শুধু স্পিড নয়, খরচেও টেক্কা দেবে রাজধানীকে! কী কী পরিষেবা মিলবে কেরলের নয়া বন্দে ভারতে?
Vande Bharat Express Kerala : এই প্রথম বন্দে ভারত পেল কেরালা, এই নয়া ট্রেন সফরের বিস্তারিত সবকিছু জেনে নিন এক নজরে...
শুরুর সময় থেকে বারবার শিরোনাম দখল করেছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। আদ্যোপান্ত নতুন এই ট্রেনটিকে ঘিরে এমনিতে প্রথম থেকেই ছিল উত্তেজনা। তার ওপর আবার যোগ হয়েছিল শুরুর দিনের ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি এবং নতুন ট্রেনে একের পর এক হামলা। তাছাড়া ফেলো কড়ি মাখো ভোটের নীতিতে এই নতুন ট্রেনটিকেই যেন হাতিয়ার করেছে কেন্দ্র সরকার, সে কথাও নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশ জুড়ে এখন একটাই রব, ‘বন্দে ভারত’। রাজনীতির রং অবশ্য প্রথম থেকেই ছিল, সে নিয়েই চাকা গড়িয়েছে বুলেট ট্রেনের।
বাংলার মাটিতে যাত্রা শুরু হলেও ক্রমেই গোটা দেশ জুড়ে বিস্তার লাভ করেছে একের পর এক নয়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। সম্প্রতি সেই তালিকায় যোগ হয়েছে কেরল প্রদেশের নামও। গত ২৫ এপ্রিল ২০২৩ প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সূচনা হয় কেরলে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। এই নিয়ে দক্ষিণের রাজ্যগুলি মোট পাঁচটি বন্দে ভারত পেল। জানা গিয়েছে, নতুন এই বন্দে ভারত ট্রেনটি তিরুবনন্তপুরম থেকে কান্নুরের মধ্যে চলাচল করবে। যাত্রাপথে কোল্লাম, কোট্টায়াম, এর্নাকুলাম, ত্রিশুর, পালাক্কাদ, কোজিকোড সহ মোট ১১টি জেলার উপর দিয়ে যাবে এই ট্রেন।
আরও পড়ুন - গতির দৌড়ে পিছনে ফেলবে হালফিলের বন্দে ভারতকেও! কোন রুটে ছুটবে নয়া বুলেট ট্রেন?
এখানেই শেষ নয়, আগের সমস্ত রেকর্ডকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চলেছে নয়া এক্সপ্রেসটি। জানা যাচ্ছে, রাজধানী এক্সপ্রেসের থেকে জোরে ছুটবে এটি। যে দূরত্ব অতিক্রম করতে রাজধানী এক্সপ্রেস সময় নেয় নয় ঘণ্টা, সেটি মাত্র আট ঘণ্টা পাঁচ মিনিটের মধ্যে অতিক্রম করতে পারবে নয়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। পাশাপাশি জানা গিয়েছে এই ট্রেনটি হতে চলেছে বেশ ব্যয়বহুল। এর এক্সিকিউটিভ ক্লাসে যাতায়াতের খরচ হবে মাথাপিছু ২৮৮০ টাকা। রাজধানীর প্রথম শ্রেণীতে যে খরচ পড়ে ২৭৭০ টাকা। প্রসঙ্গত, রাজধানী এক্সপ্রেস তিরুবনন্তপুরম থেকে সন্ধ্যা ৭:১৫ মিনিটে যাত্রা টায় শুরু করে কাসারগোদে পৌঁছায় পরের দিন ভোর ৪:১৪ মিনিটে। অন্যদিকে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ভোর ৫:২০ মিনিটে তিরুবনন্তপুরম থেকে ছেড়ে দুপুর ১:২৫ মিনিটে পৌঁছয় ওই একই স্থানে।
যদিও বন্দে ভারত-এর বেস ভাড়া রাজধানী-এর তুলনায় সস্তা কিন্তু ক্যাটারিং চার্জ প্রায় আসি শতাংশ বেশি৷ রাজধানীতে মূল ভাড়া হল ২২৬৯ টাকা যার সঙ্গে অতিরিক্ত ২৪৫ টাকা ক্যাটারিং চার্জ হিসেবে যোগ হয়। সেখানে বন্দে ভারত-এর জন্য, বেস ভাড়া হল ২১৯৪ টাকা যার সাথে খরচের বিভাজন অনুসারে অতিরিক্ত ৪৩৪ টাকা ক্যাটারিং চার্জ যোগ করা হয়। তাছাড়া জিএসটি, সুপারফাস্ট এবং রিজার্ভেশন চার্জ সহ অন্যান্য চার্জ দুটি ট্রেনের জন্য একই। যদিও এই দুটি ট্রেনের জন্যই ক্যাটারিং বিষয়টি একেবারেই ঐচ্ছিক।
আরও পড়ুন - আরও তিনটি নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস পাচ্ছে বাংলা, কোন রুটে চলবে ট্রেন?
