ভোটারদের কোটি কোটি টাকা 'পুরস্কার'! কেন ট্রাম্পের হয়ে সালিশি করছেন এলন মাস্ক?

Elon Musk American President Election 2024: মাস্কের ট্রাম্প-সমর্থিত পলিটিকাল অ্যাকশন কমিটি - আমেরিকা পিএসি - ইতিমধ্যেই এই নির্বাচন প্রচারে ১১৯ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে৷

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে আমেরিকায়। আর পাঁচটা সাধারণ নির্বাচনের থেকে যে আমেরিকার নির্বাচন আলাদা তা বলা বাহুল্য। আমেরিকার নির্বাচন আমেরিকা ছাড়াও, বিশ্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ট্রাম্প, বাইডেন, কমলা হ্যারিস ছাড়াও এই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়েছেন এলন মাস্ক। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি আমেরিকার ছোট ছোট শহরে, ছোট ছোট জায়গায় বক্তব্য রাখছেন। কেন? সম্প্রতি এলন মাস্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া রাজ্যের ফোলসম শহরের একটি স্কুলে এসেছিলেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড়লোক মানুষটি এমন ছোট্ট শহরে কেন? মাত্র ৯,০০০ লোকের বাস এই শান্ত ফোলসম শহরে। এখানকার বাসিন্দারা রাজনীতি সম্পর্কে বেশ ওয়াকিবহাল। নভেম্বরে নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচনের আগে মাস্ক কেন ঘন ঘন যাতায়াত করছেন ছোট শহরগুলিতে?

প্রযুক্তিবিদ বিলিয়নেয়ার মাস্ক সরাসরি রাজনীতির আঁচ বাঁচিয়েই চলতেন এতদিন। এবার ট্রাম্পের প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। সাধারণত আমেরিকার অভিজাত ব্যবসায়ীরা চিরকালই রাজনীতির ময়দানে সরাসরি নামেন না। তবে এবার এলন মাস্ক রিপাবলিকান পার্টিকে নির্বাচিত করানোর চেষ্টায় নিজের সমস্তটা নিংড়ে দিচ্ছেন যেন।

আরও পড়ুন- বছর ২০-র যুবক! ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করল কে?

ওপেন সিক্রেটস নামক ট্র্যাকার জানাচ্ছে, মাস্কের ট্রাম্প-সমর্থিত পলিটিকাল অ্যাকশন কমিটি - আমেরিকা পিএসি, ইতিমধ্যেই এই নির্বাচন প্রচারে ১১৯ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে৷ এখানেই শেষ না। মাস্ক নিজে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি টাকা অনুদান দিয়েছেন। অর্থাৎ প্রচারাভিযান ভোটারদের কাছে রিপবলিকানদের পৌঁছে যাওয়ার পথে অগাধ টাকা, যার সিংহভাগটাই মাস্কের দয়ায়। মাস্কের একজন প্রধান লেফটেন্যান্ট স্টিভ ডেভিস। স্পেসএক্স, এক্স এবং বোরিং কোম্পানি সহ মাস্কের নানা সংস্থার জন্য কাজ করেছেন তিনি। এই নির্বাচনী প্রচারে সাহায্য করার জন্য স্টিভকে নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

মাস্ক সমর্থিত একটি পিটিশনে সই করলে আমেরিকা পিএসি একজন ভোটারকে প্রতিদিন ১ মিলিয়ন ডলার করে দিচ্ছে! ভাবা যায়! ১ মিলিয়ন ডলার! আমেরিকা পিএসি ছয়টি রাজ্য- জর্জিয়া, নেভাদা, অ্যারিজোনা, মিশিগান, উইসকনসিন এবং উত্তর ক্যারোলিনার ভোটারদের 'বাক স্বাধীনতা এবং অস্ত্র বহনের অধিকারের পক্ষে একটি পিটিশন' সই করতে বলছে৷ যারা অন্য ভোটারদের সই করতে উৎসাহিত করছেন তাদের প্রত্যেককে ৪৭ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে আমেরিকা-প্যাক। পেনসিলভানিয়াতে সই করা বা সই করাতে উৎসাহিত করার পুরস্কার ১০০ ডলার। ৫ নভেম্বর ভোটের দিন পর্যন্ত প্রতিদিন, সাতটি রাজ্যের একটিতে যেকোনও স্বাক্ষরকারীকে লটারির মাধ্যমে ১ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে। কেউ ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য এত বেশি সময় এবং এত বিপুল টাকা কেন ব্যয় করবে? কী এমন লাভ পেতে চলেছেন মাস্ক যে কারনে নির্ভাবনায় টাকা ঢালছেন তিনি?

আরও পড়ুন- বন্দুকের নলই আমেরিকায় ক্ষমতার উৎস

মাস্ক এমন মানুষদের কাছেই আবেদন করছেন যাদের কাছে মাস্ক একজন অভাবনীয় প্রতিভাবান, উজ্জ্বল মেধার সফল মানুষ। এই ধরনের মানুষদের মধ্যে প্রচার করে ডেমোক্র্যাটরা কখনই বিশেষ লাভ করতে পারেনি। গত ১৩ জুলাই পেনসিলভানিয়ার বাটলারে ট্রাম্পকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পকে প্রথম সমর্থন জানান মাস্ক। তারপর থেকে ট্রাম্পের প্রচারে মাস্ক সাধারণ মুখ হয়ে উঠেছেন। মাস্ক অনবরত প্রচার করে চলেছেন, একমাত্র ট্রাম্পই আমেরিকার গণতন্ত্রকে বাঁচাতে পারেন।

ট্রাম্প জিতলে কী লাভ হবে মাস্কের? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মাস্ক এবং তাঁর ব্যবসাগুলির এতে প্রচুর লাভ হতে চলেছে। ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের সম্পর্ক যত দৃঢ় হবে ততই বাড়বে ব্যবসা। বিশেষ করে মাস্কের এই রাজনৈতিক পরিবর্তন বৈদ্যুতিক যানবাহন শিল্পে প্রভাব ফেলবে। ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে মাস্কের নানা উদ্ভাবনের উপর নিষেধাজ্ঞা ও নিয়ন্ত্রণ লাঘব করা হবে। এর আগে মাস্ক একাধিকবার বলেছেন, অতিরিক্ত সরকারি নিয়ন্ত্রণে উদ্ভাবনী শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেমন অটোনোমাস ড্রাইভিংয়ের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আছে সরকারের। মাস্ক মনে করেন অটোনোমাস ড্রাইভিং অর্থাৎ চালক ছাড়াই গাড়ি চালানোর বিষয়টিতে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রযুক্তির বিকাশকে বাধা দিচ্ছে। মাস্ক মঙ্গল গ্রহে যেতে চান। সেখানে তাঁর যা যা পরিকল্পনা, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে সেসবের নিষেধাজ্ঞাও শিথিল হবে! প্রশাসন পকেটে থাকলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে পারবেন মাস্ক।

More Articles