ঘোড়া দিয়েই টেনে নিয়ে যেতে হতো প্রথমে, জানেন বাংলায় কী বলে পরিচিত ‘বাস’কে?

Bengali synonyms of Bus : সময়ের সঙ্গে বাঙালির মুখে মুখে বাংলা শব্দের পাশে জায়গা পাকা করে নিয়েছে ‘Bus’। পরিবর্তে প্রায় একেবারেই হারিয়ে গিয়েছে এই শব্দের আসল বাংলা প্রতিশব্দটি। জানেন সেটি কী?

বাংলায় জন্ম, বাংলায় বসবাস অথচ বাংলার প্রতিই এক চিরকালীন অনীহা, আজকের এই পরিস্থিতি অবশ্য একদিনে আসেনি। ক্রমে একটু একটু করে ব্যবহারিক জীবনে ঢুকে পড়ে ইংরেজি শব্দ। তাই চলতে ফিরতে এখন ইংরেজি বলাই দস্তুর। কবির ভাষায় বলতে গেলে আজকালকার ছেলেমেয়েদের হয়তো সত্যিই আর বাংলাটা ঠিক আসে না। তাই ছোট থেকেই অভিভাবকরা বেছে নেন ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। এছাড়াও রোজকার কথ্য ভাষায় এমন কিছু শব্দ আমরা ব্যবহার করে থাকি যেগুলি আদতে ইংরেজি শব্দ হলেও একেবারেই যেন জায়গা করে নিয়েছে বাংলা অভিধানে। হুট করে যদি তাদের বাংলা প্রতিশব্দ জিজ্ঞাসা করা হয় তবে আচ্ছা আচ্ছা লোকেরাও ঘায়েল হবেন নিশ্চিত।

রাস্তায় চলাফেরা করতে আমরা যেসব যানবাহন ব্যবহার করে থাকি তার মধ্যে অতি পরিচিত একটি হল বাস। সরকারি, বেসরকারি অথবা মিনি বাস তো আছেই তার সঙ্গে রাস্তায় চলে দূরপাল্লার বাসও। বর্তমান সময়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বাসও হয়েছে আধুনিক। বাতানুকুল যন্ত্র থেকে শুরু করে চলমান বাথরুম সবই এখন থাকছে আধুনিক বাসে। দূরদূরান্তে মানুষ ছুটে যাচ্ছেন এতে চেপেই। কিন্তু এহেন একটা পরিচিত শব্দটিকে বাংলায় কী বলে ভাবছেন যাঁরা, তাঁরা কি জানেন ‘বাস’ মোটেই কোনও বাংলা শব্দ নয়, এটি আসলে একটি ইংরেজি শব্দ। যা সময়ের সঙ্গে বাঙালির মুখে মুখে বাংলা শব্দের পাশে জায়গা পাকা করে নিয়েছে। পরিবর্তে প্রায় একেবারেই হারিয়ে গিয়েছে এই শব্দের আসল বাংলা প্রতিশব্দটি।

আরও পড়ুন - টলাতে পারে না ৪০ কেজি বিস্ফোরকও! কীভাবে তৈরি হল দেশের প্রথম কেবল স্টেড ব্রিজ?

ইতিহাস বলছে, ১৮২০ সাল নাগাদও বাস পরিষেবা চালু ছিল ইউরোপে। কিন্তু সেটা ছিল ঘোড়ায় টানা বাস। এর প্রায় ৬২ বছর পর অর্থাৎ ১৮৮২ সাল থেকে প্রথম মোটর চালিত বাসের চলাচল শুরু হয়। কলকাতা থেকে লন্ডন পর্যন্তও চালু ছিল এই বাস পরিষেবা। সময়ের সঙ্গে আরও উন্নত হতে থাকে বাসের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ গঠন। শোনা যায়, কলকাতায় প্রথম বাস চলেছিল ১৮৩০ সালে। প্রথম যুগে অবশ্য তার নাম ছিল, ‘ওমনিবাস’। পরবর্তীকালে শেষ দুটো অক্ষর দিয়েই সে পরিচিত হয়। ইংল্যান্ড থেকে এসেছিল ওমনিবাস। চারটি লোহার চাকা সহ একটা কাঠামো শুধু। বাকি বসার জায়গা ও অন্যান্য কলকব্জা কলকাতায় বসানো হত। তিনটি ঘোড়ায় টানা এই ওমনিবাস চৌরঙ্গী ছাড়িয়ে শহরতলি অবধিও পৌঁছে যেত। কিন্তু সে সময়ে মোটেই এই বাস পরিষেবা জনপ্রিয়তা পায়নি। অমসৃণ রাস্তায় যখন সে চলত, ঝাঁকুনির ঠেলায় ভিতরে যাত্রীদের নাকি অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে উঠত। ফলে ওমনিবাসকে এদেশের পাট গোটাতে হয়। পালকি, ঘোড়ার গাড়ির রাজত্বে সে কিস্তিমাত করতে পারেনি।

১৮৬৫ সালে টিই টমসন অ্যান্ড কোম্পানি স্টিমচালিত গাড়ির বিজ্ঞাপন বের করে। সেসময় থেকে গরু বা ঘোড়ার গাড়ির বদলে বাষ্পশক্তি চালিত যান কলকাতার রাস্তায় দেখা যেতে থাকে। ধীরে ধীরে তার কাঠামোর উন্নতি ঘটে। ১৯১২ সালে ওয়ালফোর্ড কোম্পানির বাস কলকাতায় বেশ ভালোই সাড়া ফেলেছিল। কিন্তু ব্রিটিশ তার শত্রুপক্ষের বাসকে ১৯১৪ থেকে আর ছাড়পত্র দেয়নি। যদিও তারপর অনেক ঝড় ঝাপটা সামলেই বাংলায় চলেছে বাস পরিষেবা। সময়ের সঙ্গে নিজেকে আরও আরও এগিয়েছে নিয়েছে। কিন্তু হারিয়ে গিয়েছে যে বাংলা প্রতিশব্দটি সেটি হল যাত্রীবাহী বড় মোটরগাড়ি। বাংলাতে প্রথমে এমনটাই ছিল বাসের পরিচয়।

More Articles