দ্রুততায় উজ্জ্বল কলকাতা ট্রামকে ব্যঙ্গই করে গেল
Kolkata Tram: একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে ট্রাম বললেই কলকাতার অনুষঙ্গ প্রখর হয়ে দেখা দেয়। সাজানো গোছানো নতুন রং করা ট্রামের নাম, আমাদের ছাত্রবয়সে দেওয়া হয়েছিল 'সুন্দরী'।
১
খুব অল্প বয়সে একটা ছড়া পড়েছিলাম, কার লেখা সেটা আজ আর মনে করতে পারি না। 'বদলায় সবকিছু বদলানো নিশ্চিত/ চাও বা না-চাও হবে বদলেরই শেষ জিৎ'। সেই ছড়াতেই আরও তীব্র একটি পঙক্তি ছিল - 'যদি না বদল চাও থামবার ধান্দায়/ হতে হবে কিম্ভূত, ভূতেরা কি বদলায়?' ঠিকই। বন্-বন্ করে দুনিয়া ঘুরছে, ছন্দে-ছন্দে বদলে যাচ্ছে রূপ-রং-গন্ধ-স্পর্শ।
সময় পালটাবে, অভিজ্ঞতাও পালটাবে। পাল্টাবে মানুষজন। যত বয়স বাড়ছে, ততই বুঝতে পারছি, অল্প বয়সের স্মৃতি বড়ো মায়াময়। হাত-পা বেঁধে সেখানেই নিজেকে ফেলে রাখতে ইচ্ছে হয়। আরশিতে নিজের মুখ দেখে মাঝে মধ্যে চমকে উঠি। বলিরেখা, পক্ক কেশ, জরাচিহ্ন, ম্রিয়মাণ দৃষ্টি। সময় থেমে থাকবে না। প্রত্যেকে ভাবেন তাদের যৌবনকাল ছিল শ্রেষ্ঠ সময়। ফলে তৈরি হয় এক আশ্চর্য টানাপড়েন। জেনারেশন গ্যাপ। সত্যিই মাঝে-মাঝে নিজেকে মনে হয় কিম্ভূত। অতীতকে বর্তমানে খুঁজি। আমার যেমন এখন আটান্ন বছর বয়স, একশো মিটার দৌড়লে হাঁপ লাগে, পনেরো বছর আগেও তেমন হতো না, শরীরের ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই কমছে, সেও ভেতরে-বাইরে পাল্টাচ্ছে, শহর কলকাতাও তো পালটাবে, একই রকমভাবে পুরনো আবহ আর জাগ্রত থাকবে না। নতুন প্রজন্ম আসবে, তারাও নিজের সময় গড়বে, একদিন তার স্মৃতিতে বাঁচবে। আমাদের মুখ তখন ধূসর থেকে ধূসরতর। আসবে নতুনত্তর আরেক প্রজন্ম।
কথাগুলো বলছিলাম আর ভাবছিলাম পুরনো রাস্তাঘাটের প্রসঙ্গ। সেইসব মানুষ, সেইসব আড্ডা, সেইসব মুহূর্তগুলির কথা। শচীন দেববর্মণের মন খারাপ করা অনেক গান আছে। তার মধ্যে একটা গানের গোড়ায় আছে - 'সেই যে দিনগুলি/ বাঁশি বাজানোর দিনগুলি/ ভাটিয়ালির দিনগুলি/ বাউলের দিনগুলি/ আজও তারা পিছু ডাকে/ কূল ভাঙা গাঙের বাঁকে/ তালসুপারির ফাঁকে ফাঁকে/ পিছু ডাকে/ পিছু ডাকে...', তারপর শুরু হয় সেই অবিস্মরণীয় গান - 'টাক্ডুম্ টাক্ডুম্ বাজে, বাজে ভাঙা ঢোল...'। বুক মোচড়ায়। দেশবন্ধু পার্কের কাছে পশুপতিদা, কলেজ স্ট্রিটে জয়দেব-প্রবীর, ওয়েলিংটন স্কোয়ারের সামনে তাপস, গড়িয়াহাটে সুরজিৎদা, যাদবপুর এইট বি-তে মৃণালদা, দিলীপদা, সুস্মিতাদি - কত মুখ! আমি এবং আমরা যেমন কিছুকাল পরে ধীরে ধীরে ছাত্রছাত্রী এবং অনুজদের স্মৃতির উপাদান হয়ে যাব।
