স্প্রাইটের বিজ্ঞাপন ঘিরে ধুন্ধুমার! জল গড়াল আদালতেও! কী ছিল সেই বিজ্ঞাপনে?
Sprite Ad Nawazuddin : নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির নামে পুলিশি অভিযোগ, স্প্রাইটের নয়া বিজ্ঞাপন ঘিরে কেন ক্ষেপে গেলেন বাঙালিরা?
সবুজ রঙের পানীয়ের বোতল, ঢাকনা খুলতেই উঠে আসে বুদবুদ। আজকের প্রজন্মের কাছে নামটাও বেশ পরিচিত, স্প্রাইট। গরমকাল তো বটেই তবে আজকাল প্রায় সারা বছরই কোল্ড ড্রিঙ্কসের বিক্রি তুঙ্গে। এ বিষয়ে চিকিৎসকেরা যতোই কড়াকড়ি করুক না কেন, ভ্রুক্ষেপ বিশেষ হয় না কারোরই। এবছর গরমের শুরু থেকেই তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী, ফলে ইতিমধ্যেই দেদার বিক্রি বেড়েছে বোতল ভর্তি কোল্ড ড্রিঙ্কসের। আর এই তালিকায় স্প্রাইট বেশ পুরনো সদস্য। কিন্তু সম্প্রতি এই স্প্রাইট ঘিরেই শুরু হল ধুন্ধুমার। সমস্যার জের এতটাই জোরালো যে জল গড়িয়েছে আদালতের দরজাতেও। কিন্তু বিষয়টা কী?
ঠান্ডা পানীয়ের বোতল, আর পাঁচটা কোম্পানির মতো এই স্প্রাইটও সাজানো থাকে দোকানের সারিতে। স্বাদ অথবা দাম নিয়েও সমস্যা নয় কিছুই, সমস্যা আসলে অন্য জায়গায়। আজকের সময়ে একটা বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে বিজ্ঞাপন। যে কোনও জিনিসকে ক্রেতাদের কাছে আরও একটু আকর্ষণীয় করে তুলে কীভাবে বিক্রি বাড়ানো যায় সেই কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয় বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন। শুধু বিজ্ঞাপনের ভাষা অথবা সুর নয় বিজ্ঞাপনকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে তাতে আন হয় বিখ্যাত কিছু মুখও। বিখ্যাত অভিনেতা অভিনেত্রী, মডেল থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের আনা হয় জিনিসের বিক্রি বাড়াতে। স্প্রাইটের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল ঠিক তাই।
আরও পড়ুন - গরমের দিনে ঘনঘন কোল্ড ড্রিংকস খাচ্ছেন? সাবধান, যৌনজীবনে বিপদ ডেকে আনছেন নিজেই
সম্প্রতি বিখ্যাত অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকিকে দিতে শুট করানো হয়েছে স্প্রাইটের নতুন একটি বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন প্রকাশ্যে আদর সঙ্গে সঙ্গেই ভাইরাল হয়ে যায়। কর্মকর্তারাও লাভের হিসেব কষবে বলে তৈরি হন, কিন্তু ঠিক এরকম সময়েই হাজির আদালতের শমন! ওই বিজ্ঞাপনকে ঘিরেই যত ঝামেলা! আসলে শুধু হিন্দি বিজ্ঞাপনেই তুষ্ট ছিলেন না কর্মকর্তারা। চেয়েছিলেন নতুন বিজ্ঞাপনে চমক দেবেন বাঙালি ক্রেতাদেরও। চমকই বটে! উল্টে চমকে যেতে হয়েছে খোদ কর্মকর্তাদের। যার জন্য মোটেই তারা আগে থেকে প্রস্তুত ছিলেন না।
হিন্দি বিজ্ঞাপনের হুবহু বাংলা করা হয়েছে, তাও আবার ডাবিং, অর্থাৎ হাল আমলের চল আরকি! গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে সরাসরি বাংলা করার প্রবণতা। যার মধ্যে অধিকাংশই ভুল, ভুয়ো। এই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কিছু বাঙালি। শুধু প্রশ্ন নয়, অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে অভিযোগও। ওই বিজ্ঞাপনটির বাংলা ডাবিংও এর ক্ষেত্রেও