কার স্বার্থে বিপন্ন আরাবল্লী?
Aravalli Hills at Risk: আরাবল্লী পর্বতশ্রেণি সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় গুলি ভারতীয় পরিবেশ বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে এক মাইলফলক বলা যায়।
আরাবল্লী পর্বতশ্রেণি বিশ্বের প্রাচীনতম পর্বতশ্রেণি গুলির অন্যতম— যা গুজরাট, রাজস্থান, হরিয়ানা এবং দিল্লি পর্যন্ত বিস্তৃত। বাস্তুসংস্থানগতভাবে এটি ভূগর্ভস্থ জল পুনঃচার্জ (groundwater recharge), ধূলিঝড় প্রশমন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং আঞ্চলিক জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদান করে। ২০ নভেম্বর ২০২৫ প্রদত্ত এক রায়ে, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের নেতৃত্বাধীন এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রন ও এনভি আনজারিয়ার সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ কেন্দ্রের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের (MoEFCC) নেতৃত্বাধীন একটি কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় আরাবল্লী পর্বতশ্রেণির নতুন অভিন্ন আইনি সংজ্ঞা কেবল সেই সব ভূখণ্ডে সীমাবদ্ধ করেছে, যা তাদের চারপাশের সমতল ভূমি থেকে ১০০ মিটারের বেশি উঁচু। যা মূলত উচ্চতা-ভিত্তিক পরিমাপের মাধ্যমে আইনি সুরক্ষার মানদণ্ড নির্ধারণ করবে। এই নতুন সংজ্ঞা পরিবেশ কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ, প্রতিবাদ এবং রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
এই মামলাটি কতগুলো মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করে, আইনি সংজ্ঞা গুলি পরিবেশগত সুরক্ষার পরিধিকে কী ভাবে প্রভাবিত বা নির্ধারিত করে? যখন রাষ্ট্রের আইন উন্নয়নমূলক বা সম্পদ আহরণকারী স্বার্থের (extractive interests) সাথে একাত্ম হয়ে যায়, তখন তার প্রভাব কী হতে পারে? বিধিবদ্ধ আইন (statutory law) কি পুঁজি এবং পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে বিদ্যমান ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতাকে প্রশমিত করতে পারে, নাকি তা আরও বাড়িয়ে দেয়?
২০ নভেম্বর ২০২৫ সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, আরাবল্লী হিল বা রেঞ্জ আইনি ভাবে শুধুমাত্র সেই সব ভূমিভাগ হিসেবে গণ্য হবে যেটি স্থানীয় ভূমি থেকে ১০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতায় আছে এবং একই সঙ্গে একটি বিজ্ঞানসম্মত, ফলপ্রসূ খনিজ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (Sustainable Mining Plan) তৈরি হওয়া পর্যন্ত নতুন খনন অনুমোদন স্থগিত থাকবে।
এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, ১৯৯৬ সালের বিখ্যাত ‘টি. এন. গোদাবর্মন থিরুমুলপাদ বনাম ভারত সরকার’ ধারাবাহিক মামলায় সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল— সরকারি নথিতে যাই থাকুক না কেন অভিধানের সংজ্ঞা অনুযায়ী যা 'বন' (Forest), তাকে সুরক্ষা দিতেই হবে। যেখানে পুরনো অবস্থায় নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলি, ছোট‑খাতে, ঢাল, ঢিপি, জীববৈচিত্র্য-সহ সমস্ত আরাবল্লী এলাকার উপর পরিবেশ বিধান কার্যকর ছিল। কিন্তু হঠাৎ কী এমন হলো যে আরাবল্লীর ক্ষেত্রে পাহাড়ের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য রক্ষা করতে একটি আইনি সংজ্ঞার প্রয়োজন হয়ে পড়ল?