আরও পড়ুন: ‘ঘড়ির সময়’ আর ‘মহাকাল’ আমাদের বিস্ময়ে নির্বাক করে উড়ে যাচ্ছে
কলকাতা শহরের বাড়ি ভেঙে পথঘাটের চেহারা বদলে দিচ্ছে বর্তমান যুগ। চেনা রাস্তা, চেনা মুখ মানে আসলে একটা অতি পরিচিত বাড়ির টানা সিকোয়েন্স। হলুদ বাড়ির পর, কালো গেটওয়ালা দোতলা তারপর গ্যারেজ, তারপর খাতার দোকান তারপর সাইকেল সারাইয়ের ছোট্ট ঠেক, তারপর জলের কল, চায়ের দোকান, সিগারেট পান বিড়ির ঘুপচি, মিষ্টির দোকান...। এইভাবে গড়ে ওঠে চেনাশুনো তল্লাট। বাড়ি-ঘরের নতুন রং হলে রাস্তা একটু অচেনা ঠেকে। সাময়িক। সিকোয়েন্স পাল্টে গেলেই সেটা অন্য রাস্তা, অচেনা। প্রত্যেকটা মোড়ের একটা আলাদা চিহ্নক আছে, আছে নিজস্ব কিছু নামধাম-চেহারা। নইলে চৌমাথার মোড় তো সবগুলোই। আলাদা করে চিনি তো সেই বাড়িঘর, দোকান, পার্ক, ইমারতের রং আর ট্রামরাস্তা দিয়ে।
কথায় কথায় এই যে উঠে এলো ট্রামের কথা, সে হল কলকাতা শহরের এক নিজস্ব নিরিখ। একসময় নাকি মুম্বই শহরে ট্রাম কিছুদিন চলেছিল— কিন্তু একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে ট্রাম বললেই কলকাতার অনুষঙ্গ প্রখর হয়ে দেখা দেয়। সাজানো গোছানো নতুন রং করা ট্রামের নাম, আমাদের ছাত্রবয়সে দেওয়া হয়েছিল 'সুন্দরী'। সত্যিই কলকাতার 'সুন্দরী' তো ট্রামই। হেলেদুলে এগোতে থাকে গন্তব্যে। ধীর, কিন্তু রাজসিক। ঘণ্টিতেও একটা বিকেলের সুর। আর সবথেকে বড় কথা দূষণ নেই একফোঁটা। আমাদের এক বন্ধু বিদিশা বলত, ট্রাম যেখানে চলে দেখবি, সেখানেই সভ্যতা আছে, নিশ্চিত বলা যাবে। আমার পুত্র অরণ্য এখন পড়তে গেছে জার্মানির হাইডেলবার্গ শহরে। তার আস্তানা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় যায় ট্রামে চড়ে। ওর কি মনে পড়ে, শ্যামবাজার থেকে এসপ্ল্যানেড বা বেলগাছিয়া থেকে বিবাদীবাগ ট্রামযাত্রার কথা? নিশ্চয়ই পড়ে।
২
একটু তথ্য নিয়ে কথা বলি। পৃথিবীর যেসব বিখ্যাত শহরে ট্রাম আজও মুখ্য যানবাহন তাদের মধ্যে কয়েকটার নাম বলি। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা, চেক রিপাবলিকের প্রাগ, জার্মানির বার্লিন, হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট, নেদারল্যান্ডস-এর আমস্টারডাম, পর্তুগালের লিসবন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো। বোঝাই যাচ্ছে, একাধিক মহাদেশের অগ্রগণ্য সব শহরে ট্রাম তার মন্থর কিন্তু অভিজাত চলনে হাজির। আধুনিক চিন্তায় ট্রামের দূষণহীন, পরিবেশবান্ধব অস্তিত্ব বহুলাংশে অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। ওই যে বিদিশা বলেছিল, ট্রাম যেখানে চলে, সেখানে সভ্যতা!
