কর্মক্ষেত্রেনারী পুরুষে বেতনের ফারাক! বৈষম্যের কারণ উঠে এল সমীক্ষায়

Gender gap in workplace: মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়ার পর নারীরা প্রায়ই কর্মক্ষেত্রে ফিরে এসে বেতন বা পদোন্নতিতে পিছিয়ে পড়েন। এটি শুধু ব্যক্তিগত স্তরে নয়, অর্থনৈতিকভাবেও ধাক্কা দেয় দেশকে।

ভারতীয় কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বেতনবৈষম্যে রয়েছে, একথা নারীমাত্রেই জানেন। পুরুষরা কেউ মানেন, কেউ মানতে চান না। কিন্তু কেন এই বৈষম্য, সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে উঠে আসছে মাতৃত্বকালীন ছুটি। চাকরি সংক্রান্ত ওয়েবসাইট নকরি ডট কম-এর একটি সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ২০,০০০ চাকরিপ্রার্থীকে সামনে রেখে এই সমীক্ষা করা হয়েছিল। ৮০টি আলাদা আলাদা শিল্পক্ষেত্র এবং আটটি শহরকে বেছে নেওয়া হয়েছিল এই সমীক্ষার জন্যে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫১ শতাংশ বলছেন মাতৃত্বকালীন ছুটি এই নেপথ্যে রয়েছে। আরও ২৭ শতাংশ বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক পক্ষপাতিত্বই এর মূল কারণ।

এই সমীক্ষা অনুসারে, কিছু শিল্পসংস্থায় এই বৈষম্য চোখে লাগার মতো বেশি। যেমন আইটি-তে ৫৬ শতাংশ,ওষুধ খাতে ৫৫ শতাংশ এবং অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ৫৩ শতাংশ সমীক্ষায় অংশগ্রহণকরীই এই বৈষম্যের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন। বৈষম্য রয়েছে রিয়েল এস্টেট (২১ শতাংশ), এফএমসিজি (১৮ শতাংশ) এবং ব্যাঙ্কিং (১২ শতাংশ মতো) সংস্থাগুলিতেও। তবে আইটি হাব হিসেবে পরিচিত হায়দরাবাদ (৫৯ শতাংশ) এবং বেঙ্গালুরু (৫৮ শতাংশ) শহরগুলিতে এই বৈষম্য সবচেয়ে বেশি প্রকট।

আরও পড়ুন- কেন তরুণ প্রজন্ম বারবার পেশা বদলাচ্ছে? দায়ী কে?

কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার দিক থেকে দেখলে, ১০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জরিপকারীদের অর্ধেকেরও বেশি মনে করেন যে বেতন বৈষম্য ২০ শতাংশের উপরে। এই গোষ্ঠীতে বিমান চলাচল খাতে ৫৭ শতাংশ, শিক্ষা খাতে ৫২ শতাংশ এবং আইটিতে ৫০ শতাংশ এই সমস্যা সবচেয়ে তীব্র। অন্যদিকে, তেল ও গ্যাস এবং খুচরো খাতের মতো ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলিতে জরিপকারীরা এই বৈষম্যকে নগণ্য বলে মনে করেন।

এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা কি সম্ভব? ৩৪ শতাংশ মনে করেন যে পদোন্নতি এবং বেতনবৃদ্ধি কেবলমাত্র যোগ্যতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। ২৭ শতাংশের মতে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতমুক্ত হতে হবে। বেতনের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ না করার সচেতন সিদ্ধান্ত এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।

ভারতীয় সমাজে মেয়েদের কাজের জীবন আর মাতৃত্বের ভারসাম্য রক্ষা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়ার পর নারীরা প্রায়ই কর্মক্ষেত্রে ফিরে এসে বেতন বা পদোন্নতিতে পিছিয়ে পড়েন। এটি শুধু ব্যক্তিগত স্তরে নয়, অর্থনৈতিকভাবেও ধাক্কা দেয় দেশকে।

আরও পড়ুন- কর্মজীবনে উন্নতি চাইলে এভাবে সাজাতে হবে অফিস, বলছেন বাস্তুবিদরা

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা এই বৈষম্য কমানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন, মাতৃত্বকালীন ছুটির সময়কাল বাড়ানো হয়েছে ২৬ সপ্তাহে,পাশাপাশি পিতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা চালু হওয়া দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা কারণ সন্তানর বেড়ে ওঠা মায়ের একার দায়িত্ব নয়। ইউরোপীয় দেশগুলিতে এই ধরনের নীতি সফলভাবে কার্যকর হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে এই দিকে আরও সচেতন হতে হবে।

সমাজের মনোভাব পরিবর্তন না হলে অবস্থাটা বদলাবে না মন করেন মেয়েরা। স্পষ্ট কথা মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কর্মজীবনে মেয়েরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেই লক্ষ্যে নীতিগত পরিবর্তন আনতে হবে। কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক পক্ষপাতিত্ব দূর করার জন্য নিয়মিত অডিট এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। সমান সুযোগ থেকে কোনো পক্ষই যাতে বঞ্চিত না হন।

More Articles