ভারতের 'গ্রিন অ্যাভেঞ্জার' (Green Avenger) বা 'পরিবেশের ত্রাণকর্তা' হিসেবে অভিহিত ভারতের একজন কিংবদন্তি জনস্বার্থ আইনজীবী এবং একনিষ্ঠ পরিবেশকর্মী এমসি মেহতার করা ধারাবাহিক মামলায় (M.C. Mehta v. Union of India) ৭ মে ২০০৪, সুপ্রিম কোর্ট হরিয়ানার আরাবল্লী অঞ্চলে (বিশেষ করে ফরিদাবাদে) পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় সমস্ত প্রকার খনন কাজ (Mining) নিষিদ্ধ করার ঐতিহাসিক রায় দেয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, আদালত রাজস্থান এবং হরিয়ানার ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় খনন কাজের উপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং 'আরাবল্লী পাহাড়' বলতে ঠিক কী বোঝায় তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ২৩ অক্টোবর ২০১৮, সুপ্রিম কোর্ট রাজস্থানের আরাবল্লী অঞ্চলে ৩১ টি পাহাড় বা টিলা অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ খনন বন্ধের নির্দেশ দেয়।
আরাবল্লী পর্বতশ্রেণিকে ঘিরে চলা নানা আইনি জটিলতা এবং প্রশাসনিক অস্পষ্টতা দূর করার জন্য গত ৯ মে ২০২৪ Uniform Definition Committee গঠনের নির্দেশ দেয় এবং কমিটিকে একটি একক এবং অভিন্ন সংজ্ঞা তৈরির নির্দেশ দেয়। আদালত এই সংজ্ঞা নির্ধারণের নির্দেশ প্রদান করেছে তিনটি কারণে— এক, বিভিন্ন রাজ্য (রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি ও গুজরাট)‑এ পরিবেশগত সংজ্ঞা ভিন্ন ছিল। দুই, খনন‑অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা ও নিয়মের ভিন্নতা পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিন, পরিবেশকে রক্ষা করতে বৈজ্ঞানিক মানদন্ডের উপর ভিত্তি করে একটি স্পষ্ট ও যুক্তিসঙ্গত নিয়ম দরকার। যদিও এম.সি. মেহতা মামলায় আদালত 'সমগ্র আরাবল্লী' রক্ষার কথা বলেছিল। এই মামলায় আদালত প্রতিষ্ঠা করে— বায়ু, জল এবং বনভূমির মতো প্রাকৃতিক সম্পদগুলি সরকারের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়; সরকার এগুলির 'ট্রাস্টি' বা রক্ষক মাত্র। জনগণের পক্ষে এগুলি রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আরাবল্লীতে অনিয়ন্ত্রিত খনন পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। পরিবেশ সুরক্ষা সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের (জীবনের অধিকার) অন্তর্ভুক্ত।
আরও পড়ুন
বিপন্ন ভারতের প্রাচীন পর্বতমালা! যেভাবে ধ্বংসের মুখে আরাবল্লী
আদালত তিনটি নীতিকে কেন্দ্র করে পরবর্তী নিরীক্ষণ জারি রাখে— Precautionary Principle, Sustainable Development, Public Trust Doctrine। পরিবেশ রক্ষায় সদর্থক ভূমিকা নিতে গিয়েও ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ শব্দটি রেখে আদালত উন্নয়নের বৈধতাকে প্রশ্নহীন রাখে। প্রশ্ন ওঠে না, এই উন্নয়ন কার জন্য? না ওঠাই স্বাভাবিক, কারণ আদালত পুঁজির বিরুদ্ধে নয়, বরং পুঁজির ‘অতিরিক্ত বিশৃঙ্খলা’র বিরুদ্ধে দুর্বল প্রতিরোধ গড়ে তুলে জনগণের চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়ার মাঝে সেফটি ভালব