একুশ শতকের কবি উৎপলকুমার বসু : পাঠ, পুনর্পাঠে যে ভাবে তিনি ধরা দেন আজও

Remembering Utpal Kumar Basu: উৎপলকুমার বসু আনন্দ পুরস্কার ও সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন, তবে এই সম্মানগুলি পেয়েছেন অনেক পরে, যখন পাঠক তাঁর কবিতা, সম্যকভাবে বুঝতে শুরু করেছে।

১৯৯১, বাংলা কবিতার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। এই বছর উৎপলকুমার বসুর এযাবৎ লিখিত কবিতার বড় অংশ এক মলাটে শ্রেষ্ঠ কবিতা নাম দিয়ে অগ্রন্থিত কবিতাসমেত মুদ্রিত হল বলে? না, এটি অবশ্যই একটি বড় ঘটনা কিন্তু এই বইয়ের ভূমিকা বাংলা সাহিত্যকে একটি বড় ঝাঁকুনি দেয়। কোনো কবিতার বইয়ের ভূমিকা যে এরকম হতে পারে আমাদের ধারণায় ছিল না। আসলে এই ভূমিকাই আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছিল পরবর্তীকালের উৎপলের কবিতার অভিমুখ এবং গদ্যেরও।

‘আমাদের অধ্যাপক (বাংলার) এবং তাঁর স্ত্রী (শান্তিনিকেতন) পরস্পরকে ডাকেন সুচারু বলে এবং তাদের (একমাত্র) সন্তানের নাম যাজ্ঞবল্ক্য— যে (নিজের) বাপের নাম ভুল উচ্চারণে বলে অনাদনাদ রায়…
…আমি দেখি তারই গভীর মেরু–কোমরের খাঁচ এবং কৃশপিঠের নিচে ফুলে ওঠা মেশিনের মতো নিতম্ব, ধক্ ধক্ শব্দে নড়ে ওঠে বেসামাল চর্বি ও বারুদের অপপ্রচার (কোন্ টাইমে আসবো) আমি চোখ মেলে দেখি অল্প দূরে (অর্থাৎ নিচে) আলো ও ছায়ার বীজগণিত, তারই চমকপ্রদ সমাধান, ধাঁধা ও প্রশ্নোত্তরে বলো, আমার মাথার মধ্যে আর্তনাদ করে ওঠে কবিতা, তারপর স্থির হয়, আমি হতাশ–আড়ষ্ট হয়ে লিখি ‘‘বুলেট–বেঁধা মহান কাচ। আজও অটুট’’ ’

(ভূমিকা–১–শ্রেষ্ঠ কবিতা, প্রকাশক প্রতিভাস)

১৯৯৪, প্রায় অনাস্বাদিত একদম নতুন ধরনের গদ্য নিয়ে প্রকাশিত হয় ‘ধূসর আতাগাছ’। চমকপ্রদ— এর ভূমিকাও। গদ্য ও কবিতার মার্জিন ভাঙা এই লেখাগুলি সূচিত করে উৎপলের পরবর্তী কবিতার অভিমূখ বিশেষত ভূমিকাটি।

‘ঐ আমার জ্যাঠামশাই, ওয়েলপেনটিন, পাশে জেটি, জেটমালানি, মোচবান, মানে ঐ জ্যাঠা, জেটি বোরখাসুন্দরী, বালকহাসি, ঘেরাটোপে ঘেরা, এই যে আমার দিকে তাকান, আরেকটু মুখটি ঘুরিয়ে বাঃ, বেশ হয়েছে, জ্যাটা দাড়িদণ্ডিত, দম্ভকালো…’

এই ভাবেই শুরু হয়েছে ধূসর আতাগাছের বিস্তৃত ভূমিকাটি। আরও পরে নান্দীমুখ সংসদ থেকে প্রকাশিত হয় গদ্য সংগ্রহ ১— সেই সংকলনের ভূমিকা হিসাবে উৎপলকুমার বসু ব্যবহার করেন এই লেখাটিকে। নিজের সমস্ত গদ্যের মুখবন্ধ করে দেন এই লেখাটিকে।

আরও পড়ুন

ট্রাম না-থাকলে কত যে নাইট শো জীবনে দেখাই হত না!

