শাহিনবাগে 'অতিসক্রিয়', অথচ ফোন বেজে গেলেও মহিলা সুরক্ষার প্রশ্নে শীতঘুমে দিল্লি পুলিশ

Delhi Police Woman Safety : কী করছিল দিল্লি পুলিশ? ফোন করার পরও কেন এমন গড়িমসি রাজধানীর আইনের রক্ষকদের? উত্তর নেই... 

২০২২ সাল পেরিয়ে সবেমাত্র ২০২৩ পা রেখেছে দোরগোড়ায়। বর্ষবরণের রাতে গোটা পৃথিবী আলোয় সেজে উঠেছে। চলছে নৈশযাপন, হুল্লোড় আর অনুষ্ঠান। ভারতের রাজধানী দিল্লিও তার ব্যতিক্রম নয়। শহরের রেস্তোরাঁ, পাব, বার ও হোটেলগুলিতে চলছে গান-বাজনা। রাত তখন ৩টে; ভোর রাত বলাই শ্রেয়। কেউ তখনও উন্মাদনায় ভাসছে, কেউ আবার সব গুটিয়ে বাড়ির পথে।

দিল্লিরই এক হোটেলে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করতেন অঞ্জলি সিং। বয়স মাত্র ২০। বাবা নেই, মা এবং বোনেদের নিয়ে সংসার। চাকরি পেয়ে সেখানেই সমস্ত মনোযোগ দিয়েছিলেন তিনি। নতুন বছরের রাত, তাই কাজের চাপও ছিল ভালোই। শেষ করতে করতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। সঙ্গেই এক বন্ধুকে নিয়ে স্কুটার বের করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। বেরনোর কয়েক ঘণ্টা আগে বাড়িতে ফোনও করেন অঞ্জলি। মা ফোন ধরলে বলেন, ‘চিন্তা করো না। আমার আসতে একটু দেরি হবে। স্কুটারে করে বাড়ি চলে আসব।’ ১ জানুয়ারির দিনটি হয়তো অন্যভাবে কাটানোর পরিকল্পনাও করেছিলেন। নিশ্চিন্তে ছিলেন অঞ্জলির মা; কিন্তু তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, এটাই মেয়ের সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হবে…

এর পরের ঘটনা এতক্ষণে গোটা ভারত জেনে গিয়েছে। যতবার সেই ঘটনার বিবরণ সামনে আসছে, শিউরে উঠছেন সক্কলে। মাত্র ২০ বছর বয়স ছিল দিল্লির মেয়েটির, সামনে গোটা জীবন পড়েছিল। সমস্ত স্বপ্ন, আশা চাপা পড়ল একটি গাড়ির নিচে। স্কুটারে সজোরে ধাক্কা মারার পর কী ভেবেছিলেন অঞ্জলি? যেটুকু জ্ঞান ছিল, তাতেই দেখলেন, তিনি ওই গাড়িটির নিচে আটকে আছেন। প্রবল গতিতে গাড়িটি ফাঁকা রাস্তা ধরে ছুটছে। ভেতরে তারস্বরে চলছে গান, জানলার কাচ বন্ধ। দিল্লির ঠাণ্ডা, মৃত্যু আর শক্ত পাথরে অঞ্জলি সিংয়ের দেহ ছিঁড়ে যাচ্ছিল। দিল্লির কাঞ্ঝাওয়ালা এলাকায় যখন পুলিস এল, ততক্ষণে অঞ্জলির হাত পা একেবারে ভেঙেচুরে গিয়েছে। পিঠ, মাথা, বুক ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অজস্র ক্ষত। রাস্তা আর গাড়ির আঘাতে পরনের জামাকাপড় সব ছিঁড়ে গিয়েছে। আর গোটা রাস্তা জুড়ে রয়েছে রক্ত। কেবলই রক্ত…

“পথের হদিস পথই জানে, মতের কথায় মত্ত
মানুষ বড়ো সস্তা, কেটে, ছড়িয়ে দিলে পারতো।”