হিসাবে কাজ করে। আরাবল্লী পর্বতশ্রেণি সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় গুলি ভারতীয় পরিবেশ বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে এক মাইলফলক বলা যায়। কিন্তু একই সঙ্গে এগুলি পরিবেশ আইনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও উন্মোচিত করে— একদিকে পরিবেশ সুরক্ষার নৈতিক উচ্চারণ, অন্যদিকে পুঁজিবাদী উন্নয়নের কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, সীমাহীন মালিকী শোষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদের লুণ্ঠনকে বৈধতা দিতে তৎপর।
আরাবল্লী প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের নিরীক্ষণ আমাদের দেখায়— আদালত পরিবেশ রক্ষায় সতর্ক, কিন্তু সর্বশক্তিমান নয়, আইনি ভাষা যতক্ষণ পুঁজিবাদী উন্নয়নকে প্রশ্ন না করে, ততক্ষণ তা সীমিত, প্রকৃতি রক্ষা কেবল আদালতের উপর ছেড়ে দিলে তা শেষ পর্যন্ত সংজ্ঞার ফাঁদে পড়ে। কারণ আদালত রাষ্ট্রের বাইরে নয়, আইন শ্রেণি সম্পর্কের মধ্যেই কাজ করে।
আরাবল্লী একটি জীবন্ত প্রাকৃতিক ব্যবস্থা বনাম রাজনৈতিক মুনাফা ও ব্যবসার মৃগয়া ক্ষেত্র
আরাবল্লী পর্বতশ্রেণি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ভূ-গঠন। শুধু একটি প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপ নয়; এটি উত্তর-পশ্চিম ভারতের একটি জীবন্ত পরিবেশগত নিমার্ণ কাঠামো। জলচক্র, জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু ও মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জলধারণ, মরুকরণ প্রতিরোধ, বায়ু পরিশোধন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। তবুও রাষ্ট্র যখন আরাবল্লীকে মিটার ও উচ্চতার ভাষায় সংজ্ঞায়িত করে, তখন প্রকৃতি নিজেই একটি রাজনৈতিক প্রশ্নে ও প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হয়। কিন্তু পুঁজি নির্ভর দুর্বল গণতন্ত্রে আরাবল্লী একই সঙ্গে একটি রাজনৈতিক মুনাফা ও ব্যবসার মৃগয়া ক্ষেত্র, যেখানে রাষ্ট্র, পুঁজি ও আইনের পারস্পরিক সম্পর্ক স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।
রাষ্ট্র ও
পুঁজির পারস্পরিক দ্বন্দ্ব থাকলেও এক্ষেত্রে তাদের নিবিড় ঐক্য আমাদের দৃষ্টি এরায় না, প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ আরাবল্লী হয়ে ওঠে পুঁজির কাছে খনিজ ভাণ্ডার ও জমির সম্ভাবনা, রাষ্ট্রের কাছে উন্নয়ন ও রাজস্বের উৎস, কিন্তু স্থানীয় মানুষের কাছে আরাবল্লী জল, জমি ও জীবনের ভিত্তি, বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। পরিবেশ আন্দোলনের প্রচলিত ভাষ্যে রাষ্ট্রকে পরিবেশ রক্ষার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু আরাবল্লীর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাষ্ট্র কার্যত পুঁজির সহায়ক কাঠামো হিসেবে কাজ করেছে।
রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ তিনটি স্তর এখানে লক্ষণীয়— এক, নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষার নীতিগুলি এমনভাবে রূপান্তরিত করা হয়েছে যাতে খনন ও নির্মাণ 'উন্নয়নমূলক' বলে স্বীকৃতি পায়। দুই, প্রশাসনিক নীতি প্রয়োগের পক্ষপাত দুষ্টতায় অবৈধ খননের বিরুদ্ধে নজরদারি শিথিল, কিন্তু স্থানীয় মানুষের ছোটখাটো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অতি কঠোরতা পরিলক্ষিত হয়। তিন, বিচারিক ব্যাখ্যায় আদালতের নির্দেশনাকে প্রশাসনিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে সংকুচিত করা। এইভাবে রাষ্ট্র আরাবল্লী রক্ষার দায় এড়িয়ে গিয়ে পুঁজির চলাচল সহজ করেছে।
মার্কসবাদী আইনতত্ত্বে আইন কোনো স্থির নৈতিক কাঠামো নয়; এটি একটি গতিশীল শ্রেণি-উপযোগী যন্ত্র। আরাবল্লী ক্ষেত্রে আইনের ভূমিকা সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায় সেই সংজ্ঞার রাজনীতিতে। যেখানে আইনি সংজ্ঞায় পাহাড়কে নির্দিষ্ট উচ্চতা ও ঢালের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়। ফলে ছোট টিলা, প্রাকৃতিক ঢাল, বনাচ্ছাদিত নিম্নভূমি, আইনি সুরক্ষার বাইরে চলে যায়। এটি একটি আইনি কৌশল, যা প্রকৃতিকে রক্ষা নয়, বরং শোষণের জন্য প্রস্তুত করে। পরিবেশ ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে অতি যান্ত্রিকতা পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (EIA) প্রক্রিয়া পরিণত হয়— নথিভিত্তিক আনুষ্ঠানিকতায়, স্থানীয় মানুষের মতামতবর্জিত রুটিনে, আইন এখানে পরিবেশের কণ্ঠস্বর নয়, বরং পুঁজির অনুমোদনপত্র।
খনন, রিয়েল এস্টেট ও ‘উন্নয়ন’ এর নামে আরাবল্লীতে পুঁজির প্রধান আগ্রাসন ঘটে তিনটি পথে— এক, খনন শিল্পে মার্বেল, চুনাপাথর, কোয়ার্টজাইট— সবই বাজারের মূল্যবান পণ্য। পাহাড় এখানে ‘জীবন্ত ব্যবস্থা’ নয়, বরং ‘খনিজ স্তূপ’। রিয়েল এস্টেট ও অবকাঠামো নির্মাণে দিল্লি-NCR সম্প্রসারণের চাপে আরাবল্লী হয়ে ওঠে— ফার্মহাউস, বিলাসবহুল আবাসন, পর্যটন প্রকল্পের জমি লজিস্টিক ও শিল্প করিডর গড়ে তুলতে রাস্তা, করিডর, শিল্প অঞ্চল পাহাড়কে খণ্ডিত করে। এই পুঁজিবাদী আগ্রাসনের লক্ষ্য পরিবেশগত স্থায়িত্ব নয়, বরং দ্রুত মুনাফা। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গ্রামীণ কৃষক, পশুপালক, শ্রমজীবী শহুরে মানুষ (বায়ুদূষণ), ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং লাভবান হয়— খনি মালিক, নির্মাণ সংস্থা, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার, রাজনৈতিক-কর্পোরেট জোট
আরাবল্লীর প্রধান সম্পদ
আরাবল্লী প্রধান পরিচিতি উন্নত মানের মার্বেল ও গ্রাফাইটের, এই অঞ্চলে মূলত পাওয়া যায়— মার্বেল (Marble) বিশেষ করে মাকরানা (রাজস্থান) অঞ্চলের মার্বেল যা অত্যন্ত সূক্ষ্ম দানা, টেকসই ও উজ্জ্বল। চুনাপাথর (Limestone) ক্যালসিয়াম কার্বোনেট সমৃদ্ধ, সিমেন্ট ও চুন তৈরির মূল উপাদান। কোয়ার্টজাইট (Quartzite) অত্যন্ত কঠিন ও ক্ষয়রোধী, রাস্তা ও রেল নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ। গ্রানাইট (Granite) ভারী ও দীর্ঘস্থায়ী, ভবন নির্মাণ ও স্মৃতিস্তম্ভে ব্যবহৃত হয়। মাকরানা মার্বেলে তৈরি তাজমহল, রাজস্থানের দুর্গ ও হাভেলি, জৈন মন্দির (দিলওয়ারা, মাউন্ট আবু), মূর্তি খোদাই কাজ, রাজপুত ও মুঘল স্থাপত্য। ছাড়াও বিলাস বহুল ক্ষেত্রে মার্বেল স্ল্যাব, কিচেন কাউন্টার, বাথরুম, লবিতে মার্বেল ও গ্রানাইটের যতেচ্ছ ব্যবহার চলছেই। রাস্তা ও রেললাইন হাইওয়ে ও সেতুর ভিত্তি নির্মাণে কোয়ার্টজাইট ও গ্রানাইট ভাঙা পাথর রেল ব্যালাস্ট (Railway ballast) বিপুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।
