ভুল করে মিষ্টি পুড়িয়ে ফেলেই জন্ম বিখ্যাত ডেজার্টের! শেষপাতে মিষ্টিমুখের শিকড় ফ্রান্সেই?

French Desserts: এক শিল্পী চিনি দিয়ে তৈরি করেছিলেন লুই পঞ্চদশের কাটা মস্তক, সৈন্য ও কামানসহ যুদ্ধের দৃশ্য— এ সবই খাওয়ার উপযোগী, কিন্তু সত্যি বলতে, কেউ কি চিনির সৈন্য খেতে চাইবে? বা রাজার কাটা মাথা?

পেটপুরে ভোজনের পর মিষ্টিমুখের মতো সুখ আর কিছুতেই নেই। এ কথা বাঙালি ছাড়া ভালো আর কে জানে? আমার পিতামহ ঘরে এক কৌটো বাতাসা, নকুলদানা রাখতেন, খাবার পরে মিষ্টিমুখের ব্যাকআপ। ধারণা ছিল, যদি কোনওদিন বাড়িতে শেষপাতে মিষ্টির ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে ওই বাতাসা-নকুলদানাই ভরসা। এমন অঘটন যদিও বাড়িতে কখনও ঘটেনি। মধ্যবিত্ত বাড়ির দৈনন্দিন আহার ব্যঞ্জন সাধারণ হলেও শেষপাতে অন্ততপক্ষে একটি গুজিয়া মেনুতে থাকত। তবু ব্যাকআপ মিষ্টানের জোগাড় বন্ধ হয়নি।

বাঙালি তর্কপ্রিয় জাতি। শেষপাতে মিষ্টিমুখের প্রচলন এদেশি বাড়ির রীতি না ওদেশি বাড়ির রেওয়াজ— এই বিতণ্ডায় আমরা কাটিয়ে দিয়েছি প্রজন্মের পর প্রজন্ম। তবে, ফরাসি খাদ্য গবেষক ম্যারিয়ান টেবেন-এর মতে আহারের শেষে মিষ্টি খাওয়ার রীতির জন্ম ফ্রান্সে। ফরাসিরা (বাঙালির মতো) মাঝেমাঝেই ভাবে সব রীতির জন্ম ফ্রান্সেই!

নববর্ষ আসছে। মেইন কোর্সে কী কী থাকবে ঠিক করার আগে বাঙালি আলোচনায় বসে মিষ্টি দইটা কোথা থেকে আসবে? আর কোন মিষ্টি রাখা হবে দইয়ের পাশে? আগেকার দিনে বাঙালি অনুষ্ঠানবাড়ির শুরুই হতো ভিয়েন বসিয়ে। নদিয়া রাজবাড়ির এক প্রীতিভোজের তালিকা কিছুকাল আগে ভাইরাল হয়েছিল। সেই লিস্ট গুনলে দেখা যাবে, চাটনি মোরব্বা সহ, মিষ্টি শরবৎ বাদ দিয়ে, তালিকায় মিষ্টান্নের সংখ্যা আমিষ-নিরামিষ-নোনতা খাবারের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।

প্যারিসের ছিমছাম পাড়ার একটি বিস্ত্রোতে দুপুরের খাবার খেতে গিয়ে খানিক একই অভিজ্ঞতা হলো ক'দিন আগে। সপ্তাহের মধ্যিখানে ভরপুর কাজের একটা দিন, অর্থাৎ সকলের হাতে বাঁধা সময় (যদিও ফরাসিরা রোজ নিয়ম করে অন্তত এক ঘণ্টা লাঞ্চব্রেক নেয়, দক্ষিণের দিকে সেই ব্রেক দুই ঘণ্টাও গড়াতে পারে)। বিস্ত্রোতে সাধারণ মেনু, ছোট-বড় দল বেঁধে এসেছে অফিসপাড়ার খদ্দেররা। স্টার্টারে দু'টি চয়েস, মেইন ডিশ দু'টি। খেতে যারা এসেছে তারা চটপট জানিয়ে দিচ্ছে কে কী চায়।

আরও পড়ুন- সর্ষের ভিতর ভূত না, সর্ষের মধ্যে সুখ পেয়েছে ভোজনবিলাসী বাঙালি ও ফরাসি