নওয়াজের মুখেই বাংলা কথাগুলি বসানো হয়েছে। যা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী দিব্যায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, এই বিজ্ঞাপনের বাংলা ডাব করা ভার্সনটি বাঙালি ভাবাবেগে আঘাত করেছে। বাঙালি জাতির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে বলেও দাবি তাঁর। এই মর্মে তিনি অভিনেতা এবং স্প্রাইট ইন্ডিয়ার CEO-র বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করাও হয়েছে ইতিমধ্যে।
আরও পড়ুন - ১৩৫ বছর ধরে নেশার জল বেচছে কোকাকোলা? কীভাবে জন্ম নিল এই পানীয়, অবাক করবে যে ইতিহাস
“সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে, বাঙালি খালি পেটে ঘুমিয়ে পড়ে...”, স্প্রাইটের বাংলা বিজ্ঞাপনের কথাগুলি ঠিক এরকম! যার সঠিক মানে তো নেইই বরং বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞা আছে। প্রশ্ন উঠেছে, একটা এত বড় প্রতিষ্ঠান অথচ বাংলা ভাষা লেখার জন্য একজনও ঠিকঠাক কর্মচারী রাখা কি এতটাই অসম্ভব ছিল? কেনোই না গুগল ট্রান্সলেটরের ওপর ভরসা করতে হল? আর কেনোই বা সেই অনুবাদ একবারও খতিয়ে দেখা হল না? বাংলার মাটিতে ব্যবসা করতে এসে বাংলা ভাষা নিতে এ হেন আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বাঙালিরা। বিজ্ঞাপনের বাংলা ভার্সনটিকে ঘিরে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩-এ ধারা এবং আইটি অ্যাক্টের ৬৬-এ ধারায় অভিযোগ জানানো হয়েছে।
এই নিয়ে বিষম প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর অবশ্য নড়েচড়ে বসেছে খোদ স্প্রাইট ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষও। সংস্থার পক্ষ থেকে গোটা বিষয়টি নিয়ে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। পাশাপাশি ট্যুইট বার্তায় অফিসিয়াল বিবৃতি দিয়ে স্প্রাইটের তরফে লেখা হয়, “সাম্প্রতিক স্প্রাইটের একটা বাংলা বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য আমরা তীব্র অনুশোচনা অনুভব করছি। আমাদের অনিচ্ছাকৃত এই ভুলটা আমরা বাংলা মাধ্যম থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করছি। আমাদের কোম্পানি বাংলা ভাষাকে যথাযথ সম্মান প্রদান করে।”
উল্লেখ্য, এই বাংলা বিজ্ঞাপনে বাংলা ভাষার প্রতি অনীহা নিয়ে এর আগেও প্রশ্ন উঠেছে। অভিনেতা পরেশ রাওয়ালের বিরুদ্ধে বাঙালি ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার জন্য কলকাতা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। মাছে-ভাতে বাঙালি নিয়ে তাঁর করা মন্তব্যের জেরে থানায় হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল অভিনেতাকে। ফলে আজকের স্প্রাইটের বাংলা বিজ্ঞাপন ঘিরে যে ঘটনা তা মোটেই কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বাংলার মাটিতে বাংলা ভাষাকে অপমান করলে প্রতিবাদের সুর যে আজও জোরালো হতে পারে তার প্রমাণ রাখা হল ফের। তাই ভবিষ্যত পাকা করতে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল যতোই বিকল্প বেছে নেওয়া হোক না কেন, বাংলার মাটিতে আজও ভাষার প্রতি ভাবাবেগ আছে। থাকবেও যে, এমনটাই আশাবাদী।