বেগম খালেদা জিয়া: বাংলাদেশের ঐক্যের শেষ প্রতীক

Khaleda Zia death: বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন অনেকে। কিন্তু সবচেয়ে ধারাবাহিকভাবে শিকার হয়েছেন খালেদা জিয়া। কারণ স্পষ্ট, তিনি এমন একজন নেত্রী যার উপস্থিতি একাই ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দিতে পারত।

 

“সরকারি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতা, নির্বাচন বর্জন, লাভজনক পদ প্রত্যাখ্যান কিংবা কারাবরণ—এসবই ব্যক্তিগত ত্যাগের নিদর্শন হিসেবে মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করে।”

না, আমি নেলসন ম্যান্ডেলার কথা বলছি না। আমি বলছি বাংলাদেশের ঐক্যের প্রতীক খালেদা জিয়ার কথা।

অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এই কথাটি  উদ্ধৃত করেছিলেন শেখ হাসিনার সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, যা বোঝায় রাজনৈতিক মেরুকরণের বাংলাদেশেও তাঁর প্রতি সম্মান সবসময়ই অটুট ছিল।

খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট  বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় দিনাজপুরেই। ১৯৬০ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই বৈবাহিক জীবন তাঁকে শুধু গৃহিণী নয়, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণী হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হয়।

তাঁর জীবনে কেবল লড়াই। কোন ঘটনা দিয়ে শুরু করি?

১৯৭১ সালে যখন স্বামী যুদ্ধে, সন্তানসহ খালেদা জিয়া তখন বাংলাদেশে এক দেশদ্রোহীর পরিবারের সদস্য হিসেবে বন্দি। মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তি মাথায় নিয়ে ঘুরছে পুরো পরিবার। পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সঙ্গীরা বারবার হুমকি দিত, “জিয়াকে ধরিয়ে দাও, নইলে পুরো পরিবারকে শেষ করে দেব।” খালেদা জিয়া কখনও ভেঙে পড়েননি। তাঁর সেই নীরব প্রতিরোধই পরবর্তীতে বাংলাদেশের নারীদের জন্য এক অলিখিত সাহসের দলিল হয়ে আছে।

নাকি ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর। যখন খালেদ মোশাররফ তুলে নিয়ে গেলেন। ৭ তারিখের আগে পর্যন্ত কোনো খবর কেউ জানে না।

আরও পড়ুন- বেগম খালেদা জিয়া: গণতন্ত্রের এক নিঃসঙ্গ শেরপা

নাকি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর, যখন  ১৯৮১ সালে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসেন। এটি ছিল পরিস্থিতির চাপ, কিন্তু পরবর্তী সময় প্রমাণ করেছে তাঁর রাজনীতিতে উঠে আসা কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে দুই কিশোর ছেলেকে নিয়ে তিনি যখন বিএনপির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নেন, তখন দেশ দেখেছিল এক নতুন খালেদা জিয়াকে যিনি শুধু জিয়ার বিধবা নন, জিয়ার উত্তরাধিকারের যোগ্য সৈনিক। তিনি রাজনীতিতে এসেছেন সংগ্রাম করে, দল ধরে রেখে, এবং এক সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক নেতৃত্ব দিয়ে।

১৯৮৪ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত এরশাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনে তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় মুখ। গৃহবন্দিত্ব, দমন-পীড়ন, রক্তপাত কিছুই তাঁর মনোবল ভাঙতে পারেনি। বরং এই লড়াই তাঁকে একজন আপসহীন নেত্রী-তে পরিণত করেছে। শেষ পর্যন্ত তিনি সামরিক শাসককে বিদায় করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের ঐতিহাসিক রায়ে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগ করলে পুরো ঢাকা শহরে যে জনসমুদ্র নেমেছিল, তার মধ্যে একটি স্লোগান সবচেয়ে বেশি শোনা গিয়েছিল,

“খালেদা জিয়ার জয়যাত্রা, গণতন্ত্রের মুক্তি পতাকা”

সেই দৃশ্য দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অক্ষ, আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি যে ভারসাম্যে দাঁড়িয়ে ছিলো, তার মূল কেন্দ্র খালেদা জিয়া। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রবর্তন, যা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। শেখ হাসিনা নিজেও ২০০৮-এর আগে এই সংস্কৃতির সুফল পেয়েছিলেন। আজ যখন সেই সংস্কৃতি ভেঙে ফেলা হয়েছে, তখনই মানুষ বুঝতে পারছে খালেদা জিয়া কত বড় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ছিলেন। ২০১১ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা হয়, তখন খালেদা জিয়া বলেছিলেন,

“এটা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক”

পরবর্তীকালে তাঁর সেই ভবিষ্যতবানী জাতির জন্য নির্মম সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্বকে তিনভাবে ব্যাখ্যা করা যায়—

১. নারী নেতৃত্বের পথিকৃৎ- দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ক্ষমতায় যাওয়া নারী নেত্রীর নজির খুব কম। তিনি সেই বিরলদের একজন।