বহু বছর আগে কবিতায় এই দু’টি লাইন লিখেছিলেন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। তারপর গঙ্গা, যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। নগরায়ন, মোবাইল, ইন্টারনেট বিপ্লব, প্রযুক্তির আস্ফালন দেখেছে মানব সভ্যতা। দেখেছে হিংসা, রক্ত, বিশ্বকাপ, মেসি-রোনাল্ডো… আমাদের চারপাশটা বদলেছে। অপরাধ বিজ্ঞানও নিজের পরিভাষা বদলাচ্ছে, পুলিসের গাড়িতে পড়েছে নতুন রঙ। দিল্লি হোক বা কলকাতা, প্রতিটা পুলিস ফোর্সে জায়গা করে নিয়েছে নারী বাহিনী। কিন্তু অপরাধ? সেটা এখনও কমেনি। গড়পড়তা মফস্বল বা প্রত্যন্ত গ্রামের কথা বাদই দিলাম আপাতত। ক্যামেরার সমস্ত ফোকাস গিয়ে পড়ছে ভারতের রাজধানীর ওপর।

দিনের আলো কমে আসলেই মেয়েদের ঘরের ভেতর রাখো – একটা সময় দেশের অধিকাংশ জায়গাতেই এমন ছবি দেখা যেত। এখনও সেই ‘প্রথা’ নেই, তা বলা যাবে না। তবে পরিস্থিতি বদলেছে। কাজের সূত্রেই হোক বা জীবনযাপন – সমস্ত জায়গায় শেকল ভাঙার গান গেয়েছে নারীশক্তি। কেবল দুর্গাপুজো, কালীপুজোতেই আর সেই উদযাপন থেমে নেই। নিজেদের জীবনেও দশভুজা অবতার মেয়েদের। ছেলে অথবা মেয়ে – এই ভাগ বিভাজন নয়’ বরং মিলেমিশে একটা সুস্থ সমাজ তৈরি করাই মূল উদ্দেশ্য। লিঙ্গসাম্য হোক বা নারী স্বাধীনতা, পুরুষতন্ত্রের কারাগারকে পদে পদে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে ভারতীয় নারীরা। ‘মাত্রুভূমি’র দৃশ্য কেবল সিনেমার পর্দা আর ইতিহাসের জন্য; এখন সেই ছবি আর নেই – পুলিস প্রশাসনও বারবার এই মর্মেই প্রচার চালাচ্ছে।
আদৌ কি সত্যি সবটা? সত্যিই কি নারীরা সুরক্ষিত?

আর এই প্রশ্নই জোরালোভাবে তুলে ধরছে দিল্লি। অন্য কোনও মেট্রোপলিটান নয়, খোদ দেশের রাজধানী। বিগত ১০ বছরের ছবিটা সামনে আনুন। নির্ভয়া গণধর্ষণই হোক, বা হাল আমলের শ্রদ্ধা ওয়ালকর হত্যাকাণ্ড, কিংবা ২০২৩-এর প্রথম দিনে গাড়ি চাপা পড়ে অঞ্জলি সিংয়ের মৃত্যু – মেয়েদের সুরক্ষা বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আর প্রতিবার ঘটনার কেন্দ্রভূমি দিল্লি। বলিউডের পর্দায় ‘অঞ্জলি’রা বারবার প্রেমের তুফান তুলেছে। ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর ‘অঞ্জলি’র ডায়লগ আজও মানুষের মুখে মুখে ঘোরে। কিন্তু বাস্তবের অঞ্জলিরা বারবার রক্ত ঝরিয়ে যায়। তাঁদের নিথর দেহ পড়ে থাকে রাস্তার পাশে, ধুলোয়।

নির্ভয়া কিংবা অঞ্জলিরা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিগত কয়েক বছরে দিল্লির বুকে বারবার নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও এফআইআর নেওয়া হয়েছে, কোথাও আবার ‘ধামাচাপা’-ই রাস্তা করে নিয়েছে। ২০২২-এরই একটি ঘটনা। অকুস্থল সেই দিল্লি। মেট্রোয় বাড়ি ফিরবেন বলে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক মহিলা। হঠাৎই একজন পুরুষ তাঁর দিকে এগিয়ে আছেন। কোথাও একটা যাবেন, কিন্তু জায়গা চিনতে পারছেন না। ঠিকানা খুঁজতে এসেছেন। ওই মহিলা ঠিকানা বলার জন্য এগিয়ে গিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে যৌন হেনস্থা শুরু।

