বাস্তুমতে ঘড়ির অবস্থান নানাভবে আপনার ভাগ্য বদলাতে পারে, বলছেন বাস্তুবিদ...

বাড়ির সাজসজ্জার একটি অপরিহার্য অংশ হল ঘড়ি। বাড়ির ইন্টিরিয়র ডিজাইন নিয়ে এখন মানুষ পরীক্ষানিরীক্ষা করতে ভালোবাসে। সব সময়েই আর পাঁচজনের থেকে আলাদা করার চেষ্টা করে। ঘরের রং বা থিমের সঙ্গে মিলিয়ে আমরা এখন বিভিন্ন নতুন ধরনের ঘড়ি প্রায় বাড়িতেই দেখা যায়। তবে বাস্তু শাস্ত্র মতে মানুষের ভাগ্যচক্র বা শুভ অশুভ নির্ধারণে এই সামান্য ঘড়ির গুরুত্বও কিছু কম নয়। তাই ঘড়ি পছন্দ করার সময় বাস্তু টিপসগুলি খেয়াল রাখুন। এর ফলে বাড়ির সজ্জাশৈলী যেমন বজায় থাকবে তেমনি ইতিবাচক এনার্জিরও খামতি হবে না। জেনে নিন দেয়াল ঘড়ির বাস্তু টিপস-

ঘড়ির দিক- উত্তর দিক

বাস্তুশাস্ত্রে স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, বাড়ির দেওয়াল ঘড়ি বাস্তুর সেরা দিক হল উত্তর। ঘড়ির কাঁটা উত্তর দিকে মুখ করে থাকলে পরিবারের স্বাস্থ্য ও সম্পদের উপর সবচেয়ে ভালো প্রভাব পড়ে। উত্তর হল ভগবান গণেশ এবং সম্পদের দেবতা কুবেরের দিক। উভয় দেবতাই উত্তর দিকে শাসন করেন তাই বাস্তু অনুসারে উত্তরমুখী ঘড়ি স্থাপন সর্বজনীনভাবে সেরা বলে বিবেচিত হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারেও উত্তর দিকটিকে ইতিবাচক হিসাবে মনে করা হয়। কারণ উত্তর দিক বুধ গ্রহ দ্বারা শাসিত হয়, যা যোগাযোগ এবং ব্যবসায়িক দক্ষতাকে বাড়িয়ে তোলে। 

দক্ষিণ দিক নিয়ে নিষেধাজ্ঞা

বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, বাড়ি বা অফিসের দক্ষিণ দেওয়ালে ঘড়ি রাখা উচিত নয়, কারণ দক্ষিণ দিককে যমের দিক বলে মনে করা হয় এবং হিন্দু শাস্ত্রে যমকে মৃত্যুর দেবতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।এদিক করে  ঘড়ি রাখলে ব্যবসায় বিভিন্ন ধরনের বাধা আসতে থাকে এবং উন্নয়ন মাঝপথে আটকে যায়। এর পাশাপাশি বাড়ির লোকজনের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

পূর্ব দিক

বাস্তুশাস্ত্র মতে, পূর্ব দিককে শুভ বলে মনে করা হয় কারণ এটি উদীয়মান সূর্যের দিক। একটি উদীয়মান সূর্য নতুন দিনের , একটি নতুন অধ্যায় শুরুর  চিহ্নস্বরূপ ।বাড়ির মালিকদের জন্য নতুন ভাগ্য নির্দেশ করে এই দিক এবং বাস্তু অনুসারে এই দিক করে ঘড়ি লাগানোর একাধিক ভালো গুণ রয়েছে। সূর্য দ্বারা শাসিত পূর্ব দিক, কর্ম এবং কর্মের গুণমানকে উন্নত করে। দেয়াল ঘড়ি পূর্ব দিকে অবস্থান করলে বাড়িতে নেতিবাচক শক্তির প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। বাস্তু শাস্ত্র বলে যে ঝুলন্ত দেয়াল ঘড়ি বসানো সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুণমানকে উন্নত করবে এবং কর্মস্থলকে  উন্নত করবে।

পশ্চিম দিক

বাস্তু অনুসারে বেডরুমের দেয়াল ঘড়ি পশ্চিম দিকে রাখা যেতে পারে যদি বিছানা পূর্ব দিকে থাকে। এছাড়া বাড়ির বসার ঘরের পশ্চিম দেওয়ালেও রাখতে পারেন ঘড়ি। এই দিকে ঘড়ি রাখলে তা পরিবারের সদস্যদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। ঘরে নবদম্পতি থাকলে অবশ্যই এই টিপসটি মাথায় রাখুন।

ঘড়ির আকার

বছরের পর বছর ধরে বিবর্তিত হয়েছে দেয়াল ঘড়ির আকার। আগে ঘড়িগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে বড় ছিল। প্রতিটি বাড়ির বসার ঘরে একটি বড় পেন্ডুলাম ঝুলানো দেয়াল ঘড়ি দেখা যেত। বাস্তু মতে ঘড়ির আকৃতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেওয়াল ঘড়ির আদর্শ আকৃতি, বাস্তু অনুসারে, বৃত্তাকার হওয়া উচিত। হিন্দু শাস্ত্র মতে বৃত্তাকার এই আকৃতি জীবন বৃত্তকে নির্দেশ করে। 

ঘড়ির রঙ

বাস্তুবিদের মতে, ঘড়ির আকার ও অবস্থান যেমন জীবনকে প্রভাবিত করে ঠিক তেমনই এর রঙও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাড়ির জন্য ঘড়ি কেনার সময় সচেতন হোন। যদি ঘড়ির দিক উত্তর হয়, তাহলে বাস্তু অনুসারে, ঘড়ির রঙ ধাতব, সাদা বা ধাতব ধূসর হতে হবে। অন্যদিকে, দেয়াল ঘড়ি যদি পূর্ব দিকে ঝুলানো হয়, তবে ঘড়িটি কাঠের তৈরি বা  কাঠের রঙের বাদামী ও গাঢ় সবুজ থাকলে সবচেয়ে ভালো। 

করণীয়

বাড়িতে ঘড়ি ঝুলানোর সময় এর আকার,দিক বা রঙ সম্পর্কে যেমন খেয়াল রাখবেন তেমনই আরও কিছু জিনিস এ সম্পর্কে না জানলেই নয় -
১. ভুলেও বাড়ির সদর দরজার সামনে ঘড়ি রাখবেন না। ঘড়ির অবস্থান সবসময় ঘরের ভিতরে হওয়া উচিত। 
২. দেয়াল ঘড়ি দ্বারা দেখানো আদর্শ সময়টি সবসময় সঠিক সময়ের থেকে কয়েক মিনিট এগিয়ে থাকা উচিত। কখনই পিছিয়ে থাকা উচিত নয় কারণ এটি পরিবারের সদস্যদের বৃদ্ধিকে শ্লথ করে দেয়। 
৩. ঘড়ির আকার বৃত্তাকার হওয়ায় পাশাপশি এর ওপর খোদাই করা সংখ্যাগুলি যেন স্পষ্ট ভাবে লেখা থাকে। যাতে ঘরের যে কোনো কোণ থেকে স্পষ্ট ভাবে সময় দেখা যায়। 
৪. দুঃখ ,শোক , যুদ্ধ বা একাকিত্বের ছবি রয়েছে এমন ঘড়ি এড়িয়ে চলুন।

More Articles