বিচার করবে কে? পশ্চিমবঙ্গের ২৫জন বিধায়কই যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত: রিপোর্ট

Crime Against Woman: যেখানে মহিলারা রাস্তায় নেমেছেন নিরাপত্তার দাবিতে সেই পশ্চিমবঙ্গেই মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিধায়কদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে!

মানুষ বিচার চাইছে। বিচারের দাবি করছে। কার কাছে করছে? আরজি কর কাণ্ড নিয়ে টানা একমাসেরও বেশি সময় ধরে পথে রয়েছে আমজনতা। গ্রাম, শহরতলি, রাজধানী সর্বত্র একটাই দাবি, উই ওয়ান্ট জাস্টিস! কিন্তু বিচার দেবে কে? বিচার দেবে ভারতের আদালত, প্রশাসন। কোন প্রশাসন? যে প্রশাসনের নেতাদের বিরুদ্ধেই অজস্র যৌন হেনস্থার অভিযোগ? সারা দেশজুড়েই ক্ষমতায় থাকা নেতাদের বড় অংশই মহিলাদের বিরুদ্ধে করা নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সদ্য প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বেসরকারি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস জানিয়েছে, সারা দেশের অন্তত ১৫১ জন সাংসদ ও বিধায়কদের বিরুদ্ধে মহিলাদের সঙ্গে জড়িত অপরাধ সংক্রান্ত একাধিক মামলা চলছে।

এই প্রতিবেদনটিতে গত পাঁচ বছরে মোট ২৮টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে বর্তমান সাংসদদের বিরুদ্ধে ৭৫৫টি হলফনামা এবং ৩,৯৩৮জন বর্তমান বিধায়কের হলফনামা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রমাণ করে আইনের সঙ্গে জড়িত বা আইন নির্মাতাদের বিরুদ্ধেই মহিলাদের হেনস্থা বা নিগ্রহের ভূরি ভূরি অভিযোগ! অথচ সেই ব্যক্তিরা মানুষেরই ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে বিধানসভা, লোকসভা আলো করে বসে আছেন। এই মুহূর্তে দেশের মোট ১৫১ জন নেতা, যাদের বিরুদ্ধে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত মামলা চলছে তাঁদের মধ্যে ১৬ জন সাংসদ এবং ১৩৫ জন বিধায়ক৷

আরও পড়ুন- ‘বদন বিগড়ে গেছে’! আন্দোলনকারীকে নিয়ে যেভাবে শ্লীলতার মাত্রা ছাড়াচ্ছেন কুণাল-দেবাংশু

ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারার অধীনে দুই সাংসদ এবং ১৪ জন বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলাও রয়েছে। বিধায়করা আরও যেসব অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্ত, তার মধ্যে রয়েছে অ্যাসিড হামলা, শ্লীলতাহানি, যৌন হেনস্থা, মহিলাদের বিবস্ত্র করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা, নজরদারি এবং বৈবাহিক নিষ্ঠুরতার পাশাপাশি যৌনব্যবসার জন্য নাবালিকাকে কেনা বা বিক্রি করার মতো ভয়াবহ সব অপরাধ।

মজার বিষয় হলো, ভারতের কেন্দ্র সরকার চালাচ্ছে যে মূল দল অর্থাৎ ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বর্তমান বিধায়কের বিরুদ্ধেই মহিলাদের হেনস্থা বা নিগ্রহের মামলা চলছে। বিজেপির ৫৪ জন বিধায়ক নিজেরাই যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত। কংগ্রেসের ২৩ জন বিধায়কের বিরুদ্ধেও মহিলাদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগ রয়েছে। তেলেগু দেশম পার্টির ১৭ জন বর্তমান সাংসদ বা বিধায়কের রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে মহিলাদের নিগ্রহ সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। বিজেপির পাঁচ বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রয়েছে। সংখ্যাটা কংগ্রেসের ক্ষেত্রেও একই।

আরও মজার বিষয় হলো, যেখান থেকে আরজি কর কাণ্ডে সবচেয়ে বেশি বিচারের দাবি উঠেছে, যেখানে মহিলারা রাস্তায় নেমেছেন নিরাপত্তার দাবিতে সেই পশ্চিমবঙ্গেই মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিধায়কদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে! তাহলে, বিচার দেবেন কারা? কোন দল? কোন শাসক? লজ্জাজনক এই তথ্য বলছে, বাংলার ২৫ জন বিধায়কের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের মামলা রয়েছে। এই তালিকায় অন্ধ্রপ্রদেশ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে, ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা আর ওড়িশা তৃতীয় স্থানে। সেখানে ১৭ জন বিধায়কের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের মামলা রয়েছে।

আরও পড়ুন- ফুটপাতের মেয়েটির জন্যেও আমরা গলা ফাটাবো কবে?

ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, “এই পরিসংখ্যানগুলি আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার গুরুতর অস্বস্তিজনক দিক এবং প্রতারণাকেই ফাঁস করে। এখানে ধনী ও শক্তিশালী সাংসদ/বিধায়করা মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা নিয়ে সিস্টেমকে নস্যাৎ করতে, পুলিশি তদন্তে হস্তক্ষেপ করতে নিজেদের প্রভাব ব্যবহার করেন এবং নিজেদের সুবিধামতো বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা করেন।"

অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস বলছে, অপরাধের ইতিহাস রয়েছে এমন প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখা উচিত। ২০২০ সালের রায়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ দিয়েছিল ফৌজদারি মামলা চলছে এমন প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য কেন টিকিট দেওয়া হয়েছিল তার কারণগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে ঘোষিত ভাবে সামনে আনতে হবে। কেন, কোন প্রার্থীকে, কোন স্থানে টিকিট দেওয়া হয় এখন এই হিসেব বীজগণিতের চেয়েও সোজাসাপ্টা! কিন্তু প্রশ্ন উঠছে গোড়াতে। যে বিধায়করা বা সাংসদরা প্রশাসন চালান, আইন তৈরি করেন, এমনকী ধর্ষণবিরোধী বিলও তৈরি করতে মতামত দেন তাঁদেরই বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা থাকলে, হেনস্থার অভিযোগ থাকলে 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' শব্দগুলি দেওয়ালে ধাক্কা খায় মাত্র! কে আর দেবে জাস্টিস? অপরাধীরা কীভাবে অন্য অপরাধীর বিচার করতে পারে? ধর্ষণের মতো অপরাধের অভিযোগ রয়েছে যার বিরুদ্ধে কেন তাঁকে রাজনৈতিক দলের টিকিটে নির্বাচন লড়া থেকে বাদ রাখার আইন তৈরি হবে না? এবার এই প্রশ্নই ওঠার পালা।

More Articles