ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রসৈকতে বসে 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' করতে পারেন আপনিও!

পৃথিবীর অনেক দেশই, তাদের দেশে নির্দিষ্ট সময় অবধি থাকার ভিসা প্রদানের মাধ্যমে, সেখানে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর সুবিধে দিচ্ছে। এই নতুন ধরণের কনসেপ্টের নামই হল ‘ডিজিটাল নোমাড’। ‘নোমাড’ কথাটির অর্থ হল যাযাবর।

করোনাকালীন সময়ে বিশ্ববাসী ‘কোয়ারেন্টাইন’ বিষয়টি ছাড়াও আর একটি বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল– ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’। এর আগেও বিভিন্ন অফিসে ঘর থেকে কাজ করার নিয়ম ছিল বটে, তবে এরকম সর্বাত্মকভাবে নয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই এরপর বদলে গেল অফিসের কনসেপ্ট। যদিও এই লাভের গুড় সব কোম্পানি পেতে সক্ষম হয়নি, তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর শিল্পক্ষেত্রের বিভিন্ন সংস্থাগুলিই কেবলমাত্র তাদের কর্মচারীদের এই ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সুবিধা দিতে পেরেছিল। করোনার পর অফিস যেন একপ্রকার মিথে পরিণত হয়েছে। তাই তো কোভিড পৃথিবী ছেড়ে প্রায় বিদায় নিলেও, অনেক কোম্পানিতেই বেশ রমরমিয়ে চলছে এই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বিষয়টি।

ঘরে বসে কর্মক্ষেত্রে থেকে দূরে অবস্থান করে কাজ করার সুবিধে আজ শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। পৃথিবীর অনেক দেশই, তাদের দেশে নির্দিষ্ট সময় অবধি থাকার ভিসা প্রদানের মাধ্যমে, সেখানে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর সুবিধে দিচ্ছে। এই নতুন ধরণের কনসেপ্টের নামই হল ‘ডিজিটাল নোমাড’। ‘নোমাড’ কথাটির অর্থ হল যাযাবর।

তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহারের মাধ্যমে এই যাযাবররা বর্তমানে ছড়িয়ে পড়ছে দেশ থেকে দেশান্তরে, তারা বাঁধা শুধু সময়ের কাঁটায়। মানে ধরুন, আপনাকে কোনও একটি দেশ সেই দেশে থেকে কাজ করার জন্য ভিসা প্রদান করল। এক্ষেত্রে আপনাকে সেই দেশে গিয়েও কোনও অফিসে যেতে হবে না, সেখানে আপনি ঘরে থেকেও যেমন কাজ করতে পারবেন আবার আপনি চাইলে সেই দেশেই নিজের পছন্দমতো কোনও জায়গায় বসেও সেরে ফেলতে পারেন নিজের কাজ। অর্থাৎ, এককথায় বলতে গেলে, আপনি বহির্বিশ্বের কোনও দেশে ট‍্যুরিস্ট হয়ে থেকেও অর্থ উপার্জনে সক্ষম হবেন। এক্ষেত্রে শুধু ল্যাপটপ কি‌ংবা ফোন থাকলেই আপনি, আপনার কাজ সহজে হাসিল করতে পারবেন।

আরও পড়ুন: ধূমধাম করে প্রথম সমকামী পুরুষের বিয়ে, কলকাতা সাবালক হল?

বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেরই জনসংখ্যা বেশ হ্রাস পেয়েছে। তাই উন্নত দেশগুলি শিক্ষিত এবং প্রযুক্তিনির্ভর নোমাডদের সেই দেশে থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুবিধে দিচ্ছে। এইভাবে দেশগুলিতে যেমন দক্ষ কর্মচারীর অভাব মেটানো সম্ভব হচ্ছে, আবার তেমনই করোনাকালীন পরিস্থিতিতে ধসে যাওয়া পর্যটন শিল্পেও জোয়ারের আগমন ঘটছে এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভ্রমণপ্রিয় অনেক মানুষই কিন্তু ইতিমধ্যেই নিজেদের বাসস্থানের থেকে উন্নততর কোনও জায়গায় যাত্রা করেছে। দেখা গেছে, যে দেশ পর্যটকদের কাছে বেশি আকর্ষনীয়, সেই দেশেই হু হু করে বেড়ে চলেছে এই ডিজিটাল যাযাবরের সংখ্যা। অনেক রাষ্ট্র এই নোমাডদের যে শুধুমাত্র নিজেদের দেশের মধ্যেই কাজ করার সুবিধে দিচ্ছে তা নয়, বরং সে-দেশে থাকার সময়ে আবার অন্য কোনও দেশে কাজ করার সুবিধেও প্রদান করছে।

কোনও দেশে ডিজিটাল যাযাবর হিসেবে কাজ করতে যাওয়ার আগে যে বিষয়গুলি সম্পর্কে বিশেষভাবে জানা প্রয়োজন তা হলো:

ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা
Internet connectivity– ডিজিটাল নোমাডদের সম্পূর্ণ কাজটি যেহেতু ইন্টারনেটনির্ভর তাই কোনও দেশে যাওয়ার আগে অবশ্যই সেই দেশের ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পর্কে গবেষণা করে তবেই পা বাড়ানো শ্রেয়।

