ইউক্রেনে ভয়াবহ রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার! রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে ভয়ঙ্কর অভিযোগ তুলল আমেরিকা
Russia-Ukraine war: আমেরিকা অভিযোগ করেছে বিষাক্ত গ্যাসবিশিষ্ট শ্বাসরোধকারী এজেন্ট ক্লোরোপিক্রিন ব্যবহার করছে রাশিয়া ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।
মাস ছয়েক ধরে গাজায় লাগাতার যুদ্ধ চালিয়েই যাচ্ছে ইজরায়েল। তার উপর ক্রমশ চওড়া হচ্ছে ইরানের সঙ্গে ইজরায়েলের সংঘাতের পথ। এরই মধ্যে আবার নতুন করে ঘি পড়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে। দিন কয়েক ধরেই ইউক্রেনে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়া। ইতিমধ্যেই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে ইউক্রেনের বিখ্যাত হ্যারি পটার ক্যাসেল। লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। আর এবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ তুলল আমেরিকা। আমেরিকার দাবি, ইউক্রেনের সেনার বিরুদ্ধে ভয়াবহ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া।
কী সেই গ্যাস? আমেরিকা অভিযোগ করেছে বিষাক্ত গ্যাসবিশিষ্ট শ্বাসরোধকারী এজেন্ট ক্লোরোপিক্রিন ব্যবহার করছে রাশিয়া ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এই রাসায়নিকটি ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হত। পরে এই রাসায়নিককে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারে রোখ টানা হয়। শুধু ক্লোরোপিক্রিনই নয়। ইউক্রেনের সেনাদের বিরুদ্ধে নাইট্রোক্লোরোফর্ম নামক দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণকারী এজেন্টটিও ব্যবহার করা হচ্ছে যুদ্ধে। ১৯৯৩ সালে রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশন (CWC) নামে যে চুক্তিসই হয়েছিল, তাতে সই করেছিল রাশিয়াও। আর এখন সেই চুক্তি ভেঙেই ইউক্রেনে রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করছে বলেই অভিযোগ আমেরিকার। যদিও আমেরিকার সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছে মস্কো।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এই ক্লোরোপিক্রিন নামক যৌগটি নাকি একটা সময় কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হত এই রাসায়নিকটি। যার ফলে চোখ জ্বালা, শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। অনেকে একে আবার কাঁদানে গ্যাসও বলে থাকেন। ক্লোরিনের থেকেও বিষাক্ত এই গ্যাসটি। ফুসফুসে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলার জন্য কুখ্যাত এই গ্যাসটি। এমনকী এর ফলে বমি পর্যন্ত শুরু হয় অনেকের। হেগের অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রোহিবিশন অব কেমিক্যাল ওয়েপনস (OPCW) এই শ্বাসরোধী রাসায়নিক যৌগটিকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যা ব্যবহারের উপরে ১৯৯৩ সালের রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশন (CWC)-এ ব্যবহারের উপর কড়াকড়ি হয়। সেই চুক্তিতে সই করেছিল আমেরিকা, রাশিয়া-সহ একাধিক দেশ।
এর আগেও একাধিক বার রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে আমেরিকা। ২০১৮ সালে সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়ে ইউলিয়ার বিরুদ্ধে নোভিচক নার্ভ এজেন্ট ব্য়বহার করার অভিযোগ ওঠে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। একই ভাবে রাশিয়ার নিহত বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনিক বিরুদ্ধে ২০২০ সালেও একই ভাবে রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছিল। শুধু এই সবই নয়, ২০২২ সালের মার্চে কিয়েভে যুদ্ধের সময় সাদা ফসফরাস বোমা ব্যবহার করেছিল রাশিয়া।
কিছুদিন ধরেই ফের পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করেছে ইউক্রেনে। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া ইউক্রেনের উপর। ইউক্রেনের শীর্ষ কমান্ডার জানিয়েছে, কিয়েভের বেশ কয়েকটি গ্রামে ফের নতুন করে সেনা বহাল করা হয়েছে। কারণ একাধিক জায়গায় সেনা মোতায়েন করা শুরু করেছে রাশিয়া। একের পর এক ইউক্রেনের স্থাপত্য, ভবনে নেমেছে মস্কোর হামলা। ইউক্রেনের একের পর এক গ্রাম দখল করে নিচ্ছে রাশিয়া। মেরিঙ্কোর পশ্চিম ও আভদিভকার উত্তর-পশ্চিমে তিনটি গ্রাম সম্প্রতি দখল করেছে রুশ সেনা। ডোনেটস্ক অঞ্চলের ওচেরেটিনের সামনের সারির গ্রামটি দখলের জন্য ভয়াবহ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তারা। ক্রমাগত পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে বলেই অভিযোহ করছেন স্থানীয়রা।
দিন তিনেক আগেই ইউক্রেনের ওডেসায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। যে হামলায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে ইউক্রেনের বিখ্যাত হ্যারি পটার ক্যাসেল। স্কটিশ ব্যারোনিয়াল স্তূপের কারণে স্থানীয়ভাবে হ্যারি পটার ক্যাসল বলে পরিচিত ছিল ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। যা সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়েছে রুশ হামলায়। অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয় ওই হামলায়। জখম অন্তত ৩০। সেই হামলার ভয়াবহ দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ইউক্রেনের দাবি, এই হামলা চালানোর জন্য রাশিয়া ইস্ক্যান্ডার ব্যালিস্টিক মিসাইল ও ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে। যা আসলে ব্যবহার করা হয়েছিল অনেক বেশি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির জন্য। আরও অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ হতাহত হতে পারতেন ওই হামলায়। জখম তিরিশ জনের মধ্যে দুই শিশু ও এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা রয়েছেন বলে খবর। ওই হামলায় আশপাশের প্রায় ২০টির মতো বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:ভারতের থেকে বেশি সুখে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনও! সামনে এল যে চাঞ্চল্যকর তথ্য
এসবের মধ্যেই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করার মতো গুরুতর অভিযোগ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনল আমেরিকা। ইতিমধ্যেই রাসায়নিক অস্ত্র ও জৈবিক অস্ত্র কর্মসূচী সংক্রান্ত রাশিয়া সরকারের তিনটি সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আমেরিকা। এমনিতেই ইউক্রেনে যুদ্ধোপরাধের অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহলে কোণঠাসা রাশিয়া। এবার ইউক্রেনে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারকে কেন্দ্র করে সেই চাপ আরও একটু বাড়ল রাশিয়ার উপরে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সদ্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আরও একবার রাশিয়ার মসনদে বসেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কোনও দিনই অন্য দেশের দাবি বা অভিযোগে বিশেষ কান দেননি পুতিন। এবার আমেরিকার তোলা অভিযোগের প্রভাব কি পড়বে রাশিয়ার উপরে আদৌ? সেটাই দেখার।