শুধুই স্বাদ! কেন কোরিয়ান খাবারের প্রতি এত টান বাড়ছে বাঙালির?

Korean cuisine in Kolkata: ভারতে ২০২১ সালে কোরিয়ান নুডলসের বাজার ছিল আনুমানিক ২ কোটি টাকার, ২০২৩ সালে সেই অঙ্ক ৬৫ কোটি ছাড়িয়েছে।

২০২৩ সালে গুগল জানায়, সেই বছর সবচেয়ে বেশি যে খাবারটি নিয়ে বিশ্বজুড়ে গুগলে 'সার্চ' হয়েছে তার নাম বিবিমবাপ। আর এই সার্চ তালিকায় অন্য শহরগুলির মতো ছিল কলকাতাও। একদা যেমন কলকাতা-সহ গোটা দেশের মনদখল করেছিল নুডলস, তেমনই কোভিড মরশুমের আগে থেকেই কোরিয়ান খাবারদাবার এই শহরে 'ইন'। কে পপ, কোরিয়ান ড্রামার মতোই এই উপমহাদেশের জেন জি-র প্রথম পছন্দ কোরিয়ান কুইজিন। নিছক ধারণা নয়, পরিসংখ্যানই একথা বলছে। ভারতে ২০২১ সালে কোরিয়ান নুডলসের বাজার ছিল আনুমানিক ২ কোটি টাকার, ২০২৩ সালে সেই অঙ্ক ৬৫ কোটি ছাড়িয়েছে। যথারীতি কোরিয়ান খাদ্যের মাদকতায় মজেছে কলকাতাও। কেন কলকাতার পছন্দ কোরিয়ান খাবার? কোথায় পাওয়া যাচ্ছে কোরিয়ান খাবার?

শ্রীশিক্ষায়তনের সমাজতত্ত্ব বিভাগের ছাত্রী সুচরিতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, কোরিয়ান খাবারের ইউএসপি তার হরেক রকম স্বাদ। "টক ঝাল মিষ্টি সবকিছুর স্বাদই পাওয়া যায়। আমার প্রিয় রেসিপি অবশ্য গোচুজাং দেওয়া রামেন, সপ্তাহে দু'দিন খাই," বলছিলেন সুচরিতা। গোচুজাং এক ধরনের ঝাল সস, কোরিয়ান খাবারের বিশেষত্ব, জেন জি-র হট ফেভারিট। তবে একদিনে হঠাৎ মনের মণিকোঠায় স্থান পায়নি এই খাবার, এসেছে ঘুরপথে। স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্রী মেঘা সরকার বলছেন, "প্রথমে খোঁজ পাই বিটএস-এর। বিটিএস-এর ফ্যান হলাম অচিরেই। কোরিয়ান সংস্কৃতির খুঁটিনাটি জানতে শুরু করলাম। প্রিয় হয়ে উঠল কোরিয়ান খাবার। পার্ক স্ট্রিটের সিউল স্টোরির বিবিমবাপ আমার সবচেয়ে পছন্দের।" আসলে কোথাও গিয়ে কোরিয়ান খাবার ধাক্কা দিচ্ছে বাঙালি স্বাদকোরকেই। কারণ এই খাবারে বারবার ঘুরেফিরে আসে লঙ্কা, রসুন, তিল তেলের মতো উপকরণ, যা বাঙালির হেঁশেলের প্রধান সম্পদ। আবার কিমচির মতো ফারমেন্টেড খাবার মনে করিয়ে দিচ্ছে ছাদের রোদে রাখা বয়ামভর্তি আচারের স্বাদ, মা-ঠাকুমারই হাতের জাদু।

আরও পড়ুন- কোরিয়ান বিউটির নেশায় বুঁদ ভারতীয়রা! কোরিয়ান ত্বকের নেপথ্যের আসল সত্য জানেন?

