রামনারায়ণ বাঘেল কি তবে হিন্দু ছিলেন না?

Communal Violence: সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে ভারত ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে শাসকগোষ্ঠীর নৈতিক অবস্থানকে বড়সড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

দেশের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদে সোচ্চার হিন্দু সংগঠনগুলি। একটাই দাবি

হিন্দুওকে খুনকা এক এক বুন্দ কা হিসাব চাহিয়ে

অর্থাৎ হিন্দু রক্তের প্রতিটি বিন্দুর হিসেব চাই। সোচ্চার প্রতিবাদের সংগঠক বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল। ভারতে হিন্দু সংগঠনগুলির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসার কারণ, গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে গণপিটুনিতে নৃশংস হত্যার ঘটনা। প্রথম পর্যায়ে এই নৃশংস খুনের ঘটনাকে ধর্ম অবমাননার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা হলেও, পুলিশের তদন্ত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মূলে কারখানার অভ্যন্তরীণ দীর্ঘদিনের বিবাদ এবং ব্যক্তিগত রেষারেষি কাজ করেছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো, উত্তেজিত জনতার হাত থেকে বাঁচতে দীপু বারবার ক্ষমা চাইলেও মন গলেনি আক্রমণকারীদের। বাংলাদেশের তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস জানিয়েছেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, অন্য অভিযুক্তদের সন্ধানে তল্লাশি চলছে। একজন যুব শ্রমিকের এই নৃশংস হত্যা, সহ শ্রমিকের এই বর্বরচিত আচরণ ক্ষমাহীন ঘৃণ্য অপরাধ।

জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এ জাতীয় ক্ষমাহীন ঘৃণ্য অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার এবং শাস্তি চাইবেন, সেটা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু সেই প্রতিক্রিয়া যদি ধর্ম আর রাজনীতির আধারে বিভাজিত হয়, তবে তা সমাজ খণ্ডিত করার অন্যায় পদক্ষেপ হিসেবেই চিহ্নিত হবে।

দীপু চন্দ্র দাসের হত্যাকাণ্ডের পর ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছিলেন, ভারত বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের এই প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যেটা অস্বাভাবিক, উত্তরপ্রদেশে মোহাম্মদ আখলাক-কে পিটিয়ে হত্যায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চলতি মামলা প্রত্যাহারের সরকারি উদ্যোগ। ময়মনসিংয়ের দীপু চন্দ্র দাসের মতই উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আখলাককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল গোমাংস রাখার গুজবে। গত ১২ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশ সরকার গ্রেটার নয়ডার ফাস্ট-ট্র্যাক আদালতে ১৯ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে থাকা সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন জানিয়েছে। বাংলাদেশে খুন হওয়া হিন্দু যুবক দীপু চন্দ্র দাসের হত্যাকারীর শাস্তি চাই, আর ভারতে গণপিটুনির শিকার মোহাম্মদ আখলাক-এর হত্যাকারীদের মুক্তি চাই, এ এক অমানবিক দ্বিচারিতা। আসলে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে ভারতে ধর্ম ও বিকৃত পুঁজির মেলবন্ধনে যে নতুন ন্যারেটিভ বা আখ্যান তৈরি হয়েছে, ওই দ্বিচারিতা তারই অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আরও পড়ুন

বারবার মাজার ভাঙা, আক্রমণ বাউলকে! অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারল বাংলাদেশ?

এই নতুন ন্যারেটিভ বা আখ্যান শুরু হয়েছিল ২০১৪-১৫ সাল থেকে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মোহাম্মদ আখলাক হত্যার পর ২৯ জুন, ২০১৭ তে ঝাড়খণ্ডের রামগড় জেলায় আলিমুদ্দিন আনসারিকে তাঁর গাড়িতে করে গোমাংস নিয়ে যাওয়ার সন্দেহে একদল লোক আটক করে। রাস্তার মাঝখানে তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয় এবং তাঁর গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের উপস্থিতিতেই তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি মারা যান। কী পরিণতি সেই নৃশংস হত্যা মামলার ?

