সেই ঘুমভাঙানিয়া ভালোবাসার ট্রামগাড়িটা...
Nostalgia of Kolkata Tram: কলকাতায় আমার ভালোবাসার ট্রামকার্ডগুলো আসলে আমার জন্য কোনওদিন দাঁড়িয়ে অপেক্ষাই করেনি। দৌড়ে গিয়ে পাদানিতে পা ফেলতে হয়েছে আমাকেই।
আমার প্রথম ট্রামে চড়ার স্মৃতি সেই কুঁড়ি বয়সে বাবার সঙ্গে। শহরতলিতে বড় হয়ে ওঠা আমি বাবার হাত ধরে কলেজ স্ট্রিট যাচ্ছিলাম। শিয়ালদহ স্টেশন পেরিয়ে হাঁটছি, হঠাৎ পিছন থেকে মৃদু ঘণ্টির আওয়াজ পেয়ে বাবা আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলেছিল ‘ঐ যে ট্রাম আসছে, চল উঠে পড়ি’। ব্যাপার কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবার হাত ধরে কিছুটা দৌড়ে,কিছুটা শূন্যে উড়ে আর অনেকটা পোলভল্টে লাফানোর কায়দায় ছিটকে গিয়ে পড়েছিলাম ট্রামের ভিতরে। কোনওরকমে সিটে বসে সবার প্রথম বাবাকে প্রশ্ন ছুঁড়েছিলাম ‘বাবাই এই ট্রামটা স্টপেজে দাঁড়ায় না?’ বৌবাজারে বড় হয়ে ওঠা আমার অভিজ্ঞ বাবা মুচকি হেসে বলেছিলেন, ‘দাঁড়ানোর দরকার পড়ে না।’
যদিও আমি যে বয়সে প্রথম ট্রামে চড়েছি, তা নিতান্ত মুখ্যু বয়স নয়। কিন্তু কলকাতার ট্রামের গল্প আমার ঠাকুমার মুখে যখন শোনা শুরু করি তখনও আমার জ্ঞান হয়নি। আমার ঠাকুমার ভাঁড়ার ভর্তি ছিল শিয়ালদহ উদ্বাস্তু কলোনির গল্পমালায়। উত্তর কলকাতা বলতে আমার প্রথম যে শব্দগুলো আজও মনে পড়ে, তার মধ্যে অন্যতম রাজপথের সরু লাইন দিয়ে ছুটে চলা ভোর চারটের প্রথম ট্রাম। যেই ট্রামের ঘণ্টির আওয়াজ আর কর্পোরেশনের জল আসার সময় ছিল এক। তাই প্রথম ট্রাম চলা শুরু হলেই জেগে উঠতো বৃহত্তর শিয়ালদা। লাইন দিত খাবার জলের কলের সামনে।
আরও পড়ুন: বিদায় ঘণ্টা ট্রামের! শহরে আর চলবে না ঐতিহ্যবাহী ট্রাম, শেষ কথা রাজ্যের
কলকাতায় থাকাকালীন ট্রাম আমার জীবনে ফিরে ফিরে এসেছে এক একটা মাইলস্টোনের মতো। তখন বড় হয়েছি। বেলঘরিয়া থেকে যাদবপুর নিত্য ট্রেনজার্নি করি। বন্ধুদের মধ্যে কেউ আসে আগরপাড়া কেউ বা দমদম থেকে। একদিন হঠাৎই শিয়ালদহ নেমে শুনলাম ট্রেনের গণ্ডগোল। সাউথের লাইন বন্ধ। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সেদিন বোধহয় আমাদের পরীক্ষা ছিল। যেতে হবেই। এদিকে রাস্তায় বিপুল ট্রাফিক। পৌঁছতে তো অনেক দেরি হয়ে যাবে! এক বন্ধু বলল, ‘কুছ পরোয়া নেই, দেরি যখন হবেই তখন ট্রামে করেই যাবো।’ শিয়ালদহ থেকে বালিগঞ্জ, তারপর বাস। সেই বন্ধুদের সাথে আমার দ্বিতীয় বার ট্রামে চড়া। এবার আর হাত ধরে কেউ তুলে দেয়নি। পিঠের ব্যাগটাকে সামনে নিয়ে চেপে ধরে কিছুটা দৌড়ে একটা ছোট্ট লাফে উঠে পড়েছিলাম ট্রামের পাদানিতে। সিটে বসতে বসতে বিড়বিড় করেছিলাম— ট্রামটা আজও দাঁড়ালো না। রোজকার শহরে কাজের মাঝে আমরা যেমন ইচ্ছে করে ঝিমিয়ে পড়ি, ঢিলে দিই— আমাদের শহরের ট্রামগুলোও তেমন। স্টপেজ এলেই ঢিলে দেবে, থামবে না মোটেই। আর তাই কলকাতার মানুষেরাও স্টপেজের তোয়াক্কা করবে না আর, দূর থেকে ট্রাম আসতে দেখে হালকা হাত নাড়িয়ে দৌড়ে উঠে পড়বে। আমার স্মৃতিতে ট্রামজার্নিগুলো এইভাবে কলকাতার সাথে মিলেমিশে এক হয়ে গেছে।
মাইলস্টোনের প্রথম ধাপ যদি হয় অ্যাডাল্টহুড, তাহলে পরের ধাপ অবশ্যই প্রেম। আমার ক্ষেত্রেও তৃতীয়বারের ট্রাম জার্নিটা হয়েছিল আমার প্রেমিকের সাথে আবারও সেই কলেজ স্ট্রিটের পথেই। মফস্বলের ছেলে কোনওদিনও ট্রামে চড়েনি শুনে অবাক লেগেছিলো। বলেছিলাম— ‘চলো আজই তোমাকে ট্রামে চড়াবো।’সেইমতো আবার দৌড়ে একে অপরের হাত ধরে উঠে বসেছিলাম ট্রামে। ততদিনে শিয়ালদহের রানিং লোকালে চড়তে অভ্যস্ত আমার পা সহজেই ধরে ফেলেছিলো ট্রামের পাদানি। মনে মনে হেসেছিলাম— ‘যাহঃ, তুই দাঁড়াবি না তো আমার বয়েই গেল। দৌড়ে ট্রেনের রড ধরে নিতে শিখে গেছি আমি।’
কাট টু ২০২২। করোনার অন্তিম বেলা। আমার ফিনল্যান্ডে আসা। হেলথকেয়ারে পড়ব বলে ঢুকলাম হেলসিঙ্কির একটি ইউনিভার্সিটিতে। ততদিনে জানি ফিনল্যান্ডের মতো ইউরোপের বেশ কিছু শহরে ট্রাম চলে, বেশ রমরমিয়ে চলে। আমি যে স্টুডেন্ট অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে শুরু করলাম তার পাশেই ট্রাম স্টেশন। ইউরোপের রাজধানী শহরগুলোতে লোকাল যানবাহন চলাচল খুব ভালো। যেখানেই যাওয়ার থাক না কেন, কমিউট ঠিক হাজির। আমার ইউনিভার্সিটি যাওয়ার জন্য বাস বা ট্রাম যে কোনও একটা ধরলেই হয়। কেন জানি না প্রতিদিন আমি পনেরো মিনিট বেশি সময় নিয়ে দু'টো ট্রাম পরিবর্তন করে ইউনিভার্সিটি যেতাম। হেলসিঙ্কি আসার আগে ট্রামের প্রতি নস্টালজিয়া ছিল, এখানে আসার পর প্রথম ভালোবাসা অনুভব করলাম। লোকাল ট্রেনে যেখানে যেতে সময় লাগবে পাঁচ মিনিট, সেখানে ট্রামে করে তিরিশ মিনিট ধরে পুরো শহর ঘুরে পৌঁছাই শহরের কেন্দ্রস্থলে। শহরজুড়ে মানুষ দেখতে দেখতে, দোকানবাজার দেখতে দেখতে কখন যে চলে আসে গন্তব্যস্থল বুঝতেই পারি না। আমাদের ট্রাম, বাস, লোকাল ট্রেন সবকিছুর জন্য একসঙ্গে মাসিক টিকিট কাটার ব্যবস্থা আছে। এটা প্রায় গোটা ইউরোপের সর্বত্রই আছে। সেখানে পড়ুয়াদের আবার আলাদা ডিসকাউন্ট।
