বিস্ফোরক অভিযোগ মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে! যে কারণে সরে দাঁড়ান মিস ইংল্যান্ড

Miss World pageant 2025: মিলা ম্যাগি বলছেন, "আমি পার্থক্য তৈরি করতে গেছিলাম কিন্তু আমাদের 'পারফর্মিং মাঙ্কিস'-দের মতো বসিয়ে রাখা হয়েছিল। নৈতিকভাবে এই সংগঠনের অংশ আমি হতে পারব না।"

গত ৭ মে তেলঙ্গানার ট্রাইডেন্ট হোটেলে শুরু হয় ৭২তম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা। এবছর ১০৮টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে এই প্রতিযোগিতায়। ১৯৫১ সালে শুরু হওয়া এই উৎসব ভারতে প্রথম ১৯৯৬ সালে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত হয়। তারপর ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে মিস ওয়ার্ল্ড অনুষ্ঠিত হয় ভারতে। বিশ্বজুড়ে উন্মাদনা ছড়ানো এই বিউটি পেজেন্টেই এবার ঘটেছে এক অবাক করা ঘটনা। যে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা, ‘বিশ্ব সুন্দরী’-র মুকুট জয় করা লক্ষ লক্ষ তরুণীর স্বপ্ন, তার এত কাছে পৌঁছেও সরে এলেন ‘মিস ইংল্যান্ড’ মিলা ম্যাগি। ১৬ মে প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার ৯ দিন পর এই পদক্ষেপ তাঁর। প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে এসে ২৪ বছর বয়সি মিলা নিজের দেশে ইংল্যান্ডে ফিরে যান। সংগঠন জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ম্যাগি তাঁর মায়ের শরীর খারাপের কারণে প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু, দেশে ফিরে তিনি অভিযোগ করেন যে, তাঁকে এবং অন্যান্য প্রতিযোগীদের, বৃদ্ধ আমন্ত্রিতদের 'এন্টারটেইন' করতে বাধ্য করা হয়। এটি তাঁকে 'পেশাদার যৌনকর্মী'-র মতো অনুভব করায় বলে অভিযোগ করেন ম্যাগি। তিনি আরও বলেছেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বল গাউন পরে থাকতে হতো। সমস্ত আয়োজকদের আচার-আচরণকে তিনি 'খুবই অপমানজনক' এবং 'অপেশাদার' বলে বর্ণনা করেছেন।

মিলা ম্যাগি বলছেন, "আমাদের শুরু থেকেই পণ্য হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।" তিনি আরও বলেন, "আমি আমার নিজস্ব সামাজিক কার্যক্রম সিপিআর নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কেউ আগ্রহ দেখায়নি। প্রতিযোগিতা সংস্থাকে 'পুরোনো ধ্যান- ধারণায় আটকে থাকা' এবং 'আধুনিক নারীর মূল্যবোধের সঙ্গে অসঙ্গত' বলেও মন্তব্য করেন ম্যাগি।

আরও পড়ুন- আর্টেমিসিয়া জেন্টিলেস্কি: পুরুষের চোখে নয়, মেয়েদের স্বতন্ত্র ছবি এঁকেছিলেন যে শিল্পী

তেলঙ্গানার এক আইএস আধিকারিক এই ঘটনার তদন্ত করেন। পিটিআই জানিয়েছে, ম্যাগির এই অভিযোগের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন কর্মকর্তা শিখা গোয়েল। তবে তেলঙ্গানার মন্ত্রী কে টি রামা রাও মিলা ম্যাগির সাহসিকতার প্রশংসা করে বলেছেন, “মিস ওয়ার্ল্ডের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে নারীবিদ্বেষী মানসিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং প্রতিবাদ করতে অনেক সাহস লাগে। মিলা ম্যাগি, আপনি অত্যন্ত শক্তিশালী নারী এবং আমি সত্যিই দুঃখিত যে আমাদের তেলঙ্গানা রাজ্যে আপনাকে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।” মিলা ম্যাগি সরে আসার পর, মিস লিভারপুল শার্লট গ্রান্ট ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেন।

