প্রাণ বাঁচাতে জানতে হবে হনুমান চল্লিশা! ওড়িশা থেকে যে ভাবে বাড়ি ফিরলেন সুজন সরকার
Migrant workers from Bengal : উলঙ্গ অবস্থাতেই পেটাতে থাকে তাঁকে। সুজনের কথায়, "আমাকে হনুমান চল্লিশা পড়তে বলা হয়। আমি তো হনুমানচল্লিশা জানি না। ফলে আমার উপর অত্যাচার বাড়ে।"
বাঁচতে হলে হনুমানচল্লিশা পড়তে হবে। উলঙ্গ হয়ে প্রমাণ দিতে হবে তুমি মুসলিম নও। বাংলাদেশি সন্দেহে ঘাড়ধাক্কার ঘটনায় নতুন সংযোজন সুজন সরকারের নাম। মুর্শিদাবাদের ভগবানপুর গ্রামের যুবক সুজন সেদিনের কথা মনে পড়লেই শিউরে উঠছেন।
পারিবারিক জমি নেই। নেই ভারী কাজ করার শারীরিক ক্ষমতাও। প্লাস্টিকের জিনিস ফেরি করার কাজ নিয়ে সুজন ওড়িশার ঢেঙ্কানলে যান। দিনদশেক ছিলেন তিনি। এক ব্যক্তি ট্রাক্টরে তেল ভরতে ভরতে তাঁকে ডাকে। সাহায্যের প্রয়োজন ভেবে তিনি এগিয়ে যান। সামনে যেতেই তাঁর থেকে জানতে চাওয়া হয়, ভারতীয় না বাংলাদেশী? পরের প্রশ্ন, হিন্দু না মুসলিম?

সুজন
সুজন জানান তিনি হিন্দু (যদিও আদতে সুজন রাজবংশী)। এরপরও লোকটি সুজনকে উলঙ্গ হতে বলে শণাক্তকরণের জন্য। উলঙ্গ অবস্থাতেই পেটাতে থাকে তাঁকে। সুজনের কথায়, "আমাকে হনুমান চল্লিশা পড়তে বলা হয়। আমি তো হনুমানচল্লিশা জানি না। ফলে আমার উপর অত্যাচার বাড়ে।"
সুজন আরও বলেন, "আমাকে পিঠে, হাঁটুতে ইটের টুকরো হাতে তুলে মারেন উনি। কেউ বাঁচাতে আসেননি। সবাই দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। আমাকে থেতলে মারার জন্যে একটা ভারী পাথরও তোলা হয়েছিল। এক ব্যক্তি এগিয়ে এসে কোনোক্রমে তাঁকে থামিয়ে আমায় পালাতে বলেন।"
সুজনের ততক্ষণে প্রায় জ্ঞান নেই। ইনস্ক্রিপ্টের পক্ষ থেকে সুজনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কীভাবে বাড়ি ফিরেছেন? স্পষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি। আবছা আবছা স্মৃতি থেকে বলেন, কোনো রকমে একটা বাইকের পেছনে বসে ভাড়া বাড়িতে আসি। তাঁকে হাসপাতালে যেতে হয় চিকিৎসার জন্যে। এই ঘটনার প্রায় দু'দিন পর মহাজন বাড়ি ফেরার টিকিট কেটে দেন।

সুজনের ফেরার টিকিট
সুজনের আরও জানান, যে তাঁকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হয় তাঁকে। কারণ, আবার কাজের জন্যে তাঁকে আসতে হতে পারে এই স্থানেই।

সুজনের পরিবার
সুজন ইনস্ক্রিপ্টকে জানান, এখনও পর্যন্ত কোনো সরকারি সাহায্য পাননি তিনি। ফলে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে পারেন না। সুজন জানেন না আগামীদিনে কী করবেন? এই প্রতিবেদন তৈরি করার সময় সুজন পাড়ি দিচ্ছেন নাগপুর। আরএসএস-এর সদরঘাঁটিতে। আবার নতুন যুদ্ধ, ভাত জোটাতে হাঁক পারবে ফেরিওয়ালা। তাঁর সুরক্ষা কে নিশ্চিত করবে? কেন কাজ নেই রাজ্যে, কে উত্তর দেবে?

Whatsapp
