নির্দোষ, মুক্ত— গোটা দেশ যেভাবে নরকদর্শন করিয়েছে বঙ্গতনয়া রিয়া চক্রবর্তীকে
Rhea Chakraborty: অভিনেতাকে মানসিক নির্যাতন করা, আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া থেকে শুরু করে সুশান্তের টাকা নয়ছয় বহু অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। গোল্ড ডিগার' থেকে শুরু করে 'ডাইনি' বহু অপবাদ জোটে তাঁর কপালে।
২০২০ সালের ১৪ ই জুন। গোটা দেশ স্তব্ধ হয়ে যায় একটি খবর শুনে। পর্দার মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আর নেই! বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের রহস্যমৃত্যু। রহস্য ভেদ করার জন্য চলতে থাকে নানারকম জল্পনা-কল্পনা। কেউ বলে হত্যা তো কেউ আত্মহত্যা। তদন্ত শুরু হলে, অভিনেতার মানসিক স্বাস্থ্যের কথা জনসমক্ষে আসে। মাদকসেবনের কথাও গোপন থাকে না। গ্রেফতার করা হয় অভিনেতার প্রেমিকা অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীকে। অভিযোগ, অভিনেতাকে মাদক সরবরাহ করতেন তাঁর প্রেমিকা। নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (NCB) তাঁকে গ্রেফতার করে এবং তাঁর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে।
দীর্ঘ প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর ক্লিনচিট পেলেন অভিনেত্রী। অভিনেতার মৃত্যুর পর প্রায় ২৮ দিন জেলে ছিলেন তিনি। সেই কারাবাস ছিল ভীষণ কঠিন। সেখানে সহবন্দিদের যোগব্যায়াম শেখাতেন তিনি। সহবন্দিদের অনুরোধে, তাদের আনন্দ দিতে ‘নাগিন ডান্স’ও করেছিলেন তিনি। তাঁর মনে হয়, কারাগারের ভেতরের মানুষদের মধ্যে বাইরের মানুষগুলোর তুলনায় মানবিকতা বেশি। কারাবাসের অভিজ্ঞতাগুলি তিনি নিজের ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। সেই ডায়েরির প্রথম বাক্য—‘জেলের মানুষেরা বাইরের মানুষের চেয়ে ভালো’।
দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছরে কম লড়াই করতে হয়নি তাঁকে। বহু আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু তার চেয়েও বেশি কষ্টকর ছিল বোধ হয় সর্বত্র সামাজিক বিদ্বেষ, অপমানের সম্মুখীন হওয়া। অভিনেতাকে মানসিক নির্যাতন করা, আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া থেকে শুরু করে সুশান্তের টাকা নয়ছয় বহু অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। 'গোল্ড ডিগার' থেকে শুরু করে 'ডাইনি' বহু অপবাদ জোটে তাঁর কপালে। শ্রীঘর থেকে মুক্তি পেলেও মুক্তি পাননি সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল থেকে। তাঁর পরিবারকেও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। রিয়া বলেছেন, আইনি লড়াইয়ের সময় তাঁর মা-বাবা প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলেন; তাঁর ভাইয়েরও নাম জড়ায় এই ঘটনায়। সামাজিক বিদ্বেষ ও অপপ্রচারের কারণে অনেক সমস্যায় পড়েন তাঁরা। অভিযোগমুক্ত হলেও মানসিকভাবে স্বস্তি পাননি অভিনেত্রী। ২০২০ এর ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "যে স্বপ্ন জড়িয়ে অভিনয়জগতে পা দিয়েছিলেন, বর্তমানে তার অস্তিত্বই যেন নেই। এখন, শুধুমাত্র এমন একটি দিনের জন্য প্রার্থনা করেন, যেদিন পরিবারের কারোর anxiety attack হবে না।"
আরও পড়ুন -আড়াই বছর পার, এখনও অধরা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু রহস্য, ঠিক কী ঘটেছিল সেই দিন?
এই পাঁচ বছরের লড়াই শুধুই আইনি বা সামাজিক অপমানের ছিল না, ছিল মানসিকও। তিনি তাঁর Post Traumatic Stress Disorder বা PTSD-র অভিজ্ঞতা নিয়ে বহুবার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, মুক্তি পাওয়ার পরেও হঠাৎ কিছু ঘটলে বা কেউ দ্রুত এগিয়ে এলেই ভয়, অস্থিরতা তাঁকে গ্রাস করতো। এমনকি, PTSD-র কারণে তাঁর পায়ে ল্যাকটিক অ্যাসিডও জমা হতো। মানসিক স্বাস্থ্য পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে অভিনেত্রী টানা তিন বছর থেরাপি নিয়েছেন। নতুন করে শক্তি পেতেন তিনি থেরাপিতে এসে। তাঁর শান্তির ঠিকানা ছিল থেরাপি। তাই, রিয়া থেরাপির গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন,"থেরাপি আমার জীবন বাঁচিয়েছে। যারা বলেন থেরাপি অপ্রয়োজনীয়, তাদের সঙ্গে আমি একমত নই।"
অবশেষে, পাঁচ বছর পর আদালতের নির্দেশে নিজের পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন অভিনেত্রী। ইনস্টাগ্রামে একটি আবেগঘন পোস্টে লিখেছেন—‘বিগত পাঁচ বছরে ধৈর্যই ছিল আমার একমাত্র পাসপোর্ট। অসংখ্য লড়াই, অনন্ত আশা। আজ আমি আবার নিজের পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি। জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের জন্য আমি প্রস্তুত! সত্যেমেব জয়তে’। এবার তিনি ফের নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস পাবেন। রিয়া জানান, এই পাসপোর্ট শুধু একটি আইনি দলিল নয়, এটি তার পুনর্জন্মের প্রতীক। তিনি নতুন করে বলিউড সিনেমায় ও ওয়েব সিরিজে কাজ করার পরিকল্পনা করছেন।

Whatsapp
