ডাক্তার সময় বেঁধেছিলেন ৩ মাস! যে টোটকায় ক্যান্সারকে হারিয়ে সচল ১০৩ বছরের বৃদ্ধ
Longevity secrets: মাইক নিজের ৯৮ বছর বয়স পর্যন্ত সপ্তাহে তিন দিন ১০ মাইল করে দৌড়তেন। দিনে ৪৮ বার সিঁড়ি বেয়ে ওঠা নামা করেছেন। এখনও, এই ১০৩ বছর বয়সেও তিনি পুল-আপ করেন এবং স্বাচ্ছন্দ্যে নিজের ক্যানো চালান।
জীবনের প্রায় শেষপ্রান্তে এসে মাইক ফ্রেমন্ট জানতে পেরেছিলেন, আর মাত্র ৩ মাস হাতে আছে তাঁর। জীবনের সবকিছু গুছিয়ে নিতে হবে, যেটুকু যা ইচ্ছা বাকি সব পূরণ করে নিতে হবে এই তিন মাসেই। তারপর কর্কটের কোলে শুয়ে চিরনিদ্রা। হ্যাঁ, বাঁচার একটা উপায় আছে, অস্ত্রোপচার। তবে ৬৯ বছর বয়সে ক্যান্সারের জটিল অস্ত্রোপচারের নানা ঝক্কি, অস্ত্রোপচার শেষেও তিনি বাঁচবেন কিনা আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই একপ্রকার মৃত্যুদণ্ডই লেখা কপালে। অথচ মাইক ফ্রেমন্ট বেঁচে আছেন। দিব্যি বেঁচে আছেন এবং সুস্থ আছেন! এখন তাঁর বয়স ১০৩!
ওহাইওর মাইক ফ্রেমন্ট প্রাণশক্তিতে ভরপুর জীবন বাঁচছেন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই চলচ্ছক্তিহীন হয়ে গেলেও, মাইক এখনও সিঁড়ি বেয়ে ওঠেন, ক্যানো চালান এবং ৯৮ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন ১০ মাইল দৌড়তেনও। কীভাবে? শৃঙ্খলা, সারল্য এবং প্রকৃতিতে প্রোথিত জীবনযাপনের পদ্ধতিই তাঁকে এমন সুস্থ রেখেছে এখনও, ক্যান্সারকে হারিয়ে দিয়েছেন তিনি।
একজন ইউটিউবারের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে মাইক জানিয়েছিলেন, হাতে মাত্র তিন মাস জানার পর তিনি হাল ছেড়ে দেননি, তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মাইক মিচিও কুশির দ্য ক্যান্সার প্রিভেনশন ডায়েট থেকে অনুপ্রাণিত একটি উদ্ভিদ-ভিত্তিক ম্যাক্রোবায়োটিক ডায়েট গ্রহণ করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, কেবল ক্যান্সারই উধাও হয়ে যায়নি, মাইকের আর্থ্রাইটিসের সমস্যাও ম্লান হয়ে যায়।
খাবারই যেখানে ওষুধ
১৯৯৪ সাল থেকে, মাইক পরিচ্ছন্ন উদ্ভিজ্জ ডায়েট অনুসরণ করে আসছেন। ম্যাক্রোবায়োটিক শুনে হালফিলের বিদেশি পাউডার বা জটিল রেসিপির ট্রেন্ডি খাবার মনে হলেও, ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। মাইকের প্রতিদিনের মেনু খুবই সাধারণ। বাদামী ভাত, কেল, গাজর এবং বাঁধাকপির মতো ভাপানো সবজি, খনিজ পদার্থের জন্য সামুদ্রিক শৈবাল এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, প্রতিদিন আধ ক্যান বিনস।
কেন এতটা বিনস? ডালশস্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন এবং ফাইটোকেমিক্যাল থাকে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার রিসার্চ ফান্ড বলছে, উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্য ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।
আরও পড়ুন- জীবনযাপনে ছোট্ট বদল, আমার আপনার থেকে অনেক বেশিদিন বাঁচেন জাপানিরা
মাইক প্রক্রিয়াজাত চিনি, মাংস, দুগ্ধজাত খাবার এবং প্যাকেজজাত খাবারও এড়িয়ে চলেন। প্রাকৃতিক অবস্থায় থাকা খাবারই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন তিনি। সেদ্ধ, ভাপানো বা গাঁজানো খাবারই খান। কোনও তেল নেই, ছাঁকা তেলে ভাজা নেই এবং অবশ্যই কোনও শর্টকাট নেই সেই সব খাবারে।