এখন আধুনিক জীবন-যাপন ও চাহিদার সঙ্গে তাল রাখতে গ্রাম-গঞ্জে ও গৃহ নির্মাণে মার্বেল ও গ্রানাইটের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। বাড়তি চাহিদা মানেই অধিক মুনাফা, ভারী শিল্পে বিনিয়োগ কমে আসায় কর্পোরেট পুঁজির এখন একমাত্র লক্ষ পরিষেবা ক্ষেত্রগুলি এবং দেশের জল-জঙ্গল-খনির উপর অবাধ নিয়ন্ত্রণ। রাজস্থানের মার্বেল ও গ্রানাইট মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, চিনে রফতানি করা হয়।
শিল্প ও খনিজ সম্পদে আরাবল্লী
স্লেট ও শিস্ট (Slate & Schist) স্তরায়িত শিলা, ছাদ ও মেঝে তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ধাতব খনিজ তামা (Copper)-খেত্রী (Khetri) অঞ্চল, দস্তা (Zinc), সিসা (Lead), সামান্য পরিমাণে লোহা পাওয়া যায়। সিমেন্ট শিল্পের মূল উপাদান চুনাপাথর, উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বহু সিমেন্ট কারখানা আরাবল্লী নির্ভর, চুন (Lime) নির্মাণ, রাসায়নিক ও কৃষিতে ব্যবহৃত হয়। ধাতু শিল্পের ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক তার, ব্যাটারি, গ্যালভানাইজেশনে তামা, দস্তা, সিসা ব্যবহৃত হয় তাও পাওয়া যায় এখানে। খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকেই তামা খনন চালু আছে, হরপ্পা সভ্যতায় আরাবল্লীর তামার ব্যবহার ছিল।
আরবল্লীর অতীত ও বর্তমান
আরবল্লীর জন্ম হয়েছে আনুমানিক প্রোটেরোজোয়িক যুগে, প্রায় ১৫০০ থেকে ২৫০০ মিলিয়ন বছর আগে, পৃথিবী ছিল, তার সৃষ্টির একেবারে প্রারম্ভিক পর্বে। ভারতের উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে মাটি ফুঁড়ে উঠে দাঁড়িয়েছিল এক পাহাড়শ্রেণি, যাকে আমরা আরাবল্লী নামে জানি। এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন পর্বতশ্রেণি।
গুজরাটের হিম্মতনগর থেকে শুরু করে রাজস্থান, হরিয়ানা হয়ে দিল্লির রাইসিনা হিলস পর্যন্ত, প্রায় ৬৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পর্বতশ্রেণি। আরাবল্লী রাজস্থানকে দু’ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। একদিকে ঊষর মরু, মারওয়ারের কঠোর রুক্ষতা। অন্যদিকে পূর্ব রাজস্থানের সবুজ উর্বর ভূমি।
আরবল্লী মাঝখানে বুক চিতিয়ে না দাঁড়ালে পশ্চিমের মরুভূমি বহু আগেই পূর্ব দিক গ্রাস করত। এই কারণেই আরাবল্লীকে বলা হয় ভারতের ‘গ্রেট গ্রিন ওয়াল’। থর মরুভূমির ধূলি ঝড়ের হাত উত্তর ভারতকে রক্ষা করে চলেছে নীরবে। দিল্লি ও এনসিআরের কোটি কোটি মানুষ আজ যে বাতাস শ্বাস হিসেবে নিচ্ছেন, মাটির নিচ থেকে যে জল এখনও উঠে আসছে, তার পেছনে রয়েছে এই ৬৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ পাহাড়শ্রেণির বনভূমি ও শিলাস্তর। বিনিময়ে লোভ আর লাভের উতচকিত বাসনা পাহাড়ের অন্তরে লুকিয়ে থাকা বিপুল সম্পদ, পাথর, খনিজ আর ভবিষ্যৎ নগরায়নের সম্ভাবনাকে হস্তাগত করতে কাজে লাগানো হলো ক্ষমতার আইনি ভাষ্য। পাহাড়ের হৃদয়ে সঞ্চিত সম্পদের ভান্ডারকে নিরব দুর্বল প্রতিপক্ষ বানিয়ে মুনাফাবাজ মালিকের নগ্ন অর্থনৈতিক স্বার্থের দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো।
