অন্য সংখ্যার মতো কেন বলা হয় না সাড়ে এক, সাড়ে দুই? কীভাবে এল দেড় এবং আড়াই শব্দ?

Knowledge story about indian counting : শুধু ঘড়ির সময় বলে নয়, যে কোনও কিছু পরিমাপের ক্ষেত্রে সংখ্যা বোঝাতেই এক এবং দুই সংখ্যার ক্ষেত্রে ‘সাড়ে’ শব্দের ব্যবহার করা হয় না, কেন জানেন?

ছোট কাঁটাটা একের ঘরে, বড় কাঁটাটা ছয়ের ঘরে, বলুন তো করা বাজে ঘড়িতে? প্রশ্নটা সত্যিই এমন কিছু কঠিন নয়। মুহূর্তের মধ্যে উত্তর দেবেন ছোট থেকে বড় সকলেই। ঘড়িতে বাজে দেড়টা। একই ভাবে ঠিক এক ঘন্টা পর যখন ছোট কাঁটাটা থাকবে দুইয়ের ঘরে এবং বড় কাঁটাটা ছয়ের ঘরে তখন সময় জিজ্ঞেস করলে বলা হয় আড়াইটে বাজে। অথচ এর পরের ঘণ্টা গুলির ক্ষেত্রে কিন্তু কেবল সংখ্যার আগে ব্যবহার কিরাচিয় একটি অতিরিক্ত ‘সাড়ে’ শব্দ। অর্থাৎ, সাড়ে তিন, সাড়ে চার, সাড়ে পাঁচ ইত্যাদি। কিন্তু জানেন কি কেন এমন তফাৎ লক্ষ্য করা যায় ওই দুই সংখ্যার ক্ষেত্রে?

শুধু ঘড়ির সময় বলে নয়, যে কোনও কিছু পরিমাপের ক্ষেত্রে সংখ্যা বোঝাতেই এক এবং দুই সংখ্যার ক্ষেত্রে ‘সাড়ে’ শব্দের ব্যবহার করা হয় না। আমাদের ব্যবহারিক জীবনে এমন অনেক কিছুই রোজনামচা হয়ে গিয়েছে যার কারণ বিশ্লেষণ করতে বললে বিপদে পরতে হয়, অথচ সেগুলি কিভাবে এল, কেন এল এই প্রশ্নগুলো কিন্তু থেকেই যায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক, 'সাড়ে' শব্দের পেছনে লুকিয়ে থাকা আসল রহস্য।

আরও পড়ুন - কুকুরের উপদ্রব কমানোর দাওয়াই ‘নীল জল’! বাড়ির বাইরে বোতল ঝোলালেই সমস্যার সমাধান?

টাকা পয়সা, অথবা চাল ডাল, মাছ সবজি সবক্ষেত্রেই আমরা বলি যথাক্রমে দেড়শ টাকা, আড়াইশো টাকা অথবা দেড় কেজি, আড়াই কেজি। এর পেছনে রয়েছে প্রাচীন ভারতীয় ভাষার ইতিহাস। প্রাচীন কাল থেকেই এদেশে চালু ছিল বিশেষ এক গণনা পদ্ধতি যাকে দেড় আড়াই ও ত্রৈমাসিক গণনা পদ্ধতি বলা হতো। মূলত ভগ্নাংশের হিসেব বোঝাতেই এই ধরনের শব্দের ব্যবহার করে বর্ণনা করা হতো। যেহেতু এই ত্রৈমাসিক গণনা পদ্ধতিতে কেবলমাত্র এক এবং দুই সংখ্যার অতিরিক্ত অর্ধেকের ক্ষেত্রে দেড় এবং আড়াই সবচেয়ে ব্যবহার প্রচলিত ছিল সেই রেওয়াজ আজও রয়ে গেছে সমস্ত গণনার ক্ষেত্রেই। অন্যান্য সংখ্যার ব্যবহার যেহেতু ত্রৈমাসিক গণনা পদ্ধতিতে আলাদা করে প্রাধান্য পায়নি তাই সেগুলির ক্ষেত্রে পরবর্তীতে অতিরিক্ত অর্ধেক বোঝাতে ‘সাড়ে’ শব্দের প্রয়োগ করা হয়।

আসুন জেনে নেওয়া যাক ভগ্নাংশ কী? ভগ্নাংশ হল এমন একটি সংখ্যা যা পূর্ণ সংখ্যার একটি নির্দিষ্ট অংশকে বর্ণনা করে। অর্থাৎ দুটি পূর্ণ সংখ্যার ভাগফল হল ভগ্নাংশ। প্রাচীন ভারতীয় গণিতের তথ্য থেকে জানা যায়, প্রাচীনকালে আমাদের দেশে এক চতুর্থাংশ, পৌনে দুই ও আড়াই পর্যন্ত নামতা পড়ানো হতো। সেই ভগ্নাংশগুলি এখনও জ্যোতিষশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়। আর সেই থেকেই কেবল এক এবং দুইয়ের অর্ধেকের ক্ষেত্রে এই দেড় এবং আড়াই শব্দের প্রয়োগ রয়ে গেছে।

যেহেতু এই দেশে সমস্ত রকম গণনার ক্ষেত্রে ভগ্নাংশের প্রয়োগ করা হয় তাই ভগ্নাংশ ব্যবহারের প্রাচীন নিয়মটির অস্তিত্ব কোনদিনই মুছে যায়নি। প্রথম থেকেই ভারতের মৌলিক গণিতের যে শব্দগুলির ব্যবহার করা হয়েছিল তা আজও প্রচলিত রয়েছে অপরিবর্তিত ভাবে। যদিও ভাষাবিদরা আরও একটি অন্য তথ্যের কথা বলেন, সেটি হল উচ্চারণগত দিক। যেহেতু'l ‘সাড়ে একটা’ এবং ‘সাড়ে দুটো’ এই শব্দগুলি পরপর উচ্চারণের সময় জিভের সঙ্গে একটি ঘর্ষণ ক্রিয়া ঘটায় বেগ পেতে হয় তাই এগুলির পরিবর্তে দেড় এবং আড়াই শব্দের প্রচলনই রয়ে গিয়েছে।

More Articles