গতিশীল যাপন, ব্যায়ামের চেয়েও বেশি কার্যকরী পদ্ধতি
মাইক নিজের ৯৮ বছর বয়স পর্যন্ত সপ্তাহে তিন দিন ১০ মাইল করে দৌড়তেন। দিনে ৪৮ বার সিঁড়ি বেয়ে ওঠা নামা করেছেন। এখনও, এই ১০৩ বছর বয়সেও তিনি পুল-আপ করেন এবং স্বাচ্ছন্দ্যে নিজের ক্যানো চালান।
মাইকের কাছে এই গতিশীলতা কোনও কাজ নয়; এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই স্বাভাবিক। সিডিসির মতে, নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ বার্ধক্যকে ধীরগতি করতে সাহায্য করে এবং আমাদের নানা গাঁটের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে, আমাদের মাথা সচল রাখে। মাইক কখনও জিমে গিয়ে ওয়ার্কআউট করেননি। তিনি কেবল প্রতিদিন হাঁটাচলা করতেন, শরীর সক্রিয় থাকতেন, অত্যন্ত সহজ স্বাভাবিকভাবে।
ঘুমের শক্তি এবং প্রাকৃতিক ছন্দ
ঘুমকে আমরা খুবই অবহেলা করি। মাইকের কাছে ঘুম এক পবিত্র বস্তু। প্রতি রাতে ৮-৯ ঘণ্টা ঘুমোন মাইক। কোনও অ্যালার্ম নেই, ঘুমানোর আগে কোনও স্ক্রিন টাইম নেই এবং কোনও অভিনব রুটিন নেই। কেবল নিপাট বিশ্রাম - গভীর, নিরবচ্ছিন্ন বিশ্রাম।
নানা গবেষণা বলছে, দেহের কোশ মেরামত করতে, প্রদাহ কমাতে এবং চিন্তাভাবনা সচল রাখার জন্য ভালো ঘুম অপরিহার্য। মাইক যে বিশ্রাম নেওয়াকে শরীরের স্বাভাবিক প্রয়োজন হিসেবে এতখানি সম্মান করেন তা তাঁর স্বাস্থ্যে বিস্ময়কর প্রভাব ফেলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- সমস্ত পরীক্ষা বিফলে? অমর হতে চেয়ে যৌবন হারালেন বিখ্যাত এই উদ্যোক্তা
ওষুধের বিরুদ্ধে নয়, তবে প্রকৃতির পক্ষে
দ্য মোস্ট মোটিভেশনাল পডকাস্টের ভিডিওতে জানা যাচ্ছে, মাইক ডাক্তার না দেখানো নিয়ে মোটেও গর্ববোধ করেন না। তবে মনে করেন, জীবনে খুব বেশি চিকিৎসার প্রয়োজন না হলেই ভালো। তিনি বিশ্বাস করেন যে খাবারই তাঁকে সুস্থ করে তুলেছে এবং তিনি প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবনযাপন করেন। তিনি নিজের কিছু খাবার নিজেই চাষ করেন, ফিল্টার করা জল পান করেন, রাসায়নিকযুক্ত পণ্য এড়িয়ে চলেন এবং প্রকৃতির মধ্যে থাকার আনন্দ উপভোগ করেন।
প্রকৃতির সঙ্গে এই সংযোগ নিছক কাব্যিক নয়। সবুজ জায়গায় সময় কাটালে তা কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমাতে পারে, ঘুমের উন্নতি করতে পারে এবং এমনকি মাটিতে পাওয়া উপকারী জীবাণুর সংস্পর্শে এলে তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে পারে। মাইক সেই অভ্যাসগুলিই মেনে চলেন।
অলৌকিক ঘটনার পিছনে কোনও জাদু নেই, আছে শুধুমাত্র শৃঙ্খলা
মাইকের গল্পটিকে অনেকেই 'অলৌকিক' মনে করতে পারেন। ১০৩ বছর বয়সি একজন মানুষ যিনি ক্যান্সার, আর্থ্রাইটিসকে পরাজিত করেছেন এবং এখনও সচল আছেন, তাঁর গল্পকে রূপকথা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। আসলে কোনওকালেও সাফল্য হঠাৎ আসে না। প্রকৃত খাবার, নিয়মিত চলাফেরা, গভীর বিশ্রাম এবং পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবনযাপন আমাদের সকলকেই ধীরে ধীরে অনেক সুস্থ, সক্ষম করে দিতে পারে। বার্ধক্য অপরিহার্য, কিন্তু সচল থাকা আমাদের নির্বাচন।