কলকাতায় ট্রাম এসেছিল বিশ শতকের গোড়ায়। তবে তারও আগে ঘোড়ায় টানা ট্রামের চল ছিল ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে। বিদ্যুৎ এবং বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল ১৯০২ সালে। ফলে, এশিয়ার প্রথম বিজলিতে-চলা ট্রামের শহর কলকাতা। একসময় প্রায় ২৪-২৫টি ট্রামরুটে অজস্র ট্রাম কলকাতা এফোঁড় ওফোঁড় তো করতোই, তার ওপর তার বাহু প্রসারিত ছিল হাওড়ার শিবপুর থেকে বেহালা-জোকা পর্যন্ত। অল্পবয়সে আমি ময়দানের মধ্যে দিয়ে ট্রামে গেছি খিদিরপুর, রাজাবাজার ট্রাম ডিপো, গ্যালিফ স্ট্রিট ট্রাম ডিপো থেকে মধ্য-কলকাতায়, এমনকি হামেশাই গেছি মানিকতলা থেকে উল্টোডাঙা পর্যন্ত আবার তারাতলা কিংবা বালিগঞ্জ-কলেজ স্ট্রিট! জানলার ধারে বসে, দু-পাশের বাড়িঘর, মানুষজন, দোকান বাজার, কর্মব্যস্ততা, কখনও আবার ঢিমেতালে ছুটির সান্ধ্য আমেজ, চায়ের দোকান, সেলুন, ঘোড়ার গাড়ি— সবই দেখতে দেখতে যাওয়া। এই গন্তব্যের চেয়ে গমনের আনন্দ অন্য কোনও যানবাহনে নেই। দুটো কামরার একটায় পাখা আছে, বসার ব্যবস্থাও দুই আরোহীর সিটে। সেটা ফার্স্ট ক্লাস, দ্বিতীয়টা টানা বেঞ্চি, একটু কমদামি, অস্বচ্ছলদের জন্য। গরম। ঘাম। তারপর কর্মকেন্দ্র সরতে লাগল ধর্মতলা আর ডালহৌসি থেকে, কলকাতার ডানা ছড়িয়ে গেল নিউ টাউন থেকে সোনারপুর, বাইপাস-বিরাটি-বাগুইআটি থেকে সল্টলেক-ডানলপ-বজবজ পর্যন্ত। ফলে ট্রাম হয়ে গেল অতীত। প্রান্তিক। অপ্রয়োজনীয়। জীবন সতেজ স্বাস্থ্যে ভরে উঠল, দ্রুততায় উজ্জ্বল আর ক্রমে ক্রমে বিপুল বেগে ছুটে গেল নতুন পেশা। তারা ট্রামের চালচলনটাই প্রত্যাখ্যান করল। তাকে ব্যঙ্গ করল। ট্রামের তুলনায় বেশি কার্যকরকে স্বাগত জানাল। কবি ভাস্কর চক্রবর্তী একটি কবিতায় ট্রামকে বলেছিলেন 'আধুনিক ঘোড়া'। বেতো, বাতিল, খুঁড়িয়ে চলা, সেই কাহিল অশ্ব, এক পাশে অবহেলায় আজ ঘাস খোঁজে। প্রথম ট্রাম আর শেষ ট্রামকে নিয়ে নানা কল্পনা ফুলকিতে যেদিন এগোত, সেই দিনকালই অচেনা হয়ে গেছে।
৩
সমর সেন একবার বলেছিলেন, ট্রামের গতিশব্দ থেকেই তিনি তাঁর কবিতায় পেয়েছিলেন গদ্যস্পন্দ। পরবর্তীকালে 'সূর্য পোড়া ছাই' কাব্যগ্রন্থের কবিতা জয় গোস্বামী মনে মনে লিখেছিলেন ট্রামে চেপে ফিরতে ফিরতে, যেতে-যেতে, আনমনে। জীবনানন্দের 'সর্পিল' ট্রামলাইনের পরাবাস্তবতা আর তারপর ট্রামের নৃশংস ধাক্কায় মৃত্যু। 