ট্রামের নেশা আমাকে এমনই জড়িয়ে ধরল তারপর থেকে, যে পাশের দোকানে বা শপিং মলেও যেতাম ট্রামে চেপেই। এই প্রথম ট্রাম স্টেশন থেকে আমার ট্রামে চড়া শুরু। হাত দেখালে দাঁড়িয়ে যাবে ট্রাম। এয়ারটাইট ট্রামের দরজা খুলবে মেট্রোর মতো। তারপর লোক উঠে গেলে আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যাবে। আমার ট্রামজার্নি আরও বাড়ল, যখন হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ শুরু করলাম। প্রতিদিন সকাল ৬.৩০-র ট্রামে উঠতাম আমি এবং আমার সঙ্গে আরও অনেকে। তাঁরাও আমার মতো নিত্যযাত্রী সব। নতুন ট্রামলাইন তৈরি নিয়ে আমার আনন্দ ছিল বন্ধুদের মধ্যে সবথেকে বেশি। এই বছর আমাদের ইউনিভার্সিটির সঙ্গে সরাসরি ট্রাম কানেকশন শুরু করেছে সরকার। আমার আনন্দ আর দেখে কে! সবার প্রথম সেই ট্রামে চড়তে পারার আনন্দই আলাদা। প্যারিসে বেড়াতে যাওয়ার সময় ট্রামে করে স্টেশন যাব, তারপর সেখান থেকে ট্রেনে করে এয়ারপোর্ট। সেই হুজুগে ফ্লাইট মিস হয় আর কী! প্রেমিককে বলছি, ‘একটু দাঁড়িয়ে যাও এই তো ট্রাম এসে পড়বে। ঠিক পৌঁছে যাব।’
আমার ট্রামের প্রতি ভালোবাসা সেই কলেজজীবনে প্রেমিকের প্রতি ভালোবাসার মতো। জেগে আছে বুকের ভিতর। জেগে থাকবে আজীবন। সেই কলেজ স্ট্রিটে মফস্বলের ছেলেটিকে জোর করে যেভাবে ট্রামে চড়িয়েছিলাম, আজও তাকে প্রায় ধরে বেঁধে ট্রামে চড়িয়ে চলেছি- ফিনল্যান্ডে এবং ইউরোপের আরও নানান শহরে।
এরপর জাহাজে চেপে প্রথম আমার অন্য দেশে যাওয়া। মাত্র আড়াই ঘন্টায় এস্তোনিয়ার রাজধানী তালিন শহরে পৌঁছে দেখেছিলাম সেখানে ট্রাম হাজির। ইউরোপের তিন কামরার এই ট্রামগুলোর মজা হল তার খাঁচার রঙিন আবরণ। নানান বিজ্ঞাপন কিংবা নির্দিষ্ট রঙে ঔজ্জ্বল্য ছড়ায় এরা। প্রাইড-এর সপ্তাহে প্রাইড কালার মাস্ট! আমাদের স্ক্যান্ডেনেভিয়া-সহ আরও বেশ কিছু জায়গায় শীতকালে রাত লম্বা। সেক্ষেত্রে ট্রামের উজ্জ্বল রং পথচারীদের সজাগ করে। তবে সবথেকে ভয়াবহ সময় আসে যখন রাস্তা ঢেকে যায় বরফের চাদরে। সাদা বরফের মাঝে রাস্তা পরিষ্কারের জন্য ভোরবেলায় বেরোয় ঝাড়ুদার ট্রাম। এক কামরার এই ট্রামের সামনে এবং সাইডে যুক্ত