১৯৯৯, গান্ধার থেকে প্রকাশিত হল উৎপলকুমার বসুর কবিতার বই—যথারীতি– এক ফর্মার। ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’র ভূমিকা থেকে যে পথে উৎপলকুমার এগোচ্ছিলেন ‘ধূসর আতাগাছ’ পার হয়ে তাকে পূর্ণ রূপ দিলেন এই বইয়ে। তিনি কাজ করছিলেন স্পিচ নিয়ে এজরা পাউন্ড অনুরাগী উৎপল সরে আসতে চাইছিলেন ইমেজ থেকে, নির্ভর করলেন স্পিচের উপর। এই বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে শেষ লেখা অবধি মণিমাণিক্য ছড়ানো।

‘গোল হয়ে বোস তোরা, আজকের নাইট ক্লাস অন্যরকম, সান্ডেলদের ছোট ছেলেটা এসেছে তো, এই তুই এশ্চিস না এসিসনি, হাঃ হাঃ শোনো কথা বলে কিনা আমি এসিনি, কিন্তু তোর গলা কি আমি চিনি নে রে, …’

এই বইয়ের একটি কবিতা আমি পাতিরামে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম—একটি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল— চমকে উঠেছিলাম। বাংলা কবিতা!

‘ইধর আও ভজনলালা, দেখো ইয়ে ক্যা হ্যায়, সত্যিই কাদার উপর প্রায় দু–ইঞ্চি, চওড়ায় সাড়ে তিন, আপনাদের আগেই বলেছি, জায়গাটা আইডিয়াল…’

শ্রেষ্ঠ কবিতার ভূমিকায় যে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই বইয়ে এসে বৃত্ত সম্পূর্ণ হল যেন।

আমি উৎপলদার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেয়েছিলাম, আমার জীবনের পরম প্রাপ্তি। উৎপলদার প্রসঙ্গ এলে কলক্যুয়ামের কথা আসবেই। কী সে–ই কলক্যুয়াম। আড্ডায় অনেক সময়ই আলোচনা জমে যেত রাতের দিকে, তখন আলোচনা অসম্পূর্ণ রেখে অতৃপ্তি নিয়ে উঠে পড়তে হত, এই ঘাটতি মেটানোর জন্যই কলক্যুয়াম শুরু হয়— যার প্রাণকেন্দ্র ছিলেন উৎপলকুমার বসু এবং পার্বতীকুমার মুখোপাধ্যায়। প্রথম কলক্যুয়াম হয়েছিল পার্বতীদার ঘাটশিলার বাড়িতে ১৯৯৪ সালে। প্রথম কলক্যুয়ামের আলোচনাগুলি নিয়ে যোগসূত্র পত্রিকা একটি সমৃদ্ধ সংখ্যা প্রকাশ করেছিল। ১৯৯৪ সালে সংঘটিত এই কলক্যুয়াম উপস্থিত ছিলেন উৎপলকুমার বসু, পার্বতীকুমার মুখোপাধ্যায়, গণেশ হালুই, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, কালীকৃষ্ণ গুহ, মাধবেন্দ্রনাথ মিত্র, মিহির চক্রবর্তী, প্রদীপ বসু, মানস রায়, নমিতা চৌধুরী, শিবাজী্প্রতীম বসু প্রমুখ।

আমি প্রথমবার কলক্যুয়ামে যাই ১৯৯৯ সালে, ব্যারকপুরে ইউবিক হোটেলে। সে ছিল আমার কাছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। সারাদিন বৌদ্ধিক চর্চা আর সন্ধ্যার পর গান, নাচ, কবিতা পাঠ এবং অবশ্যই পকেট আড্ডা, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে নিজেদের মধ্যে আড্ডা মারা। এখানেও উপস্থিত ছিলেন উৎপলকুমার বসু, পার্বতীকুমার মুখোপাধ্যায়, কালীকৃষ্ণ গুহ, যোগেন চৌধুরী, বিজন চৌধুরী, মাধবেন্দ্রনাথ মিত্র, হিরণ মিত্র, মিহির চক্রবর্তী, সুহৃদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ। এই সহস্রাব্দের প্রথম দশকে কলক্যুয়াম হয়েছিল শংকরপুর–এ পর পর তিনবার, স্থান নির্বাচন করেছিলেন অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়—তখন তিনি ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি।