বিশ্বজোড়া অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষিতে ভারতীয় পুঁজিপতি শ্রেণী চটজলদি মুনাফার এরকম একটি ক্ষেত্রকে একেবারে নিজেদের করে পেতে চাইছে, যেমনটা কাশ্মীরে হয়েছে, ওড়িশায় হচ্ছে। আরাবল্লীও তাই কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় সুপ্রিম কোর্টের নিরীক্ষণ ও তার ফলাফল এক দীর্ঘ পরিকল্পনার সফল রূপায়ন।
প্রকৃতি নিজে কখনও নিরপেক্ষ নয়, তবে তাকে যেভাবে আইনে, নীতিতে ও উন্নয়নের ভাষায় উপস্থাপন করা হয়, তা প্রায়শই নিরপেক্ষতার ভান করে। মার্কস দেখিয়েছিলেন, পুঁজিবাদ প্রকৃতিকে দেখে 'মুক্ত উপহার' হিসেবে— যার মূল্য নির্ধারিত হয় না, কিন্তু শোষণ করা হয় অবিরাম।
যদিও আরাবল্লীর পাথর অর্থনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে অতিরিক্ত খননে, পাহাড় ধ্বংস, জলস্তর নেমে যাওয়া, বালু ঝড় ও মরুকরণ বৃদ্ধির মতো প্রাকৃতিক পরিবর্তন গুলি পরিবেশে তথা মানব সভ্যতার অস্তিত্বের সামনে উত্তরহীন প্রশ্ন চিহ্ন নিয়ে হাজির পাথরের ব্যবহার বনাম পাহাড়ের অস্তিত্ব। আরাবল্লী পর্বতের পাথর একদিকে ভারতীয় সভ্যতা ও শিল্পের ভিত্তি, অন্যদিকে অপরিকল্পিত খননে পরিবেশগত সংকটের উৎস। এই দ্বন্দ্বই আজকের আরাবল্লী বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।
পরিবেশবাদী, নাগরিক আন্দোলন ও রাজনীতিবিদরা বলছেন, নতুন সংজ্ঞা পরিবেশগত ভারসাম্যকে দুর্বল করতে পারে। অধিকাংশ ছোট‑খাটো ভূমি আর আইনি সুরক্ষার বাইরে চলে যেতে পারে। খনিজ, নির্মাণ ও শহুরে চাপ বাড়লে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব হবে। পরিবেশবিদ বাবুইলাল জাজু ১৯ ডিসেম্বর দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনে বলেছেন, আরাবল্লী হলো মরুভূমির বিরুদ্ধে আমাদের 'সবুজ দেওয়াল'। এর নিচু পাহাড়গুলো সুরক্ষা বলয়ের বাইরে চলে যাওয়া মানে হলো উত্তর ভারতে বালুঝড় ও মরুকরণকে আমন্ত্রণ জানানো।
২০ ডিসেম্বর দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের অনলাইন প্রতিবেদনে লেখা হয়, সংশোধিত সংজ্ঞা অনুযায়ী রাজস্থানে আরাবল্লী পর্বতশ্রেণির প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা— যা মূলত ১০০ মিটারের চেয়ে নিচু পাহাড় নিয়ে গঠিত, তা আর সংরক্ষিত পর্বতশ্রেণির অংশ হিসেবে গণ্য হবে না। তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে থাকা প্রায় ১.৬ লক্ষ পাহাড়ের (hillocks) মধ্যে মাত্র ১,০৪৮টি পাহাড় ১০০ মিটারের এই মানদণ্ড পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে পাহাড়ের বিশাল একটি অংশ কার্যত আইনি সুরক্ষার আওতা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে।