কিন্তু খাবারের দাম সম্পর্কিত খরচের এমন হেরফের কেন হল এই নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে রেল মন্ত্রকের আধিকারিকরা জানান, রাজধানীর ক্ষেত্রে যেহেতু সন্ধ্যা বেলা গাড়ি ছাড়ে এবং ভোরের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে যায় সেক্ষেত্রে কেবল রাতের খাবার পরিবেশন করা হয় অন্যদিকে বন্ধে ভারত এক্সপ্রেস এর ক্ষেত্রে যেহেতু ভোরে গাড়ি ছেড়ে দুপুরে পৌঁছয় সেক্ষেত্রে চা, জল খাবার এবং দুপুরের খাবার তিনটিই পরিবেশন করা হয়। যে কারণে মোট খরচের এমন হেরফের হয়। তবে এক্ষেত্রে গোটা বিষয়টি একেবারেই ঐচ্ছিক, যদি কেউ ট্রেনের দেওয়া খাবার না নিতে চান তাহলে এই বিষয়ে কোন অতিরিক্ত খরচ করতে হবে। না সেক্ষেত্রে বন্দে ভারত-এর টিকিটের মূল্য এক্সিকিউটিভ ক্লাসে ২৪৬৫ টাকা এবং রাজধানীতে প্রথম এসি-তে ২৫২৫ টাকা। অন্যদিকে, ফিরতি যাত্রায়, যখন বন্দে ভারত রাতের খাবার পরিবেশন করবে তখন ক্যাটারিং চার্জ হিসেবে ৩৬৯ টাকা যোগ হবে, যা রাজধানীর থেকে বেশি। এটির কারণ যাত্রীদের রাতের খাবারের সঙ্গে সন্ধ্যার চাও পরিবেশন রেল কর্তৃপক্ষ।
বুধবার অর্থাৎ আজ থেকেই বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু কেরলের নয়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের। সপ্তাহে ৬ দিন তিরুবনন্তপুরম থেকে কান্নুরের মধ্যে ট্রেনটি চলাচল করবে বলে রেল সূত্রের খবর। এ নিয়ে দেশে মোট ১৪টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের যাত্রাপথের সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী। যেখানে রাজধানী শুধুমাত্র মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার চলে সেখানে বন্দে ভরত চলবে বৃহস্পতি বার বাদে বাকি সব দিনই। তিরুবনন্তপুরম থেকে কান্নুরে পৌঁছতে ট্রেনটির সময় লাগবে প্রায় ৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট। প্রায় ৫৮৭ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করবে। অর্থাৎ ট্রেনটির গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার।যাত্রাপথে এর্নাকুলাম ছাড়া বাকি সব স্টেশনে মাত্র দুই মিনিটের জন্য দাঁড়াবে ট্রেনটি। এর্নাকুলাম স্টেশনে দাঁড়াবে তিন মিনিট। সব দিক বিচার করে দেখা যাচ্ছে, এই নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসটিই হতে চলেছে এই পথের সবথেকে দ্রুতগামী ট্রেন। এবং ব্যয়বহুলও বটে।