Q দিয়ে শুরু, M দিয়ে শেষ! জানেন কেন এলোমেলোভাবে সাজানো থাকে কী-বোর্ডের অক্ষরগুলো?
Keyboard : টাইপরাইটারের কী বোর্ডের আদলেই তৈরি করা হয়েছে কম্পিউটারের কী বোর্ড। তারপর সেই একই আদল মেনে এসেছে ল্যাপটপ, ট্যাব অথবা স্মার্টফোনের কী প্যাড।
আমাদের রোজকার ব্যবহারিক জীবনে এমন অনেক কিছুই জড়িয়ে রয়েছে যার বিষয়ে কী এবং কেন এই দুই প্রশ্ন করলে ঠিক কী জবাব মিলতে পারে, সেই নিয়ে বিশেষ কোনও ধারণাই নেই আমাদের। এই ধরা যাক সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই হাতড়ে যে মুঠো ফোনটা খুঁজে নেন আপনি, অথবা এই আইটি চাকরির দুনিয়ায় যে ল্যাপটপ আপনার সর্বক্ষণের সঙ্গী তার কী বোর্ডের কথাটা একবার ভাবুন তো। নিমেষের মধ্যে এ, বি, সি, ডি গুলিয়ে যাবে আপনার! Q দিয়ে শুরু, আর M দিয়ে শেষ! এ কেমন বর্ণমালা রে বাবা! ভাবতে অবাক লাগলেও, টাইপ করার সময় এই এলোমেলো বর্ণগুলোই আপনার ভরসা। ধরুন দুম করে, সবাই খুব নিয়ম মেনে লাইন করে দাঁড়িয়ে পড়ল, A থেকে Z পর্যন্ত সবাই পরপর! তাহলে একটা মেসেজ লিখতে আপনার দিন কাবার হয়ে যাবে নিশ্চিত। কিন্তু জানেন কি কেন এরকম এলোমেলো অক্ষর রাখা হয় কী বোর্ডে?
বর্তমান সময়ে আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিতে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদি খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। হাতে হাতে ঘুরছে ইলেকট্রিক গেজেট। আর সেই সবের কী বোর্ডের চেহারাই একই রকম। আসলে আপাতভাবে এলোমেলো মনে হলেও কী বোর্ডের এই অক্ষর সাজানোর মধ্যেও রয়েছে একটি নির্দিষ্ট কারণ। আজকের এই যে কম্পিউটারের টাইপিং, তার জনক আসলে টাইপরাইটার। টাইপরাইটারের কী বোর্ডের আদলেই তৈরি করা হয়েছে কম্পিউটারের কী বোর্ড। তারপর সেই একই আদল মেনে এসেছে ল্যাপটপ, ট্যাব অথবা স্মার্টফোনের কী প্যাড।
আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে, ১৮৭৪ সালে প্রথম তৈরি হয় কী বোর্ডের এই অক্ষর বিন্যাস। এই বিন্যাস তৈরি করেছিলেন ক্রিস্টোফার ল্যাথাম শোলস। শুরুতে মূলত ছয়টি অক্ষররাখা হয়েছিল। যথা - Q, W, E, R, T, Y। এই কারণেই একে কোয়ারটি কী বোর্ড বলা হয়ে থাকে। ওই অক্ষর বিন্যাসকে সেই সময়ে বলা হত রেমিংটন ওয়ান। ক্রিস্টোফার শুরুর সময়ই বলেছিলেন, কী বোর্ডের এই অক্ষর বিন্যাসের উপরই নির্ভর করে টাইপরাইটারে লেখার স্পিড কেমন হবে।
যখন প্রথম কম্পিউটার তৈরি হয়েছিল তখন তা ছিল আকারে অনেক বড় কাজের ক্ষেত্রেও অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছিল সেই সময়। তাই প্রযুক্তির উন্নতিতে শামিল হয়ে কম্পিউটারের আকারে বদল আসে, প্রয়োজন মেনে সাইজ ছোট হয়। বর্তমানে ঠিক যেমন ডেক্সটপ কম্পিউটারের ছুটি হয়ে ঘরে ঘরে ল্যাপটপের চাহিদা বেড়েছে, খানিকটা তেমনই। অফিস, স্কুল ইত্যাদি জায়গায় স্থায়ী ব্যবহারের জন্য অবশ্য এখনও ডেক্সটপের সমান চাহিদা রয়েছে।
এইরকমই যখন প্রথম কীবোর্ড আবিষ্কার হয়, তখন টাইপরাইটার ছিল একটি মেকানিকাল ডিভাইস, ফলে পাশাপাশি অক্ষর থাকলে জ্যাম হওয়ার সম্ভবনা ছিল তাই এমন ধরনের ব্যবস্থা করা হয়৷ A-B-C-D পাশাপাশি থাকলে, লেখার ক্ষেত্রে আমাদের খুব সমস্যা হত। কারণ মাথায় রাখতে হবে আমাদের অভিধানে সচরাচর এমন কোনও শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায় না যেখানে অ্যালফাবেট এমন পরপর ব্যবহৃত হয়েছে। গোল সেক্ষেত্রে শব্দ লেখার সময় প্রয়োজনীয় অক্ষর খুঁজতে গিয়ে খুবই বিপদে পড়তে হতো, হাত ব্যাথা হয়ে যেত কাজ করতে করতে।
অক্ষর বিন্যাস এরকম এলোমেলো বলেই সেই সমস্যা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। এই বিন্যাসের জন্যই কাজের গতিও বেড়েছে। কী বোর্ডের অনেক ধরণের হয়, যেমন QWERTY. তবে QWERTZ এবং Dvorak-ও বেশ জনপ্রিয়৷ এই সব ক্ষেত্রেই একটি বিষয় মাথায় রাখা হয় যাতে ভাওয়েল গুলি কন্সোন্যান্ট এর সঙ্গে এমন ভাবে সাজানো থাকে পাশে পাশে যাতে শব্দ টাইপ করতে সুবিধা হয় আমাদের। এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা বলেন, একঘেঁয়ে কাজের মধ্যে লেখার যে ক্লান্তি, তা দূর করতেই এই এলোমেলোভাবে সাজানো অক্ষরগুলো খুবই উপকার করে।

Whatsapp
