ফের যেভাবে ওড়িশার ১৪ জনকে বাংলদেশে ঠেলে দেওয়া হলো

Odisha residents pushed to Bangladesh:  এই ১৪ জনের মধ্যে রয়েছেন ছ'জন পুরুষ, ছ'জন মহিলা এবং দু'জন শিশু। প্রত্যেকেই দাবি করছেন, তাঁরা ভারতের নাগরিক।

শুক্রবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্তে ফের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা সামনে এল। অভিযোগ, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ নারী, পুরুষ ও শিশু-সহ মোট ১৪ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। বর্তমানে তাঁরা দর্শনা বাজার এলাকায় রয়েছেন। তাঁরা নিজেদের ভারতের বাসিন্দা বলে দাবি করছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে ফের নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। 

 এই ১৪ জনের মধ্যে রয়েছেন ছ'জন পুরুষ, ছ'জন মহিলা এবং দু'জন শিশু। প্রত্যেকেই দাবি করছেন, তাঁরা ভারতের নাগরিক। ভারতের ওড়িশা রাজ্যের জগসিং জেলা থেকে প্রথমে ভারতীয় পুলিশ তাঁদের বাড়ি থেকে আটক করে। এরপর কোনো বিচার প্রক্রিয়া বা স্পষ্ট আইনি নথি ছাড়াই তাঁদের বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই তাঁদের বাংলাদেশ সীমান্তে এনে ঠেলে দেয়। তাঁদের পরিচয় ও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

এই ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছেন ওড়িশার জগসিং জেলার সাতকুড়া ধনিপুর এলাকার বাসিন্দারা। পাওয়া নাম-পরিচয় অনুযায়ী, শেখ জব্বার হলেন হারুন অর রশিদের ছেলে। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন শেখ আব্দুর জব্বারের ছেলে হাকিম শেখ (৪৮), শেখ উকিল (৪৫), শেখ বন্টি (৩০) এবং শেখ রাজা (৩৮)। এঁদের পাশাপাশি রয়েছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও। শেখ জব্বারের স্ত্রী আলকুনি বিবি (৬৫), শেখ উকিলের স্ত্রী সাগেরা বিবি (৩৬) ও তাঁদের মেয়ে শাকিলা (৯), শেখ রাজার স্ত্রী মেহরুন বিবি (২৮) এবং তাঁদের মেয়ে নাসরিন (১০)। শিশুদের মধ্যে রয়েছে দুই বছরের রোহিত ও ১১ বছরের তৈহিদ। আরও রয়েছেন শেখ হাকিমের স্ত্রী শমশেরি বিবি (৩৪) এবং শেখ হোসেনের স্ত্রী গুলশান বিবি (৮০)।

আরও পড়ুন

এক মাসে তিন রাজ্যে তিন পরিযায়ী শ্রমিকের উপর হামলা! গোটা দেশে যে ভাবে কোনঠাসা জুয়েলের মতো বাঙালি মুসলিমরা

এই তালিকা দেখলে স্পষ্ট হয়, পুরো পরিবারের— বয়স্ক নারী, ছোট শিশু, কিশোর-কিশোরী সবাইকে একসঙ্গে সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এমন সীমান্তে ঠেলে দেওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির পারস্পরিক কূটনৈতিক আচরণের মৌলিক নীতির পরিপন্থী।

দর্শনা বাজার এলাকায় আটকে থাকা এই মানুষগুলির কেউ জানেন না পরবর্তী মুহূর্তে কী ঘটতে চলেছে। বিজিবি বাংলাদেশে ঘাড়ধাক্কা দেওয়া ব্যক্তিদের নাম-পরিচয়, আঞ্চলিক ঠিকানা এবং সম্ভাব্য নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কাজ চলছে। তবে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে বাংলাদেশি নাগরিক বলে চিহ্নিত করা হয়নি।

এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যখন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ‘ঘাড়ধাক্কা’ নতুন কোনো বিষয় নয়। গত কয়েকমাসে বারবার ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, তাঁদের কাছে ভারতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা আমলে নিচ্ছে না।

আরও পড়ুন

‘ওরা জানত আমি অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম… তবু একটুও দয়া দেখায়নি’: সোনালি খাতুন

বিশেষজ্ঞদের মতে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA), এনআরসি এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে রাজনৈতিক ভাষ্য এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই দর্শনা ঘাড়ধাক্কার ঘটনাও সেই বৃহত্তর প্রেক্ষাপটের বাইরে নয়। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, শিশুদের উপস্থিতি। দু'বছরের রোহিত কিংবা নয় বছরের শাকিলা, দশ বছরের নাসরিন— এই শিশুরা কোনো অপরাধ করেনি, কোনো সীমান্ত লঙ্ঘনের সিদ্ধান্তও তাদের ছিল না। তবুও রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে তারা আজ সীমান্তের ওপারে, পরিচয়হীন অবস্থায়।

এই মুহূর্তে প্রশ্ন উঠছে, যদি তাঁরা সত্যিই ভারতের নাগরিক হন, তবে কোন আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হলো? আর যদি তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ থাকে, তবে তার নিষ্পত্তি কি সীমান্তে ঠেলে দিয়ে করা যায়? মানবাধিকার সংগঠনগুলি দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, সীমান্তে ঠেলে দেওয়া কোনো সমাধান নয়; বরং এটি সংকটকে আরও গভীর করে।

More Articles