ভোর পাঁচটায় ওঠা থেকে রাতের ঘুম, যে রুটিনে লুকিয়ে মুকেশ আম্বানির সাফল্যের রহস্য
Mukesh Ambani : ভারত তথা এশিয়ার অন্যতম ধনী ব্যক্তির রোজকার রুটিন
ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা নিয়ে হাজারটা নিয়ম নীতি বড়রা বললেও তাতে কান তুলতে সাধ হয় না। তার ওপর এই আধুনিক যুগের হাজারটা হাতছানির সামনে রাত জাগাটাই যেন দস্তুর মতো ঠেকেছে। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলছেন, দিনের শুরুটাই সারাদিনের রসদ হতে পারে। শুধু তাই নয়, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নেপথ্যেও লুকিয়ে রয়েছে সারাদিনের নিয়মমাফিক অভ্যাস।
মুকেশ আম্বানির নাম নিশ্চয়ই কম বেশি সকলেই শুনেছেন। বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি। কিন্তু এই যে উন্নতির শিখরে পৌঁছনো মানুষটির সারাদিনের অভ্যাস ঠিক কেমন? সেট জানতে ইচ্ছে করতে পারে। উপরন্তু সেই অভ্যাসই যদি বলে দিতে পারে একঘেঁয়ে জীবনে চাকা তবে তো আরও বেশি করে প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায় সেই রুটিন। রুটিন মেনে চললেই যদি মেলে সাফল্যের সিঁড়ির খোঁজ, তবে বোধ করি ভোর বেলার শীত ঘুমের মায়া কাটানোও বিশেষ কষ্টকর হবে না।
বর্তমানে এশিয়া তথা গোটা বিশ্বের প্রথম সারির ধনকুবেরের তালিকার অন্যতম স্থানে রয়েছেন মুকেশ আম্বানি। বাবা ধীরুভাই আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের দায়-দায়িত্ব সামলাচ্ছেন একা হাতেই। তার নেতৃত্বেই রিলায়েন্স ব্র্যান্ড রমরমিয়ে ব্যবসা করছে বিশ্ব জুড়ে। একের পর এক নামজাদা কোম্পানিকে গ্রাস করছে রিলায়েন্স জাল। কিন্তু আজকের এই উন্নতি তো একদিনে আসেনি। প্রত্যেক মুহুর্ত কঠোর পরিশ্রমই তাঁকে পোঁছে দিয়েছে শিখরে। তবে উন্নতি টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন নিয়মমাফিক জীবনযাপন, একথা ভুলে যাননি মুকেশজি। হাতের মুঠোয় বিলাসবহুল জীবন থাকা সত্ত্বেও ছকে বাঁধা জীবনকেই (Mukesh Ambani Daily Routine) বেছে নিয়েছেন মুকেশ আম্বানি।
আরও পড়ুন - কী নেই অ্যান্টিলিয়ার অন্দরে! মুকেশ আম্বানির রাজপ্রাসাদ কেন আজও কৌতূহলের
ঘুম ভেঙে ওঠা থেকে রাতে শুতে যাওয়া অবধি পরতে পরতে বাঁধা নিয়ম। তাও আবার ঘড়ি মিলিয়ে।যোগব্যায়াম, কাজ, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো থেকে শুরু করে খাওয়া, ঘুম, সবই নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী নিয়ম মেনে করেন তিনি। পাশাপাশি কাজের দুনিয়াতেও সমান টাইম মাফিক পা ফেলেন। এই রোজনামচায় এক চুলও এদিক থেকে ওদিক হওয়ার জো নেই। তার এমন নিয়মকে সাফল্যের নেপথ্য কারণ বলতে দ্বিধা হয় না। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই রুটিন -
১. কাঁটায় কাঁটায় ভোর পাঁচটা, ঘুম ভাঙে মুকেশজির
মুকেশ আম্বানির দিনের শুরুটা হয় ভোর ৫টার সময়। উপরন্তু বাড়ির কাছেই মুম্বাইয়ের সমুদ্র সৈকতের মনোরম দৃশ্য, সব মিলিয়ে শুরুটা দিব্য কাটে। পাশাপাশি ঝালিয়ে নেন যোগব্যায়ামের অভ্যাসটাও।
২. ধ্যানেই বাড়ে মনঃসংযোগ
ধ্যান একাগ্রতা বাড়ায়। এত বিশাল ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান হওয়ার কারণে মনঃসংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুকেশ আম্বানি সে কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন। তাই রোজকার রুটিনে মেডিটেশন করতে ভোলেন না।
