'৫ জন মরতে চলেছে'! হোয়াটস্যাপ স্টেটাস লিখে খুন! যে গণহত্যায় শিউরে উঠছে দেশ
Amethi Mass Murder: নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই প্রকাশ্যে আসে যে, পুনম ভারতী মাসে দুয়েক আগেই জনৈক চন্দন ভার্মার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
মৃত্যু হবে। প্রকাশ্যে এমন চাঞ্চল্যকর বিবৃতি দিয়ে চারজনকে খুন করা হয়েছে আমেঠিতে। একজন শিক্ষক, তাঁর স্ত্রী এবং দুই ছোট শিশুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল নাকি প্রায় এক মাস ধরে! আর যিনি করেছিলেন এমন পরিকল্পনা, তিনি হোয়াটস্যাপ স্টেটাসে তা লিখে রেখেছিলেন! যদিও, স্টেটাসে লিখেছিলেন ৫ জনের মৃত্যুর কথা। খুন হয়েছেন চারজন। পুলিশ বলছে, সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি পরে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। তাই ৫ জনের মৃত্যুর কথা প্রকাশ্যে লিখে রেখেছিলেন।
সুনীল কুমার, তাঁর স্ত্রী পুনম ভারতী এবং তাদের দুই মেয়ে, একজনের বয়স মাত্র একবছর এবং অন্যজনের ছ'বছর - বৃহস্পতিবার আমেথির ভবানী নগরে তাদের নিজের বাড়িতেই গুলি করে হত্যা করা হয়। নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই প্রকাশ্যে আসে যে, পুনম ভারতী মাসে দুয়েক আগেই জনৈক চন্দন ভার্মার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পুলিশকে তিনি বলেছিলেন, এই চন্দন ভার্মা একাধিকবার তাঁকে খুন করার হুমকি দিয়েছেন। তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে কোনও এমন ঘটনা ঘটলে তার দায় এই চন্দন ভার্মারই। কে এই চন্দন ভার্মা?
আরও পড়ুন- বাবা মা’কে হত্যা করেছে নাৎসিরা, ৬৬৪ জন শিশুকে যেভাবে অন্য জীবন দিয়েছেন এই ব্যক্তি
এফআইআরে পুনম ভারতী জানিয়েছিলেন, গত ১৮ অগাস্ট রায়বরেলির একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে চন্দন ভার্মা তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। প্রতিবাদ করায় চন্দন তাঁকে এবং তাঁর স্বামীকে চড় মারেন। চন্দন নাকি হুমকি দেন, পুলিশকে এই ঘটনা জানালে তিনি তাঁদের মেরে ফেলবেন। পুনম লিখেছিলেন, "এর আগেও সে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। আমার পরিবার বিপদের মধ্যে আছে। ভবিষ্যতে আমার বা আমার স্বামীর সঙ্গে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে চন্দন ভার্মাই দায়ী।"
পুলিশ এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই চন্দন ভার্মাকে হেফাজতে নিয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে, গত ১২ সেপ্টেম্বর হোয়াটস্যাপ স্টেটাসের একটি স্ক্রিনশট রয়েছে। সেখানে চন্দন লিখেছিলেন, “৫ জন মানুষ মারা যেতে চলেছে, দেখে নেব তোমাদের।" পুলিশ বলছে, স্ক্রিনশট পাওয়া এবং প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসা তথ্য বলছে, ওই পরিবারটিকে হত্যা করার পর চন্দন ভার্মা আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন সম্ভবত। হত্যার ঠিক আগে তিনি আমেঠির একটি বিখ্যাত মন্দিরেও গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তবে কেন হঠাৎ হাসপাতালে বচসা, তা থেকে একেবারে পরিবারকে নিকেশ করার ছক, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
আমেঠির এই গণহত্যার শিকার সুনীল (৩৫) পেশায় একজন সরকারি স্কুল শিক্ষক। ভাড়া বাড়িতে থাকত এই দলিত পরিবারটি। তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইন, ১৯৮৯-এর অধীনে চন্দনের বিরুদ্ধে ওই এফআইআরটি দায়ের করেছিলেন পুনম। কিন্তু এই চন্দন কে? তাঁর সঙ্গে এই পরিবারের অন্য কোনও সম্পর্ক ছিল কিনা পুলিশ তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন- পেট ভরে খাইয়ে মানসিক ভারসাম্যহীনকে খুন ছাত্রদের! এটাই কি নতুন বাংলাদেশ?
পুলিশ জানিয়েছেন আমেঠির আহরওয়া ভবানী ক্রসিংয়ের আশেপাশে জোরে গুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। প্রতিবেশীরা বাড়ি থেকে ছুটে এসে দেখেন বাড়ির পেছনে চারজনই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছেন। সুনীল ও তাঁর পরিবারের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলছে, সুনীলকে তিনবার, তাঁর স্ত্রীকে দুইবার এবং তাদের মেয়েদের একবার করে গুলি করা হয়েছিল।
যোগীর রাজ্যে এমন হত্যাকাণ্ডের ফলে উত্তরপ্রদেশ সরকারের উপর চাপ বাড়িয়েছেন বিরোধীরা। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব, কংগ্রেসের আমেঠি সাংসদ কিশোরী লাল শর্মা বলছেন, এই ঘটনাটি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকেই তুলে ধরে। রাজ্য সরকারের আইনশৃঙ্খলা যদি ভালোই হতো তাহলে এই ধরনের ঘটনাগুলি কীভাবে ঘটছে, প্রশ্ন তুলেছেন তারা।