২০১৮ সালে একটি ফাস্ট ট্র্যাক আদালত স্থানীয় বিজেপি নেতা নিত্যানন্দ মাহাতোস-হ ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এটিই ছিল ভারতে গোরক্ষকদের সাজা পাওয়ার প্রথম বড় উদাহরণ। কিন্তু সাজা ঘোষণার কয়েক মাস পরেই ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট দোষীদের জামিন দেয়। জেল থেকে বের হওয়ার পর তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও হাজারীবাগের বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত সিনহা নিজ বাসভবনে তাদের মালা পরিয়ে বরণ করেছিলেন। দোষীরা এখনও জামিনে মুক্ত। ২০২০ সালের মে মাসে ঝাড়খণ্ডের খুঁটি জেলায় গো-মাংস বিক্রি বা রাখার অভিযোগে পুলিশ রমেশ মিনজ নামের এক আদিবাসী ব্যক্তিকে আটক করে। রমেশ ছিলেন একজন খ্রিস্টান আদিবাসী। পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। পুলিশ দাবি করেছিল তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন, কিন্তু রমেশের পা ভাঙা ছিল এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। গ্রামবাসীদের অভিযোগ ছিল, পুলিশি নির্যাতন তাঁর মৃত্যুর প্রধান কারণ। এই ঘটনার পর ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সংগঠনগুলো তীব্র আন্দোলনে নামে। তারা অভিযোগ করে, গোরক্ষার নামে কেবল মুসলমানদের নয়, আদিবাসীদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার তখন ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। পাঁচ বছর পরেও বিভাগীয় ও আইনি তদন্ত শেষ হয়নি।

২০০২ সালের ৩ মার্চ, গুজরাট দাঙ্গার সময় আহমেদাবাদের কাছে রন্ধিকপুর গ্রামে ৫ মাসের গর্ভবতী ২১ বছর বয়সি বিলকিস বানু এবং তাঁর পরিবারের উপর হামলা চালায় একদল দাঙ্গাবাজ। বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়। তাঁর পরিবারের ৭ জন সদস্যকে তাঁর চোখের সামনে হত্যা করা হয়, যার মধ্যে বিলকিসের তিন বছরের কন্যাসন্তানও ছিল। শিশুটিকে আছড়ে হত্যা করা হয়েছিল। ঘটনার পর বিলকিস ন্যায়বিচারের দাবিতে লড়াই শুরু করেন। এই লড়াইয়ের বিস্তারিত বা গুজরাটের বিজেপি সরকারের মামলা ধামাচাপা দেওয়ার প্রয়াসের বিস্তারিত বর্ণনায় যাচ্ছি না। শুধু উল্লেখ করব দেশের নতুন ন্যারেটিভ এর প্রেক্ষিতে ধর্ষক এবং খুনিদের কারামুক্ত করার সরকারি প্রয়াসের কথা।

২০২২ সালের ১৫ অগাস্ট ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসে গুজরাটের বিজেপি সরকার তাদের ‘ক্ষমা নীতি’ অনুযায়ী সাজা মকুব করে ১১ জন দোষীকে জেল থেকে মুক্তি দেয়। ধর্ষণ ও খুনের দোষীরা জেল থেকে বের হওয়ার পর তাদের মিষ্টি খাইয়ে ও মালা পরিয়ে বরণ করা হয়। এই মুক্তির বিরুদ্ধে বিলকিস বানু পুনরায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তিনি জানান, এই সিদ্ধান্ত তাঁকে এবং ভারতের নারীদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট গুজরাট সরকারের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে একটি ল্যান্ডমার্ক রায় দেয়। আদালত গুজরাট সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ এবং ‘প্রতারণা’ বলে অভিহিত করে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ১১ জন দোষীই পুনরায় জেলে ফিরে গেছে এবং বর্তমানে তারা তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ভোগ করছে।

ধর্ম ও বিকৃত পুঁজির মিশ্রণে তৈরি নতুন ন্যারেটিভে প্রাথমিক পর্বে ছিল গো-রক্ষার জঙ্গি পর্ব। পরবর্তী পর্বে এসেছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের গল্প। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংবাদ মাধ্যমের একটা বড় অংশকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ন্যারেটিভ জনমানসে গেঁথে দেবার প্রয়াসে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ঝাড়খন্ড, বিহার, আসাম, পশ্চিমবঙ্গে প্রতিটি জনসভায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের গল্প শোনাতে শুরু করলেন বিজেপি নেতারা। অথচ, ২০১৪ থেকে ২০২৪-এর ৫ অগাস্ট পর্যন্ত ভারত -বাংলাদেশ সম্পর্ক ছিল খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যে শীর্ষ থেকে বিভিন্ন স্তরে বহু দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে, যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন হয়েছে, যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কখনোই অনুপ্রবেশ নিয়ে কোনো আলোচনার কথা শোনা যায়নি। কারণ ভারতে বিজেপি বা সংঘ পরিবার অনুপ্রবেশের ন্যারেটিভ তৈরি করেছে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনকে সম্পূর্ণ করতে।

আরও পড়ুন

আখলাক লিঞ্চিং মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ! রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি বৃন্দা কারাটের