'মহীনের ঘোড়াগুলি' গানের দল আবার 'পুরনো মিছিলে পুরনো ট্রামেদের সারি' দেখেছিল শহরের উষ্ণতম দিনে। শহর জীবনের নানা ভ্রূ-ভঙ্গিতে, করতালি থেকে কবোষ্ণ সান্নিধ্যে, বিষাদে-একাকিত্বে এবং যৌথতায় ট্রামকে দূরে রাখার উপায় ছিল না। খুব ছোটোবেলায় আমার ট্রামের চালকদের মনে হত দেবদূত, মনে হত বড় হয়ে ওই কাজ করতে পারলেই কৃতার্থ হব। যখন সেই পাঁচ-ছয় বছরের বালক ঘুম চোখে হেয়ার স্কুলে যেত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, হেদো থেকে কলেজ স্ট্রিটে, তখন ট্রামকেই মনে হতো কুয়াশা ফুঁড়ে চলা কোনও উড়োজাহাজ। টিকিটের দাম ছিল, স্পষ্ট মনে আছে— ১৩ পয়সা! সাল? তা হবে ১৯৭৩ বা ১৯৭৪। কার্জন পার্ক পাল্টে গেছে। গ্যালিফ স্ট্রিট ট্রাম ডিপো ভূতুড়ে বাড়ির মতো, শ্যামবাজার, নোনাপুকুর, গড়িয়াহাট, রাজাবাজার সবই নাকি শুনতে পাই, অপেক্ষা করছে প্রোমোটিংয়ের কোটি কোটি চড়াই-উৎরাইয়ের দিকে তাকিয়ে। ঐতিহ্য ভেঙে বাণিজ্য অবশ্য 'উন্নয়নশীল' অর্থনীতির এক জবরদস্ত ফাটকা! গোটা দুনিয়া জুড়েই তার দাপট অব্যাহত।
তবু ট্রামের মায়া কিছুতেই ত্যাগ করা গেল না। আসলে, ট্রাম হলো একটা জীবনদর্শন। সেখানে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য উত্থানের বিদ্যুৎগতি দৌড় আর তার নিষ্ঠুর প্রতিযোগিতা আদৌ অভিপ্রেত নয়। এই জীবন নিয়ে সমকালীন যুগে বাঁচা কঠিন। বিশেষত আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে। যে দেশের ধনসম্পদ দু-তিনশো বছর ধরে লুণ্ঠন করেছে শ্বেতাঙ্গ প্রভুর ইউরোপ। পরিকাঠামো এখনও সেই ডাকাতির দাঁত নখে ক্ষত-বিক্ষত, পঙ্গু। অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন, সীমাহীন লোকসংখ্যার চাপ, অন্তহীন লোভ আর তস্করাকীর্ণ জনপদ। ফলে বিদেশের ট্রাম এবং পরিকল্পিত শহর জীবনের সঙ্গে এর তুলনা করাই যাবে না। শুনতে পাচ্ছি, শ্যামবাজার থেকে এসপ্ল্যানেড আর বালিগঞ্জ থেকে ধর্মতলা ছাড়া সব ট্রামরুটই মুছে যাবে। লাইনের লোহা তুলে ফেলা হবে। সেই কলকাতা, আমার কাছে কতদূর 'কল্লোলিনী তিলোত্তমা' হয়ে উঠতে পারবে, সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ বর্তমান।
সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতায় ঢুকে পড়ি। মনের কথাটি সেখানে বলা আছে—
'সময় দাঁড়িয়ে আছে/ মাথার ওপর তার ছিঁড়ে/ যেন বন্ধ ট্রাম।'
ট্রামহীন সভ্যতা - সে যে কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন!