উৎপলদা, পার্বতীদার জীবনাবসানের পরও কলক্যুয়াম সংঘটিত হয়েছে দু’বার। শেষবার ২০২৩–এ, শান্তিনিকেতনে। ওই সব দিনগুলো আজ স্বপ্নের মতো মনে হয়। আমার একটু তাড়াতাড়ি ছুটি হোত। তাই আগে আগে গিয়ে আমি কফি হাউসে একটা টেবিলের দখল নিতাম বলা যায়। তখন শহীদল (সুহৃদ শহীদুল্লাহ) কলকাত বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পড়ছিল, ও ক্লাস করে চলে আসত বা অন্য কোনো টেবিলে থাকলে উঠে আসত, শম্ভু রক্ষিতও অন্য টেবিলে থাকলে চলে আসতেন। কিছু পরে নবনীতা (নবনীতা সেন, পরে ভাষালিপি–র প্রকাশক) এসে যেত। সন্ধের মুখে আসতেন উৎপলদা, উনি আমাদের টেবিলে বসতেন, ফলে আরও সবাই এলে এই টেবিলেই বসতেন। উৎপলদা প্রথমে সপ্তাহে দু’দিন আসতেন, পরে আমরা নিয়মিত থাকায়, উনি প্রায় প্রায়ই চলে আসতেন। উৎপলদা থাকায় আর যারা আসতেন এখানেই বসতেন, প্রায়ই আসতেন, কালীকৃষ্ণ গুহ, রণজিৎ দাশ, পার্থপ্রতীম কঞ্জিলাল, প্রশান্ত মাজী এবং আরও অনেকেই। রাহুল পুরকায়্স্থ শনিবার করে আসত, একটু দেরি করে আমরা কখনও কখনও অটোমোবাইল ক্লাবে যেতাম। আমি আর রাহুল পুকায়স্থ যেতাম ওর অফিসের গড়িতে, উৎপলদা যেতেন অমিতাভদার গাড়িতে। ভাস্কর চক্রবর্তী আবার কফি হাউসে আসা শুরু করলেন।

প্রায় কফি হাউস শাসন করতেন বলা যায় মূক ও বধির এক বয়স্কা মহিলা। উৎপলদা এলে উনি দোতলার দরজার বাইরে অপেক্ষা করতেন উৎপলদা না ওঠা পর্যন্ত। উৎপলদা বেরিয়ে ওঁকে একটা অর্থ দিতেন মানিব্যাগ খুলে আর ওঁদের মধ্যে বিনিময় হতো স্নেহ–প্রীতি, রসিকতা, ওঁদের নিজস্ব ভাষায়। কোনো কোনো দিন হয়তো খুব মন খারাপ, উৎপলদা এলেন কিছুক্ষণ কথা বলার পরে মন খারাপ যে কোথায় চলে যেত কে জানে। ওঁর মতো ব্যক্তিত্ব, রসবোধ, প্রকৃত জ্ঞান কতজনের আছে কে জানে।

উৎপলদার আড্ডার মূলকেন্দ্র ছিল পার্বতীদার বাড়িতে। উৎপলদা আর আমি প্রায় রোজই যেতাম। ওখানে নিয়মিত আড্ডাধারীদের মধ্যে ছিলেন হিরণ মিত্র, মিহির চক্রবর্তী, মাধবেন্দ্রনাথ মিত্র, নমিতা চৌধুরী, শুচিস্মিতা ঘটক, ইন্দ্রাণি দত্ত পান্না, প্রবীর দত্ত, দীপ্তীশ ঘোষদস্তিদার, সুদেষ্ণা ঘোষদস্তিদার, ঢাকায় ফিরে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সুহৃদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ। আসতেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, যোগেন চৌধুরী, মানস রায় এবং আরও অনেকে। পার্বতীদার বাড়িতে উৎপলদার আমন্ত্রণে কবিতা পড়তে এসেছেন ভাস্কর চক্রবর্তী, জয় গোস্বামী প্রমুখ। এই আড্ডায় হাইকোর্টের বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিত সদস্য ছিলেন।

