এক ভিডিওয় পৃথক ফল! বেজায় খুশি মোদি, কেন রেগে লাল মমতার পুলিশ?

Viral Meme: এ দিকে লোকসভা ভোটের বাজারে প্রধানমন্ত্রী মোদি কিন্তু জানিয়েছেন, এআইয়ের সাহায্যে নিজেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় নাচতে দেখে নাকি বেশ ভালোই লেগেছে মোদির।

এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আসার পর মিমের দুনিয়া যেন পক্ষীরাজের দু'টো ডানা পেয়েছে। সেই ডানায় ভর করে কখনও শাহরুখ খানের 'ডানকি'র গানে গলা মেলান মহম্মদ রফি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দুনিয়ায় দিব্যি বহাল তবিয়তে থাকা রুমালের মোটাসোটা গোঁফওয়ালা বিড়াল হওয়া আর ম্যাজিক বা মিরাক্যল কোনওটাই নয়। এ যেন ঝকঝকে বাস্তব। দিন কয়েক ধরেই একটি মিম সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব ঘুরছে। স্টেজ ভর্তি লোকের সামনে ব্যাকস্টেজ থেকে নাচতে নাচতে দর্শকদের সামনে চলে আসছে এক এআই চরিত্র। কখনও সেই চরিত্র হয়ে যাচ্ছে অনুকূল ঠাকুর তো কখনও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কখনও আবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় হুলিয়ে শেয়ার হচ্ছে সেই মিম ভিডিও। আর তাতেই বেঁধেছে বিপত্তি। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে আপত্তিকর মিম ছড়ানোর অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে কাঠগড়ায় তুলেছে কলকাতা পুলিশ। ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের সতর্ক করে এক্স হ্যান্ডেলে নোটিসও জারি করেছে পুলিশ। অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: মিম তৈরির চাকরি! মাইনে শুনে চোখ উঠবে কপালে, যেভাবে আবেদন করবেন…

সম্প্রতি @SoldierSaffron7 এবং @Shalendervoice নামের দুটি এক্স হ্যান্ডেল থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আপত্তিকর’ মিম শেয়ার করা হয় বলে অভিযোগ। তা দেখার পরেই কলকাতা পুলিশ ওই পোস্টের ‘রিপ্লাই’ বক্সে লিখে আসে, ‘আপনাদের অবিলম্বে নাম এবং ঠিকানা-সহ সম্পূর্ণ পরিচয় প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। যদি প্রার্থীত তথ্য প্রকাশ না করেন, তবে সাইবার ক্রাইমের 42 CrPC ধারা অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপের জন্য দায়ী থাকবেন।’ এর পর @Shalendervoice নিজের পোস্ট মুছে ফেলে, যদিও @SoldierSaffron7-এর এক্স-ওয়ালে এখনও মিমটি রয়েছে বহাল তবিয়তে।

এর পর সোশাল মিডিয়া এক্সে দুই ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্যে একটি সতর্কতামূলক নোটিস পোস্ট করে পুলিশ। সেখানে লেখা হয়েছে, লক্ষ্য করা গিয়েছে যে আপনি ‘আপত্তিকর, বিদ্বেষপূর্ণ এবং উসকানিমূলক’ পোস্ট করার জন্য সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করছেন। কলকাতা সাইবার পুলিশ এই ধরনের বার্তা পোস্ট করার জন্য ১৪৯ CrPC ধারার অধীনে আপনাদের বিরুদ্ধে নোটিস জারি করেছে।’ এই নোটিসে দ্রুত ‘আপত্তিকর’ পোস্টটি ডিলিট করতে বলা হয়েছে, নতুবা কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

এ দিকে লোকসভা ভোটের বাজারে প্রধানমন্ত্রী মোদি কিন্তু জানিয়েছেন, এআইয়ের সাহায্যে নিজেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় নাচতে দেখে নাকি বেশ ভালোই লেগেছে মোদির। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে ভিডিও নিয়ে এত বিতর্ক, সেই একইরকম ভিডিওর মুখে মোদির মুখ বসিয়ে ভাইরাল হয়েছে ইতিমধ্যেই। আর সেই ভিডিও দেখেই মজাই পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী খোদ নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ারও করেছেন সেই ভিডিওটি। 'পোলহিউমার' হ্যাশট্যাগে সেই ভিডিওটিকে সৃষ্টিশীলতা বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

 

আর তার পরেই সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গিয়েছে মোদির নাচানাচির আরও মিমে। সম্প্রতি কর্ণাটকের জেডিএস নেতা প্রজ্জ্বল রেভান্নার বিরুদ্ধে একাধিক নারীকে যৌনহেনস্থা করার অভিযোগ ওঠে। কর্ণাটকে বিজেপির জোটসঙ্গী জেডিএসের ওই নেতা আবার বিজেপির তরফে রাজ্যসভার সাংসদ। লোকসভা ভোটে প্রার্থীও হন রেভান্না। তাঁর হয়ে প্রচার সারতে কর্ণাটকে গিয়েছিলেন মোদি স্বয়ং। ফলে বিজেপি ঘনিষ্ঠ সেই নেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে পড়েছে গেরুয়া শিবির। মোদির মিম নিয়ে প্রশংসার পরেই মোদি ও অভিযুক্ত রেভান্নার একসঙ্গে নাচার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। যেটি এক্স সাইটে পোস্ট করা হয়েছিল আপের অফিশিয়াল পেজ থেকে। 

 

একেই বোধহয় বলে এক যাত্রায় থুড়ি এক ভিডিওতে পৃথক ফল। যে এআই ভিডিওর দৌলতে মুখ্যমন্ত্রীকে অবমাননায় দায়ে যে কোনও মুহূর্তে জেলের ঘানি টানতে হতে পারে দুই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীকে, সেখানে নৃত্যরত নিজেকে দেখে বেজায় খুশি মোদি। সবই ভোটের মায়া, বলছে ওয়াকিবহাল মহল। কোনও দিনই নিজের সম্পর্কে মিম, কৌতূককে ভালো ভাবে নিতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কার্টুন আঁকার অভিযোগ অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে কম হেনস্থার শিকার হতে হয়নি। যেখানে একটা সময় রাজনৈতিক কৌতূকের বিপুল গ্রহণযোগ্যতা ছিল সমাজে। তখন সবে সবে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছেন মমতা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে সব কিছুই সয়ে গিয়েছে। এখন আর কোনও কিছুতেই তেমন জোরালো প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা যায় না মমতাকে।

আরও পড়ুন:গত চারমাসে ১৪৮ বার শাস্তি! বিজেপির বিরুদ্ধে বললে কী কী করেছে মোদি সরকার?

এই মিমের মামলাতেও তাঁর প্রতিক্রিয়া এখনও কিছু পাওয়া যায়নি। যা করা হয়েছে কলকাতা পুলিশের তরফেই। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা পেয়ে যে তাঁকে নিয়ে যাঁরা মিম বানান, তাঁরা বেশ খানিকটা নতুন অনুপ্রেরণা পেয়ে গিয়েছেন, তা তাঁকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিম-জোয়ার দেখেই বেশ মালুম পাওয়া যাচ্ছে।

More Articles