ট্রাম্প হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হতেই টার্গেট তাঁর বন্ধু! ফল কী হবে?
Charlie Kirk Assassination: চার্লি কার্ক যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম হাই-প্রোফাইল কনজারভেটিভ পার্টির অ্যাকটিভিস্ট। ২০১২ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ (Turning Point USA) নামক ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গন আবারও রক্তাক্ত হল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ঘটনা নতুন নয়। ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আয়োজিত একটি আউটডোর অনুষ্ঠানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন প্রখ্যাত অ্যাকটিভিস্ট ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব চার্লি কার্ক। মাত্র ৩১ বছর বয়সেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী আন্দোলনের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছিলেন কার্ক। সেখানেই স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে এই ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রায় ২০০ মিটার দূরের একটি বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে তাঁকে গুলি করা হয়।
ইউটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে— “প্রায় ২০০ গজ দূরের একটি বিল্ডিং থেকে গুলি চালানো হয়। দ্রুতই নিরাপত্তা কর্মীরা তাঁকে সরিয়ে নেন। ঘটনাস্থলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।” প্রথমে দুজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হলেও পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে তাঁদের যোগসূত্র এখনও নিশ্চিত নয়।
আরও পড়ুন- দেশে দেশে গুপ্তহত্যা! কী ভাবে কাজ করে ইজরায়েলি গোয়েন্দা বিভাগ?
ইভেন্টটিতে প্রায় তিন হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক অ্যাডাম বার্থেলোমিউ বিবিসি-কে বলেন, অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল ভয়াবহ। এমনকি তাঁর ব্যাগও নাকি তল্লাশি করা হয়নি। এদিকে অনুষ্ঠানের বাইরে ৫০-৬০ জন বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদের দাবি, কার্ক বিতর্কিত বক্তব্যের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভাজন ছড়াবে। এই ঘটনাটির সময় অ্যাডাম বার্থেলোমিউ বিক্ষোভকারীদের বাইট নিচ্ছিলেন বলে জানান।
চার্লি কার্ক যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম হাই-প্রোফাইল কনজারভেটিভ পার্টির অ্যাকটিভিস্ট। ২০১২ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ (Turning Point USA) নামক ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলেন। লক্ষ্য ছিল, উদারপন্থী মার্কিন ক্যাম্পাসগুলোতে রক্ষণশীল মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া। বিভিন্ন ইস্যু যেমন ট্রান্সজেন্ডার অধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবার ও ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে খোলাখুলি বিতর্কে অংশ নিতেন তিনি। নিজের পডকাস্ট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত বিতর্ক ও আলোচনার ক্লিপ শেয়ারও করতেন। তিনি বিবাহিত ছিলেন এবং তাঁর দুই সন্তানও রয়েছে।
আরও পড়ুন- মেয়ের স্বাবলম্বিতাই চক্ষুশূল।। রাধিকাহত্যা চিনিয়ে দিল পিতৃতন্ত্রের স্বরূপ
কার্ক ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রচারিত হতেই ট্রাম্প এক ভিডিও বার্তায় বলেন— “আমি এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে শোকার্ত ও ক্ষুব্ধ।” ঘটনাটিকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের “অন্ধকার মুহূর্ত” বলেও উল্লেখ করেন। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। তাঁর দাবি, “উগ্র বামপন্থী সহিংসতা অনেক নিরীহ মানুষকে আঘাত করেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতা নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে মতাদর্শগত সংঘাতের অন্যতম ক্ষেত্র। কার্কের মতো কনজারভেটিভ বক্তারা ডানপন্থী শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও, লিবারেল শিক্ষার্থীদের একাংশ তাঁকে বিভাজনমূলক হিসেবে দেখতেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক বিভাজনকে আরও তীব্র করবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুক্তচিন্তার জায়গা সঙ্কুচিত হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।তাঁর মৃত্যু ঘিরে ট্রাম্পের ক্ষোভ, জনরোষ ও তদন্ত—সবকিছু মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহনশীলতা নিয়ে আবারও নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।

Whatsapp