***
পুনশ্চ: দুটো বিশেষ স্মৃতি ট্রামকে ঘিরে। না-বললেই নয়। প্রথমটা ২০০৪। 'দোহার' গানের দলের তৃতীয় সিডি প্রকাশ পাবে। সিডি-র নাম ছিল - 'রূপসাগরে'। কালিকাপ্রসাদের নেতৃত্বে পরিকল্পনা ছিল অভিনব। কার্জন পার্কে ট্রামে উদ্বোধন হবে এই লোকায়ত গানের সংকলন। মনে আছে সেই উদ্বোধনে ছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ, কবি ভাস্কর চক্রবর্তী এবং চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। সেই বিকেলে গানে কথায় রঙিন ঝলমলে সাজসজ্জায় ট্রাম ডিপোর ট্রাম যেন এক পক্ষিরাজের মতো ঝলমল করে উঠেছিল। প্রচুর মানুষ এসেছিলেন ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। আমি নিশ্চিত তাদের অনেকেরই এই বিকেল-সন্ধ্যাটির অপরূপ ঔজ্জ্বল্য এখনও মনে আছে।
আরও পড়ুন: জীবনানন্দ তৃতীয় নয়নে দেখেন বিশ্বযুদ্ধোত্তর কলকাতা
দ্বিতীয় স্মৃতিটি আরও ছোটবেলার। বোধহয় সালটা ১৯৭৪ বা ১৯৭৬। তখন আমার ঠাকুরদা আমাকে প্রত্যহ হেয়ার স্কুল থেকে আনতে যেতেন। তাঁর সঙ্গে থাকত, যতদূর মনে আছে ট্রামের 'মান্থলি'। আমি জানি না, আমার স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা করছে কিনা। সত্যিই কি ট্রামের নিয়মিত যাত্রীদের জন্য মাসিক বিশেষ রিবেট এবং 'মান্থলি' চালু ছিল? ট্রেনের মতোই? ঠিক-ভুল মিশে ধূ ধূ স্মৃতি। আরও মনে আছে ওই সময়েই একবার 'অল ডে টিকিট' কেটে নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। সাত-আট বছর বয়স। বাবা বুঝিয়ে বলেছিলেন, এ ট্রাম কোম্পানির এক বিশেষ ব্যবস্থা। কোনও কোনও নির্দিষ্ট দিনে 'অল ডে টিকিট' ক্রয় করলে সারাদিন যে কোনো ট্রামে যে কোনও দূরত্ব ওই টিকিট দেখিয়ে সফর করা যাবে। সেদিন যেন ধোঁয়া ধোঁয়া একটি-দুটি ছবি এখনো স্মৃতিপটে জ্বলে ওঠে। গড়িয়াহাটের মোড় আর লালবাজারের দিক দিয়ে চিৎপুর ধরে এগোনো, বিরিয়ানির খুশবু, ভিড়, নাখোদা মসজিদ...।
ট্রাম হয়তো অনেক রুটেই আর চলবে না। পুরনো দিন ফেরে না কোনওদিন। তবে, স্মৃতিগুলি অবিনশ্বর। অন্তত আমার চেতনা-চৈতন্যের অবসান পর্যন্ত। তারপর তো সবই অনির্বচনীয়। শূন্য তল। ওয়েলিংটন মোড়ে, একটা ছোটো বসার জায়গা। ট্রাম ঘুরতো যখন ওয়েলেসলি বা কলেজ স্ট্রিটের দিকে, এক ট্রামওয়েজ কর্মী লাঠি দিয়ে পালটাতেন ডিভাইডার। তাঁর মতোই নিশ্চিহ্ন!