অভয়ার জন্য খোলা চিঠি যে-লড়াই শুরু হয়েছিল তা এখনও থামেনি জানিস

R.G. Kar Protest : আর জি কর-এর মতো প্রাতিষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটার পর প্রশ্ন উঠেছিল, কীভাবে একটা ডাক্তারি পড়তে আসা পড়ুয়ার জীবনে এমন ঘটনা ঘটতে পারে? এর জন্য কে দায়ী?

অভয়া,

তোকে হারানোর এক বছর পেরিয়ে গেল! চোখের সামনে দিয়ে যেন তুই এখনও হেঁটে-হেঁটে চলেছিস—Chest Medicine ward-এর বারান্দা পেরিয়ে, জরুরি বিভাগের মোড় ঘুরে, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ভিড়ের মধ্যে দিয়ে। আমরা কেউ তোকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি। কিন্তু তোকে হারানোর পর, শুরু হয়েছিল যে-লড়াই, তা এখনও থামেনি জানিস! প্রতিটা কলেজে শ্বাস নেওয়ার মতো মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য আমরা লড়ছি। যে মুক্ত পরিবেশ তোর সময়ে থাকলে, তোকে হারাতে হত না।

আরও পড়ুন-

মাঝরাতে গ্রেফতার নোবেল! ধর্ষণ নির্যাতনের ভয়াবহ অভিযোগ

ক্যাম্পাসে যাতে যৌন হেনস্থা স্বাভাবিক বিষয় না হয়ে ওঠে, প্রথম অভিযোগ মাত্রই যাতে নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু হয়, তার জন্য লড়াই করছি। যে-শাসক দলের চেলা-চামুণ্ডারা তোর মৃতদেহের পাশে বসে নির্বিকার মিটিং করেছিল কীভাবে সব ধামাচাপা দেওয়া যায়, তাদের ঘৃণ্য চক্রান্তের বিরুদ্ধে লড়ছি।

রাতদখলের আন্দোলন

এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, যিনি একই সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রী, তিনি নিজে একজন মহিলা হয়েও, দলীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য অপরাধীদের আড়াল করলেন। তাঁর অধীনে থাকা পুলিশ, স্বাস্থ্যভবনের কর্তা আর হাসপাতালের চেলা-চামুণ্ডারা মিলে তোকে বিচার পেতে দিল না। নিজের দলের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে তোর ওপর ঘটে যাওয়া পাশবিক অত্যাচারকে ‘আত্মহত্যা’ বলে চালাতে চাইল। প্রমাণ লোপাট, সাক্ষীকে ভয় দেখানো, পরিবারকে চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, এমনকি মৃতদেহ দ্রুত পুড়িয়ে ফেলার তাগিদ — এসবই আসলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনের নোংরা চক্রান্তের অংশ। 

অভয়াকাণ্ডের মেয়েদের মিছিল

সিবিআই-এর তদন্তের কর্মকর্তা সীমা পহুজা নিজে একজন মহিলা হয়েও জানি না কোন রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায়, না কি ক্ষমতা দখলের নোংরা ব্যবসার অংশ হিসেবে, কেসটাকে এক-অর্থে ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। সারাবাংলা যখন রাত-দখলে রাস্তায়, সর্বত্র তোর ছবি, সে-সময়ে ধর্না মঞ্চের ওপর রাখা চেয়ার-টেবিল তুলে আছড়ে-আছড়ে ভাঙতে থাকল গুন্ডারা। যারা প্রতিবাদ করছিল, তাদের খুনের হুমকি দিয়ে গেল। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ভিতরে ঢুকে প্রত্যক্ষভাবে আবারও সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়ে গেল। 

আরও পড়ুন-

কোটি টাকার আন্দোলন! জুনিয়র ডাক্তারদের এই বিপুল অনুদান সঠিক লক্ষ্যে ব্যবহৃত হলো?

তোকে বিচার না দেওয়ার ব্যর্থতা শুধু কিছু ব্যক্তির নয় — এটা এই গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থার ব্যর্থতা। এই লড়াই, জেতা-হারার প্রশ্নের ওপর দাঁড়িয়ে নেই। তোকে বিচার না-দেওয়ার ব্যর্থতা এই রাষ্ট্রব্যবস্থার— সরকারের, পুলিশের, সিবিআইয়ের, আদালতের। আমরা আমাদের সবটুকু দিয়েছি এই লড়াইকে — প্রাণ দিয়ে, সময় দিয়ে, সম্ভ্রম দিয়ে, নিঃশ্বাস দিয়ে চেয়েছি তোর ওপর ঘটে যাওয়া অত্যাচারের বিচার হোক।

আর জি কর-এর মতো প্রাতিষ্ঠানে এই অমানবিক ঘটনা ঘটার পর প্রশ্ন উঠেছিল, কীভাবে একটা ডাক্তারি পড়তে আসা পড়ুয়ার জীবনে এমন ঘটনা ঘটতে পারে? এর জন্য কে দায়ী? কেন স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভিতরে এমন পচন ধরেছে? আমরা সেই প্রশ্নগুলোকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে ঝালিয়ে নিয়েছি। দুর্নীতি, ক্ষমতার সিন্ডিকেটদের মুখোশ ছিঁড়েছি। যে-কারণে তোকে হারাতে হয়েছে, তার বিরুদ্ধে গঠনমূলক দাবি তুলেছি। এই আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না কখনো। এটা ছিল মানুষের সম্মিলিত চিৎকার! তুই জানিস, আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, তোকে কোনোদিন ভুলব না। তোকে শুধু আবেগ দিয়ে নয়, যুক্তি, ইতিহাস আর সংগ্রামের মধ্যে আমরা বাঁচিয়ে রাখব। 

ইতি,
দেবাশিস হালদার

More Articles