‘উৎপলের হাতে মধুসূদন কন্টেম্পোরারি হয়ে উঠলে। অর্থাৎ একুশ শতাব্দীর। একুশ শতাব্দীর’— কথাটা আমাকে বলেছিলে শ্রী সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় তেত্রিশ বছর আগে। তেইশ বছরের আমি তখন ‘‘অন্য অর্থ’’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। পত্রিকার কারণে সন্দীপনদার বাড়িতে যেতাম। একদিন, দুপুরবেলায়, একের পর এক পড়ে গিয়েছিলেন উৎপলের বিলেত থেকে লেখা চিঠিগুলি সন্দীপনকে। আবার একদিন টানা বলে গিয়েছিলেন পুরী সিরিজ—এর কবিতাগুলির ইঙ্গিতময়তা… এবং সেই প্রসঙ্গেই সন্দীপন বললেন,

‘‘উৎপল একুশ শতকের কবি। ওকে বুঝতে কবিতা পাঠকের আরও তিরিশ বছর সময় লাগবে।’’

লিখেছিলেন অজিত চৌধুরী উৎপলকুমার বসুর কবিতা আলোচনা, বিশেষত ছন্দ আলোচনা প্রসঙ্গে, প্রায় সতেরো–আাঠারো বছর আগে। প্রথমে একটি লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ও পরে গ্রন্থবদ্ধ হয় এই প্রবন্ধটি।

উৎপলকুমার বসু শুরু করেছিলেন অক্ষরবৃত্ত ছ্ন্দ দিয়ে, তারপরে এগোন গদ্যের দিকে এবং মুখের ভাষা, হাটে বাজারের ভাষা, আড়ি পেতে শোনা কথা থেকে শুরু করে সবকিছু মিশিয়ে তিনি জন্ম দেন নতুন এক কাব্য ভাষার যা কবিতা বিশেষে পরিবর্তনশীল, রহ্স্যময়, উৎপলের মতো। উৎপলকুমার বসুর কবিতা পাঠের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত ওঁর গদ্য ও তেমনিভাবে পড়া প্রয়োজন—অনুবাদ, চিঠিপত্র এবং সাক্ষৎকারও। উৎপলকুমর বসু অনুদিত সাফো–র কবিতা যা দিয়ে ভাষালিপি প্রকাশনার যাত্রা শুরু হয়েছিল, আমার সম্পাদনায় ও নবনীতা সেনের প্রকাশনায়, বাংলায় অনুবাদের এক সহজ ও সাবলীল ভাষা পেতে আমাদের সাহায্য করেছিল এই বই। কমলা দাসের কবিতা অনুবাদ করার জন্য উৎপল পেয়েছিলেন দ্বিতীয়বার সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার যা এক বিরল ঘটনা, এছাড়া ওঁর চিঠিপত্র বিশেষত সাক্ষাৎকার ওঁর যাত্রাপথ জ্ঞান ও কবিতা–ভাবনা বুঝতে সাহায্য করে। উৎপল নিজেই নিজের পাঠককে প্রস্তুত করেছিলেন তার কবিতার মাধ্যমে, সেই পাঠকই ওঁকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। একটি সাক্ষাৎকারে উৎপল বলেছিলেন,

‘যা ইন্দ্রিয়ের বাইরে সেরকম কোনো কিছু আমি গ্রহণ করি না। আমর উৎসাহ নেই, সেরকম কোনো জিনিসে যা বাস্তবে নেই।’