এমন ঘটনা হামেশাই ঘটছে ভারতের রাজধানীতে। কয়েকটি পরিসংখ্যান এখানে তুলে ধরা ভালো। ২০১৫-র একটি পরিসংখ্যানের দিকে তাকানো যাক। সেখানে বলা হচ্ছে, সমসগ্র দিল্লির অন্তত ৪০ শতাংশ মহিলা ওই বছরেই কোনও না কোনও সময় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। NCRB বা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (National Crime Records Bureau) রিপোর্টও বলছে, মেয়েদের জন্য ভারতের সবচেয়ে অসুরক্ষিত শহর হল দিল্লি। কেবল যৌন হেনস্থা নয়; ধর্ষণ, খুন, অত্যাচারের মতো বিভিন্ন অপরাধের শিকার মেয়েরা। ২০২২-এর অক্টোবরে আরও একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয় সংবাদমাধ্যমে। সেখানে আরও ভয়ংকর ছবি উঠে আসে। ভারতের রাজধানীতে বসবাসকারী প্রায় ৮৮ শতাংশ মহিলা যৌন হেনস্থার শিকার। তার মধ্যে ঠিক কত শতাংশ থানায়, পুলিসের এফআইআর ডায়েরি অবধি পৌঁছয় জানেন? মাত্র ১ শতাংশ!

এখান থেকেই আরেকটি বিষয়ে আসা যাক। যেখানে সরাসরি গান পয়েন্টে রয়েছে দিল্লি পুলিস। ১ জানুয়ারি অঞ্জলি সিংয়ের মৃত্যুর ঘটনার সময়ই একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান উঠে আসে। দীপক দাহিয়া নামের ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুর্ঘটনা ঘটার পর ওই ঘাতক গাড়িটি মেয়েটিকে নিয়ে কয়েক কিলোমিটার চলতে থাকে। বারবার হাঁকডাক করলেও গাড়ির ভেতর থেকে কেউ সাড়া দেয়নি। সেই সময় দিল্লি পুলিসের কাছে ফোনও করেন দীপক। কিন্তু ওপার থেকে কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। দীপক দাহিয়াও এমনও বলেছেন, তিনি নিজে বাইক নিয়ে ওই গাড়িটির পিছনে ধাওয়া করেছিলেন। তখনও সমানে পুলিসকে ফোন করলেও সেভাবে কোনও উদ্যোগ নেয়নি তারা। নাগাড়ে ফোনকল গিয়েছে পুলিসের কাছে; কিন্তু সাড়া মেলেনি। জানা গিয়েছে, ঘটনা ঘটার প্রায় ২ ঘণ্টা পর পুলিস ঘাতক গাড়িটি খুঁজতে বের হয়। তার আগে কী করছিল দিল্লি পুলিস? ফোন করার পরও কেন এমন গড়িমসি রাজধানীর আইনের রক্ষকদের? উত্তর নেই... 

অবশ্য এই অভিযোগ নতুন নয়। অঞ্জলি সিংয়ের দুর্ঘটনার পর দিল্লি মহিলা কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়াল আসরে নামেন। এই মুহূর্তে ভারতের রাজধানীতে নারী সুরক্ষার হাল হকিকত খতিয়ে দেখতে সমীক্ষা চালানোর কথা বলেন তিনি। কিন্তু তাতে রাজিই হয়নি দিল্লি পুলিস! কেন? নির্ভয়া কাণ্ডের পর রাজধানীতে মহিলা নিরাপত্তার জন্য নাকি অনেক কাজই করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিস। তারপরও বারবার এমন ঘটনা, অজস্র পরিসংখ্যান কি মিথ্যে তথ্য দেখাচ্ছে? খোদ সরকারি রেকর্ডই দিল্লির নারীদের অসহায় অবস্থার ছবি দেখাচ্ছে। তাহলে নারী সুরক্ষা নিয়ে সমীক্ষা চালাতে ‘ভয়’টা কোথায় দিল্লি পুলিসের?