জীবনযাত্রা কতখানি ব্যয়বহুল
যেহেতু ভারতের কারেন্সি রেট বাইরের বেশিরভাগ দেশের থেকে কম তাই অনেকসময় আমরা ভারতীয় টাকার প্রেক্ষিতে হিসেব করে চলে থাকি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে ন‍্যূনতম জীবনযাপনের পরিবর্তেও আপনাকে ভালো অঙ্কের টাকাই খরচ করতে হবে এবং সেটা করতে হবে সেই দেশের কারেন্সির হিসেবেই।

দেশের সংস্কৃতি
প্রত্যেক দেশেই নিজস্ব সংস্কৃতিতে বৈচিত্রময়। কিন্তু আপনি যে দেশে কাজের সূত্রে এবং বলা ভালো এককালীন বসবাসের উদ্দেশে যাবেন, সেখানকার মানুষের সংস্কৃতিতে অতিথিবৎসলতা রয়েছে কি না, তা জানা অত্যন্ত জরুরি। কারণ সেই দেশে কিন্তু কিছু বছরের জন্য হলেও আপনি সম্পূর্ণ একাকী জীবনযাপন করতেই পাড়ি দিচ্ছেন। দেশটিতে ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিসর কতখানি, সেই বিষয়েও খোঁজ নেওয়া অত্যন্ত আবশ্যিক।

দেশের জলবায়ু
ভারতের কিছু অংশ বাদ দিলে দেখা যাবে এই দেশের জলবায়ু কোথাও চরমভাবাপন্ন নয়। মানুষের বেড়ে ওঠাতে জলবায়ু প্রভাব অনেকখানি তাই অন্য কোন দেশে পা বাড়ানোর আগে সেই দেশের জলবায়ু সম্বন্ধে খুঁটিনাটি খোঁজ নেওয়া একটি আবশ্যিক বিষয়, নাহলে সেই দেশে গিয়ে আপনাকে অবশ্যম্ভাবী বিপদের সম্মুখীন হতেই হবে।

দেশের যাতায়াত ব্যবস্থা
যেহেতু ডিজিটাল নোমাড-এর ধারণাতেই কাজ এবং ভ্রমণ দু'টি বিষয় একসঙ্গে অবস্থান করে তাই দেশটিতে পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশনের ব্যবস্থা আছে কি না বা থাকলেও তার জন্য কত টাকা ব্যয় হতে পারে, সে বিষয়ে একবার খবর নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে যদি আপনি একজন ভ্রমণপ্রিয় মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে খবর নিতে একদম ভুলবেন না যেন।

দেশটির ভাষা
কোনও দেশে যাওয়ার আগে এটা জেনে নেওয়া খুব দরকার সেই দেশে বেশিরভাগ মানুষ ইংরেজি বোঝে কি না, নাহলে সেই দেশে জীবনযাপন করতে গিয়ে আপনাকে কিন্তু পদে পদে বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হবে।

এই অবস্থায় ইন্দোনেশিয়ার পর্যটনমন্ত্রী সান্দিয়াগা উনো নিজের দেশের পর্যটন শিল্পকে পুনরায় উজ্জীবিত করার পরিকল্পনা নিয়ে ডাক দিয়েছেন ‘ডিজিটাল নোমাড’-দের। তিনি কিছুদিন আগেই ডিজিটাল নোমাডদের উদ্দেশে পাঁচ বছরের একটি ভিসার কথা ঘোষণা করেছেন এবং এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও জানান, এই ভিসার মাধ্যমে আসা মানুষদের ইন্দোনেশিয়ায় থাকা, খাওয়া কিংবা ভ্রমণের জন্য অতিরিক্ত কোনও ট্যাক্স দিতে হবে না। আমরা সবাই জানি ইন্দোনেশিয়ার ‘বালি’ ভ্রমণ প্রিয় মানুষদের জন্য একটি আদর্শ ডেস্টিনেশন, তাই এই ভিসার মাধ্যমে যে করোনা-পূর্ববর্তী সময়ের মতোই প্রচুর পর্যটক ভিড় জমাবে বালির বিস্তীর্ণ সমুদ্রসৈকতে, একথা আর বলার অবকাশ রাখে না। ইতিমধ্যেই ইন্দোনেশিয়ার সরকার কোভিড বিধি অনেকখানি শিথিল করে দিয়েছে, এমনকী, ১৮ মে আরটি-পিসিআর-এর বাধাটুকুও তুলে নিয়েছে দেশটি। পর্যটনমন্ত্রী সান্দিয়াগা আশা করছেন এই ভিসার মাধ্যমে তিনি দেশে প্রায় এক মিলিয়ন লোককে চাকরি দিতে সক্ষম হবেন।

সরকার এও বলেছে যে, ইন্দোনেশিয়ায় আগত ডিজিটাল নোমাডদের ক্ষেত্রে বর্হিবিশ্বের থেকে অর্জিত আয়ের ক্ষেত্রেও কোনও কর আরোপ করা হবে না। যদিও এখনও অবধি পাঁচ বছরের এই ভিসা সম্পর্কিত কোনও তথ্য বিশদে প্রকাশ পায়নি। ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও ডিজিটাল নোমাডদের বিশ্বের প্রায় চল্লিশটি দেশ স্বাগত জানিয়েছে ।

 

More Articles