২,৯২৯ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মামলা! কী কী অভিযোগ অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে?

Anil Ambani as fraud: এর আগেও অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপির অভিযোগ উঠেছে। একাধিক ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মামলায় অনিল আম্বানি সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) উভয়ের নজরে রয়েছেন।

ফের বিপাকে রিলায়েন্স কমিউনিকেশনের প্রতিষ্ঠাতা অনিল আম্বানি। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই)-র অভিযোগের ভিত্তিতে ২৩ অগাস্ট শিল্পপতি অনিল আম্বানির মুম্বইয়ের বাসভবনে তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)। এসবিআই অভিযোগ তুলেছে, অনিল আম্বানি এবং তাঁর পুরনো টেলিকম কোম্পানি রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস ঋণের শর্ত ভেঙে লেনদেন করেছিলেন। এতে ব্যাঙ্কের অর্থের ‘অপব্যবহার’ হয় বলে অভিযোগ। এখন ২,৯২৯.০৫ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অভিযোগ তোলা হয়েছে।

এই মামলার পর ২৩ অগাস্ট রিলায়েন্সের অধীনে থাকা বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সিবিআই। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বিস্তারিত তদন্তের’ মাধ্যমে এসবিআইয়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। তবে এসবিআইয়ের অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন অনিলের মুখপাত্র। তাঁর কথায়, স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া যে অভিযোগ তুলছে তা ১০ বছরেরও আগের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত। সে সময় রিলায়েন্স-এর নিত্যদিনের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না অনিল আম্বানি।’

এর আগেও অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপির অভিযোগ উঠেছে। একাধিক ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মামলায় অনিল আম্বানি সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) উভয়ের নজরে রয়েছেন। দেখে নেওয়া যাক, অনিল আম্বানি ও তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ?

আরও পড়ুন- অনৈতিক মন্ত্রীদের সরাতে বিল! বিজেপির এই নেতারা নৈতিকতার পথে হেঁটেছেন?

আগেই এই শিল্পপতির বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক এফআইআর দায়ের হওয়ার পর ইডি তল্লাশি চালিয়েছিল। ২৪ জুলাই সকালে দিল্লি, মুম্বাই-সহ মোট ৩৫ টিরও বেশি দফতর ও আরও কিছু স্থানে হানা দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ২৩ জুলাই স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস এবং সংস্থাটির প্রোমোটার-ডিরেক্টর অনিল আম্বানিকে ‘প্রতারক’ বলে দাবি করেছিল। অভিযোগ ওঠে, অনিলের সংস্থা রিল্যায়েন্স গ্রুপ বা রাগা আর্থিক তছরুপ করেছে। এসবিআই আগেও ২০২০ সালের নভেম্বরে অনিল আম্বানি ও তাঁর সংস্থা রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স-কে প্রতারক বলেছিল। ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি সিবিআইয়ের কাছেও অভিযোগ করেছিল এসবিআই।

ইডির অভিযোগ ছিল, বিপুল ঋণ পেতে এই সংস্থা ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ কর্তাদের ঘুষ দিয়েছিল। এমনকি ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বেসরকারি ইয়েস ব্যাঙ্ক অনিলের সংস্থা ‘রাগা’ গোষ্ঠীর বিভিন্ন কোম্পানিকে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছিল ইডি। এর বিনিময়ে নাকি ইয়েস ব্যাঙ্কের তৎকালীন কর্মীরা ব্যক্তিগত লাভ পেয়েছিল। ইডি দাবি করেছে, এটি একটি ‘দেওয়া-নেওয়া চুক্তি’ বা ‘কুইড প্রো কো’।

ইডির তদন্তে উঠে এসেছিল, একাধিক সংস্থার খোঁজখবর না নিয়েই ঋণের শর্ত ভেঙে অর্থ দেওয়া হয়েছে। সংস্থাগুলির আর্থিক পরিস্থিতি কেমন তা যাচাই করা হয়নি। এমন বহু সংস্থা ঋণ পেয়েছে যারা আর্থিকভাবে দুর্বল। দেখা গিয়েছে, একাধিক  সংস্থার পরিচালক একজনই। অনেক ক্ষেত্রে সামান্য নথিও দেখা হয়নি। ঋণের টাকা বিভিন্ন ভাবে শেল কোম্পানিতেও পাঠানো হয়েছিল। আবার পুরনো ঋণ মেটাতে নতুন করে ঋণ নেওয়া হয়েছিল।