রাজস্থানের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (Central University of Rajasthan) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক লক্ষ্মীকান্ত শর্মা দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে বলেন, সরকারের এই অবস্থান—অর্থাৎ কেবল ১০০ মিটারের বেশি উঁচু পাহাড়গুলো 'আরাবল্লী' হিসেবে গণ্য হবে—এর ফলে পর্বতশ্রেণীর অধিকাংশ অংশই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ পড়ে যাবে। রাজস্থানে আরাবল্লী পাহাড় গুলোর উচ্চতা মূলত ৩০ থেকে ৮০ মিটারের মধ্যে। এর অর্থ হলো, এই পর্বতশ্রেণীর প্রায় ৯০ শতাংশই সরাসরি সরকারী (মালিকী!) হুমকির মুখে রয়েছে।
'পিপল ফর আরাবল্লী'-র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নীলম আহলুওয়ালিয়া ২০ ডিসেম্বর দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে বলেন, আদালতের সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্তের ফলে পর্বতশ্রেণির ৯০ শতাংশেরও বেশি এলাকা অরক্ষিত হয়ে পড়বে এবং খনি খননের ঝুঁকির মুখে পড়বে। আলওয়ার জেলার পরিস্থিতি বিশেষ করে আশঙ্কাজনক। তথ্য অনুযায়ী, চিহ্নিত ১২৮টি পাহাড়ের মধ্যে ৩১টি খনি খননের কারণে সম্পূর্ণ সমতল হয়ে গিয়েছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন, আরাবল্লী পর্বতশ্রেণীর বড় একটি অংশকে সুরক্ষা বলয় থেকে বাদ দেওয়া খনি মাফিয়াদের আরও উৎসাহিত করতে পারে।
আরও পড়ুন
আরাবল্লী প্রশ্নে কেন হঠাৎ সুর বদলালেন অর্ণব গোস্বামী?
'ওয়াটারম্যান অফ ইন্ডিয়া' (ভারতের জলপুরুষ) হিসেবে পরিচিত ম্যাগসেসে পুরস্কার বিজয়ী রাজেন্দ্র সিং ২০ ডিসেম্বর দ্য ইকোনমিক টাইমস-কে বলেন,
যদি কোনো একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নেওয়া এই সিদ্ধান্তটি কার্যকর করা হয়, তবে আরাবল্লীর মাত্র ৭-৮ শতাংশ রক্ষা পাবে।
অধিকারকর্মী জয়েশ জোশী ওই সংবাদমাধ্যমকেই বলেন, প্রথম উদ্বেগ হওয়া উচিত সেই আদিবাসী সম্প্রদায়গুলিকে নিয়ে যারা হাজার হাজার বছর ধরে আরাবল্লীর বাস্তুসংস্থানের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। অন্য এক সক্রিয়বাদী প্রদীপ পুনিয়া সতর্ক করে দিয়ে দ্য ইকোনমিক টাইমস-কে বলেন, যদি খনি খনন সম্প্রসারিত হয়, তবে "শুধু পাহাড় নয়, বরং কৃষি, বন্যপ্রাণী এবং অভয়ারণ্যগুলোও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।"
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজস্থান ও হরিয়ানার গ্রামবাসীরা এবং পরিবেশকর্মীরা প্রতীকী অনশন ও বিক্ষোভ শুরু করেছেন। তাঁদের দাবি, ৬৯২ কিমি দীর্ঘ পুরো আরাবল্লীকেই 'সংরক্ষিত পরিবেশ অঞ্চল' হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
অন্যদিকে, সরকারের বক্তব্য নতুন সংজ্ঞা সুরক্ষিতভাবে খনিজ ও ভূমি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে। পরিবেশ মন্ত্রক দাবি করেছে,
কোনো খনন শিথিল করা হয়নি।