করা থাকে বরফ সরানোর মতো ছোট ছোট ঝাড়ু। কখনো কখনো তালিন বা স্ক্যান্ডেনেভিয়ার কিছু জায়গায় এতটাই বরফপাত হয় যে অতিরিক্ত ট্র্যাফিক পরিবৃত অঞ্চলে যানবাহনের চাকা স্কিট করে। ঘটে অ্যাক্সিডেন্ট। একবার মনে আছে, ৩১ ডিসেম্বর একটা কনসার্ট দেখে বেশ রাত করে বাড়ি ফিরছি, চোখের সামনে একই রাস্তায় চলতে থাকা একটি বাস স্কিট করে সজোরে এসে ধাক্কা মেরেছিলো আমাদের ট্রামে। ব্যাস! রাস্তা বন্ধ। ট্রাম সরে গেছে লাইন থেকে। সব যাত্রীরা নেমে রাত বারোটার শীতে কাঁপছি খোলা আকাশের তলায়।
তালিনে ট্রামে চড়ার অভিজ্ঞতা একবার বা দু'বার, কিন্তু সুইডেনে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় ভ্রমণের জন্য ট্রাম খুব কাজে দিয়েছিলো। ইউরোপের শহরগুলিতে ট্রাম লাইন এমনভাবেই বিস্তৃত যাতে প্রায় সমস্ত প্রয়োজনীয় জায়গা কভার করে। প্যারিসের মতো বড় শহরগুলিতে যদিও মেট্রো বেশি জনপ্রিয় তার দ্রুতগতির জন্য। যদিও মেট্রোর পাশাপাশি ট্রামেও যাতায়াত করে সাধারণ মানুষ। তবে স্বাভাবিকভাবেই ট্রাম গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে সময় বেশি নেওয়ায় নিত্য অফিসযাত্রীরা তেমন একটা ট্রামে চড়ে না। আমাদেরও প্যারিসে ট্রাম চড়া স্রেফ চড়ব বলেই। তুলনায় ফিনল্যান্ডে ট্রাম কিন্তু এমন সব জায়গায় পৌঁছয় যেখানে মেট্রোর যাতায়াত নেই। ফলত মানুষ বাধ্য ট্রামে উঠতে। ফিনল্যান্ডের তাম্পেরে শহর এবং হেলসিঙ্কির কাছে এস্পো শহরের ট্রামে রয়েছে আরেক মজা। এই ট্রামগুলো কিছুটা পথ পেরিয়ে লাইটরেলে রূপান্তরিত হয়ে যায়। তৈরি আছে ছোট রেলট্র্যাক। এই রেলট্র্যাকে প্রবেশ করার সাথে সাথে গতি বাড়িয়ে দেয় ট্রাম। ধীরগতির ট্রামকে নিত্যযাত্রীরা যখন ব্রাত্য করছিলো তখন সরকার এই নতুন ধরণের ট্রামগুলিকে পথে নামায়। সাথে সাথে জনপ্রিয়ও হয়। তাছাড়া বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে ট্রামবার বা চলমান সরাইখানা। ট্রামের ভিতর আস্ত সরাইখানা। উঠে পড়লে একটা বিয়ার নিয়ে বসে শহর ঘোরা যেতেই পারে। এই ট্রামগুলো কিন্তু নিত্যযাত্রীদের জন্য নয় আবার অফিস থেকে ফেরার পথে বিয়ার খেতে খেতে ফিরতে চাইলে ওঠাই যায়। সারা শহর ঘুরে বেড়ায় এই ট্রাম। কার্যত বাড়ির সামনের স্টপেজে নেমে গেলেই হল।