তাছাড়া সেবি-র রিপোর্টেও রিলায়েন্স হোম ফিন্যান্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ সামনে এসেছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ সালে ওই সংস্থার ঋণ ছিল ৩ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা, তা ২০১৮-১৯ সালে হয় ৮ হাজার ৬৭০ কোটি।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে এরিকসন মামলায় ৪৫৮.৭৭ কোটি টাকা জরিমানা দিতে ব্যর্থ হন অনিল। তখন জেলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে অনিল আম্বানির বড় ভাই শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি তাঁকে বাঁচায়।

আবার রাফাল যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রেও অনিল আম্বানিকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। প্রথমে কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল হ্যাল-এর। হ্যাল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনিল আম্বানিকে সেই বরাত পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। ২০১৮ সালে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ তুলেছিলেন, মোদি সরকারের নির্দেশেই হ্যাল-কে বঞ্চিত করে অনিল আম্বানির সংস্থার সঙ্গে অফসেট চুক্তি করেছিল দাসো-র। কয়েক হাজার কোটি টাকার বরাত বিনা টেন্ডারে অনিল আম্বানির সংস্থাকে দিয়েছিল কেন্দ্র। তাঁর দাবি ছিল, হ্যাল-কে এই বরাত দিলে আয় হত। রাহুলের অভিযোগ, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ৫২৬ কোটি টাকায় রাফাল কিনবে কিন্তু দেখা যায় তা ১,৬০০ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে।

আরও পড়ুন- উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ঘোষণা এনডিএ-র! কেন রাধাকৃষ্ণণকে বাছল বিজেপি?

হ্যাল-এর প্রাক্তন প্রধান সুবর্ণ রাজুও বলেছিলেন, হ্যাল রাফাল বানাতে পুরোপুরি সক্ষম ছিল। কিন্তু নির্মলা সীতারামন যুক্তি দিয়েছিলেন, হ্যাল নাকি এই যুদ্ধ বিমান গড়ে তুলতে অনেক সময় নিত। তার জন্যেই নাকি চুক্তি মানা সম্ভব হয়নি। কংগ্রেসের রাফাল কমিটির প্রধান জয়পাল রেড্ডির দাবি, 'রাফাল নিয়ে যা দুর্নীতি হয়েছে তাতে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে হ্যাল-এর। এতে কর্মীরা রোজগার হারিয়েছেন। ইউপিএ-র সময়ের চুক্তি মেনে চললে কর্মীদের রোজগার হত।'

এখন অনিল আম্বানির তিনটি সংস্থা- রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স, রিলায়েন্স ক্যাপিটাল, রিলায়েন্স ইনফাস্ট্রাকচার দেউলিয়ার পথে। রিলায়েন্স হোম ফাইনান্স-কে ৬ মাসের জন্য শেয়ারবাজারে থেকে নিষিদ্ধও করা হয়েছিল। এবং জরিমানা করা হয়েছিল ৬ লক্ষ টাকা। সে সময় সেবি নির্দেশ দেয়, আগামী ৫ বছর সেবি-র তালিকাভূক্ত কোনো সংস্থার ডিরেক্টর বা পরিচালনা সংক্রান্ত পদে থাকতে পারবেন না অনিল। সেবি-র রিপোর্টেও বলা ছিল, অনিল ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম করেছে। গুরুত্বপূর্ণ হল, যখন রাফাল বিতর্কে কোণঠাসা ছিল অনিল, ঠিক সেই সময়ই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্যে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ৬৪৮ কোটি টাকার বরাত পেয়েছিল তাঁর সংস্থা। অন্যদিকে, সেই সময় শীর্ষ আদালতেরও নির্দেশ ছিল, এরিকসন-কে ১ মাসের মধ্যে ৪০০ কোটি টাকা দিতে হবে। আদালতের নির্দেশের পরও পাওনা মেটায়নি সংস্থা। তারপর ফের আদালত অবমাননার মামলা করেছিল এরিকসন। তবুও এই পরিস্থিতির মধ্যে গুজরাটে বিমানবন্দর তৈরির বরাত পেয়ে গিয়েছিল রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার।

প্রশ্ন উঠছে, কেন বারে বারে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠছে অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে?

More Articles