কোভিডের ভ্যাকসিন নিয়ে মৃত্যু সন্তানদের! কতটা ভয়াবহ এই কোভিশিল্ড?
AstraZeneca Covishield Death: অ্যাস্ট্রাজেনেকা সম্প্রতি স্বীকার করেছে, তাদের তৈরি টিকা 'খুব বিরল ক্ষেত্রে, TTS ঘটাতে পারে'। টিটিএস মানে থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিন্ড্রোম।
কোভিড মহামারীর থেকে বাঁচতে ভ্যাকসিন নিয়ে হিতে বিপরীত হয়েছে এই দাবি করেছিলেন অনেকেই। অনেকেই সেই সময় ভ্যাকসিন বিষয়টিকে ভাঁওতাবাজি বলে নিজেরা সেই টিকা নেননি। কোভিড পর্ব মিটে গিয়েছে। জনজীবন ফের স্বাভাবিক, তবে এতকাল পরে এসে নেহাত এইসব দাবিকে ফেলনা বলে উড়িয়ে দেওয়াও যাচ্ছে না। খোদ ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থা AstraZeneca-ই স্বীকার করেছে তাদের তৈরি টিকায় 'বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া' হতে পারে দেহে। বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন নির্মাতা, তথা ব্রিটিশ ফার্মা জায়ান্ট AstraZeneca-র বিরুদ্ধে এবার ভয়াবহ অভিযোগ তুলেছে ভারতীয় এক পরিবার। অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড দেওয়ার পরে তাঁদের যুবতী কন্যার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাবা-মা। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের আদালতের নথিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা কিছুদিন আগেই স্বীকার করেছে যে, তাদের ভ্যাকসিন বিরল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে এবং প্লেটলেট সংখ্যা কমে যেতে পারে।
AstraZeneca-র ভ্যাকসিন ভারতে সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া বা SII তৈরি করেছিল। 'কোভিশিল্ড' নামে এই ভ্যাকসিন ভারতে ব্যাপক সংখ্যায় মানুষই নিয়েছিলেন।
ভেনুগোপালন গোবিন্দনের ২০ বছর বয়সি কন্যা করুণ্যা মারা যান ২০২১ সালে। একটি অনলাইন পোস্টে, ভেনুগোপালন বলছেন, রক্ত জমাট বাঁধার কারণে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকায় ১৫ টি ইওরোপিয় দেশ এই ভ্যাকসিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। সবটা জানার পরে সিরাম ইনস্টিটিউটের এই ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ করা উচিত ছিল। তিনি বলছেন, কন্যাকে হারিয়ে বিচারের জন্য তারা লড়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন আদালতে, কিন্তু শুনানিই হচ্ছে না।
আরও পড়ুন- সকলে নিয়েছেন এই কোভিড ভ্যাকসিন! ভয়াবহ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা এতদিনে স্বীকার করল সংস্থা
"যদি পর্যাপ্ত প্রতিকার না পাওয়া যায়, ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং জনস্বাস্থ্যের নামে ঘটে যাওয়া এই নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে, আমরা যে কোনও অপরাধীর বিরুদ্ধে নতুন মামলা দায়ের করব যাদের কৃতকর্মের কারণে সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যেই সন্তানহারা ৮ পরিবার এতে যুক্ত হয়েছে এবং আমি আমাদের সকলের হয়েই এই কথা বলছি,” লিখেছেন ভেনুগোপালন। সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া এবং আদর পুনাওয়ালার থেকে এই বিষয়ে স্পষ্ট জবাব চেয়েছেন ভেনুগোপালন গোবিন্দন।
২০২১ সালে আঠেরো বছরের মেয়ে রিথাইকাকে হারিয়েছিলেন রচনা গাঙ্গু। তিনি এবং ভেনুগোপালন গোবিন্দন এর আগে ক্ষতিপূরণ ছাড়াও তাঁদের মেয়েদের মৃত্যুর তদন্তের জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড নিয়োগ এবং টিকাকরণের প্রাথমিক প্রভাব শনাক্তকরণের জন্য একটি নির্দেশিকা প্রস্তুত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করেছিলেন।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা ইতিমধ্যেই, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে নানা মামলার সম্মুখীন হচ্ছে। অন্তত ৫১ টি ক্ষেত্রে দাবি করা হয়েছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনটি বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটিয়েছে এবং টিকা নিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন মানুষ। অ্যাস্ট্রাজেনেকা সম্প্রতি স্বীকার করেছে, তাদের তৈরি টিকা 'খুব বিরল ক্ষেত্রে, TTS ঘটাতে পারে'। টিটিএস মানে থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিন্ড্রোম, যার ফলে মানুষের রক্ত জমাট বাঁধে এবং রক্তের প্লেটলেট সংখ্যা কম হয়।
তবে ব্রিটিশ সরকার পাশে আছে এই সংস্থার। অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে আইনি দিক থেকে রক্ষাকবচ জুগিয়ে চলেছে সরকার। এত অভিযোগ, মৃত্যুর মতো ভয়াবহ অভিযোগ ওঠার পরেও এখনও এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি ব্রিটিশ সরকার।