মানবাধিকার লঙ্ঘিত, চোখ বুজে ভারত! যা বলছে মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদন

US International Report: তবে এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর ওয়াকিবহাল মহল দাবি করছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মিত্র’ দেশগুলি নিয়ে এই রিপোর্টে তুলনায় খুব কম সমালোচনা করা হয়েছে।

 বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর বিদেশ মন্ত্রকের মানবাধিকার-বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন। প্রতি বছরই এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেই প্রতিবেদনে ভারতে মানবাধিকার বিষয়ে একাধিক উদ্বেগের ঘটনা উঠে এসেছে। দাবি করা হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ‘ন্যূনতম’ ব্যবস্থা নিয়েছে ভারত।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের বিভিন্ন ঘটনার তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে- মণিপুরের অশান্তি, জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন ঘটনা, পুলিশের এনকাউন্টার, সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ, নিখোঁজ হওয়া, বেআইনিভাবে গ্রেফতার বা আটক-সহ একাধিক মানবধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। দাবি করা হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ভারত সরকার পদক্ষেপ নিলেও তা খুবই সামান্য।

আরও পড়ুন- মণিপুর থেকে মুর্শিদাবাদ: মেয়েদের লাঞ্ছনাতেই উগ্রবাদীদের জয়?

এই প্রতিবেদনে জম্মু কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় সাধারণ মানুষ ও সেনাকর্মীদের মৃত্যুর উল্লেখ আছে। দাবি করা হয়েছে, উত্তর-পূর্ব ভারত এবং মাওবাদী অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্থ জায়গাগুলির কথাও। এছাড়াও দাবি করা হয়েছে, মণিপুরে কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘাত চলতে থাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা এখনও চলছে।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কথাও রয়েছে প্রতিবেদনে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিয়েছে ইসলামাবাদ। অন্য দিকে কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলনামূলক স্থিতিশীল বলেই দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে বাংলাদেশ নিয়েও সামান্য কিছু উদ্বেগের কথা উল্লেখ রয়েছে।

প্রতিবেদনে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের’ পর আওয়ামীলীগ সরকারের পতন, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে কিছু ক্ষেত্রে মানবধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।

আরও পড়ুন- থিয়েটারে-বাস্তবে যেভাবে নগ্ন প্রতিবাদের মুখ হয়েছেন মণিপুরের মেয়েরা

পাকিস্তান প্রসঙ্গে দাবি করা হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার খুবই কম ব্যবস্থা নিয়েছে। আরও দাবি করা হয়, পাকিস্তানে মানবাধিকারে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। জঙ্গি কার্যকলাপ একইভাবে চলছে বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বালোচিস্তানে সন্ত্রাসবাদী হামলার মতো বিষয়গুলিও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

তবে এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর ওয়াকিবহাল মহল দাবি করছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মিত্র’ দেশগুলি নিয়ে এই প্রতিবেদনে তুলনায় খুব কম সমালোচনা করা হয়েছে। যেমন দেখা গিয়েছে গত বারের প্রতিবেদনের তুলনায় এবারের ইজরায়েল সরকারের সমালোচনা অনেক কম। গাজায় এত এত মানুষ অভুক্ত, শিশুদেরও অনাহারে মৃত্যু হচ্ছে কিন্তু তবুও ইজরায়েলি হামলার কথা উল্লেখ করা হয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনে। তবে জাতিসংঘ গাজায় মানবধিকার লঙ্ঘন নিয়ে একের পর এক সতর্কবার্তা দিচ্ছে। একই ভাবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে শুধুমাত্র রাশিয়াকেই দায়ী করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, গাজায় যা হচ্ছে তা কি মানবধিকার লঙ্ঘন নয়? ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে শুধুমাত্র কি রাশিয়াই দায়ী?

More Articles