বিজেপি, আরএসএস বা সংঘ পরিবারের আখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর ব্যাপক অত্যাচার যদি বাস্তব হয়, তাহলে ভারতে অনুপ্রবেশ করছেন কারা ? স্বাভাবিক নিয়মে অত্যাচারিত সংখ্যালঘুরাই অন্যদেশে প্রবেশের চেষ্টা করবেন ! তাহলে কি ধরে নিতে পারি বিজেপি-আরএসএস এর অনুপ্রবেশ বিরোধী জেহাদ কার্যত বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিরুদ্ধেই ! গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশ বিরোধী যে বিক্ষোভ তা আসলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের স্বার্থে নয়, ভারতের জনবিন্যাসে একটা চিরস্থায়ী ধর্মীয় বিভাজন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত। তা যদি না হত, তাহলে আজ বাংলাদেশের দীপু চন্দ্র দাসের পাশাপাশি ছত্তিশগড়ের রামনারায়ণ বাঘেল-এর হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে দেশজুড়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হতো হিন্দু সংগঠনগুলি। দীপু দাসের হত্যার ২৪ ঘন্টা আগে কেরালার পালাক্কাড়ে কাজের সন্ধানে আসা ছত্তিশগড়ের পরিযায়ী শ্রমিক ৩১ বছর বয়সি রামনারায়ণ বাঘেলকে চোর সন্দেহে এবং জাতিবিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যে সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত বিদ্বেষ কাজ করেছে, তা একটি ভাইরাল ভিডিওর মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, আক্রান্ত যুবককে মারধর করার সময় একজন আক্রমণকারী চিৎকার করে জিজ্ঞাসা করছে,

তুমি কি বাংলাদেশি?

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে ভারত ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে শাসকগোষ্ঠীর নৈতিক অবস্থানকে বড়সড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এই ঘটনাগুলি কেবল অপরাধ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার এক গভীর বৈষম্যকে ফুটিয়ে তোলে। এই বৈষম্য বা 'দ্বিচারিতা' আধুনিক গণতন্ত্রের জন্য এক অশনিসংকেত। ভারতের উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে গোমাংস রাখার গুজবে মোহাম্মদ আখলাককে যখন উন্মত্ত জনতা পিটিয়ে মারল, তখন শাসকদলের অনেক প্রভাবশালী নেতার মুখে বিচারহীনতার সুর শোনা গিয়েছিল। কেউ কেউ বিষয়টিকে 'একটি দুর্ঘটনা' বলে লঘু করার চেষ্টা করেছেন, আবার কেউ সরাসরি অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে সাফাই গেয়েছেন।

একই চিত্র আমরা দেখেছি গুজরাট দাঙ্গার ক্ষেত্রে। বিলকিস বানুর উপর সংঘটিত পাশবিকতার বিচার পেতে যেখানে দীর্ঘ লড়াই করতে হয়েছে, সেখানে সাজাপ্রাপ্ত খুনি ও ধর্ষকদের যখন সময়ের আগে মুক্তি দিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়, তখন রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতা ধুলোয় মিশে যায়। শাসকের এই মৌন সম্মতি বা পরোক্ষ সমর্থন কার্যত অপরাধীদের এই বার্তাই দেয় যে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বা ধর্মীয় আদর্শের অনুসারী হলে অপরাধ করেও পার পাওয়া সম্ভব। শাসকরা মুখে অসাম্প্রদায়িকতার বুলি আওড়ালেও মাঠপর্যায়ে নিজেদের কর্মীদের দ্বারা যখন সংখ্যালঘু নিপীড়ন হয়, তখন তারা প্রায়ই নীরব থাকেন অথবা দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন। ভারতের সংখ্যালঘু আর বাংলাদেশের সংখ্যালঘু— উভয়ই যেন নিজেদের মাটিতে পরবাসী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় শাসকের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যে দ্বিমুখী নীতি বা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কাজ করে, তা অত্যন্ত স্পষ্ট। ভারতে মুসলিমদের উপর হামলা হলে এক পক্ষ সোচ্চার হয় কিন্তু অন্য পক্ষ চুপ থাকে; আবার বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার হলে সেই একই পক্ষগুলো নিজেদের অবস্থান বদলে ফেলে। অপরাধকে কেবল অপরাধ হিসেবে না দেখে অপরাধী ও ভিকটিমের ধর্মীয় পরিচয় দিয়ে যখন বিচারের মাপকাঠি ঠিক করা হয়, তখন আইনের শাসন মুখ থুবড়ে পড়ে। শাসক যখন তার নিজের নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় এবং অপরাধীর পরিচয়ের ভিত্তিতে বিচার প্রক্রিয়ায় বৈষম্য করে, তখন সেই শাসনব্যবস্থা আর গণতান্ত্রিক থাকে না, তা একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিহীন ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়। এই সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দ্বিচারিতা বন্ধ না হলে দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ক্রমাগত শক্তিশালী হবে এবং সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা চিরকালই হুমকির মুখে থাকবে।

More Articles