সোনা-রুপোর সঙ্গে জোর টক্কর! কীভাবে ভারতীয় বাজারে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠল অক্সিডাইস?
Trendy aluminium jewellery : একে সাশ্রয়ী, তায় আবার পরিবেশ-বান্ধব, কীভাবে ভারতীয় বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠল অ্যালুমিনিয়াম গহনা
কোনওটার দাম ১০ টাকা, কোনওটা আবার ১০০, সার দিয়ে ঝুলছে একের পর এক হার, দুল, আংটি সহ আরও কত কি! আর দোকানের সামনে উপচে পড়া ভিড়। এক একটা গয়না দেখতে এক এক রকম। রঙের দিক থেকে অবশ্য একটা বিশেষত্ব রয়েছে সবগুলির ক্ষেত্রে। কোনওটা কালচে সোনালী, কোনওটা এক্কেবারে রুপোর রং। বর্তমান বাজার মাতাচ্ছে এই ধাতব গয়নাগুলিই। পোশাকি নাম অক্সিডাইস।
বর্তমান প্রজন্মের পছন্দের তালিকায় প্রথমেই আসে বাহারি অক্সিডাইসের গয়না। একটা সময় ছিল ভারতীয় মহিলাদের অলঙ্কার বলতে কেবল সোনা এবং রুপোর গয়না পরার চল ছিল। যদিও সময়ের সঙ্গে বদল আসে সেই ঐতিহ্যে। পাশাপাশি মাত্রা ছাড়ায় সোনা রুপার দামও, আর সেই কারণেই বিকল্পের সন্ধান জরুরী হয়ে পড়ে। সেই সময় ভারতের বাজারে আসে ব্রোঞ্জের গয়না। সোনার সঙ্গে ব্রোঞ্জ মিশিয়ে তৈরি হতে থাকে চুরি, হার, কানের দুল। এতে পকেটের সঙ্গে সমঝোতা করা বেশ সহজ হয় মধ্যবিত্তের।
সময় আরও এগোলে অলংকারের সাবেকি ধারনাটা আরও আরও বদলে যেতে শুরু করে। বিভিন্ন ধরনের পাথরের গয়না তৈরি হতে থাকে। বদলে যাওয়া ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে আসে আধুনিক অক্সিডাইস। এর একটা বড় কারণ অবশ্য মাত্রাতিরিক্ত সোনা রুপার দাম। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে এখন আর সব সময় সোনার গয়না পরার সাহস হয় না। একে তো দাম বেশি তায় আবার ছিনতাই হওয়ার ভয়, ফলে বিকল্প ট্রেন্ডি গয়নার সাজই এখন হাল ফ্যাশন।
আরও পড়ুন - Gold Investment || জমানো টাকায় সোনা কিনছেন? বিনিয়োগ নাকি বড় ভুল হচ্ছে…
এই অক্সিডাইস মূলত অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর একটি সংকর। ফলে সোনা অথবা রুপার থেকে অনেক বেশি টেকসই হয় এই গয়নাগুলি। বাঙালি বিয়েতে যদিও আজও সোনার গয়নার ব্যবহারই বেশি দেখা যায় তবে বছরভর পরার জন্য অক্সিডাইসের বিকল্প নেই।
দৈনিক ভাস্করে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনা ও রূপার মতো দামি ধাতুর বদলে অ্যালুমিনিয়ামের গহনা ভারত, চীন ও ব্রিটেনে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আজকাল। বর্তমানে অ্যানোডাইজিং অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি করা যে রঙিন গহনাও। দামে কম অথচ জেল্লায় অসাধারণ ফলে খুব সহজেই এই অলঙ্কারগুলি সোনা এবং রূপার গয়নার বাজারে জোর টক্কর দেয়। এছাড়া যেহেতু অ্যালুমিনিয়াম সহজে ভঙ্গুর নয় ফলে গয়নাগুলি টেকসই হয়। এমনকী রং কলছে হয়ে গেলেও সহজেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে পরিষ্কার করে নিয়ে ফের জেল্লা ফিরিয়ে আনা যায়। বিশেষ কোনও যত্নের দাবিও করে না অক্সিডাইস গয়নাগুলি। নিশ্চিন্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখলেও চোরেরা ফিরেও তাকায় না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি অলঙ্কার দেখতে খুব সুন্দর। এগুলি সোনা এবং রূপার চেয়ে হালকা। শুধু তাই নয় বিভিন্ন ডিজাইনও সহজেই ফুটিয়ে তোলা যায় এই ধরনের গয়নায়। এই কারণেই প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য এই অলঙ্কারগুলি পরতে পছন্দ করে সকলে। আরেকটি মজার তথ্য হল যে, এরোপ্লেন, অটোমোবাইল, কম্পিউটার এবং পাত্রের আবর্জনা থেকে নিষ্কাশিত অ্যালুমিনিয়ামও এই গহনা তৈরিতে ব্যাবহার করা যায়। ফলে ইকো ফ্রেন্ডলিও বলা যায় একে।
অ্যালুমিনিয়ামের গহনা কেনার অনেক সুবিধা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হল এটি খুবই সস্তা এবং সহজলভ্য। তাছাড়া এটি পরিবেশ বান্ধবও গহনা হিসেবেও বিবেচ্য। অনেক কোম্পানিই পুনর্ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম থেকে তৈরি করে অক্সিডা ইসের গহনা। বর্তমানে প্রতিদিন যে হারে সোনা ও রুপার দাম বাড়ছে সেখানে মধ্যবিত্তের বন্ধু উঠছে এই অ্যালুমিনিয়াম গহনাগুলোই।

Whatsapp