মুশকিল হলো ডেজার্ট পর্বে এসে। ওয়েটার জানালেন, বোর্ডে লেখা যে ৫টি অপশন আছে (স্টার্টার আর মেইন ডিশের সম্মিলিত সংখ্যা এখানে ছাড়িয়ে গেছে) তার বাইরে একটা হাউজ স্পেশাল টার্ট আছে সেদিন। কচি বসন্তের বাজারে প্রথম স্ট্রবেরি উঠেছে, শেফ তাই দিয়ে একটা হালকা স্ট্রবেরি টার্ট বানিয়েছেন হোমমেড ফ্রেশ হুইপড ক্রিম দিয়ে। অতি সাধারণ, বাড়িতে মা-দিদিমারা যেমন চটজলদি পায়েস বানিয়ে ফেলেন সেরকম। শুনে খদ্দেরদের চোখ চিকচিক করে উঠেছে, লোভে না আবেগে, বলা মুশকিল।

চার-পাঁচজনের গ্রুপগুলি ঠিক করে সবাই একটা করে ডেজার্ট নিয়ে ভাগাভাগি করে খাবে সবরকম। তাও একটা-দুটো বাদ পড়ে যাচ্ছে, কীভাবে স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা যায় সেই নিয়ে চলল আলোচনা। দু'জন বা একা যারা খেতে এসেছে, তাদের কপালে ভাঁজ। এ তো আজব পরীক্ষা, কোনটা খাবে সে নিয়ে প্রায় প্রো-কন লিস্ট বানাচ্ছে। এর মধ্যে আমি ‘ডেজার্ট চাই না কেবল একটা কফি’ বলায় কয়েকজন ঘুরে তাকাল। পাশের টেবিলের মেয়েটি আর না পেরে বলেই ফেলল, "স্ট্রবেরি টার্টটা কিন্তু সত্যিই ভালো!"

বাঙালির মতো ফরাসিরাও ভালোভাবেই বুঝেছে মধুরেণ সমাপয়েত। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছে, কেবল নিজে নয়, অন্যকেও দলে টেনেছে। মিষ্টি ভাগ করে না খেলে আরাম নেই। ম্যারিয়ান টেবেন ব্যাখ্যা করেন, ইতিহাসে ফরাসি ডেজার্টের রূপ অনেকবার বদলেছে। মধ্যযুগ ও রেনেসাঁ সময়ের ফরাসি রান্নার বইগুলোয় ‘ডেজার্ট’ নামে কিছু ছিল না। বড় কোর্সগুলোর মাঝে পরিবেশিত হতো এঁত্রমে (entremet) — ‘বিরতির খাবার’— এগুলো হতো কখনও মিষ্টি আবার কখনও ঝাল জাতীয় খাবার। টেবেনের মতে, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে মূল আহারের পর শেষ কোর্সটি হতো সাধারণত হালকা ফলের— যাকে রাজকীয় মহলে বলা হতো le fruit। অনেক সময় অতিথিদের জন্য বিস্কুট, মারজিপান, মেরিঙ্গ অথবা ঠান্ডা ডেজার্টও থাকত।

ফরাসি বিপ্লবের পর ‘ফ্রুই’ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং তার জায়গা নেয় 'ডেজার্ট'। 'ডেজার্ট' শব্দটি প্রথম উঠে আসে সপ্তদশ শতকে, ফরাসি শব্দ desservir থেকে, যার অর্থ 'টেবিল পরিষ্কার করা'। শিষ্টাচার অনুযায়ী, শেষ কোর্স পরিবেশনের আগে টেবিল থেকে খাবার সরিয়ে ফেলা হতো, বদলানো হতো টেবিল ক্লথ ও ন্যাপকিন।

তবে ধীরে ধীরে, ডেজার্টের স্বাদের চেয়ে তার দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনাই হয়ে ওঠে মুখ্য। গোটা একটা আপেল ধাতব বা কাঁচের ঝলমলে কাঠামোয় সাজিয়ে পরিবেশন করার রেওয়াজ চালু হলো। নিখুঁতভাবে তৈরি করা চিনির ভাস্কর্য হতো টেবিলের সেন্টারপিস। এসব খাওয়ার জন্য নয়— শুধু দেখার জন্য।