আরও পড়ুন- ভুখা পেটের বিকল্প খাবার থেকে জিআই তকমা, যেভাবে বিখ্যাত হল লাল পিঁপড়ের চাটনি

কোরিয়ান খাবার বাড়িতে বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ এখন কলকাতায় আরও সহজলভ্য হয়েছে। স্পেন্সার্সের মতো সুপারমার্কেটে এখন কোরিয়ান মশলাপাতির বিভাগ রয়েছে। নিউটাউনের রোজডেল প্লাজা মলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দেদার বিক্রি হচ্ছে গোচুজাং,ডোয়েনজাং-সহ নানাবিধ কোরিয়ান স্ন্যাকস।

কোরিয়ান কুইজিন আজ থেকে ১০ বছর আগেও সীমাবদ্ধ ছিল শহরের বিশেষ কিছু হাতেগোনা রেস্তোরাঁতে। তবে কলকাতায় কোরিয়ান ওয়েভ বা 'হাল্লিউ'-এর ব্যপক জনপ্রিয়তা শুরু হয় কোভিড পূর্ববর্তী সময়েই। ২০১৭ সালে কোরিয়ান এম্বাসির 'কোরিয়ান মিউজিক্যাল প্লে শেফ' অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয় সেই সময়। তবে ঝড় শুরু হয়, ২০২০ সালের পর, কে-ড্রামার সৌজন্যে। নতুন প্রজন্ম কোরিয়ান স্কিনকেয়ার বা কোরিয়ান গ্লাসস্কিনের রহস্য উদঘাটনে নেমে পড়ে। বহু মানুষই কোরিয়ান খাবারদাবারে আকর্ষিত হতে থাকেন। কোরিয়ান শো যেমন 'আ বিসনেস প্রপোজাল' ও 'এক্সট্রাঅর্ডিনারি অ্যাটর্নি উ' দেখেই দর্শকরা কোরিয়ান চিকেন উইংস এবং কিম্বাপের স্বাদে মজেছে। কলকাতা শহরের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিবিমবাপ, রামেন নুডলস্, কিমচি, বুলগোগি খুবই জনপ্রিয়। বিটিএস সদস্য জাংকুকের প্রিয় বানানা মিল্কের বিক্রি আকাশছোঁয়া। পুষ্টিবিদরা বলছেন শুধু সুস্বাদু বলে নয়, কোরিয়ান খাবার স্বাস্থ্যসম্মত এবং আকর্ষক বলেও জেন-জি পছন্দ করছে।

আরও পড়ুন- ভাঙাচোরা প্লাস্টিকের বদলে খাবার! কোথায় আছে এই অদ্ভুত আবর্জনা ক্যাফে?

কলকাতার বহু রেস্তোরাঁই এখন বাঙালি আর কোরিয়ান খাবারের ফিউশন তৈরি করছে। চেষ্টা করছে কোরিয়ান খাবারকে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তুলতে। এর মধ্যে অন্যতম ইয়াম ইয়াম কোরিয়ান বাকেট, গড়িয়াহাট। রয়েছে কোরিয়ান ফুড ট্রাকও। এই শহরের প্রথম কোরিয়ান ফুড ট্রাকটি চালু হয় ২০২২ সালে। অজয়নগরে এক কোরিয়ান দম্পতি একটি ছিমছাম ক্যাফে তৈরি করেন। নাম দেন ক্যাফে টিওভি। এখানকার জাজংমিয়ন, জাপচে, কিমছি জিজিগে খুবই বিখ্যাত। এছাড়াও রয়েছে সিউল স্টোরি, পার্ক স্ট্রিট। এখানে ইন-টেবিল গ্রিলের মাধ্যমে পরিবেশন করা হয় কোরিয়ান বার্বিকিউ। বালিগঞ্জে রয়েছে আজুম্মাস কিম্বাপ, এখানকার রামেন, গিম্বাপ জনপ্রিয়। চেখে দেখাই যায় নিওপচিওক মান্ডুর মতো নতুন স্বাদের খাবারও।

More Articles