মন্দিরে ঢোকায় চ্যালাকাঠ দিয়ে ছ্যাঁকা! 'দেবভূমি'তে কেন বারেবারে নির্যাতিত দলিতরা?
Uttarkashi Dalit Issue: সামান্য থেকে সামান্যতম ঘটনাকে কেন্দ্র করেই দলিত মহিলা, শিশু এবং বাকি সকলের উপর হেনস্থা চালানো হয় উচ্চবর্গীয় সম্প্রদায়ের তরফে।
প্রকৃতির উপর নিরন্তর চাপ, নিরন্তর মানুষের জন্য উন্নয়ন করতে গিয়ে প্রকৃতিকেই ভূমিহীন করার মাসুল গুনছে মানুষ। জোশীমঠের ঘটনা একেবারে হাতে নাতে দেখিয়ে দিচ্ছে, মানুষের চাহিদা মেটাতে মেটাতে মানুষই তলিয়ে যাচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে আস্ত একটা পার্বত্য শহর, ঘরছাড়া মানুষ। তবু, বিপর্যয়ের মাঝে যতই নিজের অস্তিত্ব টালমাটাল হোক না কেন, জাত-পাতের ঘৃণায় এক কণা মাটিও খসতে দেবে না মানুষ, একটা বড় অংশের মানুষ। বিপর্যয় আসুক, মানুষ বাস্তুচ্যুত হোক, কিন্তু দলিতদের সমানাধিকারের প্রশ্নে কখনই জোট বাঁধবে না দেশ। বৃহস্পতিবার উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার একটি ঘটনাই তার প্রমাণ। মন্দিরে প্রবেশাধিকার না থাকায় একজন দলিত ব্যক্তিকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে পাঁচজন উচ্চবর্ণের মানুষের বিরুদ্ধে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে ৯ জানুয়ারি। উত্তরকাশী জেলার মোরি এলাকার সালরা গ্রামের মন্দিরে প্রার্থনা করতে গিয়েছিলেন বাইনোল গ্রামের বাসিন্দা বছর বাইশের এক যুবক, নাম আয়ুষ। পুলিশের কাছে তাঁর অভিযোগে আয়ুষ জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁকে বেঁধে রাখে এবং জ্বলন্ত কাঠ দিয়ে সারা রাত ছ্যাঁকা দেয়। পাঁচ জন ব্যক্তির একসঙ্গে এই হামলার পর সারা গায়ে অসংখ্য জায়গায় পুড়ে গিয়েছে আয়ুষের। মন্দিরের মধ্যেই অজ্ঞানও হয়ে পড়েন তিনি। আয়ুষের দাবি, তিনি দলিত। তাই একজন নিচু জাতের ব্যক্তি হয়েও মন্দিরে প্রবেশ করায় অভিযুক্তরা রেগে যায়।
আরও পড়ুন- উগ্র হিন্দুত্বর বিরুদ্ধে জেহাদ! দলিত জাগরণের নেপথ্যের নায়ক পেরিয়ার
উত্তরকাশী বা লাগোয়া অনেক জেলাতেই দলিত নির্যাতনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। দলিত নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনা সাম্প্রতিককালে বেড়েছে এমনটাই উঠে এসেছে দেশের বিভিন্ন সমীক্ষা থেকেই। জোশীমঠের বিপর্যয় হিমালয়কে ঘিরে মানুষের অত্যাচারের কথাকেই প্রমাণ করে। এই বিপর্যয়ের মাঝেই নির্যাতনের ঘটনাটি যে কোনও দুর্বলের উপরেই ক্ষমতাশালীদের অন্ধ আচরণের দিকটিকে ফের নগ্ন করে দেয়। প্রকৃতিকে ধ্বংস করা যায়, গাছ কাটা যায় কারণ প্রকৃতি প্রত্যুত্তর করে না, আন্দোলনও করে না। মানুষের ব্যাপক বলের সামনে প্রকৃতি নরম, দুর্বল। একইভাবে সামাজিক ক্ষেত্রেও উচ্চবর্ণের পেশিক্ষমতার কাছে দুর্বল দলিতদের সামাজিক অবস্থা। ফলে সামান্য থেকে সামান্যতম ঘটনাকে কেন্দ্র করেই দলিত মহিলা, শিশু এবং বাকি সকলের উপর হেনস্থা চালানো হয় উচ্চবর্গীয় সম্প্রদায়ের তরফে। মন্দিরে প্রবেশাধিকার, সকলের জন্য তৈরি কুয়ো থেকে জল তোলায় নিষেধাজ্ঞা এমনকী গোঁফ রাখার অপরাধেও দলিতদের মৃত্যু বা ধর্ষণের মুখে পড়তে হয়েছে। উত্তরকাশীতে উচ্চবর্ণের মানুষের সংখ্যা ৬০ শতাংশের বেশি।
নির্যাতিতের অভিযোগের ভিত্তিতে, তফশিলি জাতি এবং তফশিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইনের অধীনে একটি মামলা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে দাঙ্গা, স্বেচ্ছায় আঘাত করা এবং অপরাধমূলক ভয় দেখানো সম্পর্কিত ধারায় মামলাও করা হয়েছে পুলিশে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের নাম আশিস, ঈশ্বর সিং, ভাগ্যান সিং, জয়বীর সিং এবং চেইন সিং। তবে অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই পলাতক। স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরে চিকিৎসার জন্য দেরাদুনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আয়ুষকে।