আরও পড়ুন- বাজার করা একটা আর্ট! কাঁচা সবজির বাজারে যেভাবে মিলে যায় বঙ্গ-ফরাসি মন

ডেজার্ট বিশেষজ্ঞদের চিনির পেস্ট দিয়ে স্থাপত্যের প্রতিরূপ তৈরি করতে হতো। টেবেন একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত দেন। এক শিল্পী চিনি দিয়ে তৈরি করেছিলেন লুই পঞ্চদশের কাটা মস্তক, সৈন্য ও কামানসহ যুদ্ধের দৃশ্য— এ সবই খাওয়ার উপযোগী, কিন্তু সত্যি বলতে, কেউ কি চিনির সৈন্য খেতে চাইবে? বা রাজার কাটা মাথা?

ফরাসি বিপ্লবের পর সেই রাজকীয় বিলাসী ও শোভাময় ডেজার্ট ভাস্কর্যগুলি আর অভিজাত সমাজে গ্রহণযোগ্য ছিল না। তখন থেকে অতিথিদের পরিবেশন করা হতো ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তুত করা ডেজার্ট— যার নাম, গঠন ও স্বাদ সাধারণ মানুষকে এক ধরনের ঐতিহাসিক সম্পৃক্তি এনে দিত। অষ্টাদশ শতকের শেষ এবং উনিশ শতকের শুরুতে প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের অগ্রগতিতে সাধারণ মানুষের জন্য মিষ্টি খাবার আরও সহজলভ্য হয়ে ওঠে। চিনি সহজলভ্য এবং যন্ত্রচালিত রেফ্রিজারেশন চালু হওয়ায় মাখনের তাপমাত্রা ঠিক রাখাও সম্ভব হয়, ফলে পেস্ট্রি তৈরি সহজ হয়ে পড়ে।

উনিশ শতকের শেষ নাগাদ, বাদাম কেক, ক্রিম পাফ আর ফলের টার্টের মতো আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু ডেজার্ট ছোটখাট বিলাসিতা হিসেবে সমাজের নিম্নস্তরের মানুষের কাছেও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। ফ্রান্সের শহর-গ্রামে পথে পথে সকালের এক দৃশ্য— মাখনমাখা, তুলতুলে অথচ মুচমুচে ক্রোয়াসঁ হাতে ছোট ক্যাফেতে বসে প্রাতঃরাশ। বা, কাজের পথে হাঁটতে হাঁটতেই পাঁ ও শোকোলাতে কামড়। এক গৃহহীনকে ভিক্ষে করতে শুনেছি; "আমার এতই দুর্দশা যে একটি পাঁ ও শোকোলা কেনার টাকাও নেই"।

ফরাসি পাতিসেরির লোভ সামলানো যায় না, এ কথা ঠিক! তবে এর নেপথ্যের জাদু কেবল মাখন বা ময়দার নয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গড়ে ওঠা নিখুঁত কারুশিল্প — যা একসময় সাধারণ রুটি ছিল, সেটিই আজ এক অনন্য পেস্ট্রির রূপ নিয়েছে; এমন এক সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে যাকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু মিষ্টান্ন ও বেকড পণ্যের জনক হিসেবে আজ আমরা জানি।

