সাপ্লিমেন্ট নয়, সুস্থ থাকার অব্যর্থ দাওয়াই একটাই
Immunity: ড. রেড্ডি জানান, দিনের বেলায় প্রাকৃতিক আলো, বিশেষ করে সকালের রোদ, মেলাটোনিন-কর্টিসল চক্রকে মজবুত করে এবং রাতের ঘুমের জন্য শরীরের সহায়তা করে।
শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রসঙ্গ উঠলেই অনেকে শুধুমাত্র সাপ্লিমেন্ট, সুপারফুড বা ওয়েলনেস রুটিনের কথাই ভাবেন। কিন্তু ক্যান্সার সার্জন ড.তরঙ্গ কৃষ্ণের মতে, বেশিরভাগ মানুষই প্রতিদিন এমন একটি অভ্যেসকে উপেক্ষা করছেন, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করতে যথেষ্ট।
সম্প্রতি ড.তরঙ্গ কৃষ্ণ, তাঁর একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে জানান যে, ঘুমই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার মূল ভিত্তি। তিনি বলেন, 'আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার চাবিকাঠি কী জানেন? ঘুম। অপর্যাপ্ত ঘুম আপনাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলে শরীরে ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার, আর্থ্রাইটিস, অটোইমিউন রোগ, রক্তচাপের সমস্যা এবং আরও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোন, তাহলে আপনার সমস্ত রোগ-ব্যাধি দূর হয়ে যাবে। আপনার ইমিউন সিস্টেম ঠিক থাকবে। আপনার শরীরে বেশিভাগ সমস্যাই হয় অপর্যাপ্ত ঘুমে কারণে।'
তিনি আরও জানান, শরীরের নিজস্ব একটি রোগ নিরাময় ক্ষমতা আছে, কিন্তু আমাদের প্রতিদিনের অভ্যেসগুলো প্রায়ই এর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের শরীরের প্রাকৃতিকভাবে রোগ-ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা আছে, কিন্তু আমরা তা সঠিকভাবে ব্যবহার করি না। এর মূল কারণ, আমাদের ঘুমোনোর সময় আমরা ফোন ঘাঁটি, শরীরের প্রদাহ কমাতে আমাদের পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন, কিন্তু আমরা জেগে থাকি ঘুমোনোর সময়।’
আরও পড়ুন- গরমে শরীর চাঙ্গা রাখতে পারে বিভিন্ন ফলের শরবত, কীভাবে ঘরেই বানাবেন স্বাস্থ্যকর পানীয়?
ড. কৃষ্ণ অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে শরীরে হওয়া এ সমস্ত সমস্যার নেপথ্যে মেলাটোনিন হরমোনের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘যখন আমরা জেগে থাকি, তখন ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন, রিচার্জ হতে পারে না। আর এজন্যই আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে আমাদের পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। মেলাটোনিনকে রিচার্জ করা দরকার।’
কনসালট্যান্ট ফিজিশিয়ান ড. প্যালেট্টি সিভা কার্তিক রেড্ডির (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস.কমের একটি প্রতিবেদনে) মতে, ‘মাত্র একটি রাতের অপর্যাপ্ত ঘুমও, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় পরিবর্তন আনতে পারে। প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি হলো সি-রিয়্যাকটিভ প্রোটিন এবং ইন্টারলিউকিন ৬-এর মাত্রা বেড়ে যাওয়া, এর ফলে বোঝা যায় যে, শরীরে ইনফ্লেমেশন বাড়ছে, ইমিউন সিস্টেম ভীষণ দুর্বল হচ্ছে। অনেকে কিছু কিছু সূক্ষ্ম লক্ষণও অনুভব করেন, যেমন- খিটখিটে হয়ে যাওয়া, মনোযোগ কমে যাওয়া এবং সামান্য পরিশ্রমের ক্লান্তি থেকেও অনেক পরে মুক্তি পাওয়া। এই ছোট ছোট সমস্যাগুলোই পরবর্তীকালে গভীর শারীরিক সমস্যায় পরিণত হয়। যেমন- শরীরে প্রাকৃতিকভাবে কিছু বা cell killer কোষ ঘাতক থাকে, যা ভাইরাস এবং অস্বাভাবিক কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে, কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে এই সেল কিলারের কর্মক্ষমতা কমে যায়। এই সমস্যাগুলো ঘুম ব্যাহত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হতে পারে এবং যদি একইভাবে ঘুম বিঘ্নিত হতে থাকে, তাহলে সমস্যাগুলি আরও গভীর রূপ নেয়। এবং এই কম মাত্রার ইনফ্লেমেশনই দীর্ঘমেয়াদে শরীরের সংক্রামক রোগের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতাকে দুর্বল করে এবং শরীরে ডায়াবেটিস জাতীয় অসুখের ঝুঁকি বাড়ায়।'
ড. রেড্ডি বলেন যে, কর্মস্থলে অনিয়মিত কাজের সময়সীমা, দীর্ঘস্থায়ী চাপ বা অনিদ্রায় ভুগতে থাকা মানুষরা মেলাটোনিনের ছন্দ স্থিতিশীল করতে পারেন কিছু সুঅভ্যেসের উপর নির্ভর করে। ছুটির দিনগুলিতেও অন্যান্য দিনের মতো নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোনো এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেস বজায় রাখা আমাদের শরীরের নিজস্ব ঘড়ির ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ঘুমোনোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে ফোনের স্ক্রিন দেখা বন্ধ করা এবং সন্ধ্যায় মৃদু আলো ব্যবহার করা কারণ তীব্র আলোর ব্যবহার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়, ফলে মেলাটোনিনের উপরও প্রভাব ফেলে।
ড. রেড্ডি জানান, দিনের বেলায় প্রাকৃতিক আলো, বিশেষ করে সকালের রোদ, মেলাটোনিন-কর্টিসল চক্রকে মজবুত করে এবং রাতের ঘুমের জন্য শরীরের সহায়তা করে। গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, 'প্রগ্রেসিভ মাসল রিল্যাক্সেশন এবং স্বল্প কিছু সন্ধ্যার নিয়ম মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
তাঁর মতে, ‘দুপুরের পর ক্যাফিন খাওয়া কমিয়ে দেওয়া এবং সন্ধ্যায় ভারী খাবার এড়ানো মেলাটোনিন নিঃসরণকে আরও স্বাস্থ্যকর করে তোলে। ওষুধ ছাড়াই এইরকম কিছু সু-অভ্যেস ঘুমের মান এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে।'

Whatsapp