একটি সাক্ষাৎকারে উৎপল আরও বলেন,

‘দ্যাখো বিদেশি লেখকদের একটা জিনিস আমাকে খুব আকর্ষণ করে। সেটা হচ্ছে ওদের সাহস। এই সাহস আমি এখানকার মানে ভারতবর্ষের লেখকদের মধ্যে দেখি না। ভ্যান গগ কত প্রতিকূলতার মধ্যে ছবি এঁকেছেন, রিলকের মতো কবি কোনো চাকরি করেননি, এর–ওর সাহায্যে থেকেছেন, নিজের লেখা ছাড়া অন্য কিছু ভাবেননি।’

উৎপলের পুরী সিরিজ প্রকাশমাত্রই সাড়া ফেলে দিয়েছিল, মিথ হয়ে গিয়েছিল এই বইয়ের কবিতাগুলি। শঙ্খ ঘোষ বলেছিলেন, এত কৃশ একটি বই এতদিন ধরে আমাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে তা বাংলা সাহিত্যে কেন বিশ্ব সাহিত্যে এক বিরল ঘটনা, তবুও সামগ্রিকভাবে উৎপলের কবিতা আমরা আজও বোঝার চেষ্টা করছি, আবিষ্কার করছি। যত দিন যাচ্ছে বাংলা কবিতায় উৎপলের ছায়া আরও প্রকট হয়ে উঠছে।

আরও পড়ুন

যদি ফিরে তাকাই উৎপলকুমার বসুর চলার পথে?

উৎপলকুমার বসু আনন্দ পুরস্কার ও সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন, তবে এই সম্মানগুলি পেয়েছেন অনেক পরে, যখন পাঠক তাঁর কবিতা, সম্যকভাবে বুঝতে শুরু করেছে।

জীবদ্দশায় প্রকাশিত তাঁর শেষ কবিতার বই ‘হাঁস চলার পথ’ প্রকাশিত হয়েছিল ভালো বই থেকে। ভূমিকা লিখেছিলেন, জয় গোস্বামী।

জীবদ্দশায় প্রকাশিত ওঁর শেষ বই, গদ্য সংকলন, ‘সদাভ্রাম্যমান’ প্রকাশিত হয়েছিল ভাষালিপি থেকে সম্পাদনা করেছিলাম আমি।

আজও চোখ বুজলে দেখতে পাই কেওড়াতলা শ্মশানে উৎপলকুমার বসুর দেহ চুল্লিতে ঢোকার আগে উৎপলকুমার বসু–র পায়ে মাথা রেখে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করছেন গৌতম বসু, উপস্থিত যোগেন চৌধুরী, রণজিৎ দাশ, মিহির চক্রবর্তী, নমিতা চৌধুরী, নবনীতা সেন, সঞ্জীব চৌধুরী প্রমুখ ও পরবর্তী প্রজন্মের কবিরা। সদাভ্রাম্যমান গদ্যাংশে উৎপলকুমার বসু জানিয়েছিলেন কয়েক দশকের কবিতা সম্বন্ধে তাঁর অবজারভেশন—

‘মাইকেল থেকে জীবনানন্দ সবাই বর্জিত হলেন তবে কি আমরা জেগে উঠলাম মধ্যযুগে—মঙ্গলকাব্যে, কাশীরামদাসে, ভারতচন্দ্রে?
না,
কবিতা অর্থাৎ গত কয়েক দশকের কবিতা ভরে গেল বহুবাচনিকতায়— এলোমেলো, গঠনহীন, উচ্ছৃঙ্খল, শতকৌণিক কথোপকথনের অনুপ্রবেশে।
কবিতা হয়ে উঠল সর্বভাষিত আলোচনা বা ডিসকোর্স— যেখানে প্রলাপের একটি মাননীয় স্থান আছে এবং পাঠককে বুঝে নিতে হবে পাগলটি সে নিজেই।’

উৎপলকে পাঠ, পুনর্পাঠ ও আবিষ্কারের যে প্রক্রিয়া সক্রিয় আছে আশাকরি তা ক্রমবর্ধমান হবে।

More Articles