বাঙালি ও বাংলার মিষ্টির পরিচয়ের ইতিহাস যেমন বিতর্কিত — সে রসগোল্লার সৃষ্টিকর্তা নিয়ে বিতর্ক হোক বা ফারসি, মুঘল, পর্তুগিজদের প্রভাব নিয়ে তর্ক। ফ্রান্সের মিষ্টি নিয়েও এরকম তর্ক ব্যতিক্রম নয়। প্রাতঃরাশের ক্রোয়াসঁকেই ধরা যাক। ক্রোয়াসঁর পূর্বসূরি কিপফেল প্রথম ফ্রান্সে আসে ১৮৩০-এর দিকে, যখন অস্ট্রিয়ার অগাস্ট য়ান্‌গ প্যারিসে বুলাঞ্জেরি ভিয়েনোয়াজ প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকেই ক্রোয়াসঁর পথচলা শুরু। ফ্রান্সে এখনও ক্রোয়াসঁ, পাঁ ও শোকলা ইত্যাদি পাফ পেস্ট্রি দিয়ে তৈরি মিষ্টান্নকে ভিয়েনোয়াজরি বলা হয়। নামেই লুকিয়ে আছে উৎস, তবু এই মিষ্টান্ন প্রস্তুতি শিল্পে জগৎজোড়া নাম কুড়িয়েছে ফ্রান্স। পাফ পেস্ট্রি (Puff Pastry), পাতিসেরি জগতের অননুকরণীয় ভীত। অনেকে বলে, ক্লডিয়াস গেল ১৬৪৫ সালে এটি তৈরি করেন। তবে অনেক প্রাচীন স্প্যানিশ আরব রন্ধনগ্রন্থে ১৩০০ শতাব্দীতেই এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এমনকী গ্রিকদের মধ্যেও এর ব্যবহার ছিল বলে ইতিহাসে পাওয়া যায়। ইতিহাস যত অস্পষ্টই হোক, এটি যে পেস্ট্রি জগতে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার ছিল, তা অনস্বীকার্য।

পাফ পেস্ট্রি

আরও পড়ুন- নারীবাদী শুনলেই বাঙালিদের মতোই আঁতকে ওঠে ফরাসিরা?

ছোট গোলাকার কদমা জাতীয় মিষ্টি, কাঠবাদাম গুঁড়োর সঙ্গে চিনি মিশিয়ে বানানো হয়, নাম মাকারোঁ (Macaron) প্রথম ফ্রান্সে আসে ১৫৩৩ সালে। ইতালির ফ্লোরেন্সের অভিজাত ক্যাথেরিন দি মেডিচি যখন ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ রাজা হেনরি দ্বিতীয়কে বিয়ে করেন। কিন্তু ১৭৯২ সালে, ফরাসি বিপ্লবের সময় দুই ক্যার্মেলাইট সন্ন্যাসিনী যখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে নঁসি শহরে গিয়ে মাকারোঁ তৈরি করে বিক্রি করতে থাকে, তখন থেকেই এটি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।

ফরাসি মিষ্টান্ন নিয়ে বিতর্ক কেবল তার ফ্রান্স বহির্ভূত উৎস সন্ধানেই আটকে নেই। নানা মিষ্টি নিয়ে আছে স্থানীয় গল্পকথা আর সেই রহস্য উদঘাটন নিয়ে আজও অনুসন্ধান চলে। যেমন, চিনি, ময়দা আর মাখনের ক্যারামেলাইজড জাদু কেক কুইন আমান (Kouign Amann) ফ্রান্সের উত্তরের প্রসিদ্ধ মিষ্টি বলে পরিচিত। উনবিংশ শতকে ব্রিটানির ডুয়ারনেনেজ শহরে জন্ম এই কেকের। ব্রেটন ভাষায় 'কুইন' মানে কেক আর 'আমান' মানে মাখন। কারও মতে, একদম দুর্ঘটনাবশত এক বেকার এই রেসিপি তৈরি করেন, আবার কেউ দাবি করেন, তাঁর স্ত্রীর দিদিমার রেসিপি ছিল এই কেক, যা বিক্রি করে নাম কেনে ব্রিটানির বেকার।

কুইন আমান

মিষ্টির রেসিপির সঙ্গে জড়িয়ে লোককথার প্রসঙ্গে তার্ত তাতাঁ (Tarte Tatin)-র গল্প না করলেই নয়। এই উল্টো করে বানানো অ্যাপেল পাইটি নাকি একেবারে দুর্ঘটনাবশত তৈরি হয়েছিল। তাতাঁ বোনদের একজন একদিন পেস্ট্রি বানাচ্ছিল। অনেকে বলে, রাঁধুনি এতটাই ক্লান্ত ছিল যে অ্যাপেল পুড়িয়ে ফেলে, আর সেই ভুল ঢাকতেই প্যানের উপর পেস্ট্রি বসিয়ে দেয়। আবার অন্যদের মতে, অ্যাপেল পাই বানাতে গিয়ে ভুলবশত নীচে পেস্ট্রি বসাতে ভুলে যায় তাতাঁ বোন, আর পরে সেই ভুল রেখেই পরিবেশন করা হয় বর্তমানেও। ঘটনা যাই হোক—ভুল থেকে এক নতুন ক্লাসিক তৈরি হয়ে যাওয়া— আজ ফরাসি মিষ্টির ইতিহাসে এক দারুণ ছোটগল্প।