লন্ডনে বেড়ে ওঠা এই বিউটি কুইন ছোটবেলা থেকেই বডি শেমিংয়ের স্বীকার হয়েছেন। ইংল্যান্ডে প্রথম প্লাস সাইজ বিজয়ী (সাইজ ১৬) হন তিনি। স্কুলে সিপিআর প্রশিক্ষণের বাধ্যতামূলক প্রচারের জন্য উদ্যোগ চালান তিনি। লোডেড ম্যাগাজিনকে মিলা জানান, "আমি মিস ইংল্যান্ড হিসাবে একটা পার্থক্য তৈরি করতে চেয়েছিলাম। বিউটি পেজেন্ট সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে অনেক ভুল ধারণা আছে, আমি সেই ধারণা অতিক্রম করে প্রমাণ করে দিতে চেয়েছিলাম যে মিস ইংল্যান্ড শিরোপা আমাকে দয়ালু হতে, সমাজের জন্য ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করেছে।" প্রতিযোগিতা থেকে সরে এসে তিনি বলেন, "আমি পার্থক্য তৈরি করতে গেছিলাম কিন্তু আমাদের 'পারফর্মিং মাঙ্কিস'-দের মতো বসিয়ে রাখা হয়েছিল। নৈতিকভাবে এই সংগঠনের অংশ আমি হতে পারব না। আমাদের বক্তব্যের থেকেও বেশি জরুরি এখানে শ্যাস আর ক্রাউন।"

১৯৭০ সালে, রয়াল আলবার্ট হল-এ, মিস ওয়ার্ল্ডের মঞ্চে বোমা ছোঁড়ে নারী আন্দোলনকারীরা। তাঁরা মনে করেছিলেন, সুন্দরী প্রতিযোগিতায় পশুর মতো ব্যবহার করা হয় নারীদের সঙ্গে। আধুনিক নারীবাদের প্রকাশ ঘটেছিল ব্রিটেনের উইমেন্স লিবারেশন মুভমেন্ট কর্মীদের প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে। ২০২৫-এর এই ঘটনা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নারীদের প্রতি আচরণের অন্ধকার দিক তুলে ধরল আবার।

আরও পড়ুন- চুলে ফুলের মালা, পরনে সুইম স্যুট, কেমন ছিলেন সেকালের ‘মিস ইন্ডিয়া’?

মিলা ম্যাগির প্রতিবাদ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় মহিলাদের মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এই ধরনের প্রতিযোগিতার কাঠামো ও উদ্দেশ্য পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। যদিও মিস ওয়ার্ল্ড সংস্থা ম্যাগির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং ম্যাগির হাসি মুখের ফুটেজ প্রকাশ করে দাবি করেছে যে, তিনি এই প্রতিযোগিতায় সন্তুষ্টই ছিলেন। কিন্তু এই অভিযোগের বিরুদ্ধে মিলা রুখে দাঁড়িয়ে বলেছেন, তাঁর প্রকৃত অনুভূতি এখানে প্রতিফলিত হয়নি।

‘মিস ওয়ার্ল্ড’ থেকে সরে এসে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন মিলা ম্যাগি। বিশ্বজুড়ে চর্চিত হচ্ছেন তিনি। তবে এই প্রথম নয়, ২০০৭ সালে সারা লরেন্স গর্ভাবস্থার কারণে স্বেচ্ছায় মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা থেকে সরেছিলেন। এই প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিযোগীরা বিবাহিত, গর্ভবতী অথবা সন্তানধারিণী হতে পারবেন না। ইতিহাসে সেই প্রথমবার কোনও প্রতিযোগী গর্ভাবস্থার কারণে প্রতিযোগিতা থেকে সরে যান।

২০০২ সালে, নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজাতে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার সময় মর্মান্তিক দাঙ্গায় ১০০-রও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়। ‘দিজ ডে’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়, "মহানবী মুহাম্মদ (সা.) যদি বেঁচে থাকতেন, তবে তিনিও সম্ভবত একজন মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগীকে বেছে নিতেন।" এই মন্তব্য জনগণের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ সৃষ্টি করে, যাকে তাঁরা ধর্ম অবমাননা হিসেবে দেখেন, শুরু হয় খ্রিস্টান ও মুসলিমদের সংঘর্ষ।এই প্রথম নয় মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা নিয়ে বিতর্ক ছিল আগেও। তবে এবারের অভিযোগ, জাঁকজমকের আড়ালের পাঁকের ছবিই তুলে ধরল।

More Articles