অবশ্য অন্যান্য বেশকিছু ক্ষেত্রে দিল্লি পুলিসকে একটু বেশি মাত্রায় ‘সক্রিয়’ দেখা যায়। জেএনইউ ইস্যু হোক, বা উমর খালিদের গ্রেফতার – দিল্লি পুলিস সেখানে মারাত্মক ‘সক্রিয়’। পাঠকের নিশ্চয়ই মনে আছে শাহিনবাগের কথা। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ-র (Citizenship Amendment Act) বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত। বাদ ছিল না দিল্লিও। সেখানেই শাহিনবাগের আন্দোলনকে ‘থামাতে’ দিল্লি পুলিস আসরে নেমেছিল। হাত উঠেছিল মহিলাদের ওপর, বৃদ্ধাদের ওপর। এটিও কি নারী নির্যাতন নয়? আর সেখানে ‘অপরাধী’ স্বয়ং দিল্লি পুলিস!…

নিশ্চয়ই মনে আছে হাল আমলের দিল্লি দাঙ্গার কথা। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই সিএএ আন্দোলনের জেরেই উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে শুরু হয় সংঘর্ষ। অচিরেই সেই সংঘর্ষ চেহারা নেয় ধর্মীয় বিদ্বেষে। এবং সেখান থেকে দাঙ্গা। সেই ভয়াবহতার বিবরণ এখন একটু সরিয়ে রাখা যাক। ৫৩ জনের মৃত্যু, ২০০-রও বেশি জন আহত, জখম, রক্তাক্ত। এমন অনেকে আছেন, যারা পরের বেশ কয়েকটা দিন নিজের বাড়িতে ফিরতে পারেননি। দিল্লি ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। সেই দাঙ্গাতেই স্থানীয় বাসিন্দারা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন দিল্লি পুলিসকে। তাঁদের অভিযোগ, পুলিস নাকি দাঙ্গাকারীদের সাহায্য করেছে! ঘটনার পর ২৬ ফেব্রুয়ারি, খোদ দিল্লি হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চও পুলিসকে তিরস্কার করে। দাঙ্গা চাইলেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারত দিল্লি পুলিসের ফৌজ; কিন্তু কোর্টেরও বক্তব্য, নিজেদের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালনই করেনি রাজধানীর আইনের রক্ষকরা।

৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারি, এই দু’টো দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য গোটা দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অতিরিক্ত পুলিস মোতায়েন থাকে। রাজধানী দিল্লিও নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম নয়। তারপরও কেন এমন দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হল অঞ্জলি সিংকে? কেন ২০১২-র ডিসেম্বরের রাতে পুলিসের দেখা পাননি ২২ বছরের ‘নির্ভয়া’? তাহলে কি বিশেষ কারও ‘নির্দেশে’, ‘বিশেষ’ কোনও প্রতিবাদ মিছিলেই দিল্লি পুলিসের তৎপরতা চোখে পড়ে? উমর খালিদ হোক বা শাহিনবাগ – দিল্লি পুলিসের এমন ‘সক্রিয়তা’র ছবি নারী সুরক্ষার ক্ষেত্রে কি আদৌ দেখা যায়?

একবার ভাবুন, দিল্লির ৮০ শতাংশ মহিলা যৌন হেনস্থার শিকার; তার মধ্যে এফআইআরের ডায়েরিতে যায় মাত্র ১ শতাংশ কেস! নারীদের প্রতি অপরাধের ঘটনা ঘটা, এবং এফআইআরের খাতায় সেটি পৌঁছনো, আইন মেনে সঠিক বিচার – এই পুরো ঘটনার মাঝে আরও কিছু পদক্ষেপ থাকে। অনেক সময় থানায় পৌঁছয় না নির্যাতনের ঘটনা। আবার থানায় পৌঁছলেও, এফআইআর অবধি পৌঁছয় না আরও বহু কেস। তাহলে এই ট্রাপিজের খেলার মাঝেই ফেঁসে থাকবে রাজধানীর মেয়েদের নিরাপত্তা? কেবল সোশ্যাল মিডিয়া, মোমবাতি মিছিল আর ঘনঘন চোখ ধাঁধাঁনো কর্মসূচিই অবলম্বন? বাস্তবিক নারী সুরক্ষার ছবি কি আদৌ দেখবে দিল্লি? নাকি ‘বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে’ গর্জে উঠে দায়িত্ব সামলাবে পুলিস? অঞ্জলির রক্তের দাগ এতক্ষণে হয়তো শুকিয়ে গিয়েছে। হয়তো কালই ওখানে নতুন কোনও মহিলার রক্তমাখা রুমাল পরে থাকবে না, সেই নিশ্চয়তা আদৌ এসেছে?

More Articles