এরপর এলাম ইংল্যান্ড। আমাদের কলকাতার ট্রাম কোম্পানির (The Calcutta Tramways company, ১৮৮০) জন্ম যাদের হাত ধরে, যাদের অনুকরণে সেই লন্ডনে এসে পৌঁছলাম পড়াশোনার কাজে। থাকব তিনমাস। বন্ধুকে বললাম, ‘ট্রামে চড়ব ভাই। তোকেও চড়াবো।’ আমি লোকজনকে জোর করে ট্রামে চড়িয়ে থাকি। যাদবপুরের বন্ধু হেসে বলল, ‘লন্ডনে ট্রাম কোথায়? সবই তো লাইট রেল। ওই সাউথে আছে টিএফএল ট্রাম লিঙ্ক। তবে অন্য সব শহর যেমন বার্মিংহাম, এডিনবরাতে ট্রাম আছে, ওরা যদিও নাম দিয়েছে মেট্রো।’ আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘ওমা লন্ডনের আদলেই তো আমাদের ট্রাম তৈরি। সেই ঘোড়ায় টানা ট্রাম। লন্ডনের ট্রাম বন্ধ হয়ে গেল কেন?’ জানলাম লন্ডনের এক্সেসিভ গাড়ি আর সরু রাস্তার জন্য সরকার বাধ্য হয়েছে ট্রাম নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিতে।
আরও পড়ুন: মৃত্যুপথযাত্রী ট্রাম, ১৪৯ বছর বাঙালির ওঠাপড়া ভাঙাগড়ার সাক্ষী যে যান
একইভাবে কলকাতায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ট্রাম। আমার জীবনের মাইলস্টোন আর ট্রামের গল্পগুলো স্মৃতিতে থেকে যাবে। জীবনের নতুন অধ্যায়ের নতুন মাইলস্টোনগুলোতে আজও আমার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে ট্রামলাইন আর শহরের বুক চিরে তৈরি হতে থাকা অজানা রূপকথারা। শুধু এখন আর দৌড়ে ট্রামে উঠতে হয় না। কলকাতার এসি ট্রামে চড়ার সুযোগ হয়নি, তাই কোনওদিনও ট্রাম-স্টপেজ খোঁজার দায় পড়েনি আমার আর। কলকাতায় আমার ভালোবাসার ট্রামকার্ডগুলো আসলে আমার জন্য কোনওদিন দাঁড়িয়ে অপেক্ষাই করেনি। দৌড়ে গিয়ে পাদানিতে পা ফেলতে হয়েছে আমাকেই। দক্ষ হয়েছি আস্তে আস্তে। কলকাতার সরু রাস্তা, ট্রাফিক জ্যাম, হাজারো গাড়ির মাঝে দৌড়ে চলা আমার ট্রামগুলো ধীরে ধীরে উড়তে শিখেছে। আমরা একসঙ্গে উড়ে এসেছি ফিনল্যান্ডে। ইউরোপের নির্জন ট্রাম স্টপেজে আজকাল রোজ হাত নেড়ে আমি দাঁড় করাই আমার কলেজস্ট্রিটগামী ঘণ্টিবাজানো লালচে কাঠের ট্রামগাড়িটাকে। সেই শিয়ালদার উদ্বাস্তু কলোনির ঘুম ভাঙানিয়া ট্রামগাড়িটা, আমার পঁচাশি বছরের ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ঠাকুমার ভুলতে না পারা ট্রামগাড়িটা, আমার যাপনের অন্তরালে বয়ে চলা চোরাস্রোতের মতো রিনরিনে ভালোবাসার সেই চেনা ট্রামগাড়িটা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। আমি আলগোছে বলি- ‘আমাকে ছেড়ে দৌড় দিও না আর, আমিও তো বুড়ো হচ্ছি নাকি!’