তার্ত তাতাঁ

আরও পড়ুন- ‘ওগো আমার শুয়োর’! ফরাসিদের বিচিত্র ডাকনামের আজব কিসসা

ব্রিওশ

কাঠবাদাম দিয়ে বানানো প্রচলিত আমান্দিন তার্ত-এর অনুকরণে নাশপাতি মিশিয়ে ১৮৯০ সালে প্যারিসের বোর্দালু স্ট্রিটের একটি পেস্ট্রি শপে এক প্যাস্ট্রি শেফ বানানো শুরু করেন এর ভিন্ন সংস্করণ। রাস্তার নামেই নতুন তার্ত-এর নাম হয় তার্ত বোর্দালু (Tarte Bourdaloue)।
ব্রিওশ (Brioche), নরম তুলতুলে এক পাউরুটি, অনেকটা আমাদের কলকাতার চায়ের দোকানগুলিতে যে মিষ্টি স্যাঁকা পাউরুটির উপর মাখন চিনি দিয়ে খেতে আমরা অভ্যস্ত, সেরকম। কিংবদন্তি আছে, নর্মান ভাইকিংরাই প্রথম ফ্রান্সে মাখন তৈরির পদ্ধতি নিয়ে আসে এবং তাদের হাত ধরেই ব্রিওশের জন্ম। ১৮৮০ সালের দিকে পিয়ের লাবুলি নামে এক শেফ তৈরি করেন ‘ব্রিওশ ফ্য সাঁ জেনিক্স’ রেসিপি। আঞ্চলিক ভিত্তিতে ব্রিওশের নানা রকমফের দেখা যায় ফ্রান্সে, তবে এই রুটির ইতিহাস যদি মাখন তৈরির পদ্ধতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে, তাহলে ফরাসি সব মিষ্টান্নই ভাইকিংদের বদন্যতায় পাওয়া ধরে নিতে হবে। ছানা ছাড়া যেমন বাঙালি মিষ্টি জমে না, মাখন ছাড়া ফরাসি পেস্ট্রির মজা নেই।

তার্ত বোর্দালু

শেষেপাতে ক্রেম ব্রুলে (Crème Brûlée) দিয়ে শেষ করি। এই জনপ্রিয় ঘন কাস্টার্ড ডেজার্টটির নাম যেমন জগৎজোড়া, এর দাবিদার তিন দেশ— ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও স্পেন। মধ্যযুগেই ইউরোপ জুড়ে দুধের এই রকম কাস্টার্ড খুব জনপ্রিয় ছিল। 'ক্রেম ব্রুলে' নামটি প্রথম দেখা যায় উনবিংশ শতাব্দীতে। তবে ফ্রান্স আর ক্রেম ব্রুলে কবে থেকে একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠলো জানা যায় না।

ক্রেম ব্রুলে

আরও কত মিষ্টির কথা বলাই হলো না, যেমন পারিব্রেস্ট— দুই শহরের মধ্যে সাইক্লিং প্রতিযোগিতা উদযাপনের জন্য বানানো সাইকেলের চাকার আকৃতির অনবদ্য এক মিষ্টি। রয়েছে মিল ফুয়ে কেক, মার্সেল প্রুস্তের নস্টালজিয়া উদ্রেককারী ম্যাডেলিন। গল্প কি আর শেষ হয়? তবে যা বোঝা যাচ্ছে, প্রভাব বা উপকরণ যেখান থেকেই এসে থাকুক বাঙালি আর ফরাসির শেষপাতে মিষ্টির শৈল্পিক ছোঁয়া ইতিহাস ছাড়িয়ে কাব্যিক হয়ে উঠেছে। দুই জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে গেছে শতাব্দী প্রাচীন মিষ্টি প্রস্তুতি এবং পরিবেশনের ঐতিহ্য। বাঙালি মিষ্টি বা ফরাসি প্যাস্ট্রি, যা দিয়েই হোক, নববর্ষ সবার মধুর কাটুক।

More Articles