কিন্তু ইতিহাস দেখায়, আইনি পুনঃসংজ্ঞা প্রায়ই ভবিষ্যৎ লুণ্ঠনের ভিত্তি তৈরি করে। আইন এখানে পরিবেশ রক্ষার ঢাল নয়, বরং পুঁজির পথ পরিষ্কার করার যন্ত্র। কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ভূপেন্দর যাদব পরিবেশবিদ, সমাজকর্মী স্থানীয় বাসিন্দা ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের সমস্ত সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে ২২ ডিসেম্বর দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তের ফলে আরাবল্লী অঞ্চলের ৯০ শতাংশেরও বেশি এলাকা সুরক্ষিত থাকবে। আদালতের নির্দেশ মেনে খনি‑নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা তৈরি করা হবে এবং পরিবেশ খারাপ হওয়ার সুযোগ কমানো হবে।
কিন্তু কী ভাবে তা সম্ভব? তার কোনো সদুত্তর মন্ত্রী মহোদয়ের জানা নেই। দিল্লির AQI (Air Quality Index) প্রায়ই ৫০০-৭৫০ ছাড়িয়ে যায়, যা WHO-এর নিরাপদ সীমার ১৫ গুণ বেশি। সন্ধ্যার সময় যাতায়াতকারীরা সকালে তুলনায় ৪০% বেশি PM2.5 শ্বাস নেয়। শিশু, বৃদ্ধ ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্তরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাম্প্রতিক দিল্লির দূষণ প্রতিরোধে সরকারী ব্যর্থতার প্রতিবাদে ও বিশুদ্ধ পরিবেশের দাবিতে রাস্তায় নামা পরিবেশ কর্মীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার করেছে দিল্লি পুলিশ। কারণ, প্রাণবায়ু অক্সিজেন এখন প্রকৃতির নয় মালিকের মুনাফার বস্তু, আর সেই পথই পরিষ্কার করে দিতেই সুপ্রিম কোর্ট ও কেন্দ্রীয় সরকার আরবল্লীর জন্য অভিন্ন আইনি সংজ্ঞা তৈরি করে। প্যাকেটজাত জলের মতো খোলা বাজারে প্যাকেটজাত বিশুদ্ধ অক্সিজেন বিক্রি বোধহয় অর বেশি দূরে নয়।
আরাবল্লীর ঘটনা আমাদের শেখায়, পরিবেশ সংকট কেবল ‘প্রকৃতি বনাম উন্নয়ন’ নয়, এটি শ্রেণি, ক্ষমতা ও আইনের প্রশ্ন, আইনি ভাষা রাজনৈতিক এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় তা প্রায়শই ধ্বংসের ভাষা। সুপ্রিম কোর্ট পাহাড়কে রক্ষা করতে চায়, কিন্তু যে উন্নয়ন ব্যবস্থায় পাহাড় ভাঙা অনিবার্য, সেই ব্যবস্থাকে প্রশ্ন করতে পারে না।
মার্কসবাদী রাষ্ট্রতত্ত্ব অনুযায়ী, রাষ্ট্র কখনও শ্রেণি-নিরপেক্ষ নয়। পরিবেশ আইনও তার ব্যতিক্রম নয়। আরাবল্লী সংজ্ঞা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে দেখা যায়— রাষ্ট্র আইনি সংজ্ঞার মাধ্যমে পরিবেশের সীমানা সংকুচিত করছে, ‘একীকৃত সংজ্ঞা’র নামে রাজ্যভিত্তিক শক্ত পরিবেশ আইন দুর্বল হচ্ছে, খনন, নির্মাণ ও পুঁজিনিবেশের জন্য ‘আইনি স্বচ্ছতা’ তৈরি করা হচ্ছে। মার্কসবাদী-পরিবেশ ন্যায় দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া এই সংকট বোঝা সম্ভব নয়। প্রকৃতি রক্ষা মানে কেবল পাহাড় বাঁচানো নয়, বরং সেই সামাজিক ব্যবস্থাকে প্রশ্ন করা, যা পাহাড় ধ্বংস করাকে উন্নয়ন বলে চালায়। পুঁজিবাদী গণতন্ত্রে ন্যায়ালায়ও প্রচলিত উন্নয়ন ধারনাকে মৌলিকভাবে প্রশ্ন করতে পারে না, শ্রেণি বৈষম্যকে কে স্বীকৃতি দিতে পারে না এবং পরিবেশ সুরক্ষা ও উন্নয়নের মধ্যে ‘ব্যালান্স’ বজায় রাখতে পরিবেশ ন্যায়ের বদলে প্রক্রিয়াগত ন্যায় প্রতিষ্ঠার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে তার কার্যক্রম।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
Whatsapp
