‘হেলদি’ মনে হওয়া খাবারেও লুকিয়ে বিপদ! সতর্ক থাকুন এই উপকরণগুলো থেকে

Toxic substances; প্রক্রিয়াজাত খাবার গুলির ক্ষেত্রে খাবারের শেল্ফ লাইফ বাড়ানোর জন্য এবং খাবারটিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে কিছু অতিরিক্ত উপকরণ রান্নার সময় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

দৈনন্দিন জীবনে আমরা এমন অনেক খাবার খাই, যার মধ্যে ক্ষতিকর কিছু উপাদান মিশে থাকে। এটা হয়তো কমবেশি আমাদের সকলেরই জানা। কিন্তু যা অজানা, তা হলো, কোন কোন খাবারে কী কী অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর পদার্থ মিশে থাকে। প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলির ক্ষেত্রে খাবারের শেল্ফ লাইফ বাড়ানোর জন্য এবং খাবারটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে কিছু উপকরণের ব্যবহার রান্নাঘরে বেশ প্রচলিত। কিন্তু জানেন কি এর বেশিরভাগ উপকরণেই লুকিয়ে একাধিক 'স্বাস্থ্যঝুঁকি'। ক্ষতিকর এই উপাদানগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগও দেখা যায়। আজকের প্রতিবেদনে এরকম ৫টি উপাদানের কথা আলোচনা করা হলো-

গ্লাইফোসেট- এটি একটি আগাছানাশক। আগাছা ধ্বংসের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলেও, এই পদার্থের কিছু অংশ খাদ্যশস্যের মধ্যেও থেকে যায়। বংশানুগত ভাবে পরিবর্তিত (Genetically modified) খাদ্য, যেমন- সয়াবিন, ভুট্টা, গমের মধ্যে থাকে এই glyphosate। বিভিন্ন ফল, সব্জি এবং নন-অর্গানিক শস্যেও কম পরিমাণে গ্লাইফোসেট পাওয়া যায়। দীর্ঘমেয়াদে এই আগাছানাশক শরীরে প্রবেশ করতে থাকলে এর প্রভাবে দেখা দিতে পারে ক্যান্সার, স্নায়বিক, প্রদাহজনিত সমস্যা। পাশাপাশি এর প্রভাবে হরমোনের ভারসাম্যও নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

Artificial Sweeteners বা কৃত্রিম মিষ্টিকারক- অ্যাসপার্টেম, সুক্রালোস, স্যাকারিনের মতো সুইটেনারগুলি ডায়েট, সফ্ট ড্রিঙ্কসহ বিভিন্ন ফ্যাট-ফ্রী এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারে ব্যবহার করা হয়। মিষ্টিকারকগুলির ফলে খাবার স্বাদে মিষ্টি হলেও শরীরে ক্যালোরি প্রবেশ করে না। কিন্তু, এই সুইটেনারগুলি বেশি খেলে গাট মাইক্রোবায়োমে পরিবর্তন আসে। ফলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা ও গ্লুকোজ মেটাবলিজমে এর প্রভাব পড়ে। পাশাপাশি ডিপ্রেশনের ঝুঁকিও বাড়ে। PMC-এর প্রকাশিত একটি স্টাডি বলছে, "এই মিষ্টিকারকগুলি দীর্ঘমেয়াদে খেতে থাকলে কার্ডিওভাসকুলার বিভিন্ন রোগ যেমন- স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়ারও ঝুঁকি থাকে।"

আরও পড়ুন- মহাত্মা গান্ধীর ডায়েট: কতটা বিজ্ঞানসম্মত?

সোডিয়াম নাইট্রাইট ও নাইট্রেট- হটডগ, বেকন, সসেজ, ডেলি মিট ইত্যাদি বিভিন্ন প্রসেসড মাংসে রং ধরে রাখতে এবং ব্যাকটেরিয়ার থেকে বাঁচাতে সোডিয়াম নাইট্রাইট ও নাইট্রেট ব্যবহার করা হয়। এই কেমিক্যালগুলো উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শে এলে পাকস্থলীতে অ্যাসিডের সৃষ্টি করে। এবং নাইট্রোসামাইন নামক ক্ষতিকর যৌগে পরিণত হতে পারে। এই যৌগের প্রভাবে শরীরে কয়েকটি ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পপুলেশন রিসার্চ বলছে, প্রসেসড মিট পাকস্থলীর এবং কলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

MSG বা মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট- বিভিন্ন স্যুপ, ফ্রোজেন মিল ও স্ন্যাকসে এটি ব্যবহার করা হয় মাংসের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা লক্ষ্য না করা গেলেও, কারও কারও শরীরে এমএসজি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাঁরা মাথা ব্যাথা বা বমি বমি ভাব অনুভব করেন। এবং দীর্ঘমেয়াদে এই খাবারগুলি খেতে থাকলে, তাঁদের স্নায়বিক সমস্যাও দেখে দিতে পারে।

কৃত্রিম ফুড কালার- বিভিন্ন স্ন্যাকস, ড্রিঙ্ক, মিষ্টি ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্যকে আকর্ষণীয় করে তুলতে রেড ৪০, ইয়েলো ৫-এর মতো সিন্থেটিক রং ব্যবহার করা হয়। এর ফলে শিশুদের বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া অনেকের মধ্যে অ্যালার্জিও দেখা যায়। 'Environmental Research and Public Health'-এর একটি স্টাডি অনুযায়ী, সিন্থেটিক ফুড কালারগুলি বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকর। অ্যালার্জি, আচরণগত সমস্যা, হাইপার অ্যাকটিভিটি এবং আরও বিভিন্ন ধরণের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও হতে পারে বুদ্ধিগত, পুষ্টিগত বিভিন্ন সমস্যা। অটিজম বা ADHD থাকা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই ক্ষতির আশঙ্কা বেশি।

More Articles