যাদব উল্লেখ করেছেন, এই তথ্যটি প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের জন্য কমিশন ফর্ম ১৭-এ রেকর্ড করে এবং প্রার্থীদের এজেন্টদের কাছেই তা পাওয়া যায়। যত ভোট পড়ল এবং যত ভোট গণনা করা হলো, তার মধ্যে কারচুপি বা অমিলের সম্ভাবনা দূর করতে মোট তথ্য দিতে হবে।

মোট ৫৪৩টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১০২টি আসনে ১৯ এপ্রিল এবং ৮৮টি আসনে ২৬ এপ্রিল ভোটগ্রহণ হয়েছে। এরপর ৭ মে, ১৩ মে, ২০ মে, ২৫ মে এবং ১ জুন ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। ভোট গণনা এবং ফলাফল ঘোষণা করা হবে ৪ জুন।

More Articles