৩. জিম এবং সাঁতার
শরীরচর্চার প্রতি তার বেশ মনোযোগ রয়েছে। দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করেন রোজই। পাশাপাশি সাঁতারে সময় দেন মুকেশ আম্বানি। কাজ করতে গিয়ে শরীর যাতে সঙ্গ দেয় তাই শরীর এবং মন ভালো রাখার জন্য সবকিছুই করেন তিনি।
৪. পরিবারের সঙ্গে প্রাতঃরাশ
এরপর সকাল ৯ টা নাগাদ সারেন ব্রেকফাস্ট, অবশ্যই স্বাস্থ্যকর। পেঁপের জুস খুবই পছন্দ করেন তিনি। দিনের শুরুটা তাড়াতাড়ি হওয়াতে পরিবারের সঙ্গে বেশ খানিকটা সময় কাটাতে পারেন যা তাঁকে সারাদিনের কাজের অক্সিজেন জোগায় এবং চাপমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
৫. নির্দিষ্ট সময়ে অফিস যান
ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেন মুকেশ আম্বানি। ব্রেকফাস্ট সেরেই তৈরি হম অফিসের জন্য। সময় একটুও এদিক ওদিক করতে পছন্দ করেন না। লিফটে করে বাড়ির তিন তলার পার্কিং লটে এসে অসংখ্য গাড়ির মধ্যে থেকে তাঁর নির্ধারিত মার্সিডিজ মেব্যাক ৬২ গাড়িতে চড়ে রওনা দেন অফিসের উদ্দ্যেশে। ১১ টা বসার মধ্যেই ঢোকেন অফিসে।
আরও পড়ুন - মাসমাইনের চাকুরের মতোই মাইনে নেন মুকেশ আম্বানি! দৈনিক রোজগার…
৬. কাজের ক্ষেত্রে সূচি মেনেই চলেন মুকেশ
অফিসে পৌঁছেই কাজের হিসেব মতো মিলিয়ে নেন। প্রয়োজনীয় মিটিং-এ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পৌঁছন। অফিসের সহকর্মীদের সব সময় কাজের উৎসাহ জোগান। পাশাপাশি নিজের কাজটিতেও সমান দক্ষ থাকেন।
৭. দুপুরের খাওয়া
কাজের ফাঁকে দুপুরে ঘন্টাখানেকের লাঞ্চ ব্রেক নিয়ে বাড়ি ফেরেন। আবারও খানিক সময় কাটান বাড়ির মানুষের সঙ্গে। এই সাময়িক বিরতিটি বাকি কাজের উৎসাহ বাড়াতে সাহায্য করে।
৮. পড়াশোনার অভ্যাস
মুকেশ আম্বানি সামাজিক ও বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে যে স্তরে ঘোরাফেরা করেন, সেখানে প্রতিনিয়ত নিজেকে আপ-টু-ডেট রাখাটা অন্যতম শর্ত। আর তার জন্য প্রয়োজন নিয়মিত পড়াশোনা। মুকেশ আম্বানিও ধারাবাহিকভাবে এই চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।
৯. কাজ শেষে বাড়ি ফিরে পারিবারিক সময় কাটান
সময় মত যেমন অফিসে পৌঁছান মুকেশ আম্বানি ঠিক তেমনি ফেরেনও ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে। বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গে খানিকটা ভালো মুহূর্ত এবং সারাদিনের ব্যস্ততা এবং পারিবারিক কথোপকথন সারেন। এর ফলে পারিবারিক সম্পর্কেও শান্তি থাকে, যা আদপে কাজে উৎসাহ দেয়।
১০ . রাতের ঘুম
যেহেতু ভোর পাঁচটায় ওঠেন তাই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাওয়াকেই উচিত বলে মনে করেন। রাতে হালকা কিছু খান এবং তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যান। প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমান। যাতে পুরো এনার্জি নিয়ে পরের দিনটা আবার শুরু করা যায়।
তাই শুধু স্বপ্ন দেখার সাহস আর স্বপ্ন আঁকড়ে বসে থাকলেই উন্নতি অনিবার্য নয়, তার জন্য যে প্রয়োজন এমনই একটা রোজনামচা তা বুঝিয়ে দেয় মুকেশ আম্বানির ‘ডেইলি রুটিন’টিই।