২. গণমুখী রাজনীতির ভাষা তৈরি- সাধারণ মানুষের ভাষায় রাজনীতি ব্যাখ্যা করা, সার্বভৌমত্ব-নিরাপত্তাকে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে আনা—এ কাজটি তিনি ধারাবাহিকভাবে করেছেন।

৩. দুই-দলীয় রাজনৈতিক ভারসাম্যের কেন্দ্রবিন্দু- বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র টিকে থাকার যে কাঠামো, তাঁর বড় অংশ তৈরি হয়েছে তাঁর রাজনৈতিক উপস্থিতির কারণে।

তাঁর দুই মেয়াদকালে সাক্ষরতা বৃদ্ধি, অর্থনীতি উন্মুক্তকরণ, ব্যবসা বান্ধব কাঠামো, শিল্প সম্প্রসারণ, এসব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। তাঁর সময়ে গ্রামীণ উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। নারী শিক্ষা অবৈতনিক করার মাধ্যমে নারী শিক্ষা প্রসারে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম। ক্ষুদ্রঋণ, নারী শিক্ষার প্রসার এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে তাঁর সরকারের নীতি আজও আলোচিত। ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে বাংলাদেশ তখন ছিল ৬৫তম, যা আজ নেমে এসেছে ১৬৮তম-তে।

সমালোচনার জায়গায় দুর্নীতির সূচক, হাওয়া ভবন বিতর্ক বা সন্ত্রাসবাদের উত্থান আলোচিত হলেও, দুর্নীতির সূচক আগের আওয়ামী লীগের সময়ের ধারাবাহিকতা। যা থেকে তাঁর সময়েই বাংলাদেশ বের হয়ে আসে।  তাঁর আমলে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং জঙ্গি দমন ও সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানো হয়। তাঁর সময়েই অনেক উচ্চ প্রোফাইল জঙ্গি নেতা গ্রেফতার হয়, যা রাষ্ট্রে সন্ত্রাসের বিস্তার রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

আরও পড়ুন - প্রয়াত বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া

বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন অনেকে। কিন্তু সবচেয়ে ধারাবাহিকভাবে শিকার হয়েছেন খালেদা জিয়া। কারণ স্পষ্ট, তিনি এমন একজন নেত্রী যার উপস্থিতি একাই ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দিতে পারত। ২০০৮ সালের পর তাঁর বিরুদ্ধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে— বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, র‍্যাব-পুলিশ-সেনা দিয়ে বাড়ি ঘেরাও, আদালতে শুনানি অপেক্ষমান থাকা অবস্থায় আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে না দেওয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা, বিদেশে চিকিৎসা বন্ধ, তাঁর দুই ছেলেকে লক্ষ্য করে অপারেশন, এক ছেলের বিদেশেই মৃত্যু, যে খবরও তাঁকে ঠিক সময়ে দেওয়া হয়নি। এসব মোটেই রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নয়; ছিল ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা।

২০১৮ সালের মামলায় তাঁকে যেভাবে শাস্তি দেওয়া হয়, তা আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। মানবিক কারণে জামিন না দেওয়া, বিদেশে চিকিৎসা অস্বীকার—  এসব বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় যখন তাঁকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল ৭৩। আদালত কক্ষ থেকে সোজা পুরনো কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন থেকে শুরু হয় এক নতুন প্রতিহিংসার অধ্যায়—যেখানে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে “বি-গ্রেড” কয়েদি হিসেবে রাখা হয়েছিল, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল, এমনকি তাঁর ছেলের মৃত্যুর খবরও তাঁকে সঠিক সময়ে দেওয়া হয়নি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল-এর মতো সংস্থাগুলো তাঁর কারাবন্দি অবস্থা, চিকিৎসার সুযোগ সীমিতকরণ ও আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাঁর দীর্ঘ কারাবাস ও জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকি আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত ও সমালোচিত বিষয়।

২০২২ সাল থেকে তিনি সিসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কারামুক্তির পর উন্নত চিকিৎসায় কিছুটা স্থিতিশীল হলেও তিনি ভেন্টিলেশন সাপোর্টে ছিলেন।

তার নেতৃত্বকালে সুখ সূচকে বাংলাদেশ ছিল ৪৬তম যা এখন  ১৩৪তম, যা আজ অতীতের স্মৃতি।

তিনি বিদেশী আধিপত্যের ঝুঁকি নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন, নতুন প্রজন্ম এখন সেটিকে নতুন আলোয় দেখছে। বাংলাদেশ ফার্স্ট পলিসি তাঁর সময়েই শুরু হয়। নিজেদের অধিকার রক্ষায় বিশ্ব বানিজ্য সংস্থায় মামলা করতেও পিছপা হননি। এবং সেই মামলাতে জিতে বাংলাদেশে অধিকার রক্ষার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি সার্ক (SAARC) ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (OIC)-এর মতো আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করে তোলেন। তাঁর বৈদেশিক নীতি ছিল রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বকেন্দ্রিক।

বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম, কঠিনতম এবং সবচেয়ে বৈপরীত্যপূর্ণ অধ্যায়গুলোর একটি। সামরিক শাসন প্রতিরোধ করেছেন,মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, নারী নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন, অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করেছেন, দুই-দলীয় রাজনীতির ভারসাম্য গড়েছেন। 

খালেদা জিয়ার রাজনীতির মূল কথাই ছিল ‘গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও জনগণের ক্ষমতায়ন’। তিনি সবসময় বলতেন, “ক্ষমতা জনগণের, আর সরকার তার ট্রাস্টি”। তিনি একটি শক্তিশালী বিরোধী দল ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন। তাঁর সংগ্রাম, ত্যাগ ও দৃঢ়তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক ‘অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক’ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। নতুন প্রজন্ম তাঁর জীবন থেকে শেখে কীভাবে আপস না করে নীতিতে অটল থাকা যায়। তিনি শুধু একটি দলের নেত্রী নন, দেশের গণতন্ত্রের লড়াইয়ের একটি প্রাতঃস্মরণীয় অধ্যায়। খালেদা জিয়ার সংগ্রাম শুধু বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। আন্তর্জাতিক মহলেও তাঁকে গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়েছে। বিদেশি গণমাধ্যমে তাঁকে দক্ষিণ এশিয়ার বিরল নারী নেত্রী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আপসহীনভাবে লড়াই করেছেন। ইন্দিরা গান্ধী বা বেনজির ভুট্টোর মতোই তিনি নারী নেতৃত্বের এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন।

তিনি ছিলেন একমাত্র নেত্রী যিনি ক্ষমতার কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি এক মাত্র যিনি একাধিক আসনে অনেক বার দাঁড়িয়ে এখনও অপরাজিত। যার জন্য সারা দেশ দল-মত নির্বিশেষে প্রার্থনা করে। এরকম ভালোবাসা পাওয়া উপমহাদেশে ও বিরল।

তাঁর জীবন কেবল ইতিহাস নয়। এটি এক নেত্রীর অদম্য দৃঢ়তা, সহনশীলতা ও গণতন্ত্রের প্রতি অটল দায়বদ্ধতার দলিল। যখন তিনি সিসিইউ-এর বিছানায় নিঃশব্দে লড়াই করছিলেন, তখন তাঁর জন্য লাখ লাখ মানুষ প্রার্থনা করছিলেন। কারণ তারা জানে, যে নারী ১৯৭১-এ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে ভেঙে পড়েননি, ১৯৮১-তে স্বামী হারিয়ে নিঃস্ব হয়েও হাল ছাড়েননি, ১৯৯০-এ একা সামরিক শাসককে হঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেই খালেদা জিয়া একজন যোদ্ধা। তিনি লড়েছেন বাংলাদেশের গনতন্ত্রের জন্য। তিনি লড়েছেন অধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের লড়াই। যা শুরু করেছিল তাঁর স্বামী শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তার পূর্ণতা দিয়ে নিজেকে করেছেন— ঐক্যের প্রতীক।

তাঁর জীবন কেবল ইতিহাস নয়। এটি এক নেত্রীর অদম্য দৃঢ়তা, সহনশীলতা ও গণতন্ত্রের প্রতি অটল দায়বদ্ধতার দলিল। যখন তিনি সিসিইউ-এর বিছানায় নিঃশব্দে লড়াই করছিলেন, তখন তাঁর জন্য লাখো মানুষ প্রার্থনা করছিলেন। কারণ তাঁর জানে, যে নারী ১৯৭১-এ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে ভেঙে পড়েননি, ১৯৮১-এ স্বামী হারিয়ে নিঃস্ব হয়েও হাল ছাড়েননি, ১৯৯০-এ একা সামরিক শাসককে হঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেই খালেদা জিয়া লড়ছিলেন। এই লড়াই শুধু তাঁর নিজের নয়, এই দেশের গণতন্ত্রের শেষ প্রতিরোধের লড়াই। এই লড়াই শুধু নিজের জন্য না, এইটা দেশের গনতন্ত্রের জন্য এবং অধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের লড়াই। যা শুর করেছিলো তার স্বামী শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তার পূর্ণতা দিয়ে নিজেকে করেছেন- ঐক্যের প্রতীক। তাঁর নাম উচ্চারণ করলেই মানুষ গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখে। এখন পর্যন্ত একজন মানুষও পাই নি , যিনি খালেদা জিয়া ছাড়া গনতন্ত্রে উত্তরনের স্বপ্ন দেখছিলো। কিন্তু স্রষ্টা অন্য কিছু ভেবে রেখেছেন।

শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে চরম ভাবে অপমানিত করে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। স্রষ্টা চাইলে কেউই কাউকে অসম্মানিত করতে পারে না। খালেদা জিয়ার ইচ্ছে ছিল দেশেই থাকবেন, দেশের মানুষের সাথে থাকবেন। এই ইচ্ছাও স্রষ্টা পূরণ করেছেন। কিন্তু শেষইচ্ছে- শহিদ জিয়ার স্বপ্নের বাংলাদেশ, তা পূরণ করার দায়িত্ব আমাদেরই দিয়ে গেলেন।

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

More Articles